যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রোববার চতুর্থ দফায় আলোচনায় বসছে ইরান
Published: 10th, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চতুর্থ দফায় পরমাণু আলোচনায় বসছে ইরান। রোববার ওমানে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি শুক্রবার এই কথা জানিয়েছেন। উভয় দেশের মধ্যে নতুন পারমাণবিক আলোচনায় অগ্রগতি রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক বক্তব্যে আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘আলোচনা এগিয়ে চলছে। স্বাভাবিকভাবে আমরা যতই এগোচ্ছি, ততই বেশি পরামর্শ ও পর্যালোচনার প্রয়োজন হচ্ছে।’
‘বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখতে প্রতিনিধিদলগুলোর আরও সময় লাগছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা ইতিবাচক অগ্রগতির পথে রয়েছি এবং ধীরে ধীরে খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রবেশ করছি।’
রোববার ওমানের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও অংশ নিতে পারেন। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্রাইটবার্ট নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি বলেছেন, ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তাঁরা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চান না। যুক্তরাষ্ট্র ‘তাঁদের এই কথা আস্থায়’ নেবে।
উইটকফ বলেন, ‘যদি তাঁদের [ইরানিদের] মনোভাব সত্যিই এমন হয়, তাহলে তাঁদের [ইউরেনিয়াম] সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। তাঁদের সেন্ট্রিফিউজ থাকা চলবে না। সেখানে থাকা সমস্ত জ্বালানি কম ঘনত্বে রূপান্তর করে দূরের কোনো স্থানে পাঠাতে হবে। যদি তারা বেসামরিক [পারমাণবিক] কর্মসূচি চালাতে চায়, তবে সেটিকে পূর্ণাঙ্গভাবে বেসামরিক রূপে রূপান্তর করতে হবে।’
আগের তিন দফার মতো যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এবারের আলোচনাও হবে পরোক্ষ। চতুর্থ দফার আলোচনা ৩ মে ইতালির রাজধানী রোমে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে’ তা স্থগিত করা হয়েছিল বলে জানিয়েছিল ওমান। এসব আলোচনায় মূলত ওমানই মধ্যস্থতা করছে।
শুক্রবার এক আলাদা বিবৃতিতে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ বদর আল–বুসাইদি বলেন, ‘ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ের’ পর চতুর্থ দফার আলোচনার নতুন তারিখ ঠিক করা হয়েছে। এই আলোচনা রোববার ওমানের রাজধানী মাসকটে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে আব্বাস আরাগচি আজ শনিবার কাতার ও সৌদি আরব সফর করেন। সেখানে দুই দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পারমাণবিক বিষয়ে আলোচনা করেন।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করেছিল ইরান। ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নজরদারি করার জন্য এই চুক্তি করা হয়, যাতে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে। চুক্তি করার বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে একতরফা বের হয়ে যান। ফলে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে জীবনযাপনে সুস্থ ধারা বজায় রাখা জরুরি
উচ্চ রক্তচাপের কারণে প্রতিবছর অনেক মানুষ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। তাই এ বিষয়ে সচেতনতার বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। এ জন্য জীবনযাপনে সুস্থ ধারা বজায় রাখাতে হবে।
বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে ১৭ মে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের আয়োজনে বিশেষজ্ঞ মতামত সভায় বিশেষজ্ঞরা এ মত দেন। এতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং সঠিক ওষুধ নিয়মিত গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আয়োজনটির সায়েন্টিফিক পার্টনার ছিল ‘কার্ডোবিস’ ও ‘টেমস-এ’।
এ বছর বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব জেরিয়াট্রিক কার্ডিওলজির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল সাফী মজুমদারের সঞ্চালনায় বিশেষ এই আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন, বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খালেকুজ্জামান, ইউনিট হেড অধ্যাপক ডা. মো. তৌফিকুর রহমান এবং ডা. মোহাম্মদ উল্লাহ ফিরোজ; ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. খন্দকার কামরুল ইসলাম, এভারকেয়ার হাসপাতালের চিফ কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. আতাহার আলী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. অশোক কুমার দত্ত, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের নির্বাহী পরিচালক (বিপণন) ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রাহমান এবং সহকারী ব্যবস্থাপক ডা. মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন।
আলোচনার শুরুতেই অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল সাফী মজুমদার জানতে চান, উচ্চ রক্তচাপ বলতে আসলে কী বোঝায় এবং একে কেন নীরব ঘাতক বলা হয়?
উত্তরে অধ্যাপক ডা. অশোক কুমার দত্ত বলেন, ‘রক্তচাপ যদি ১২০/৮০-এর মধ্যে থাকে, তাহলে এটি স্বাভাবিক। কিন্তু ১৩০–এর বেশি উঠে গেলেই সেটি উচ্চ রক্তচাপ। আবার নিচেরটাও যদি বেশি থাকে, তখন সেটিও উচ্চ রক্তচাপ। আর একে নীরব ঘাতক বলার কারণ হলো, ৫০ শতাংশ মানুষ জানেনই না যে তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না।’
উচ্চ রক্তচাপের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও মাথাব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, কাজে অনীহা, বুকে ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে জীবনযাত্রার দিকে নজর দেওয়া জরুরি। যেমন অতিরিক্ত লবণ না খাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার না খাওয়া, ধূমপান না করা ও চর্বিজাতীয় খাবার না খাওয়া। নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে জানান অধ্যাপক ডা. খন্দকার কামরুল ইসলাম।
কত দিন পর পর রক্তচাপ মাপা উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ডা. মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের প্রতিদিন সকালে একবার এবং রাতে একবার রক্তচাপ মাপা উচিত। তবে এখন ডিজিটাল মেশিনেই রক্তচাপ মাপা ভালো। কারণ, অ্যানালগ যে মেশিনগুলো রয়েছে, সেগুলোতে রক্তচাপ সঠিকভাবে কেবল তাঁরাই মাপতে পারেন, যাঁদের এই মেশিনগুলো চালানোর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।’
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কি সব সময় ওষুধ গ্রহণ জরুরি? উপস্থাপকের এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন বলেন, ‘যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের জীবনযাত্রার দিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া জরুরি। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই যেকোনো ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।’
আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, ‘সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো নিয়মিত রক্তচাপ মাপা। অনেকেই মনে করেন উচ্চ রক্তচাপের রোগী হলেই কেবল রক্তচাপ মাপতে হবে। তবে বয়স ৩৫-এর বেশি হলে বছরে একবার হলেও রক্তচাপ মাপতে হবে। তবে একবার রক্তচাপ মেপেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে না যে আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে। এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে কয়েকবার রক্তচাপ মেপে দেখতে হবে। আর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুটি ব্যাপারে খেয়াল রাখলেই হয়। একটি হলো জীবনযাত্রা, অন্যটি হলো ওষুধ। জীবনযাত্রার মান ঠিক রাখতে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করতে হবে, অতিরিক্ত চর্বি ও লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, শাকসবজি খেতে হবে এবং পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপ এড়াতে অবশ্যই ধূমপান ও তামাক থেকে দূরে থাকতে হবে।’