ফেনীতে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও সেনা ব্রিগেড দাবি
Published: 10th, May 2025 GMT
ফেনীসহ পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে চব্বিশের বন্যার পুনর্বাসন ও আসন্ন বর্ষা মওসুমে বন্যা ঠেকানোর প্রস্তুতির তথ্য প্রকাশ, ফেনীতে মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, সেনা ব্রিগেড স্থাপন, ভারতকে দেওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল সুবিধা বাতিল, অবিলম্বে মুছাপুর ক্লোজার পুনঃনির্মাণ, লালপোলে ফ্লাইওভার, আন্তঃনগর ট্রেনে ফেনীর জন্য আসন বাড়ানো, সকল খাল ও জলাধার পুনরুদ্ধারসহ ১১ দফা দাবিতে নাগরিক সমাবেশ করেছে অধিকারভিত্তিক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘আমরা ফেনীবাসী'।
শনিবার (১০ মে) ফেনী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও ধারণাপত্র পাঠ করেন ‘আমরা ফেনীবাসী’র প্রধান সংগঠক বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যপক ড.
নাগরিক সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফেনী বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্ব বহনকারী এই জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস।
বক্তারা বলেন, চব্বিশের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। প্রাণহানি ঘটে ২৯ জন মানুষের। বন্যার ভয়াবহতা দৃশ্যমান হওয়ার পরও পরশুরামের বল্লামুখা বাঁধসহ অন্যান্য বাঁধের টেঁকসই বাঁধ নির্মাণ ও মুছাপুর ক্লোজার পুনঃনির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। এতে করে আবারো বন্যাকবলিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে ফেনীবাসী।
বন্যার এতদিন অতিবাহিত হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের শতভাগ পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হয়নি। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছে হাজারো মানুষ। দ্রুত টেঁকসই বাঁধ নির্মাণ ও মুছাপুর ক্লোজার পুনঃনির্মাণের পাশাপাশি বন্যার পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে হবে।বিশেষ করে বোট, লাইফজ্যাকেট ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ে প্রশিক্ষিত টিম গঠন করার জোর দাবি জানানো হয় নাগরিক সমাবেশে।
ফেনী এবং পাশ্ববর্তী জেলার অর্ধকোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ফেনীতে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কোনো বিকল্প নেই। সবদিক থেকে উর্বর হয়েও মেডিকেল কলেজ থেকে ফেনীবাসী বঞ্চিত। এই অঞ্চল শিক্ষার প্রসারে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। পাশ্ববর্তী জেলাসমূহে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলেও ফেনীর মানুষ স্বাস্থ্য সেবা ও উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সমাবেশে বক্তারা অনতিবিলম্বে ফেনীতে মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জোর দাবি জানান।
বক্তারা আরো বলেন, ফেনীকে দেশের নাভী বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে ফেনীর বিভিন্ন সীমান্তে নানা উত্তেজনা বিরাজ করলেও এই অঞ্চলে কোনো সেনানিবাস বা সেনা ব্রিগেড নেই। এতে করে ফেনীবাসী তথা দেশের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অনতিবিলম্বে ফেনীতে সেনা ব্রিগেড স্থাপন করতে হবে। এছাড়া দেশের নিরাপত্তা ও ভারতের আগ্রাসী মনোভাব বিবেচনায় নিয়ে সোনাগাজী-মিরসরাইতে ভারতকে দেওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিলের দাবি জানানো হয় সমাবেশে।
এতে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জিয়া উদ্দিন মিস্টার, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির শিক্ষাবিদ অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূইয়া, সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, সাংবাদিক আব্দুর রহিম, ফেনী সাংবাদিক ফোরাম ঢাকা সাধারণ সম্পাদক ও ডিবিসি নিউজের এসাইনমেন্ট এডিটর আদিত্য আরাফাত, জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক আবু ইউসুফ, কানাডা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এসএম হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম বাদল, খেলাফত মজলিস ফেনী জেলার সভাপতি মাওলানা মোজাফফর আহমদ, ইসলামি ব্যাংকের এভিপি মনসুরুল আলম, ক্রনিক ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডা. হুমায়ুন কবির চৌধুরী, জেলা জামায়তের প্রচার সম্পাদক আনম আব্দুর রহিম, এনসিপি ফেনী জেলা সংগঠক শাহ ওয়ালী উল্যাহ মানিক, সংগঠক মোর্শেদ আলম, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক ওসমান গনি রাসেল, পরিবেশ ক্লাব অব ইয়ুথ নেটওয়ার্ক এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নজরুল বিন মাহমুদুল, এসবি প্রিয় ও ইসমাইল হোসেন ভূঞা প্রমুখ।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ড ক ল কল জ ও বন য র বক ত র স গঠক
এছাড়াও পড়ুন:
রাজ্জাক-ছফার এক জীবন
মহাকবি আলাওল লিখেছেন, ‘গুরু মুহম্মদে করি ভক্তি, স্থানে স্থানে প্রকাশিত নিজ মনোউক্তি’। ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটির বৈশিষ্ট্য আহমদ ছফা নিজেই শনাক্ত করেছেন আলাওলের লেখা এই পঙ্ক্তি দিয়ে। ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বইটি প্রকাশের আগে দৈনিক বাংলা বাজার পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে দীর্ঘ চার মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল এই লেখা। অনেকেই সেই সময়ে লেখাটির প্রশংসা করেছিলেন। অনেকেই বলেছিলেন, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের জবানিতে লেখা কথাগুলো আহমদ ছফা নিজে বানিয়ে বানিয়ে লিখেছেন। অবশ্য মুখবন্ধে লেখক দাবি করেছেন, ‘আমার শিক্ষক অধ্যাপক রাজ্জাকের অনন্য ব্যক্তিত্বের মহিমা আমি যেভাবে অনুভব করেছি, অন্তত তার কিছুটা উত্তাপ দশজনের কাছে প্রকাশ করি।’
‘যদ্যপি আমার গুরু’ বই হিসেবে প্রকাশের সময় অধ্যাপক রাজ্জাক বেঁচে ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৭০ সাল থেকে নিয়মিত অধ্যাপক রাজ্জাকের কাছে যাওয়া-আসা করতেন আহমদ ছফা। তাঁর ভাষায়, তাঁর কাছে অধ্যাপক রাজ্জাক ‘একদিনের জন্যও পুরানো হয়ে যাননি’। অধ্যাপক রাজ্জাকের বহুমাত্রিক দিক পাঠকের কাছে উন্মোচন করেছেন লেখক। সমালোচক-পণ্ডিতেরা এমনটাই মনে করেন।
অধ্যাপক রাজ্জাকের সংস্পর্শে এসে মানুষ হিসেবে চিন্তার কাঠামো-দেখার ভঙ্গি বদলে গিয়েছে—এ কথা নিঃসংকোচেই বলেছেন লেখক। অধ্যাপক রাজ্জাককে পিএইচডির সুপারভাইজার হিসেবে চেয়েছিলেন ছফা। এই অনুরোধ থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ইতি টেনে শুরু হয় গুরু-শিষ্যের জ্ঞানজগতের সম্বন্ধ। যদিও বইটিতে ছফা উল্লেখ করেছেন, প্রচলিত নিয়ম ভেঙে সুযোগ দেওয়ার পরও তাঁর পক্ষে পিএইচডি করা সম্ভব হয়নি। পিএইডি শেষ করতে না পারার কারণ হিসেবে তিনি অধ্যাপক রাজ্জাকেই দায়ী করেছেন।
যদ্যপি আমার গুরু, আহমদ ছফা, প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮