দোহার পৌরসভায় ৯ শতাংশ সরকারি জমি বালু ভরাটের মাধ্যমে দখলের অভিযোগ উঠেছে। 
জমিটি ভরাট ও দখলের সুবিধার জন্য টিন দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে।
পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র থানার মোড় এলাকায় আন্তঃমহাসড়ক সংলগ্ন জমিতে এ ভরাট কাজ চলছে। স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালী জাল ব্যবসায়ী নিলুয়ার হোসেন নিলু নামে এক ব্যক্তি জমিটি 
ভরাট করছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে দোহার উপজেলা প্রশাসন গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে এ জমিতে সব ধরনের দখল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। অথচ এ নির্দেশ অমান্য করে জমিটি দখলের কাজ চালানো হচ্ছে। জয়পাড়া মৌজাভুক্ত এ জমির বাজারমূল্য প্রায় চার কোটি টাকা।
মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের থানার মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জমিটি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। চারজন দিনমজুর টিন দিয়ে জমির সামনের অংশ ঘিরে ফেলছেন, যাতে ভেতরে ভরাটের কাজ দেখা না যায়। দিনমজুররা জানান, নিলুর নির্দেশে তারা এ কাজ করছেন।
স্থানীয়রা জানান, আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে জমিটি দিন-রাত শতাধিক ট্রাকের মাধ্যমে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। অথচ প্রশাসনের এদিকে কোনো নজর নেই। আর.

এস রেকর্ড অনুযায়ী, জমিটির মালিকানা একসময় কাফিরাম রায়, রামকৃষ্ণ রায় ও হরেকৃষ্ণ রায়ের নামে থাকলেও বর্তমানে সরকারি মালিকানাধীন হিসেবে রেকর্ডভুক্ত।
এলাকাবাসী বলেন, জমিটি আগে দোহার পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন সুরুজ দখলে রেখেছিলেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নিলু জমিটি বালু ফেলে দখল করছেন।
সরকারি সম্পত্তি দখলের বিষয়ে স্থানীয়রা কেউ সিন্ডিকেটের ভয়ে নাম প্রকাশ করে মুখ খুলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক দোকানদার জানান, প্রায় এক দশক ধরে জমিটি নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। এখন ব্যবসায়ী নিলু বালু ফেলে জায়গাটি দখল করছেন। দিনরাত ট্রাক দিয়ে বালু ফেলা হয়েছে। দেখেও কেউ কিছু বলেনি।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলরের দায়িত্বে রয়েছেন দোহার থানার ওসি রেজাউল করিম। সরকারি জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি পৌরসভা থেকে তাঁকে জানানো হয়নি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে ঘটনাস্থলে টহল টিমের সদস্যদের পাঠানো হচ্ছে।
পৌরসভা নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মামুনুর রশীদ জানান, এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলরকে বলার কর্তৃপক্ষ তিনি নন। সম্পত্তির মালিকানার বিষয়টি দেখভাল করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। 
অভিযুক্ত নিলুয়ার হোসেন নিলু বলেন, সরকারি জমির দুই পাশেই তাঁর কেনা জমি রয়েছে। মাঝখানের জমিটিও তিনি ইজারা নিয়েছেন। তবে প্রামাণ্য দলিল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমানে ঢাকায় জরুরি কাজে ব্যস্ত।’ এরপর তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসফিক সিবগাত উল্লাহ বলেন, সরকারি জমি দখলের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কাগজপত্রসহ হাজির হতে বলা হয়েছে। তবে এখনও কেউ আসেনি। তিনি বলেন, কেউ যদি সরকারি সম্পত্তি জবরদখলের চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দখল ভর ট ক করছ ন প রসভ সরক র দখল র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সাচারের রথযাত্রায় সনাতনীদের ঢল

প্রায় ১৫৮ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে চাঁদপুরের কচুয়ার সাচার রথযাত্রা। এই রথযাত্রা অত্র অঞ্চলের একটি সনাতনী মিলনমেলার ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। 

শুক্রবার (২৭ জুন) বিকাল ৫টায় সাচার বাজারে লাখো ভক্ত দড়ি টেনে রথ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। যার উল্টো রথ আগামী ৪ জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে।

রথযাত্রায় আগত সনাতনীরা জানান, এখানে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে কয়েকশ’ ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। জগন্নাথ দর্শনের পাশাপাশি তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কেনাকাটা করতে পারেন দর্শনার্থীরা। সাচার জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রায় এলে এখানে অবস্থিত দুর্গা মন্দির, লোকনাথ মন্দির এবং কালী মন্দিরও ঘুরে দেখা যায়। তাই সাচারের রথযাত্রা সনাতনীদের কাছে আবেগ ও অনুভূতির স্থান।

সরজমিনে দেখা যায়, রথে সুসজ্জিত জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রাকে বাতাস দিচ্ছেন সেবায়েতগণ। আর ভক্তরা সে রথের দড়ি ধরে সুশৃঙ্খলভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। এর মাঝে ভক্তদের উৎফুল্ল করতে রথ থেকে সেবায়েতগণ ফল ও ফুল ছুড়ে দিচ্ছেন। তা ভক্তরা পরম আনন্দে গ্রহণ করছেন।

মন্দিরের ভক্ত সাংবাদিক রাজিব সরকার জানান, ১২৭৭ বঙ্গাব্দে সাচারে এই রথের প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর থেকেই আষাঢ়ে জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রার প্রতিমূর্তি স্থাপন করে প্রথম রথ ও ফিরতি রথযাত্রা হয়ে আসছে। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে সাচারের রথটিতে দাপর, ত্রেতা ও কলিযুগের বহু কাহিনি কাঠে খোদাই করে তা রথের শোভা বর্ধনে ব্যবহার করা হয়। 

যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা সৌন্দর্য মণ্ডিত সাচারের রথটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর পোড়া রথের সেই ধ্বংসাবশেষই রথ হিসেবে টানা হতো। পরে এক সময় এখানকার তৎকালীন এমপি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে যাওয়া রথটি ভারত থেকে শিল্পী এনে নতুনভাবে নির্মাণ করে দেন।

সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের অর্থ সম্পাদক গনেশ চন্দ্র ধর জানান, পুরো মন্দিরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া গরম ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে জাগো হিন্দু পরিষদ, গীতা স্কুল পরিচালনা পরিষদ, গীতা সংঘসহ একাধিক সনাতনী সংগঠন এখানে মন্দিরের ভেতরেই আগত ভক্তবৃন্দের সেবায় ক্যাম্প স্থাপন করে সেবা দিচ্ছে। কেউ কেউ বিনামূল্যে ওষুধ, পানি এবং শরবত সরবরাহ করছে। সবার একটাই আকাঙ্খা- জগন্নাথ যেন সকল ভক্তের মনের আশা পূরণ করেন।

চাঁদপুরের কচুয়ার সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব সাহা ও সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু বলেন, “রথযাত্রায় কচুয়া ও চাঁদপুর ছাড়াও পুরোদেশতো বটেই ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বহু বিদেশি সনাতনীরা এখানে আসেন। এশিয়া উপমহাদেশে তাই সাচারের রথযাত্রা বেশ জনপ্রিয়। এবারো সাচার মন্দির থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত জড়ো হয়ে লাখো সনাতনী ভক্তবৃন্দ রথটানায় অংশ নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক ও সুধীমহলকে সাথে নিয়ে রথযাত্রা নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে আমরা কয়েকশ’ সনাতনী যুবকদের সাথে নিয়ে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম তৎপর রেখেছি। মানুষের দান অনুদানে এগিয়ে নেওয়া এই সাচার মন্দির দর্শনে সকল সনাতনী সবসময় আসবেন এই প্রত্যাশাই করছি।”

প্রসঙ্গত, সাচার অঞ্চলের একজন জমিদার ছিলেন গঙ্গা গোবিন্দ। তিনি ভারতের পুরীতে গিয়েছিলেন জগন্নাথ দর্শনে। কিন্তু ওই সময়ে তিনি জগন্নাথের দর্শন পাননি। সে রাতে তিনি স্বপ্নে আদেশ পান- তার নিজ এলাকা সাচারেই যেন রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। 

পরে তিনি এলাকায় ফিরে রথযাত্রার প্রচলন করেন। চাঁদপুরের কচুয়ার এই সাচার এলাকাটি তৎকালীন ঐ সময়ে ভারতের ত্রীপুরা রাজ্যের সাচার এলাকা নামে পরিচিত ছিল। 

জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ এখন নেই, তবে জমিদার বাড়িটি এখনও রয়েছে। তার প্রচলেন পর থেকে প্রতি বছর আয়োজতি হয়ে আসছে রথযাত্রা। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের রথযাত্রায় যেন সনাতনীদের ঢল নেমেছে।

ঢাকা/অমরেশ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ