কুমিল্লার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী নিয়ে। সেখানে কর্মরত আছেন তিনজন শিক্ষক। এমন দৈন্যদশা সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের যশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, দুই কক্ষের একটি ভবনে পাঁচটি বৈদ্যুতিক পাখা থাকলেও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। শিক্ষকরা বলেছেন, বিদ্যুৎ লাইন আনা হলেও বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়ে গেছে একাধিকবার। পানির মোটর ও নলকূপ নষ্ট। পতাকা স্ট্যান্ডের রশিও চুরি হয়ে যায়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আগে এখানে অনেক শিক্ষার্থী থাকলেও শিশুরা পাশের একটি মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্টেনমুখী হওয়ায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে শিক্ষার্থী। অনেকে ভর্তি হলেও কয়েকদিন এসে ফেরত চলে যায়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, কোনো কোনো অভিভাবক সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করালেও কিছুদিন পর আবার কিন্ডার গার্টেন ও মাদ্রাসায় ভর্তি করান। শিক্ষকদের অভিযোগ, এক মাস আগে পানির মোটরও চুরি হয়ে গেছে। কদিন পর পর চোর এসে বৈদ্যুতিক তারগুলো নিয়ে যেত। বিদ্যুৎ অফিসে জানালে তারা ঠিক করে দিয়ে যেত।
একটা সময় বিরক্ত হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ আর দেয়নি।
বিদ্যালয়ের বেহাল দশা আর নিজের হতাশার কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন সহকারী শিক্ষক মোসা.
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফাতেহা বেগম জানান, দুই বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। স্থানীয় কিশোররা আড্ডা দিতে এসে নলকূপগুলোর ভেতরে পাথর ঢুকিয়ে দেয়, তাই কোনো নলকূপও নেই। পানির ব্যবস্থা না থাকায় অচল স্কুলটির দুটি শৌচাগার। যে কারণে তিন শিক্ষককে স্থানীয়দের বাড়িতে যেতে হয়। তাঁর অভিযোগ, বিদ্যালয়ের ভেতরের জিনিপত্রও কয়েকদিন পর পর চোরে নিয়ে যায়। তালার ভেতর শলা ও ময়লা ঢুকিয়ে নষ্ট করে রেখে যায়। গ্রিল কেটে নিয়ে যায়। বৈদ্যুতিক তাঁর ও পতাকার স্ট্যান্ডের দড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেছে অনেকবার। তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৯ সাল থেকে এখানে আছি। আমি আসার পর দু’বার জিডি করেছি। এখানকার মানুষ চান না স্কুলটি থাকুক। কারণ আমরা আশপাশের চার গ্রাম ঘুরেও কোনো শিক্ষার্থীকে আনতে পারছি না।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম ইকবাল জানান, সম্প্রতি এই উপজেলায় যোগদান করেই বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন তিনি। স্থানীয়দের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে বিদ্যালয়টি জাগানোর চেষ্টা করা হবে।
সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানম বলেন, ‘স্কুলটির বেহাল দশার কথা আমি জানি। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে উঠান বৈঠক করেছি। কিন্তু একজন অভিভাবকও কোনো রেসপন্স করেননি। মাদ্রাসার একটি প্রভাব সেখানে আছে তা সবাই বলেছেন, শিক্ষকরাও বলেছেন। তাই স্কুলের বিকল্প সড়ক করার জন্য বরাদ্দের
ব্যবস্থা করেছি।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে