জাবিতে ছাত্রদলের হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম
Published: 14th, May 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের উদ্বোধন করা হয়েছে।
বুধবার (১৪ মে) দুপুর ১টায় প্রোগ্রামের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিকের সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা.
আরো পড়ুন:
জাবিতে ছাত্রশিবিরের মেডিকেল ক্যাম্প
শেবাচিমে অত্যাধুনিক সিমুলেশন ল্যাব উদ্বোধন
ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, “ছাত্রদল শুধু আন্দোলন-সংগ্রাম বা পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীবান্ধব ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে। এই প্রোগ্রামের জন্য ছাত্রদল ১০ হাজার ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে সংগ্রহ করেছে। এই ভ্যাকসিনেশন আমাদের দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে দূরে রাখে। বিএনপি ও ছাত্রদল জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে ও যাবে।”
উদ্বোধনের সময় উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “স্বাস্থ্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমদিকে ছাত্রদলের এমন প্রোগ্রামের কথা শুনে রোগটি সম্পর্কে অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করি। বুঝতে পারি এটি কত ভয়ংকর। পাশাপাশি এর ভ্যাকসিন অনেক ব্যয়সাপেক্ষও। ছাত্রদলের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নির্দ্বিধায়-নিঃসঙ্কোচে ভ্যাকসিন গ্রহণ করবে।”
সমাপনী বক্তব্যে জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, “ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের জন্য হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছি। আশা করি শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন গ্রহণ করবে এবং নিজেদের হেপাটাইটিস রোগের হাত থেকে নিজেদের সুরক্ষা করবেন। এছাড়া কারো হেপাটাইটিস-বি পজিটিভ আসলে তার চিকিৎসার জন্য ড্যাব আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।”
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের আওতায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে তিন ডোজে মোট ৩০ হাজার টিকা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকবৃন্দ। আগামী ২২ মে পর্যন্ত কার্যক্রম চলবে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল হ প ট ইট স ব ছ ত রদল র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অশনিসংকেত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য উদ্ধৃত করিয়া সোমবার সমকাল জানাইয়াছে, ২০১৯-২০ অর্থবৎসরে উপজেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ২৬ সহস্রাধিক হেক্টর, যাহা ২০২৫ সালে দাঁড়াইয়াছে ২৩ সহস্র হেক্টর অপেক্ষা কিছু বেশি। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ বৎসরে নাসিরনগর উপজেলায় আবাদযোগ্য জমি হ্রাস পাইয়াছে প্রায় তিন সহস্র হেক্টর। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কারণ ইহার সরাসরি ফল হইবে কৃষি উৎপাদন হ্রাস এবং প্রধান খাদ্যশস্য চাউলসহ প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের জন্য বিদেশমুখাপেক্ষিতা বৃদ্ধি। এক কথায় জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ইহা এক প্রকার অশনিসংকেত বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। প্রসঙ্গত, কৃষিজমি হ্রাসের সমস্যা নাসিরনগরেই সীমাবদ্ধ নহে। সমগ্র দেশেই বিবিধ কারণে আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাইতেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের কৃষি শুমারি-২০১৯ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, প্রতিবৎসর দেশে আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাইতেছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হারে। উক্ত শুমারিমতে, ২০০৮ সালে দেশে নিট আবাদি জমি ছিল ১ কোটি ৯০ লক্ষ ৯৭ সহস্র হেক্টর। ২০১৯ সালে উহা হ্রাস পাইয়া দাঁড়ায় ১ কোটি ৮৬ লক্ষ ৮১ সহস্র হেক্টরে। তৎসহিত ন্যায্যমূল্য হইতে ধারাবাহিকভাবে বঞ্চিত হইবার কারণে কৃষকদের মধ্যে বিশেষত ধান উৎপাদনে উৎসাহের ঘাটতি লক্ষ্য করা যাইতেছে। বহু তরুণ উদ্যোক্তা কৃষিতে যুক্ত হইয়াছেন সত্য। তবে উহাদের প্রায় সকলেই মৎস্য বা অন্য কোনো অর্থকরী ফসলের চাষ করিতেছেন। কেহ কেহ রপ্তানির কথা বিবেচনায় লইয়া আলু, ভুট্টা, গম ও টমেটোর ন্যায় ফসল চাষে যুক্ত। রবিশস্যের জমিতে তিল বা সরিষা চাষ হইতেছে। এই অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধানের উৎপাদন যে ক্রমশ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িতেছে, তাহা সাধারণ দৃষ্টিতেই বোঝা যায়। ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাইতেছে, উচ্চফলনশীল বীজ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে ধানসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন গত কয়েক দশকে বৃদ্ধি পাইলেও প্রতি বৎসর খাদ্যপণ্য আমদানিও বৃদ্ধি পাইতেছে। ফলস্বরূপ বিশ্ববাজারে চাউল বা অন্য কৃষিপণ্যের বাজার অস্থির হইলে তাহা আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষিজমি বিদ্যমান হারে হ্রাস পাইতে থাকিলে ভবিষ্যতে একরপ্রতি ফসল উৎপাদন দুই গুণ বা তিন গুণ বৃদ্ধি পাইলেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হইবে না।
প্রতিবেদনমতে, নাসিরনগরে ফসলি জমি হ্রাসের প্রধান কারণসমূহের মধ্যে আছে জলবাযু পরিবর্তন, নদীভাঙন, যত্রতত্র ইটভাটা, সরকারি বিভিন্ন আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, আবাসন সংকট ও বাণিজ্যিক পুকুর খনন। এই কারণসমূহ সমগ্র দেশেই বিদ্যমান। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন এই সমস্যাকে জটিল করিয়া তুলিতেছে। দুঃখজনক হইল, সমস্যাটি নীতিনির্ধারকদের খুব একটা ভাবাইতেছে বলিয়া মনে হইতেছে না। কৃষিজমি রক্ষায় আইন ও সরকারি বিধিবিধান রহিয়াছে। কিন্তু কোনোটারই কার্যকর কোনো প্রয়োগ নাই। তিন ফসলি জমির অকৃষি ব্যবহার বন্ধে গত কয়েক বৎসরে আমরা সরকারের শীর্ষমহলে যতটা বাগাড়ম্বর দেখিয়াছি, তদনুযায়ী কোনো কাজ হইতে দেখা যায় নাই। বর্তমানেও যদি একই ঔদাসীন্য বজায় থাকে, তাহা হইলে আমাদের হতাশার কোনো শেষ থাকিবে না।
আমরা জানি, বিশেষত করোনাকালে যখন শিল্পোৎপাদন ও সেবা খাত প্রায় স্থবির হইয়া পড়িয়াছিল, তখনও কৃষি এই দেশকে রক্ষা করিয়াছে। অর্থনীতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধিতে কৃষির অবদান সাম্প্রতিক বৎসরগুলিতে হ্রাস পাইলেও এখনও তাহা উল্লেখযোগ্য। কর্মসংস্থানের দিক দিয়াও কৃষির সম্ভাবনা উপেক্ষণীয় নহে। কৃষিজমি রক্ষার বিষয়টি তাই এই সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা প্রয়োজন বলিয়া আমরা মনে করি। সম্পূর্ণ কৃষি খাত লইয়া একটা সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ন গুরুত্বপূর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। তাহারই অংশ হিসাবে আবাদি জমি সংরক্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট হইতে পারে। সরকার অবিলম্বে এই লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হইবে, ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।