দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার ঢাকার শেয়ারবাজারের লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। দর পতন অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমায় লেনদেন ক্রমাগত কমছে। গতকাল বুধবার ডিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে ২৯৪ কোটি টাকার শেয়ার, যা গত ২৯ এপ্রিলের পর এটাই সর্বনিম্ন লেনদেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ৫ মে এ বাজারে ৫৮৪ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। সে তুলনায় গতকালের লেনদেন অর্ধেকে নেমেছে। অবশ্য ওই দিন ব্লক মার্কেটে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল। গতকাল ব্লক মার্কেটে কেনাবেচা হয়েছে ১৬ কোটি টাকার শেয়ার।
লেনদেন কমার কারণ জানতে চাইলে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, ক্রমাগত দর পতন বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কার্যক্রম থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের উদ্যোগ নিয়ে সর্বশেষ যে আশা তৈরি হয়েছিল, তাও হতাশায় রূপ নিয়েছে।
এর সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনায় থাকায়, তার ফলাফল নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ আছে। বিশেষত তালিকাভুক্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল বিধায়, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলোর বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়, তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। এরও প্রভাব আছে শেয়ারদরে।
গতকাল ঢাকার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৩৫৭টির কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৬টির, কমেছে ২৬৯টির এবং অপরির্তিত থেকেছে ৩২টির। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২১টি দর হারিয়েছে।
ডিএসইর খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কাগজ ও ছাপাখানা ছাড়া গতকাল বাকি সব খাতের সিংহভাগ শেয়ার দর হারিয়েছে। বড় খাতগুলোর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের দেড় শতাংশ, বীমা খাতের সোয়া ১ শতাংশ এবং বস্ত্র খাতের সোয়া ১ শতাংশের বেশি দর পতন হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক কোম্পানির খাতগুলোর মধ্যে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের আড়াই শতাংশ, সিমেন্ট এবং সিরামিক খাতের শেয়ারগুলো গড়ে দেড় শতাংশের ওপর দর হারিয়েছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল সর্বাধিক সোয়া ৪৪ কোটি টাকার লেনদেন কমার পরও ব্যাংক খাতের লেনদেন ছিল খাতওয়ারি লেনদেনের সর্বোচ্চ। যার পরিমাণ ছিল মাত্র ৫৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ১২ কোটি টাকার লেনদেন কমে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের লেনদেন ৩২ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় নেমেছে।
পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, গতকাল তালিকাভুক্ত ৩৯৩ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের কেনাবেচা হলেও এর মধ্যে শীর্ষ ২০ কোম্পানির ১৩০ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা মোটের ৪৪ শতাংশের বেশি। আবার এর মধ্যে একক কোম্পানি হিসেবে দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানি বিচ হ্যাচারির সর্বাধিক পৌনে ১৬ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র র ল নদ ন ল নদ ন ক আর থ ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
আসামিদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি শুরু
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ আসামিদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়েছে ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার ভুঁইয়া ও অনীক আর হক।
গত ১৯ মার্চ আসামিদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ১ ডিসেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ সব আসামিকে খালাসের রায় দেন। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতের বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তুলেছিল।
ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেতা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) জঙ্গিরা। তারা সহযোগিতা নেয় বিদেশি জঙ্গিদের। আর এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্তান থেকে।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ ওই হামলা ছিল দলকে ‘নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা’।
তিনি বলেন, “রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে শত বিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে? এটা কাম্য নয়।”
অন্যদিকে আসামিদের খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, যেভাবে এ মামলায় পুনঃতদন্তের আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’। যে সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে এ মামলার বিচার শুরু হয়েছিল, সেই অভিযোগপত্রই ছিল ‘অবৈধ’।
হাইকোর্ট বলেছেন, “সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, এ মামলায় যেভাবে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়েছে, তা অবৈধ এবং আইনের বিচারে তা টেকে না।“
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালতে রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, খালেদার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আরো ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তার বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়।
ঢাকা/এম/ইভা