ফাইনাল সামনে রেখে দল ঘোষণা করলো দ. আফ্রিকা
Published: 13th, May 2025 GMT
আসন্ন আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা লড়াইয়ের জন্য চূড়ান্ত দল প্রকাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড। ঐতিহাসিক লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে প্রোটিয়ারা, সেই লক্ষ্যে তারা মূলত অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের নিয়েই গঠন করেছে চূড়ান্ত স্কোয়াড।
দীর্ঘ দিন পর টেস্ট দলে ফিরেছেন ডানহাতি পেসার লুঙ্গি এনগিদি। চোটের কারণে একাধিক সিরিজে অনুপস্থিত থাকলেও, সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি লিগে তার পারফরম্যান্স আবার জাতীয় দলে ফেরার পথ করে দেয়। ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে উঠে এনগিদিকে এবার ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চেও জায়গা দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের লিগ পর্বে সেরা পারফরমারদের একটি হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬৯.
আরো পড়ুন:
শিরোপা ধরে রাখতে অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী স্কোয়াড ঘোষণা
ফাইনালে ভারত না থাকায় ক্ষতি ৬৩ কোটি
শেষ টেস্ট সিরিজে থাকা স্কোয়াড থেকে দুইটি পরিবর্তন এনেছে প্রোটিয়ারা। বাদ পড়েছেন কুয়েনা মাফাখা এবং ম্যাথিউ ব্রিটজ, যাদের পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন অভিজ্ঞ এনগিদি।
প্রধান কোচ শুকরি কনরাড জানিয়েছেন, “এই ফাইনাল আমাদের জন্য শুধু একটি ম্যাচ নয়, বরং দীর্ঘ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। আমরা লাল বলের ক্রিকেটে যেভাবে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছি, তারই স্বীকৃতি এই জায়গা।”
তিনি আরও যোগ করেন, “লর্ডসের পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল বেছে নিয়েছি। যারা সুযোগ পেয়েছে, তারা সবাই নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে এটি অর্জন করেছে।”
দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোয়াড:
টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), টনি ডি জর্জি, এইডেন মার্করাম, উইয়ান মুল্ডার, মার্কো ইয়ানসেন, কাগিসো রাবাদা, কেশভ মহারাজ, লুঙ্গি এনগিডি, কর্বিন বশ, কাইল ভেরাইনি, ডেভিড বেডিংহ্যাম, ট্রিস্টান স্টাবস, রায়ান রিকেলটন, সেনুরান মুথুসামি, ডেন প্যাটারসন।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট স ট চ য ম প য়নশ প ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে
পিঠে থুরুং (ঝুড়ি) বাঁধা এক জুমিয়া নারী। মাথায় পাগড়ির বা শিরস্ত্রাণের মতো একটা ট্যাংক। ছবির পরিসরজুড়ে বিশালাকৃতির সেই নারীর চারপাশে বন্দুকধারী অসংখ্য ছায়ামূর্তি। তাদের আকৃতি নারীর তুলনায় বহুগুণ খর্বকায়। ট্যাংকের নল দিয়ে সেসব ছায়ামূর্তির ওপর পড়ছে পাতা আর ফুল।
শিল্পী জয়দেব রোয়াজা কালি ও কলমে এই ছবি এঁকেছিলেন ২০২৩ সালে। তাঁর অন্য সব ছবির মতোই এটিও পাহাড়ের সমকালীন অবস্থাই কেবল তুলে ধরে না; বরং তাকে ভীষণভাবে ছাপিয়ে যায়। বাস্তবতা পেরিয়ে জাদুবাস্তবতার সীমায় এসে দাঁড়ায়। মানুষের জীবন, সংগ্রাম আর প্রকৃতি সব ভেঙেচুরে কবিতার একটি পঙ্ক্তির ভেতরে যেন প্রবেশ করে।
১৯৭৩ সালে খাগড়াছড়ির খামারপাড়ার একটি ত্রিপুরা পরিবারে জন্ম জয়দেব রোয়াজার। মা নীহারিকা ত্রিপুরা আর বাবা হিরণ্ময় রোয়াজা। হিরণ্ময় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। শান্ত নিরিবিলি পাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। পাহাড়, ঝিরি, ঝরনা আর জুমখেত দেখতে দেখতে বড় হওয়া। স্কুলে কবিতার বইয়ের ইলাস্ট্রেশন নকল করে খাতায় আঁকতেন। কবিতার চেয়ে ভালো লাগত ইলাস্ট্রেশন। শেষে এই ভালো লাগারই জয় হলো। বাংলাদেশের এই সময়কার এক উজ্জ্বল শিল্পী জয়দেব। তাঁর শিল্পকর্মের পরিচিতি ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে।
একনজরে জয়দেবচারুকলার নতুন মাধ্যম পারফরম্যান্স আর্ট। জয়দেব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই এই মাধ্যমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই ধারার শিল্পীরা নিজের শরীরকেই করে তোলেন ক্যানভাস। সঙ্গে থাকে নানা প্রকাশভঙ্গি। পারফরম্যান্স করতে গিয়ে ছবি আঁকা ছাড়েননি তিনি। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের যেমন স্টোরিবোর্ড, তেমনি জয়দেবের পারফরম্যান্সের প্রতিটি ভঙ্গির ছবি আঁকা থাকে তাঁর স্কেচ খাতায়। এভাবেই দুই মাধ্যমকে যুক্ত করেছেন নিজের ধরনে। পাশাপাশি বড় ক্যানভাসেও ছবি আঁকেন। কালি ও কলমেই সিদ্ধহস্ত তিনি।
ভারতের কোচি বিয়েনাল, হংকং আর্ট বেজেল, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রায়েনিয়ালে অংশ নিয়েছেন তিনি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১১টির বেশি দেশে তিনি পারফরম্যান্স করেছেন। হয়েছে চিত্র প্রদর্শনীও। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের টেট মডার্ন মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, চীনের হংকংয়ের এম প্লাস, ফ্রান্সের প্যারিসের ক্যাডিস্ট ফাউন্ডেশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির গুগেনহাইম, ভারতের নয়াদিল্লির কিরণ নাদার মিউজিয়ামসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বহু জাদুঘরে তাঁর শিল্পকর্ম রক্ষিত আছে। বাংলাদেশে তাঁর শিল্পসংগ্রহ রয়েছে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন এবং দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে। শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আর্ট রিভিউ এশিয়া, আর্ট নিউজ, ফোর্বস এবং ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু পত্রিকায় তাঁর শিল্পকর্মের সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। আবুধাবির গুগেনহাইম মিউজিয়াম জয়দেবের একটি শিল্পকর্ম বেশ ভালো দামে কিনে নিয়েছে। বর্তমানে তিনি মুম্বাইভিত্তিক ঝাভেরি কনটেমপোরারি গ্যালারির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।
পাহাড় আর ঝিরির পথে পথেখাগড়াছড়ি আর রাঙামাটির ঝিরি পথে বা কাপ্তাই হ্রদের নির্জনতায় সময় কাটে জয়দেব রোয়াজার। আন্তর্জাতিক খ্যাতি এলেও জীবন কাটান পাহাড়ি জুমিয়াদের মতো। কখনো মাছ ধরতে চলে যান জেলেদের সঙ্গে। আবার কখনো ঝিরি পথে হেঁটে হেঁটে দিন কাটে তাঁর। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কামিলাছড়ি গ্রামে নির্জন হ্রদের ধারে গড়ে তুলেছেন স্টুডিও। সেখানে সপ্তাহের দুই দিন কাটে তাঁর। পাহাড় ও পাহাড়ের মানুষজনকে নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বুনে তোলেন ক্যানভাসে।
জয়দেব দেশের শিল্পীসমাজ ও শিল্পবোদ্ধাদের জগৎ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর কথায়, ঢাকা তাঁকে কখনো টানে না। দু-এক দিন ঢাকা বা দেশের বাইরে থাকলে হাঁপিয়ে ওঠেন। ভাবেন, কখন ফিরবেন পাহাড়ে।
সম্প্রতি কামিলাছড়িতে তাঁর স্টুডিওতে গিয়ে দেখা গেল আট ফুট দীর্ঘ একটি ক্যানভাসে কাজ করছেন তিনি। তিনতলা স্টুডিওর বারান্দায় এসে দাঁড়ালে অবারিত নীল হ্রদের হাতছানি। হ্রদের পাড়ে ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি। সেদিকে তাকালে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে হয়। বারান্দায় বসে কথায় কথায় জানালেন নির্জন এই পাহাড়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ছবি বিক্রির টাকায় এই স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। স্ত্রী হাসনাহেনা পরশের সঙ্গে মিলে জঙ্গল পরিষ্কার করেছেন। একটাই চাওয়া, একটু আড়াল, একটু নির্জনতা। ছবি আঁকার জন্য এটুকু পরিসর চেয়েছেন জীবন থেকে।
জয়দেব রোয়াজা