ভুক্তভোগী নারীকে মামলার আগে মধ্যস্থতায় যেতে হবে
Published: 5th, July 2025 GMT
যৌতুকের কারণে সাধারণ জখমের শিকার নারীদের এখন থেকে মামলার আগে মধ্যস্থতায় যেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ সংশোধন করে মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করে ১ জুলাই অধ্যাদেশ জারি করে।
অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রথমে ভুক্তভোগী নারীকে লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করতে হবে। মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে কোনো পক্ষ প্রয়োজনে আদালতে মামলা করতে পারবে।
‘আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারির পর এ নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে নানা মত উঠে এসেছে। আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের অনেকের মতে, এই সংশোধন নারীর মামলা করার আইনি অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করবে। ভুক্তভোগীকে অপরাধীর সঙ্গে আপস করতে বাধ্য করবে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের মতে, অধ্যাদেশের ধারাটি নারীর অধিকারকে ব্যাহত করবে না, বরং সুসংহত করবে। কারণ, যৌতুকের জন্য সাধারণ জখমের অপরাধটি উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ২০২০ সালে আপসযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। এই আপস প্রক্রিয়াকে অর্থবহ করতে মধ্যস্থতার জন্য নতুন বিধান আনা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের মামলাগুলো আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করা নারীদের জন্য কঠিন ছিল। মামলা দায়ের ও তদন্তপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় ব্যয় হতো এবং মামলা চালাতে খরচ হতো বলে নারীরা নিজেরাই একপর্যায়ে আপস চাইতেন। এখন শুরুতেই লিগ্যাল এইড অফিসে গেলে বিনা খরচে নারীরা কম সময়ের মধ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে আপস করার সুযোগ পাবেন। নতুন আইনে লিগ্যাল এইড অফিসে আবেদনের যে বিধানটি আনা হয়েছে, এটিও একটি আইনি প্রক্রিয়া। এতে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সময় ব্যয় হতে পারে। আর আপস ব্যর্থ হলে ভুক্তভোগী নারীর মামলা দায়েরের অধিকার অবশ্যই বহাল থাকছে।
অধ্যাদেশে যৌতুক নিয়ে যেসব সংশোধন হয়েছেআইনের ২১(খ) ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এর শিরোনাম, ‘কতিপয় ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা (প্রি কেস মেডিয়েশন) প্রক্রিয়ার উদ্যোগ গ্রহণ’। এই ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বিষয়ে এই আইনের বিধানাবলি কার্যকর হবে।
(২) উপধারায় বলা হয়েছে, বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে, সংক্ষুব্ধ পক্ষকে অবশ্যই প্রথমে লিগ্যাল এইড অফিসে মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে আবেদন করতে হবে এবং মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে কোনো পক্ষ প্রয়োজনে উপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন।
সংশোধিত অধ্যাদেশের এই ধারা ৯টি আইনের সুনির্দিষ্ট কিছু ধারার ওপর প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০–এর ১১ (গ) ধারা এবং যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮–এর ৩ ও ৪ ধারা।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০–এর ১১ ধারাটি যৌতুক–সংক্রান্ত। ১১ (গ) ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য নারীকে সাধারণ জখম (সিম্পল হার্ট) করে, তবে ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর, অন্যূন দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
শুরুতেই লিগ্যাল এইড অফিসে গেলে বিনা খরচে নারীরা কম সময়ের মধ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে আপস করার সুযোগ পাবেন। আপস ব্যর্থ হলে ভুক্তভোগী নারীর মামলা দায়েরের অধিকার অবশ্যই বহাল থাকছে অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টা।আর যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮–এর ৩ ধারায় যৌতুক দাবি করার দণ্ড এবং ৪ ধারায় যৌতুক প্রদান বা গ্রহণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধানের কথা বলা আছে।
অপর দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ গত ২৫ মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছে। এই অধ্যাদেশে ৩৫ ধারা সংযোজন করে বলা হয়েছে, যৌতুকের কারণে সাধারণ জখমের ১১ (গ) ধারায় করা মামলা এখন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হবে। ১১ (গ) ধারায় বর্ণিত অপরাধ প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট গ্রহণ করবেন ও বিচার করবেন। তবে এই অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার আগে ১১ (গ) ধারায় মামলা যেভাবে পরিচালিত হচ্ছিল, সেভাবেই হবে। ওই সব মামলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বদলি হবে না। এ ধারার মামলা আগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পরিচালনা হতো।
নারীর আইনি অধিকার বাধাগ্রস্ত হবেআইন বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ ফউজুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অধ্যাদেশটিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০–এর ১১ (গ) ধারার অপরাধটিকে বাধ্যতামূলক মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার আওতায় আনা হয়েছে। যাতে নারীর ন্যায়বিচারের অভিগম্যতা বাধা হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা আছে। এই ধারার ভুক্তভোগীকে ৩২ ধারা অনুযায়ী সরকার অনুমোদিত হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা ও সনদ নিতে হবে, হাসপাতাল থেকে তাঁকে থানায় পাঠানো হবে। তিনি প্রশ্ন করেন, এখন নতুন ব্যবস্থায় ভুক্তভোগী কোথায় যাবেন? হাসপাতালে না লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার কাছে? যদি নতুন বিধান অনুসারে লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার কাছে ভুক্তভোগী যান, তাহলে চিকিৎসা সনদ না থাকার কারণে পরে সাধারণ জখমের অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে না।
ফউজুল আজিম বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ হচ্ছে বিশেষ আইন। এই আইনে নারীকে দ্রুত বিচার পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ১১ (গ) ধারার মাধ্যমে যৌতুকের কারণে সাধারণ জখম হলেও এটাকে অপরাধ হিসেবে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এর বিপরীতে অধ্যাদেশে ২১ (খ) ধারা যুক্ত করে বিচারপ্রার্থী নারীকে মধ্যস্থতার দিকে ঠেলে দেওয়ার মানে হচ্ছে তাঁকে আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং নির্যাতনকারী ব্যক্তির সঙ্গে আপস করতে বাধ্য করা।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের আইনজীবী নাহিদ শামস্ প্রথম আলোকে বলেন, প্রচলিত আইনে যৌতুকের কারণে সাধারণ জখমকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। জখম হালকা হলেও এটা নির্যাতন। এ ধরনের অপরাধে ভুক্তভোগী নারীকে মধ্যস্থতার দিকে ঠেলে দিলে যৌতুকের কারণে নির্যাতন বেড়ে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী নাহিদ শামস্ বলেন, অধ্যাদেশ অনুসারে মধ্যস্থতা ব্যর্থ হলে দুই পক্ষকেই প্রয়োজনে আদালতে মামলা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে অভিযুক্তও কি ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন?
এ বিষয়ে ফউজুল আজিম বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে গ্রামে সালিস প্রক্রিয়ায় যা হয়, অভিযুক্ত পক্ষ মধ্যস্থতায় আসতে ইচ্ছাকৃত দেরি করে বা আসে না। সে ক্ষেত্রে মধ্যস্থতার জন্য অপেক্ষা করা নারীর যদি মেডিকেল পরীক্ষা না হয়, তাহলে তাঁর সাধারণ জখমের আঘাত চিহ্ন চলে যায়। মধ্যস্থতায় কোনো একটি পক্ষ আপসে রাজি না হলে ওই নারী পরে মামলা করে তাঁর আঘাত প্রমাণ করতে পারেন না। যদি অভিযুক্ত আপস না করেন, তখন কী হবে? ভুক্তভোগীকে আবার আদালতেই যেতে হবে। এতে ভুক্তভোগীর হয়রানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ বিধান অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক র য় র জন য র আইন অপর ধ ন আইন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ভুক্তভোগী নারীকে মামলার আগে মধ্যস্থতায় যেতে হবে
যৌতুকের কারণে সাধারণ জখমের শিকার নারীদের এখন থেকে মামলার আগে মধ্যস্থতায় যেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ সংশোধন করে মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করে ১ জুলাই অধ্যাদেশ জারি করে।
অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রথমে ভুক্তভোগী নারীকে লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করতে হবে। মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে কোনো পক্ষ প্রয়োজনে আদালতে মামলা করতে পারবে।
‘আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারির পর এ নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে নানা মত উঠে এসেছে। আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের অনেকের মতে, এই সংশোধন নারীর মামলা করার আইনি অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করবে। ভুক্তভোগীকে অপরাধীর সঙ্গে আপস করতে বাধ্য করবে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের মতে, অধ্যাদেশের ধারাটি নারীর অধিকারকে ব্যাহত করবে না, বরং সুসংহত করবে। কারণ, যৌতুকের জন্য সাধারণ জখমের অপরাধটি উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ২০২০ সালে আপসযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। এই আপস প্রক্রিয়াকে অর্থবহ করতে মধ্যস্থতার জন্য নতুন বিধান আনা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের মামলাগুলো আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করা নারীদের জন্য কঠিন ছিল। মামলা দায়ের ও তদন্তপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় ব্যয় হতো এবং মামলা চালাতে খরচ হতো বলে নারীরা নিজেরাই একপর্যায়ে আপস চাইতেন। এখন শুরুতেই লিগ্যাল এইড অফিসে গেলে বিনা খরচে নারীরা কম সময়ের মধ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে আপস করার সুযোগ পাবেন। নতুন আইনে লিগ্যাল এইড অফিসে আবেদনের যে বিধানটি আনা হয়েছে, এটিও একটি আইনি প্রক্রিয়া। এতে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সময় ব্যয় হতে পারে। আর আপস ব্যর্থ হলে ভুক্তভোগী নারীর মামলা দায়েরের অধিকার অবশ্যই বহাল থাকছে।
অধ্যাদেশে যৌতুক নিয়ে যেসব সংশোধন হয়েছেআইনের ২১(খ) ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এর শিরোনাম, ‘কতিপয় ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা (প্রি কেস মেডিয়েশন) প্রক্রিয়ার উদ্যোগ গ্রহণ’। এই ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বিষয়ে এই আইনের বিধানাবলি কার্যকর হবে।
(২) উপধারায় বলা হয়েছে, বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে, সংক্ষুব্ধ পক্ষকে অবশ্যই প্রথমে লিগ্যাল এইড অফিসে মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে আবেদন করতে হবে এবং মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে কোনো পক্ষ প্রয়োজনে উপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন।
সংশোধিত অধ্যাদেশের এই ধারা ৯টি আইনের সুনির্দিষ্ট কিছু ধারার ওপর প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০–এর ১১ (গ) ধারা এবং যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮–এর ৩ ও ৪ ধারা।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০–এর ১১ ধারাটি যৌতুক–সংক্রান্ত। ১১ (গ) ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য নারীকে সাধারণ জখম (সিম্পল হার্ট) করে, তবে ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর, অন্যূন দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
শুরুতেই লিগ্যাল এইড অফিসে গেলে বিনা খরচে নারীরা কম সময়ের মধ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে আপস করার সুযোগ পাবেন। আপস ব্যর্থ হলে ভুক্তভোগী নারীর মামলা দায়েরের অধিকার অবশ্যই বহাল থাকছে অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টা।আর যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮–এর ৩ ধারায় যৌতুক দাবি করার দণ্ড এবং ৪ ধারায় যৌতুক প্রদান বা গ্রহণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধানের কথা বলা আছে।
অপর দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ গত ২৫ মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছে। এই অধ্যাদেশে ৩৫ ধারা সংযোজন করে বলা হয়েছে, যৌতুকের কারণে সাধারণ জখমের ১১ (গ) ধারায় করা মামলা এখন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হবে। ১১ (গ) ধারায় বর্ণিত অপরাধ প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট গ্রহণ করবেন ও বিচার করবেন। তবে এই অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার আগে ১১ (গ) ধারায় মামলা যেভাবে পরিচালিত হচ্ছিল, সেভাবেই হবে। ওই সব মামলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বদলি হবে না। এ ধারার মামলা আগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পরিচালনা হতো।
নারীর আইনি অধিকার বাধাগ্রস্ত হবেআইন বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ ফউজুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অধ্যাদেশটিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০–এর ১১ (গ) ধারার অপরাধটিকে বাধ্যতামূলক মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার আওতায় আনা হয়েছে। যাতে নারীর ন্যায়বিচারের অভিগম্যতা বাধা হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা আছে। এই ধারার ভুক্তভোগীকে ৩২ ধারা অনুযায়ী সরকার অনুমোদিত হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা ও সনদ নিতে হবে, হাসপাতাল থেকে তাঁকে থানায় পাঠানো হবে। তিনি প্রশ্ন করেন, এখন নতুন ব্যবস্থায় ভুক্তভোগী কোথায় যাবেন? হাসপাতালে না লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার কাছে? যদি নতুন বিধান অনুসারে লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার কাছে ভুক্তভোগী যান, তাহলে চিকিৎসা সনদ না থাকার কারণে পরে সাধারণ জখমের অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে না।
ফউজুল আজিম বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ হচ্ছে বিশেষ আইন। এই আইনে নারীকে দ্রুত বিচার পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ১১ (গ) ধারার মাধ্যমে যৌতুকের কারণে সাধারণ জখম হলেও এটাকে অপরাধ হিসেবে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এর বিপরীতে অধ্যাদেশে ২১ (খ) ধারা যুক্ত করে বিচারপ্রার্থী নারীকে মধ্যস্থতার দিকে ঠেলে দেওয়ার মানে হচ্ছে তাঁকে আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং নির্যাতনকারী ব্যক্তির সঙ্গে আপস করতে বাধ্য করা।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের আইনজীবী নাহিদ শামস্ প্রথম আলোকে বলেন, প্রচলিত আইনে যৌতুকের কারণে সাধারণ জখমকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। জখম হালকা হলেও এটা নির্যাতন। এ ধরনের অপরাধে ভুক্তভোগী নারীকে মধ্যস্থতার দিকে ঠেলে দিলে যৌতুকের কারণে নির্যাতন বেড়ে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী নাহিদ শামস্ বলেন, অধ্যাদেশ অনুসারে মধ্যস্থতা ব্যর্থ হলে দুই পক্ষকেই প্রয়োজনে আদালতে মামলা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে অভিযুক্তও কি ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন?
এ বিষয়ে ফউজুল আজিম বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে গ্রামে সালিস প্রক্রিয়ায় যা হয়, অভিযুক্ত পক্ষ মধ্যস্থতায় আসতে ইচ্ছাকৃত দেরি করে বা আসে না। সে ক্ষেত্রে মধ্যস্থতার জন্য অপেক্ষা করা নারীর যদি মেডিকেল পরীক্ষা না হয়, তাহলে তাঁর সাধারণ জখমের আঘাত চিহ্ন চলে যায়। মধ্যস্থতায় কোনো একটি পক্ষ আপসে রাজি না হলে ওই নারী পরে মামলা করে তাঁর আঘাত প্রমাণ করতে পারেন না। যদি অভিযুক্ত আপস না করেন, তখন কী হবে? ভুক্তভোগীকে আবার আদালতেই যেতে হবে। এতে ভুক্তভোগীর হয়রানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ বিধান অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা উচিত।