সুন্দরবনের চরে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৮ জন এখনো বন বিভাগের ক্যাম্পে
Published: 10th, May 2025 GMT
সাতক্ষীরার শ্যামনগর–সংলগ্ন পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) রেখে যাওয়া ৭৮ জন এখনো বন বিভাগের আশ্রয়ে আছেন। ঘটনার ৩৪ ঘণ্টা পর আজ শনিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তাঁরা বন বিভাগের মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পেই অবস্থান করছিলেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার ভোরে বঙ্গোপসাগর–সংলগ্ন সুন্দরবনের গহিনে মান্দারবাড়িয়া এলাকার চরে কয়েকটি স্পিডবোট থেকে ৭৮ জনকে রেখে যায় বিএসএফ। সকাল ৯টার দিকে বন বিভাগের মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যান। বিষয়টি পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জানানো হয়।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে ৭৮ জনকে বাংলাদেশের নাগরিক বলে নিশ্চিত করা হলেও গতকাল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে শুক্রবার জানানো হয়, তাঁরা বাংলাদেশি কি না, তা যাচাই করে দেখা হবে। আজ শনিবার বলা হয়, বিষয়টি বিজিবির বিশেষায়িত কোম্পানি ‘রিভারাইন বর্ডার গার্ড’ (আরবিজি) দেখছে। তারাই বিস্তারিত বলতে পারবে। বন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে আরবিজি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেছেন।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, গতকাল সকাল নয়টার দিকে বন বিভাগের মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পের সদস্যরা ওই ৭৮ জনকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, তাঁরা বাংলাদেশি। বিষয়টি পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জানানো হয়। আজ সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তাঁরা মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।
সাতক্ষীরার নীলডুমুর ১৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাজিব মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আরজিবি দেখছে। তারা বিস্তারিত বলতে পারবে। এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে বঙ্গোপসাগরে কর্মরত ৮ আরবিজি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুর রউফের সরকারি মুঠোফোন নম্বরে চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
বন বিভাগের কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে আরজিবি কর্মকর্তারা গেছেন। মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুনসুন্দরবনের চরে ৭৮ জনকে রেখে গেছে বিএসএফ, দিনাজপুর সীমান্তে ৯ জনকে হস্তান্তর০৯ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ম ন দ রব ড় য় স ন দরবন র বন ব ভ গ র কর মকর ত ব এসএফ ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের খালে নৌকায় ‘হিমায়িত’ ৪৮ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার
রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের গহিন বনে হরিণ শিকার করে মাংস নিয়ে ফিরছিলেন একদল শিকারি। সত্যপীরের খাল পেরিয়ে শাকবাড়িয়া নদী ধরে নৌকাটি যখন লোকালয়ের দিকে এগোচ্ছিল, তখন হাজির হন কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা। তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে এক শিকারি নদীর তীরে লাফিয়ে পালিয়ে যান, আরেকজন ধরা পড়েন।
ওই নৌকা থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ঝুড়ি ও চারটি কর্কশিটে বরফে রাখা প্রায় ৪৮ কেজি হরিণের মাংস ও ৮০ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া নদীর তীরে এ ঘটনাটি ঘটে। আজ মঙ্গলবার সকালে আটক ব্যক্তি ও উদ্ধার করা মাংস নিয়ে বনরক্ষীরা ফিরে আসেন কয়রার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট কার্যালয়ে।
আজ সকালে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শাকবাড়িয়া নদীতে টহল দিচ্ছিলাম। নদীর এক পাশে লোকালয়, অন্য পাশে সুন্দরবন। হঠাৎ দেখি, একটি নৌকায় দুজন ব্যক্তি সন্দেহজনকভাবে বসে আছেন। কাছে যেতেই একজন নদীর তীরে লাফিয়ে পালান, অন্যজনকে আটক করি। নৌকায় বরফে ঢাকা পাত্রে হরিণের মাংস ও মাছ ছিল। সেখানে সুন্দরবনে মাছ ধরার বড় চরেপাতা জালও পাওয়া গেছে।’
আটক ব্যক্তির নাম দিদারুল ইসলাম (৩৫)। তাঁর বাড়ি কয়রার মহারাজপুর গ্রামে। পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ১ নম্বর কয়রা গ্রামের মনিরুল ইসলাম সরদার। বন বিভাগ জানিয়েছে, এ ঘটনায় কয়রা বন আদালতে মামলা করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশে উদ্ধার করা হরিণের মাংস বিনষ্ট করা হবে। জব্দ করা মাছগুলো ইতিমধ্যে পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, লোকালয়ের পাশের ছোট নদী পেরোলেই গহিন জঙ্গল। শিকারিরা সাধারণত কোনো প্রস্তুত ফাঁদ বহন করে নিয়ে যান না। মাছ ধরার জালের সঙ্গে দড়ি নিয়ে বনে যান। সেই দড়ি ব্যবহার করে নিজেরাই বানান ‘ডোয়া’ নামের ফাঁদ। হরিণের চলাচলের পথে এই ফাঁদ পেতে রাখা হয়। হরিণ ফাঁদে আটকা পড়লে তাঁরা বনরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জবাই করে মাংস লোকালয়ে এনে বিক্রি করেন। পরে ফাঁদগুলো মাটির নিচে পুঁতে রেখে যান, যাতে আবার ব্যবহার করা যায়।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ‘হরিণ শিকারের বিষয়ে আমাদের অবস্থান সম্পূর্ণ “জিরো টলারেন্স”। শিকার হওয়ার পর মাংস উদ্ধার কোনো সাফল্য নয়, প্রকৃত সাফল্য হলো শিকার হওয়ার আগেই হরিণকে রক্ষা করা। আমরা হরিণের মাংসের ক্রেতা, বিক্রেতা ও শিকারিদের চিহ্নিত করছি এবং গোয়েন্দা তৎপরতা আরও জোরদার করেছি। অপরাধ উদ্ঘাটনে তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রেখে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।’