এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহম্মদ এলতাসউদ্দিন মারা গেছেন
Published: 12th, May 2025 GMT
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ এলতাসউদ্দিন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ৯৪ বছর বয়সে গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মুহম্মদ এলতাসউদ্দিনের প্রথম জানাজা গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার জোহরের নামাজের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চাঁদলাই বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে সর্বশেষ জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে পিতার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
মুহম্মদ এলতাসউদ্দিন ১৯৫৫ সালে খুলনার দৌলতপুর কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। এরপর রাজশাহী ও ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ১৪ বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৮২-১৯৮৩ সালে দেড় বছর যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেখান থেকে বদলি হয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। পরে ১৯৮৮ সালে অবসর নেন তিনি। তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বই রচনার পাশাপাশি বেশ কিছু পাঠ্যবই সম্পাদনা করেছেন।
মুহম্মদ এলতাসউদ্দিন ১৯৩১ সালের নভেম্বর মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চাঁদলাই মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চার ছেলে, আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর বড় ছেলে গোলাম মুক্তাদির রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেজ ছেলে আকবর হুসেন অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। দুজনই অবসর নিয়েছেন। সেজ ছেলে আফজাল হুসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের অধ্যাপক ও ছোট ছেলে গোলাম দাস্তগির ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন।
গোলাম মুক্তাদির বলেন, ‘বাবা আমাদের চার ভাইকে সততার শিক্ষা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি একজন নিরহংকার, সহজ–সরল ও প্রচারবিমুখ লোক ছিলেন।’
দাফনের আগে জেলা প্রশাসন, হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সমিতি ও প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষ থেকে মুহাম্মদ এলতাসউদ্দিনকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী
বছর দুয়েক আগেও দেশে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত ও ‘দলছুট’ হিসেবে পরিচিত সাবেক কূটনীতিক শমসের মুবিন চৌধুরীর রাজনৈতিক অবসরের হঠাৎ ঘোষণা ছড়িয়ে পড়েছে রবিবার রাতে।
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশ যখন টালমাটাল তার কয়েক মাস আগে নামকাওয়াস্তে দল ‘তৃণমূল বিএনপি’র নেতৃত্বে আসেন শমসের মুবিন, যার পদ ছিল চেয়ারপার্সন।
আরো পড়ুন:
‘আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’
একটি দল বেহেস্তের টিকিট দেখিয়ে ভোট চাচ্ছে: আমান উল্লাহ
এই দলের মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন বিএনপির নারায়ণগঞ্জের আরেকজন আলোচিত নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। রবিবার (১৬ নভেম্বর) রাতে তৈমূর আলমের কাছে চিঠি দিয়ে রাজনীতিকে বিদায় বলে দিয়েছেন শমসের মুবিন।
শমসের মুবিন ও তৈমূর খন্দকারের নেতৃত্বাধীন ‘তৃণমূল বিএনপি’ ডামি দল হিসেবে আখ্যা পায়। তখন অনেকে বলেছিলেন, বিএনপি ভাঙার অপচেষ্টা হিসেবে দলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাম ও পদ ব্যবহার করে তৃণমূল বিএনপি তৈরি করা হয়েছে। একে অনেকে ‘কিংস পার্টি’ নামে অভিহিত করেছিলেন। বিএনপি-জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনে ঘোষণার পরও তখন বেশ কয়েকটি দল রাতারাতি গজিয়ে ওঠে, যার একটি এই তৃণমূল বিএনপি। এসব দল অভিনব কায়দায় নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আসার চেষ্টা করেছিল।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, বদলে গেছে রাজনীতির হাওয়া; নিষিদ্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। এখন আর তৃণমূল বিএনপি বলে কোনো দলের কার্যক্রম মাঠে দেখা যায় না; শোনা যায় না তাদের দলের নেতাদের নাম। গণমাধ্যমেও তাদের কোনো উপস্থিতি নেই।
এখন নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। অথচ কোথাও শমসের মুবিন চৌধুরীর নাম উচ্চারিত হয় না। রাজনীতির আড়ালেই পড়ে ছিলেন তিনি। হঠাৎ সরব হলেন; তবে রাজনৈতিক বিদায়ের ঘণ্টা ধ্বনি শোনাতেই যেন অচমকা গভীর রাতে গণমাধ্যমে হাজির হলেন তিনি।
তৈমূর খন্দকার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শমসের মুবিন চৌধুরী অনেক দিন ধরেই দলে নিষ্ক্রিয়। তাদের দলও অনেক দিন ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। তিনি (শমসের মুবিন) ফোন করে অবসরের কথা জানিয়েছেন এবং তার কাছে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন।
তৈমূর খন্দকার বরাবর চিঠিতে শমসের মুবিন লিখেছেন, “এই মর্মে আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে সকলকে অবগত করছি যে, শারীরিক কারণে আমি শমসের এম চৌধুরী রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির সকল পদ থেকে আমি পদত্যাগ করিলাম। আমার এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ইং থেকে কার্যকর হইল।”
“আমার উপরে উল্লেখিত সিদ্ধান্ত দলের সংশ্লিষ্ট এবং গণমাধ্যমে অবগত করার জন্য আপনাকে সবিনয় অনুরোধ করিলাম”, লেখেন তিনি।
সাবেক কূটনীতিক শমসের মুবিন চৌধুরী একসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। পরে তিনি বিএনপি ছেড়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামে দলেও যোগ দিয়েছিলেন।
বিকল্পধারা ছেড়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তৃণমূল বিএনপি নামে দলটির চেয়ারপারসন হন শমসের মুবিন।
ঢাকা/রায়হান/রাসেল