একটি বেসরকারি টেলিভিশনে  ‘সেন্স অব হিউমার’ নামের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন শাহরিয়ার নাজিম জয়। ‘সেন্স অব হিউমার’-এর শুরুর গল্প সম্পর্কে জয় একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি আসলে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান স্যারের নাটক চাইতে গিয়েছিলাম। উনার কাছে অনেকেই নাটক চাইতে যেতো, তদবিরের কারণে উনি রাগ করতেন। আবার সবাইকে ভালোও বাসতেন। আমাকে বললেন, খালি নাটক নাটক করেন, ম্যাগাজিন করেন। আমার মনে হলো একটা কিছুতো দিলো। আমি রাজি হয়ে গেলাম। উনি বললেন, আপনি ম্যাগাজিন করেন, আমি পাস করে দিচ্ছি। প্রথমে ‘মামা-ভাগিনা’ নামের একটি ম্যাগাজিন অুনষ্ঠান চিন্তা করলাম। ডা.

এজাজকে বললাম, তুমি হবা মামা, আমি ভাগিনা। এজাজ বললো, কোনো সমস্যা নাই। আমি স্ক্রিপ্ট মোটামুটি গবেষণা করে উনাকে যখন খুঁজি উনি আর ফোন ধরে না। তখন ভাবলাম এতো পিছলা, ধরা যাবে না। তখন অভিনেতা মীরা সাব্বিরকে বললাম, আসো আমরা দুইজনে মিলে একটা কিছু করি। তখন সে টেলিভিশনের ব্যস্ততম অভিনেতা। আমাকে বলছে যে করবে, কিন্তু বুঝলাম যে ওরে দিয়েও হবে না। তখন আমি একটা সহজ ফর্মুলায় চলে গেলাম।’’

বলা ভালো ‘সেন্স অব হিউমার’ অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার নাজিম জয় অতিথিদের যেসব প্রশ্ন করেন, সেগুলো কখনও আলোচিত আবার কখনও তুমুলভাবে সমালোচিত। তবে জয় জানিয়েছেন শুরুতে বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য ছিল তার। এই অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন, ‘লাল গোলাপ’ এর উপস্থাপক শফিক রেহমানের কাছ থেকে।  ওই অনুষ্ঠানের ধরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দুই একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করার পরে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার চিঠি পান তিনি।

শাহরিয়ার নাজিম জয় বলেন, ‘‘কয়েকটি পর্ব যাওয়ার পরে এটিএন থেকে আমাকে বলা হলো, এটা একটা মানহীন, অগুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। একটা চিঠি আমার নামে ইস্যু হলো। আমাকে চিঠিটা ধরিয়ে দিলেন চেয়ারম্যান স্যার। আমি ওনাকে বললাম, আমাকে আর তিনটা মাস সময় দেন। উনি বললেন, চ্যানেলতো মানবে না। উনি কি এক মায়ায় আমাকে সুযোগটা দেন।তখন শিল্পী সমিতির ইলেকশন ছিল। জায়েদ খানকে ফোন করে বললাম আপনার প্রোমোশন করবো এটিএন বাংলায়। উনি বললেন, আপনি প্রোমশন করবেন, আমি পূর্নিমাকে নিয়ে আসবো। আর কাকে কাকে লাগবে? জায়েদ খান পূর্ণিমাকে নিয়ে আসলেন। স্বাভাবিকভাবে পূর্ণিমার ক্রেজ, জায়েদ খানের উল্টা-পাল্টা কথা আমার কোনো এফোর্ট ছাড়াই প্রোগ্রাম হাইলাইটেড হয়। জায়েদ খানই আমাকে দুই চারজন ভালো ভালো গেস্ট অ্যারেঞ্জ করে দেয়। ইলেকশন উপলক্ষ্যেই। এক ইলেকশন কেন্দ্র করেই আমি মোটামুটি এগিয়ে যাই।’’

আরো পড়ুন:

‘আমি আশিক তুমি প্রিয়া’র আশিক এখন কোথায়?

শর্তসাপেক্ষে স্বাধীনতা চান না বাঁধন

শাহরিয়ার নাজিম জয় তার উপস্থাপনা ক্যারিয়ারের টানিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের এপিসোডকে।
এই উপস্থাপক বলেন, ‘‘ফাইনালি, আমার ফোনে অপু বিশ্বাস আসে একদিন। অপু বিশ্বাসকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেমন আছো? সে উত্তর দিলো, বুবলি থাকতে আমি ভালো থাকি কীভাবে? এই হচ্ছে, আমার টার্নিং পয়েন্ট। অনুষ্ঠান পুরাই হিট।’’

সে সময় গান গেয়ে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছিলেন ড. মাহফুজুর রহমান। তাকেও নিজের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান জয়।

জয় বলেন, ‘‘আমি ড. মাহফুজুর রহমানকে আমার অনুষ্ঠানে আসার ইঙ্গিত দিলাম। এক ইঙ্গিতেই উনি রাজি হয়ে গেলেন। তখন উনি গান দিয়ে ব্যাপক হিট। ডেসপারেট এবং এন্টারটেইনিং প্রশ্ন ছিল। ওই অনুষ্ঠানটা মানুষ লুফে নিয়েছিল।’’
 

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন ন কর ন উপস থ বলল ম বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের স্যালুট

পৃথিবীর এক দিকে যখন সূর্যের আলো নিভে আসে, তখন অন্য দিকে শুরু হয় নতুন এক সকাল। এমন সকাল যেখানে কোনো আনন্দ নেই, নেই বিশ্রাম বা বিলাস; আছে শুধু ঘাম কষ্ট আর নীরব সংগ্রাম। সেই সকালেই লাখো বাংলাদেশি শ্রমিক মাথায় হেলমেট পরেন, কেউ হাতে ট্রাউল ধরেন, কেউ স্টিয়ারিংয়ে বসেন, কেউবা মরুভূমির দিকে হাঁটেন। তারা জানেন, তাদের ঘামের প্রতিটি ফোঁটা একদিন দেশের মাটিতে সোনার দানায় রূপ নেবে।

এই মানুষগুলো আমাদের অর্থনৈতিক সেনা। তারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন না, কিন্তু প্রতিদিন যুদ্ধ করেন সময় যন্ত্রণা আর একাকিত্বের সঙ্গে। তারা শুধু নিজের জন্য লড়াই করেন না, তারা লড়ে যান প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, দেশের পতাকা উঁচু রাখার জন্য। আমরা তাদের বলি ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’। তারা প্রবাস থেকে উপার্জন করে নিবাসে যা পাঠান তাই রেমিট্যান্স।

মাতৃভূমি থেকে বহু দূরে 

রাতের অন্ধকারে কখনও একা বসে থাকা প্রবাসীর মুখে দেখা যায় এক অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা। চোখে ঘুম নেই। হঠাৎ মায়ের ফোন। মোবাইলের স্ক্রিনে মায়ের মায়াবী মুখ। ছেলে বলে, ‘মা, তুমি এখনও ঘুমাওনি?’
মা বলেন, ‘না রে বাবা, তোকে মনে পড়ছিল।’
এই ছোট্ট সংলাপেই লুকিয়ে আছে এক মহাকাব্যিক ভালোবাসা। হাজার মাইল দূরে থেকেও মা ও ছেলের মমতার বাঁধন ছিঁড়ে যায় না। ছেলেটি কান্না চেপে বলে, ‘আমি ভালো আছি মা।’
এই ‘ভালো থাকার’ আড়ালে লুকিয়ে থাকে অনেক অশ্রু, নির্ঘুম রাত, অপমান ও সংযমের গল্প। একজন প্রবাসী গৃহকর্মী হয়তো দিনের পর দিন অপরিচিত কোনো পরিবারের ঘর মুছছেন, কিন্তু তার নিজের ঘরে আলো জ্বলে না মাসের পর মাস। একজন পিতা হয়তো বিদেশের ব্যস্ত শহরে গাড়ি চালান ১৬ ঘণ্টা, যেন দেশে থাকা তার ছেলেটি বিদ্যালয়ে যেতে পারে। এভাবেই জন্ম নেয় এক নতুন অভিধান- যেখানে ত্যাগ মানে প্রবাসী, ভালোবাসা মানে রেমিট্যান্স, আর দেশপ্রেম মানে দূরদেশে থেকেও মাটির গন্ধ অনুভব করা।

ঘামে গড়া অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মূল শক্তি, স্থিতিশীল থাকে জিডিপি, ঘুরে দাঁড়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি।
বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ পৃথিবীর নানা প্রান্তে কর্মরত। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র যেখানেই যান না কেন, তারা নিজের নামের আগে উচ্চারণ করেন একটা শব্দ ‘বাংলাদেশ’। তাদের পাঠানো অর্থ গ্রামের ঘর থেকে জাতীয় বাজেট পর্যন্ত বিস্তৃত। তাদের টাকায় গড়ে ওঠে বাড়ি, সেতু, স্কুল, মসজিদ; তাদের অর্থেই চলে সন্তানের পড়াশোনা, বোনের বিয়ে, মায়ের ওষুধ এবং দেশের অর্থনীতি। রেমিট্যান্সের প্রতিটি নোটে লেগে থাকে ঘাম, অশ্রু আর একটি না বলা গল্প।

ত্যাগের প্রতিচ্ছবি

অনেক প্রবাসী ভাই আছেন যারা একটানা দশ-পনেরো বছর দেশে ফেরেননি। বছরের পর বছর তাদের ঈদ কেটে যায় পরদেশে। একটি ভিডিও কলেই তারা জড়িয়ে ধরেন সন্তানকে, মোবাইলের স্ক্রিনে চুমু খান তাদের মুখে। অনেক প্রবাসী শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত হন। কেউ কেউ আর ফেরেন না জীবিত অবস্থায়। তাদের কফিনে মোড়ানো লাল-সবুজ পতাকা তখন হয়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির প্রতীক। তাদের সন্তানরা হয়তো বুঝে না বাবার অনুপস্থিতি মানে কী, কিন্তু যখন প্রবাসে থাকা সেই বাবা বাড়ি ফেরেন লাশ হয়ে, তখন বুঝতে শেখে- পরিবার ও দেশকে ভালোবাসা মানে শুধু গর্ব ও হাসি নয়, কখনও কখনও কান্না।

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মানবিক মুখ

আজ যাদের আমরা ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ বলি, তাদের জীবনের ভেতর আছে এক অনন্য মানবিকতা। তারা প্রতিদিন নিজের চেয়ে অন্যের জন্য বাঁচেন। মায়ের জন্য, স্ত্রীর জন্য, সন্তানের জন্য, দেশের জন্য। নিজের কষ্টকে গোপন করে হাসেন, যেন প্রিয়জনেরা সুখে থাকে। অনেকে হয়তো বলেন, ‘ওরা তো বিদেশে টাকা কামায়’। কিন্তু সত্য হলো, ওরা উপার্জন করে ঘাম দিয়ে, অবহেলা সহ্য করে, নিজেকে বিসর্জন দিয়ে। তাদের পরিশ্রমে দাঁড়িয়ে থাকে আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা প্রবাসে থেকেও বাংলাদেশের মাটি ভুলে যান না।

সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব

প্রবাসী আয় শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই ঘটায় না, এটি সামাজিক পরিবর্তনেরও অনুঘটক। গ্রামের গৃহিণীরা এখন ব্যাংক হিসাব রাখেন, বিদেশ থেকে আসা টাকা দিয়ে গড়ে ওঠে নতুন ব্যবসা, ছোট খামার, দোকান। অনেকে প্রবাসী টাকায় সন্তানের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশ সরকারের ‘এক্সপ্যাট্রিয়েটস ওয়েলফেয়ার ব্যাংক’ ও ‘ওভারসিজ ওয়েলফেয়ার ফান্ড’ এখন প্রবাসীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে; অবৈধ দালালচক্র, ভুয়া চুক্তি, কাজের নিশ্চয়তা না থাকা- এসব অব্যবস্থার মধ্য দিয়েও তারা দাঁড়িয়ে থাকে একা, নিঃশব্দে, দৃঢ়ভাবে।

রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান

যে দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হলো রেমিট্যান্স, সে দেশের প্রবাসীরা যেন শুধু অর্থনৈতিক নয়, মানবিক মর্যাদার স্বীকৃতিও পান- এটাই হওয়া উচিত রাষ্ট্রের অঙ্গীকার। তাদের জন্য বিমানবন্দরে শালীন আচরণ, দ্রুত সেবা, বিদেশে আইনি সুরক্ষা ও পরিবারে আর্থিক সহায়তা এসব এখন শুধু দাবি নয়, অধিকার। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলো যেন আরও কার্যকরভাবে পাশে দাঁড়ায়- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

দেশের প্রকৃত নায়ক 

বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, জুলাই বিপ্লবীরা অভ্যুত্থান দিয়েছেন, কৃষকরা দিয়ে যাচ্ছেন খাদ্যের নিরাপত্তা, আর প্রবাসীরা দিয়ে যাচ্ছেন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। তাদের ঘামে সিঞ্চিত প্রতিটি টাকায় জেগে থাকে এই দেশের প্রাণশক্তি। তারা আমাদের গর্ব। তাদের জন্যই ব্যাংক ভরে থাকে বৈদেশিক মুদ্রায়, বাংলাদেশের নাম উঠে আসে বিশ্ব তালিকায়। তাই আমাদের উচিত তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় উচ্চারণ করা- ‘হে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা, আপনাদের প্রতি আমাদের স্যালুট। আপনাদের শ্রমে বেঁচে আছে এই মাটি, আপনাদের ঘামে ধুয়ে যায় দারিদ্র্যের দাগ, আপনারা দেশের প্রকৃত নায়ক।’

ঢাকা/তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
  • রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের স্যালুট