রমনা বটমূলে বোমা হামলা: হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির সাজা কমল
Published: 13th, May 2025 GMT
দুই যুগ আগে রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির সাজা কমেছে। এই সাত আসামির মধ্যে একজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি ছয়জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন। আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ৮ মে রায় ঘোষণা শুরু করেন। সেদিন রায় ঘোষণার পর আদালত পরবর্তী রায় ঘোষণার জন্য আজ (১৩ মে) দিন ধার্য রাখেন।
বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মো.
এই মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি মুফতি আব্দুল হান্নানের ফাঁসি আগেই অন্য মামলায় (সিলেটে গ্রেনেড হামলা মামলা) কার্যকর হয়েছে। তাঁর আপিল পরিসমাপ্ত বলে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডিত ছয় আসামির মধ্যে শাহাদাতউল্লাহ জুয়েলের দণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন দণ্ডিত অপর তিন আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর দুই আসামি মারা যাওয়ায় তাঁদের আপিল পরিসমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন নিহত হন। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন। এ ঘটনায় করা মামলা রমনায় বোমা হামলা মামলা হিসেবে পরিচিতি পায়। মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে।
অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য গত বছরের ৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের কার্যতালিকায় ওঠে। শুনানি শেষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর গত ৩০ এপ্রিল বিষয়টি আদেশের জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আদালত রায়ের জন্য ৮ মে দিন ধার্য করেন। এর ধারাবাহিকতায় ৮ মে আংশিক এবং আজ বাকি রায় ঘোষণা করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল
ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ও কামান থেকে চালানো হামলায় তছনছ হচ্ছে গাজা সিটির উত্তরাঞ্চল। রাতভর অঞ্চলটি কেঁপে কেঁপে উঠছে বিস্ফোরণের শব্দে। গত সোমবার রাতে সেখানে হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। আর গতকাল মঙ্গলবার থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকাজুড়ে হত্যা করা হয়েছে ৮৯ ফিলিস্তিনিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছিল। জুলাইয়ের শেষ দিকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে আলোচনা থেকে সরে যায় দুই পক্ষ। এরপর গাজা সিটির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করে ইসরায়েল সরকার। তখন থেকেই সেখানে তীব্র হামলা চলছে। কত দিন এই হামলা চলবে, তা স্পষ্ট করেনি ইসরায়েল।
গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৮৯ জনের মধ্যে ৩১ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৫১৩ জন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৫৯৯ জনে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।
হতাহত ফিলিস্তিনিদের প্রায় সবাই বেসামরিক মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে গাজা সিটির জাইতুন এলাকায় দুটি বাড়ি ও মধ্যাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ১১ জন নিহত হন। এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি বাড়িতে হামলায় এক শিশু ও তার মা–বাবাসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। মাওয়াসি উপকূলে নিহত হয়েছেন চারজন।
তবে ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, গাজার বেসামরিক মানুষের হতাহত হওয়ার সংখ্যা যতটা সম্ভব কমাতে চাচ্ছে তারা। গতকাল তারা বলেছে, আগের মাসে উত্তর গাজায় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে আগামী অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাজুড়ে সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধানও। তাঁর মতে, এতে গাজায় বেঁচে থাকা জিম্মিদের জীবন হুমকিতে পড়বে। এ ছাড়া এমন পরিকল্পনা ইসরায়েলি সেনাদের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হতে পারে। গাজায় বর্তমানে প্রায় ৫০ জন জিম্মি বন্দী আছেন। তাঁদের ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হয়।
এদিকে খাবারের চরম সংকটের কারণে গাজায় অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গতকাল ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজায় না খেতে পেয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুটি শিশু। এ নিয়ে সংঘাত শুরুর পর থেকে অনাহারে ২২৭ জনের মৃত্যু হলো। তাঁদের মধ্যে শিশু ১০৩।
কায়রোয় যাবেন হামাস নেতাএদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা আবার শুরু করতে মিসরের রাজধানী কায়রোয় যাচ্ছেন হামাস নেতা খলিল আল–হায়া। আলোচনার বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ফিরতে প্রস্তুত রয়েছেন হামাস নেতারা।
তবে যুদ্ধবিরতির মূল শর্তগুলো নিয়ে এখনো হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং হামাসের অস্ত্র ত্যাগের মতো শর্তগুলো। তবে স্বাধীন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র না প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠনটি।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আরবের একজন কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর এখনো আলোচনা আবারও শুরুর আশা ত্যাগ করেনি। আর গাজা সিটিতে ইসরায়েলের নতুন করে অভিযান শুরুর যে পরিকল্পনা, তা হামাসকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর জন্যও হতে পারে।