জয়ের জীবন বদলে দিয়েছে জায়েদ খান, পূর্ণিমা, অপু
Published: 7th, May 2025 GMT
একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘সেন্স অব হিউমার’ নামের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন শাহরিয়ার নাজিম জয়। ‘সেন্স অব হিউমার’-এর শুরুর গল্প সম্পর্কে জয় একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি আসলে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান স্যারের নাটক চাইতে গিয়েছিলাম। উনার কাছে অনেকেই নাটক চাইতে যেতো, তদবিরের কারণে উনি রাগ করতেন। আবার সবাইকে ভালোও বাসতেন। আমাকে বললেন, খালি নাটক নাটক করেন, ম্যাগাজিন করেন। আমার মনে হলো একটা কিছুতো দিলো। আমি রাজি হয়ে গেলাম। উনি বললেন, আপনি ম্যাগাজিন করেন, আমি পাস করে দিচ্ছি। প্রথমে ‘মামা-ভাগিনা’ নামের একটি ম্যাগাজিন অুনষ্ঠান চিন্তা করলাম। ডা.
বলা ভালো ‘সেন্স অব হিউমার’ অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার নাজিম জয় অতিথিদের যেসব প্রশ্ন করেন, সেগুলো কখনও আলোচিত আবার কখনও তুমুলভাবে সমালোচিত। তবে জয় জানিয়েছেন শুরুতে বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য ছিল তার। এই অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন, ‘লাল গোলাপ’ এর উপস্থাপক শফিক রেহমানের কাছ থেকে। ওই অনুষ্ঠানের ধরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দুই একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করার পরে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার চিঠি পান তিনি।
শাহরিয়ার নাজিম জয় বলেন, ‘‘কয়েকটি পর্ব যাওয়ার পরে এটিএন থেকে আমাকে বলা হলো, এটা একটা মানহীন, অগুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। একটা চিঠি আমার নামে ইস্যু হলো। আমাকে চিঠিটা ধরিয়ে দিলেন চেয়ারম্যান স্যার। আমি ওনাকে বললাম, আমাকে আর তিনটা মাস সময় দেন। উনি বললেন, চ্যানেলতো মানবে না। উনি কি এক মায়ায় আমাকে সুযোগটা দেন।তখন শিল্পী সমিতির ইলেকশন ছিল। জায়েদ খানকে ফোন করে বললাম আপনার প্রোমোশন করবো এটিএন বাংলায়। উনি বললেন, আপনি প্রোমশন করবেন, আমি পূর্নিমাকে নিয়ে আসবো। আর কাকে কাকে লাগবে? জায়েদ খান পূর্ণিমাকে নিয়ে আসলেন। স্বাভাবিকভাবে পূর্ণিমার ক্রেজ, জায়েদ খানের উল্টা-পাল্টা কথা আমার কোনো এফোর্ট ছাড়াই প্রোগ্রাম হাইলাইটেড হয়। জায়েদ খানই আমাকে দুই চারজন ভালো ভালো গেস্ট অ্যারেঞ্জ করে দেয়। ইলেকশন উপলক্ষ্যেই। এক ইলেকশন কেন্দ্র করেই আমি মোটামুটি এগিয়ে যাই।’’
আরো পড়ুন:
‘আমি আশিক তুমি প্রিয়া’র আশিক এখন কোথায়?
শর্তসাপেক্ষে স্বাধীনতা চান না বাঁধন
শাহরিয়ার নাজিম জয় তার উপস্থাপনা ক্যারিয়ারের টানিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের এপিসোডকে।
এই উপস্থাপক বলেন, ‘‘ফাইনালি, আমার ফোনে অপু বিশ্বাস আসে একদিন। অপু বিশ্বাসকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেমন আছো? সে উত্তর দিলো, বুবলি থাকতে আমি ভালো থাকি কীভাবে? এই হচ্ছে, আমার টার্নিং পয়েন্ট। অনুষ্ঠান পুরাই হিট।’’
সে সময় গান গেয়ে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছিলেন ড. মাহফুজুর রহমান। তাকেও নিজের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান জয়।
জয় বলেন, ‘‘আমি ড. মাহফুজুর রহমানকে আমার অনুষ্ঠানে আসার ইঙ্গিত দিলাম। এক ইঙ্গিতেই উনি রাজি হয়ে গেলেন। তখন উনি গান দিয়ে ব্যাপক হিট। ডেসপারেট এবং এন্টারটেইনিং প্রশ্ন ছিল। ওই অনুষ্ঠানটা মানুষ লুফে নিয়েছিল।’’
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন ন কর ন উপস থ বলল ম বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে ঢাকার আদালতের আদেশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) থাকা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করে ফেরত আনার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত এ আদেশ দেন।
গতকাল রোববার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার (৮ কোটি ১০ হাজার ডলার) বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক পাচারে জড়িত ছিল বলে সিআইডির আবেদনের ভিত্তিতে আদালত এ নির্দেশ দেন।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনার মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। আর আরসিবিসির মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পায় বাংলাদেশ। প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার অন্য উদ্যোগে ফেরত আসে। এখন আরসিবিসির কাছে পুরো ৮১ মিলিয়ন ডলারই ফেরত চাওয়া হচ্ছে, যেটা আদালত বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন।
আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে করা মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, এর সঙ্গে সিআইডির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সিআইডির কাছে যে মামলা আছে, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। সমাপ্তির পথে, খুব দ্রুতই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
আদালতের আদেশে বলা হয়, তদন্তে সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ এবং ফিলিপাইন সরকারের পাঠানো মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পর্যালোচনা করে প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা অবৈধভাবে ৮১ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেন, আদালতের আদেশ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশের কপি (অনুলিপি) পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে টাকা দেশে ফেরত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির তথ্য ১ দিন পর জানতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা ২৪ দিন গোপন রাখে। ৩৩তম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।
সিআইডির ভাষ্য, জাতিসংঘের কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম (ইউএনটিওসি), ফিলিপাইনের আইন এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) নির্দেশনার আলোকে এবং সর্বশেষ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার এখন ফিলিপাইনের সরকারের কাছ থেকে এই অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে।
সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা (মেসেজ) পাঠিয়ে ফেডে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।
অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মিলছিল না।
২০২০ সালের ২৭ মে ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাতের অভিযোগে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই মামলা চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেন নিউইয়র্কের আদালত। তবে ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে। ওই সময় করা এক মামলায় ফিলিপাইনের আদালত ২০১৯ সালে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে মুদ্রা পাচারের আট দফা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলায়ও তাঁকে আসামি করা হয়।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিটির সময় গত ৮ জুলাই আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ দেওয়ার কথা।
এর আগে গত ১১ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ছয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে সরকার। এ কমিটিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তকাজের অগ্রগতি, এ-সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য ওই কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পরে আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।
পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা হলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা।