পেটানোর পরিকল্পনা করা গ্রুপের অ্যাডমিন ছাত্রদল সম্পাদক
Published: 6th, May 2025 GMT
হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে শিক্ষার্থীদের পেটানোর পরিকল্পনার কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদল। তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে স্ক্রিনশটগুলো এডিটেড বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
এমনকি, স্কিনশর্ট ফাঁস হওয়া গ্রুপের অ্যাডমিন হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির এবং রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাহী এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে ফাঁস হওয়া একই গ্রুপের একাধিক স্ক্রিনশটে এমনটা দেখা যায়। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
আরো পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের পেটানোর পরিকল্পনা রাবি ছাত্রদলের, স্ক্রিনশট ভাইরাল
রোডম্যাপ অনুযায়ী রাকসু নির্বাচনের দাবি
যাচাই করে দেখা গেছে, ভাইরাল হওয়া ‘রাবি ছাত্রদল’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটির অ্যাডমিন হিসেবে রয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী, যুগ্ম-আহ্বায়ক এম এ তাহের, মাহমুদুল হাসান মিঠু, সর্দার জহিরুল, সদস্য নাফিউল ইসলাম জীবন, সর্দার রাশেদসহ কেন্দ্রীয় ও রাবি শাখা ছাত্রদলের অনেক নেতা রয়েছে।
গ্রুপের সদস্য হিসেবে রাবি শাখা ছাত্রদলেও সব নেতা-কর্মীর নাম দেখা গেছে। ফলে এটি সংগঠনের বাইরে তৈরি হওয়া একটি গ্রুপ বলে দাবি করার সুযোগ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “আমাদের ১২টিরও বেশি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে অনুষদ ও বিভাগের আলাদা গ্রুপও আছে। ফলে যে কেউ আমাদের যেকোনো গ্রুপে অ্যাড করতে পারে, এমনকি মহানগরী থেকেও। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আমরা প্রতিটি গ্রুপের মেসেজ নিয়মিত দেখি। অনেক গ্রুপের নোটিফিকেশন আমরা বন্ধ করে রাখি। বিশেষ করে যেগুলো অপ্রাসঙ্গিক বা ব্যক্তিগত কথাবার্তার জন্য ব্যবহৃত হয়।”
ভাইরাল হওয়া অ্যাডমিন চিহ্নিত স্ক্রিনশটটির বিষয়ে তিনি বলেন, “যে স্ক্রিনশটটি প্রকাশ পেয়েছে, তা সম্পূর্ণ এডিট করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচারিত হয়েছে। এটি একটি মিডিয়া ট্রায়াল এবং আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ।”
তিনি আরো বলেন, “বট বাহিনী বলতে বোঝানো হয়েছে তাদের, যারা আমাদের বিরুদ্ধে সবসময় মিথ্যা তথ্য ছড়ায়। আর নাসির ভাই কোনো কর্মী পর্যায়ের গ্রুপে কখনই যুক্ত থাকেন না। কেউ যদি তাকে এমন কোনো গ্রুপে অ্যাড করেও, সেটি তার দেখার সুযোগ থাকে না।”
আরো পড়ুন: শিক্ষার্থীদের পেটানোর পরিকল্পনা রাবি ছাত্রদলের, স্ক্রিনশট ভাইরাল
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে সোমবার (৫ মে) গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রুপে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।
তিনি বলেছিলেন, “স্ক্রিনশটের বিষয়ে আমার জানা নেই। এটা আসলেই ছাত্রদলের কারো কি না, সেই বিষয়টা নিয়েও সন্দেহ থেকে যায়। বিষয়টি সম্পর্কে আমার খোঁজ নিতে হবে। কেন্দ্র থেকে আমানুল্লাহ আমান রাবি শাখার দায়িত্ব পালন করছে। আমরা তার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির সত্যতা জানার চেষ্টা করব। এর আগে কোনো মন্তব্য আমি করতে পারব না।”
সোমবার (৫ মে) সকালে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের দুইটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরতে দেখা যায়। সেখানে গ্রুপের নাম দেওয়া আছে ‘রাবি ছাত্রদল’। গ্রুপটির কথোপকথনে দেখা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের পেটানোর পরিকল্পনা করছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সেখানে একজন ‘যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই পেটানোর পরামর্শ দেন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত রদল র স ক র নশট আম দ র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুরে মামলা নিয়ে কথোপকথন ফাঁস, পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব, ওসির প্রত্যাহার দাবি
জামালপুরে একটি মামলা নিয়ে জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আনিসুজ্জামান ও বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার জেরে আজ রোববার দুপুরে মো. আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপির ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে।
আনিসুজ্জামান বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি এবং বকশীগঞ্জ উপজেলা শহরের নামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁকে গত বছরের ১৩ নভেম্বর জামালপুরের জেলা জজ আদালতের পিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির দুই নেতার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় মামলা করা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে পিপি আনিসুজ্জামান ও ওসি খন্দকার শাকের আহমেদের উত্তেজনাপূর্ণ কথোপকথনের একটি অডিও ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে নানা আলোচনার পর আজ দুপুরে আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেন জেলা জজ আদালতের গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি), অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি, সহকারী কৌঁসুলিসহ অন্তত ৪০ জন আইনজীবী।
অনাস্থা প্রস্তাবে বলা হয়, আনিসুজ্জামান বিভিন্ন থানায় মামলা নেওয়া না নেওয়া নিয়ে সুপারিশ করেন, যা তাঁর পদের সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান। বৃহস্পতিবার একটি মামলা রেকর্ড করা নিয়ে বকশীগঞ্জ থানার ওসির সঙ্গে আপত্তিকর ভাষায় কথাবার্তা বলেন। একপর্যায়ে ওসি তাঁকে যে ভাষায় সম্বোধন করেন, তাতে সব আইনজীবীর সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ ছাড়া আনিসুজ্জামানের আচার-আচরণ, কথাবার্তা আপত্তিকর। তিনি প্রায়ই জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সম্পর্কে বিরূপ ও অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করেন এবং সহকারী আইন কর্মকর্তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। এসব কারণে আনিসুজ্জামান সরকারি কৌঁসুলি পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তাই তাঁকে ওই পদ থেকে অপসারণ করা হোক।
জামালপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিশাদ রেজওয়ান অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে পিপি মো. আনিসুজ্জামানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও না ধরায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে আনিসুজ্জামানের সঙ্গে অশালীন আচরণ এবং তা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ওসির প্রত্যাহারের দাবিতে আজ দুপুরে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপিসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওসিকে প্রত্যাহারে আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই দলের জুনিয়র ও সিনিয়র নেতার মধ্যে ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে বিরোধ হয়। এ নিয়ে সিনিয়র নেতা এক জুনিয়র নেতাকে চড়-থাপ্পড় দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা নিতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। পরে আমি এলাকার হাই–প্রোফাইল নেতাকে বিষয়টি জানাই। তখন তিনি মামলাটি নিতে নিষেধ করেন এবং বলেন, “এটা আমি আপস-মীমাংসা করিয়ে দেব।” কিন্তু ওই দিন রাতে আনিসুজ্জামান মামলাটি নিতে আমাকে প্রথমে চাপ দেন এবং পরে উত্তেজিত হয়ে অশালীন কথাবার্তা বলেন।’ মানববন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই মানববন্ধনে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কেউ ছিল না। ইউনিয়ন থেকে লোক এনে করা হয়েছে।’