ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ‘আমাদের বিষয় নয়’: জেডি ভ্যান্স
Published: 9th, May 2025 GMT
দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। হামলা-পাল্টা হামলায় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে তারা ‘নিজেদের বিষয়’ মনে করছে না।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এমন মন্তব্য করেছেন। শুক্রবার (৯ মে) এ খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবাল।
ভ্যান্স বলেন, “ওয়াশিংটন চায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হোক। মূলত এটা আমাদের কোনো বিষয় নয়।’’
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যা করতে পারি তা হলো— উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য কিছুটা উৎসাহিত করা। তবে আমরা এমন কোনো যুদ্ধে জড়াব না, যা আমাদের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং যেখানে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’’
আন্তর্জাতিক সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়ানো উচিত নয়- এমন অবস্থান আগেই জানিয়েছিলেন ভ্যান্স। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমরা সরাসরি কোনো ভূমিকা নিচ্ছি না। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বুধবার (৮ মে) হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আমি দুই দেশকেই ভালোভাবে চিনি। তারা নিজেদের মধ্যে সমস্যার সমাধান করুক, সংঘাত বন্ধ হোক।’’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘‘আমি যদি কোনোভাবে সহায়তা করতে পারি, অবশ্যই পাশে থাকব।’’
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে এই সংঘাত খুব দ্রুত শেষ হবে।
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।
একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।
দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।
এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট