ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য উদ্ধৃত করিয়া সোমবার সমকাল জানাইয়াছে, ২০১৯-২০ অর্থবৎসরে উপজেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ২৬ সহস্রাধিক হেক্টর, যাহা ২০২৫ সালে দাঁড়াইয়াছে ২৩ সহস্র হেক্টর অপেক্ষা কিছু বেশি। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ বৎসরে নাসিরনগর উপজেলায় আবাদযোগ্য জমি হ্রাস পাইয়াছে প্রায় তিন সহস্র হেক্টর। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কারণ ইহার সরাসরি ফল হইবে কৃষি উৎপাদন হ্রাস এবং প্রধান খাদ্যশস্য চাউলসহ প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের জন্য বিদেশমুখাপেক্ষিতা বৃদ্ধি। এক কথায় জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ইহা এক প্রকার অশনিসংকেত বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। প্রসঙ্গত, কৃষিজমি হ্রাসের সমস্যা নাসিরনগরেই সীমাবদ্ধ নহে। সমগ্র দেশেই বিবিধ কারণে আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাইতেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের কৃষি শুমারি-২০১৯ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, প্রতিবৎসর দেশে আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাইতেছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হারে। উক্ত শুমারিমতে, ২০০৮ সালে দেশে নিট আবাদি জমি ছিল ১ কোটি ৯০ লক্ষ ৯৭ সহস্র হেক্টর। ২০১৯ সালে উহা হ্রাস পাইয়া দাঁড়ায় ১ কোটি ৮৬ লক্ষ ৮১ সহস্র হেক্টরে। তৎসহিত ন্যায্যমূল্য হইতে ধারাবাহিকভাবে বঞ্চিত হইবার কারণে কৃষকদের মধ্যে বিশেষত ধান উৎপাদনে উৎসাহের ঘাটতি লক্ষ্য করা যাইতেছে। বহু তরুণ উদ্যোক্তা কৃষিতে যুক্ত হইয়াছেন সত্য। তবে উহাদের প্রায় সকলেই মৎস্য বা অন্য কোনো অর্থকরী ফসলের চাষ করিতেছেন। কেহ কেহ রপ্তানির কথা বিবেচনায় লইয়া আলু, ভুট্টা, গম ও টমেটোর ন্যায় ফসল চাষে যুক্ত। রবিশস্যের জমিতে তিল বা সরিষা চাষ হইতেছে। এই অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধানের উৎপাদন যে ক্রমশ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িতেছে, তাহা সাধারণ দৃষ্টিতেই বোঝা যায়। ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাইতেছে, উচ্চফলনশীল বীজ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে ধানসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন গত কয়েক দশকে বৃদ্ধি পাইলেও প্রতি বৎসর খাদ্যপণ্য আমদানিও বৃদ্ধি পাইতেছে। ফলস্বরূপ বিশ্ববাজারে চাউল বা অন্য কৃষিপণ্যের বাজার অস্থির হইলে তাহা আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষিজমি বিদ্যমান হারে হ্রাস পাইতে থাকিলে ভবিষ্যতে একরপ্রতি ফসল উৎপাদন দুই গুণ বা তিন গুণ বৃদ্ধি পাইলেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হইবে না।

প্রতিবেদনমতে, নাসিরনগরে ফসলি জমি হ্রাসের প্রধান কারণসমূহের মধ্যে আছে জলবাযু পরিবর্তন, নদীভাঙন, যত্রতত্র ইটভাটা, সরকারি বিভিন্ন আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, আবাসন সংকট ও বাণিজ্যিক পুকুর খনন। এই কারণসমূহ সমগ্র দেশেই বিদ্যমান। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন এই সমস্যাকে জটিল করিয়া তুলিতেছে। দুঃখজনক হইল, সমস্যাটি নীতিনির্ধারকদের খুব একটা ভাবাইতেছে বলিয়া মনে হইতেছে না। কৃষিজমি রক্ষায় আইন ও সরকারি বিধিবিধান রহিয়াছে। কিন্তু কোনোটারই কার্যকর কোনো প্রয়োগ নাই। তিন ফসলি জমির অকৃষি ব্যবহার বন্ধে গত কয়েক বৎসরে আমরা সরকারের শীর্ষমহলে যতটা বাগাড়ম্বর দেখিয়াছি, তদনুযায়ী কোনো কাজ হইতে দেখা যায় নাই। বর্তমানেও যদি একই ঔদাসীন্য বজায় থাকে, তাহা হইলে আমাদের হতাশার কোনো শেষ থাকিবে না। 
আমরা জানি, বিশেষত করোনাকালে যখন শিল্পোৎপাদন ও সেবা খাত প্রায় স্থবির হইয়া পড়িয়াছিল, তখনও কৃষি এই দেশকে রক্ষা করিয়াছে। অর্থনীতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধিতে কৃষির অবদান সাম্প্রতিক বৎসরগুলিতে হ্রাস পাইলেও এখনও তাহা উল্লেখযোগ্য। কর্মসংস্থানের দিক দিয়াও কৃষির সম্ভাবনা উপেক্ষণীয় নহে। কৃষিজমি রক্ষার বিষয়টি তাই এই সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা প্রয়োজন বলিয়া আমরা মনে করি। সম্পূর্ণ কৃষি খাত লইয়া একটা সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ন গুরুত্বপূর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। তাহারই অংশ হিসাবে আবাদি জমি সংরক্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট হইতে পারে। সরকার অবিলম্বে এই লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হইবে, ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন স রনগর লক ষ য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগরের সামিয়া ইসলামের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেন অক্সফোর্ডকেই বেছে নিলেন

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সামিয়া ইসলাম। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক ছিল, তবে কখনো কোচিং বা প্রাইভেটের ওপর নির্ভর করেননি। বাবার হাত ধরেই তৈরি হয়েছে তাঁর শিক্ষাভিত্তি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে এবার তিনি যাচ্ছেন পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডে। পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পাঁচ বছরের পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়বেন সেখানে।

ঢাবি থেকে জাবি, সেখান থেকে অক্সফোর্ড

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সামিয়া ইসলাম। কিন্তু তাঁর মনে ছিল অর্থনীতি নিয়ে পড়ার স্বপ্ন। তাই এক বছর পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল বিশ্বের প্রথম সারির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। স্নাতকোত্তরের ফলাফল হাতে পাওয়ার আগেই তৈরি করতে শুরু করেছিলেন নিজের প্রোফাইল। অক্সফোর্ড ছাড়াও ইয়েল, ওয়ারউইক ও ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডাক দিয়েছিল। তবে তত্ত্বীয় অর্থনীতিতে বিশেষ আগ্রহ ও গবেষণার পরিবেশ বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত অক্সফোর্ডকেই বেছে নেন।

পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি

শুরু থেকেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগিয়েছেন সামিয়া ইসলাম। স্নাতকে ৩.৯২ ও স্নাতকোত্তরে ৩.৯১ সিজিপিএ অর্জন করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি খুব পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছিলাম না। পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়তাম। তবে ক্লাস কখনো মিস করিনি। নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করাই আমাকে ভালো ফল করতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে।’

একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত গবেষণা কার্যক্রমেও। ইন্টার্নশিপ করেছেন, ভাষাগত পরীক্ষা (আইএলটিএস এবং জিআরই) প্রস্তুতিও নিয়েছেন আগেভাগেই। সব মিলিয়ে আবেদনপ্রক্রিয়ায় শেষ মুহূর্তে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি তাঁকে।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকে ছুটি কমিয়ে ৬০ দিন হচ্ছে: মহাপরিচালক নূর মো. শামসুজ্জামান২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম

গবেষণার ক্ষেত্রেও এগিয়ে ছিলেন সামিয়া ইসলাম। ইতিমধ্যে তাঁর একটি গবেষণাপত্র ও কনফারেন্স পেপার প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে। এ ছাড়া সানেমে ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। পড়াশোনার বাইরে সক্রিয় ছিলেন সহশিক্ষা কার্যক্রমেও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (জিইউডিএস) সহসাধারণ সম্পাদক এবং বিভাগীয় ছাত্র সংসদের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মতে, এসব কার্যক্রম ব্যক্তিগত দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, পাশাপাশি নতুন সুযোগ তৈরি করে।

আরও পড়ুনকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে অনলাইন কোর্স, নেই বয়সের সীমা২২ ঘণ্টা আগে

পরিবারের প্রেরণা

শৈশব থেকেই কোচিং-প্রাইভেটের বদলে বাবার কাছে পড়াশোনা করেছেন সামিয়া ইসলাম। বাবাকেই তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা মনে করেন। সামিয়া বলেন, ‘বাবা আমাকে সব সময় নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগরে আসার ব্যাপারে প্রথমে তাঁর আপত্তি ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার সিদ্ধান্তকেই সম্মান করেছেন। এতে আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি।’

নিজ বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তাও সামিয়ার কাছে বিশেষ প্রাপ্তি। সামিয়া বলেন, ‘আমার শিক্ষকেরা পড়াশোনা ও গবেষণার প্রতিটি ধাপে পাশে থেকেছেন। তাদের সহযোগিতা না পেলে এত দূর আসা কঠিন হতো।’

আরও পড়ুনবেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগে ক্ষমতা হারাল পরিচালনা পর্ষদ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তরুণদের জন্য শিক্ষা

বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সামিয়ার অভিজ্ঞতা একটি পথনির্দেশের মতো। তিনি মনে করেন, আগে ঠিক করতে হবে কোনো বিষয়ে পড়তে চান, তারপর সেই অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি নিতে হবে। একাডেমিক ফল ভালো হলে সুযোগ অনেক বেড়ে যায়, তবে গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমেও যুক্ত থাকা জরুরি। আবেদনপ্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এসওপি–স্টেটমেন্ট অব পারপোজ, যা মনোযোগ দিয়ে লিখতে হবে। আর ভাষাগত পরীক্ষাগুলো আগেভাগেই দিয়ে রাখা উচিত, নয়তো শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়োতে সমস্যা হতে পারে।

আরও পড়ুনজুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি বিশেষ পরামর্শ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভবিষ্যৎ লক্ষ্য

সামিয়া ইসলাম এখনো চূড়ান্তভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করেননি। তবে তিনি অর্থনীতির জগতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চান। স্বপ্ন দেখেন একজন সফল অর্থনীতিবিদ হওয়ার। পরিকল্পনা, অধ্যবসায় ও পরিবারের সমর্থনে সামিয়ার এ অর্জন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে নতুন প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণীর কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাঙ্গীরনগরের সামিয়া ইসলামের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেন অক্সফোর্ডকেই বেছে নিলেন