জাতীয় সনদ নাগরিকের সকল অধিকার সুরক্ষিত করতে পারবে: আলী রীয়াজ
Published: 10th, May 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ঐকমত্য কমিশন সকলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যে জাতীয় সনদ তৈরি করতে সচেষ্ট আছে, নিঃসন্দেহে তা নাগরিকের সকল অধিকার সুরক্ষিত করতে পারবে। দেশের নাগরিকদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়া একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বা রাষ্ট্র নির্মাণ কিংবা নাগরিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই কেবল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সুবিচার ব্যবস্থা পৌঁছে দিতে পারে৷
শনিবার ঢাকায় সংসদ ভবনের এল ডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড.
প্রথমবারের মতো সবাই মিলে রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো থেকে যে সকল প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে এবং জাতির সামনে প্রকাশ করা হয়েছে তার লক্ষ্য হচ্ছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সুনির্দিষ্ট পথ তৈরি করা। বহু প্রাণের বিনিময়ে এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে সফল করার জন্য সবাইকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রত্যাশা থাকবে, সকল রাজনৈতিক দল এই আকাঙ্খাকে ধারণ করে অগ্রসর হবে।
আলোচনায় ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের ঢাকা অঞ্চলের সংগঠক মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলে দলটির সদস্য সুনয়ন চাকমা এবং সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন। ইউপিডিএফ-সহ এ পর্যন্ত ২৮টি রাজনৈতিক দল কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল র য় জ
এছাড়াও পড়ুন:
মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায় না ইসলামী আন্দোলন
মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায় না চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেওয়া দলটির যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বলছে ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে’। কীসের ভিত্তিতে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে? ন্যূনতম বা যেনতেন নয়, মৌলিক সংস্কার করে নির্বাচন হতে হবে। অবশ্যই সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে হবে। ভবিষ্যতেও নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে হবে স্থায়ী নির্বাচন।
বুধবার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের পর তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জানান, এসব বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের অধিকাংশে একমত ইসলামী আন্দোলন।
নিম্ন থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত পৃথক শরিয়া বেঞ্চ থাকবে: দলটি নতুন করে কমিশনে শরিয়া আদালতের প্রস্তাব করেছে বলে জানান আতাউর রহমান। তিনি বলেছেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকারের মতো বিষয়ে শরিয়া আইনে বিচার হয়। ইসলামী আন্দোলন প্রস্তাব করেছে, নিম্ন থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত পৃথক শরিয়া বেঞ্চ থাকবে। বাদী এবং বিবাদী উভয়পক্ষ একমত হলে, বিচারের জন্য শরিয়া আদালতে যেতে পারবেন।
শরিয়া আইন কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়নি জানিয়ে আতাউর রহমান বলেছেন, ‘ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেমন সাধারণ এবং শরিয়া পদ্ধতি রয়েছে। গ্রাহক যে পদ্ধতি পছন্দ করেন, সে পদ্ধতিতে ব্যাংকিং করেন। শরিয়া আদালতও তেমন ঐচ্ছিক হবে। উভয়পক্ষ রাজি থাকলে, শরিয়া আদালতে যেতে পারবে। যারা চাইবেন না, তারা বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় যাবেন।’ অধ্যাদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে শরিয়া আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে ইসলামী আন্দোলন।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এবং প্রধান উপদেষ্টায়র বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন কমিশন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ প্রমুখ।
সংবিধানের মূলনীতিতে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস পুনর্বহালের’ প্রস্তাব: ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলেন, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ নয়, আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস পুনর্বহালের প্রস্তাব করা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনে একমত। তবে উভয় কক্ষ ভোটের অনুপাতে পদ্ধতিতে গঠিত হবে।
নির্বাচনে নারী-পুরুষের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তাব: নারীর জন্য কোটা অসম্মানজনক। তাই সকল পর্যায়ের নির্বাচনে নারী-পুরুষকে সমান সুযোগ দিয়ে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তাব করেছে চরমোনাই পীরের দল। এছাড়া কমিশন সুপারিশ করেছেন, নিম্নকক্ষের নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতেই হবে। নিম্নকক্ষের নির্বাচনে যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, উচ্চকক্ষে ঠিক তত শতাংশ আসন পাবে। উভয়কক্ষ আনুপাতিক হলে দ্বিকক্ষের সংসদের প্রয়োজন কী প্রশ্নে আতাউর রহমান সংলাপ পরবর্তী ব্রিফিংয়ে বলেছেন, আনুপাতিক পদ্ধতি ছাড়া দেশের সমাধান সম্ভব নয়। কর্তৃত্ববাদ থেকে বেরিয়ে আসতে উচ্চকক্ষ গঠন করতে হবে।
সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব: কমিশন সুপারিশ করেছিল, উচ্চকক্ষের ৫০ শতাংশ এমপি হবে অরাজনৈতিক। এতে একমত হয়নি ইসলামী আন্দোলন। আতাউর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলই ঠিক করবে, কারা প্রার্থী হবেন। ইসলামী আন্দোলন সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রী পদ দুইবারে সীমাবদ্ধ করা, নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভোটের প্রস্তাব করেছে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে সরাসরি ভোটের প্রস্তাব: বিএনপি আগে জাতীয় নির্বাচন চাইলেও সংলাপে ইসলামী আন্দোলন নেতারা বলেন, অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচন আগে হতে হবে। সদস্য কাউন্সিলরদের ভোটে চেয়ারম্যান, মেয়র নির্বাচনের পক্ষে নয় ইসলামী আন্দোলন। বিদ্যমান পদ্ধতিতে স্থানীয় নির্বাচন হতে হবে। জেলা পরিষদ বিলুপ্ত নয়, শক্তিশালী করতে হবে। পরিষদের চেয়ারম্যান পদ জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবে।
বাদীর অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ক্ষমতা বাতিলের প্রস্তাব: বাদীর অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ক্ষমতা বাতিল, ধর্ম অবমাননায় সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে ইসলামী আন্দোলন। বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের সুপারিশে একমত দলটি প্রস্তাব করেছে, জেলা প্রশাসকের কারছে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকবে না। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ ক্ষমতা ভোগ করবেন। অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-১৯২৩ বাতিল করতে হবে।
ঐকমত্য কমিশন পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়েছে। তবে ইসলামী আন্দোলন পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও মত দিয়েছে জানিয়ে আতাউর রহমান বলেছেন, নতুন করে ৯টি প্রস্তাব করা হয়েছে স্বাধীন পুলিশ বাহিনী নিশ্চিতে।
নারী বিষয়ক সংস্কার প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়ে সংলাপে কথা বলেন ইসলামী আন্দোলন নেতারা। তবে ঐকমত্য কমিশন জানিয়ে দেয়, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তাদের আওতাধীন নয়। এ বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা প্রধান উপদেষ্টাকে জানাতে পারে ইসলামী আন্দোলন।