ফেনীসহ পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে  চব্বিশের বন্যার পুনর্বাসন ও আসন্ন বর্ষা মওসুমে বন্যা ঠেকানোর প্রস্তুতির তথ্য প্রকাশ, ফেনীতে মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, সেনা ব্রিগেড স্থাপন, ভারতকে দেওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল সুবিধা বাতিল, অবিলম্বে মুছাপুর ক্লোজার পুনঃনির্মাণ, লালপোলে ফ্লাইওভার, আন্তঃনগর ট্রেনে ফেনীর জন্য আসন বাড়ানো, সকল খাল ও জলাধার পুনরুদ্ধারসহ ১১ দফা দাবিতে নাগরিক সমাবেশ করেছে অধিকারভিত্তিক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘আমরা ফেনীবাসী'।

শনিবার (১০ মে) ফেনী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও ধারণাপত্র পাঠ করেন ‘আমরা ফেনীবাসী’র প্রধান সংগঠক বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যপক ড.

আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার‌। সংগঠনের মুখপাত্র সাংবাদিক বুরহান ফয়সালের পরিচালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্ল্যাটফর্মের সহকারী প্রধান সংগঠক কেফায়েত শাকিল।

নাগরিক সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফেনী বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্ব বহনকারী এই জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস।

বক্তারা বলেন, চব্বিশের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। প্রাণহানি ঘটে ২৯ জন মানুষের। বন্যার ভয়াবহতা দৃশ্যমান হওয়ার পরও পরশুরামের বল্লামুখা বাঁধসহ অন্যান্য বাঁধের টেঁকসই বাঁধ নির্মাণ ও মুছাপুর ক্লোজার পুনঃনির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। এতে করে আবারো বন্যাকবলিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে ফেনীবাসী।

বন্যার এতদিন অতিবাহিত হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের শতভাগ পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হয়নি। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছে হাজারো মানুষ। দ্রুত টেঁকসই বাঁধ নির্মাণ ও মুছাপুর ক্লোজার পুনঃনির্মাণের পাশাপাশি বন্যার পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে হবে।বিশেষ করে বোট, লাইফজ্যাকেট ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ে প্রশিক্ষিত টিম গঠন করার জোর দাবি জানানো হয় নাগরিক সমাবেশে।

ফেনী এবং পাশ্ববর্তী জেলার অর্ধকোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ফেনীতে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কোনো বিকল্প নেই। সবদিক থেকে উর্বর হয়েও মেডিকেল কলেজ থেকে ফেনীবাসী বঞ্চিত। এই অঞ্চল শিক্ষার প্রসারে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। পাশ্ববর্তী জেলাসমূহে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলেও ফেনীর মানুষ স্বাস্থ্য সেবা ও উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সমাবেশে বক্তারা অনতিবিলম্বে ফেনীতে মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জোর দাবি জানান।

বক্তারা আরো বলেন, ফেনীকে দেশের নাভী বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে ফেনীর বিভিন্ন সীমান্তে নানা উত্তেজনা বিরাজ করলেও এই অঞ্চলে কোনো সেনানিবাস বা সেনা ব্রিগেড নেই। এতে করে ফেনীবাসী তথা দেশের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অনতিবিলম্বে ফেনীতে সেনা ব্রিগেড স্থাপন করতে হবে। এছাড়া দেশের নিরাপত্তা ও ভারতের আগ্রাসী মনোভাব বিবেচনায় নিয়ে সোনাগাজী-মিরসরাইতে ভারতকে দেওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিলের দাবি জানানো হয় সমাবেশে।

এতে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জিয়া উদ্দিন মিস্টার, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির শিক্ষাবিদ অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূইয়া, সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, সাংবাদিক আব্দুর রহিম, ফেনী সাংবাদিক ফোরাম ঢাকা সাধারণ সম্পাদক ও ডিবিসি নিউজের এসাইনমেন্ট এডিটর আদিত্য আরাফাত, জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক আবু ইউসুফ, কানাডা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এসএম হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম বাদল, খেলাফত মজলিস ফেনী জেলার সভাপতি মাওলানা মোজাফফর আহমদ, ইসলামি ব্যাংকের এভিপি মনসুরুল আলম, ক্রনিক ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডা. হুমায়ুন কবির চৌধুরী, জেলা জামায়তের প্রচার সম্পাদক আনম আব্দুর রহিম, এনসিপি ফেনী জেলা সংগঠক শাহ ওয়ালী উল্যাহ মানিক, সংগঠক মোর্শেদ আলম, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক ওসমান গনি রাসেল, পরিবেশ ক্লাব অব ইয়ুথ নেটওয়ার্ক এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নজরুল বিন মাহমুদুল, এসবি প্রিয় ও  ইসমাইল হোসেন ভূঞা‌ প্রমুখ।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ড ক ল কল জ ও বন য র বক ত র স গঠক

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধানমন্ত্রিত্ব মেয়াদ, উচ্চকক্ষ ও এনসিসি, ‘একই প্যাকেজে’ আলোচনা চায় বিএনপি

প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদের সঙ্গে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) এবং সংসদের উচ্চকক্ষ গঠিত হলে তার কাজ কী হবে, এসব বিষয় ‘একই প্যাকেজে’ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে বিএনপি।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে আজ রোববার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে দলের এ অবস্থানের কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘অন্ততপক্ষে এনসিসি ও উচ্চকক্ষের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদের সঙ্গে একই প্যাকেজে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে এলে সুবিধা হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী দুই দিন (রাজনৈতিক দলের নেতারা) দলের মধ্যে আলোচনা করে যার যার দলীয় অবস্থান কমিশনের পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত আকারে জানাবেন। তারপর আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

এর আগে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনের আলোচনা শুরু হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে এ দিনের আলোচনা শেষে রাজনৈতিক দলগুলো আলাদাভাবে সংবাদ ব্রিফিং করে।

একজন ব্যক্তি কয় মেয়াদে বা কত বছর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে বিভিন্ন ব্যাখ্যা এসেছে বলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না বলে প্রস্তাব দিয়েছি; কিন্তু এখানে অনেক ব্যাখ্যা আছে। পরপর একই ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হবেন না, সেটা ঠিক। পরপর দুই মেয়াদের পরে গ্যাপ দিয়ে যদি একই দল বা জোট ম্যান্ডেট পায়, তখন তারা একই ব্যক্তিকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে পারেন। এটাও যৌক্তিক ব্যাখ্যা।’

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নিজের করা প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি প্রস্তাব করেছিলাম, আমরা কয় মেয়াদ এবং কয় বার—এই বিতর্কে না থেকে সর্বোচ্চ এক ব্যক্তি তাঁর জীবনে কত বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্বে বহাল থাকতে পারবেন। তিন মেয়াদে হোক, চার মেয়াদে হোক, সর্বোচ্চ বছর উল্লেখ করতে পারলে, (যেমন:) একজন লোক তাঁর জীবনে এত বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। আমি নির্দিষ্ট বছর উল্লেখ করিনি, তার কারণ সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এককভাবে আমার নেই। যদি হাউস একটা মেয়াদ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা নিয়ে আমাকে দলীয় ফোরামে আলোচনা করতে হবে।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘উচ্চকক্ষে প্রোপরশনেট নির্বাচনের কথা বলা আছে। তখন উচ্চকক্ষে একটা সাধারণ বিল পাস করতে গেলে ৫০ শতাংশ সমর্থন লাগবে। সংবিধান সংশোধন করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন লাগবে। তখন কেউ কোনো দিন দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পাবে না। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্যদের গোপন ব্যালটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হতে পারে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আইনে নির্ধারণ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ এবং স্থায়িত্বের বিষয়টি জড়িত।’

সংবিধানের মূলনীতি বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘হাউসে যাঁরা আলোচনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ পঞ্চদশ সংশোধনীতে যেভাবে আছে, সেটার পক্ষে। আমরা স্পষ্টতই বলেছি, এই সংশোধনী হাইকোর্টে যেভাবে চ্যালেঞ্জড হয়েছে, আমরা এর পুরো অংশ বিলুপ্তি চেয়েছি। হাইকোর্টের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। কাজেই সেটা সংসদে সিদ্ধান্ত হবে, সেটাই স্বাভাবিক।’

বিএনপি পঞ্চম সংশোধনীতে বহাল থাকতে চায় উল্লেখ করে দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সেখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আছে, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। তার সঙ্গে আমরা ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির মধ্যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং গণতন্ত্রকে যোগ করব।’ এখনো এসব বিষয় চূড়ান্ত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবগুলো বললাম। যদি জাতীয় ঐকমত্যে না আসা যায়, ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে এসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে—এমনটি বলা যাচ্ছে না।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতি আমাদের কাছে অনেক বেশি আশা করে। আমরা রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে সারা দিন আলোচনা করে রাজনীতিবিদেরা একটা জায়গায় না আসতে পারলে সেটা হতাশাব্যঞ্জক হবে। আমি এখনো হতাশা ব্যক্ত করতে চাই না। আমি আহ্বান করব, আমরা যেন এসব বিষয়ে ন্যূনতম ঐকমত্যে আসতে পারি। তাহলে রাজনীতিবিদদের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে তিনজনের ফাঁসি
  • সিলেট হেফাজতে বিরোধ, পাল্টা কমিটি ঘোষণা
  • রাজনৈতিক বিবেচনায় কাজ পেয়ে যাবেন, এটা আর হবে না
  • শিক্ষার্থীকে শিকল পরানো সেই শিক্ষক বহিষ্কার
  • আরাকান আর্মির বাধায় সাগরে যেতে ভয় টেকনাফের জেলেদের
  • স্বজন ভেবে লাশ নিয়ে এলেন, গোসল করালেন, এরপর যা ঘটল
  • কাশিমপুর কারাগারে এক হাজতির মৃত্যু
  • সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ
  • প্রধানমন্ত্রিত্ব মেয়াদ, উচ্চকক্ষ ও এনসিসি, ‘একই প্যাকেজে’ আলোচনা চায় বিএনপি
  • আ.লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচ নেতা এলডিপিতে