Samakal:
2025-11-17@08:39:45 GMT

শিক্ষক ৩, শিক্ষার্থী ৫

Published: 15th, May 2025 GMT

শিক্ষক ৩, শিক্ষার্থী ৫

কুমিল্লার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী নিয়ে। সেখানে কর্মরত আছেন তিনজন শিক্ষক। এমন দৈন্যদশা সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের যশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, দুই কক্ষের একটি ভবনে পাঁচটি বৈদ্যুতিক পাখা থাকলেও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। শিক্ষকরা বলেছেন, বিদ্যুৎ লাইন আনা হলেও বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়ে গেছে একাধিকবার। পানির মোটর ও নলকূপ নষ্ট। পতাকা স্ট্যান্ডের রশিও চুরি হয়ে যায়।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আগে এখানে অনেক শিক্ষার্থী থাকলেও শিশুরা পাশের একটি মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্টেনমুখী হওয়ায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে শিক্ষার্থী। অনেকে ভর্তি হলেও কয়েকদিন এসে ফেরত চলে যায়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, কোনো কোনো অভিভাবক সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করালেও কিছুদিন পর আবার কিন্ডার গার্টেন ও মাদ্রাসায় ভর্তি করান। শিক্ষকদের অভিযোগ, এক মাস আগে পানির মোটরও চুরি হয়ে গেছে। কদিন পর পর চোর এসে বৈদ্যুতিক তারগুলো নিয়ে যেত। বিদ্যুৎ অফিসে জানালে তারা ঠিক করে দিয়ে যেত। 
একটা সময় বিরক্ত হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ আর দেয়নি।

বিদ্যালয়ের বেহাল দশা আর নিজের হতাশার কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন সহকারী শিক্ষক মোসা.

মানছুরা আক্তার চৌধুরী। তাঁর ভাষ্য, তিনি আগে যে স্কুলে ছিলেন সেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৫০০। হঠাৎ করে ২০২০ সালে এই স্কুলে পদায়ন করা হয় তাঁকে। মানসিকভাবে বড় ধাক্কা খান তিনি। এসে দেখেন স্কুলে তেমন কোনো শিক্ষার্থী নেই। এর পর এলো করোনা মহামারি। তখন ছিল মাত্র একজন শিক্ষার্থী। এর পর এলাকায় ঘুরে ১৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করান তারা। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী থাকতে চায় না। তিনি বলেন, ‘স্কুলটিতে আসার কোনো রাস্তা নেই। পাশের একটি মাদ্রাসার ভেতর দিয়ে আসতে হয়। কয়েকদিন কোনো শিক্ষার্থী মাদ্রাসার ওপর দিয়ে এলে তারপর থেকে আর আসে না। পরে দেখি তারা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে গেছে। অনেকে আবার কিন্ডার গার্টেনে ভর্তি হচ্ছে। এখানে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা।’

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফাতেহা বেগম জানান, দুই বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। স্থানীয় কিশোররা আড্ডা দিতে এসে নলকূপগুলোর ভেতরে পাথর ঢুকিয়ে দেয়, তাই কোনো নলকূপও নেই। পানির ব্যবস্থা না থাকায় অচল স্কুলটির দুটি শৌচাগার। যে কারণে তিন শিক্ষককে স্থানীয়দের বাড়িতে যেতে হয়। তাঁর অভিযোগ, বিদ্যালয়ের ভেতরের জিনিপত্রও কয়েকদিন পর পর চোরে নিয়ে যায়। তালার ভেতর শলা ও ময়লা ঢুকিয়ে নষ্ট করে রেখে যায়। গ্রিল কেটে নিয়ে যায়। বৈদ্যুতিক তাঁর ও পতাকার স্ট্যান্ডের দড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেছে অনেকবার। তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৯ সাল থেকে এখানে আছি। আমি আসার পর দু’বার জিডি করেছি। এখানকার মানুষ চান না স্কুলটি থাকুক। কারণ আমরা আশপাশের চার গ্রাম ঘুরেও কোনো শিক্ষার্থীকে আনতে পারছি না।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম ইকবাল জানান, সম্প্রতি এই উপজেলায় যোগদান করেই বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন তিনি। স্থানীয়দের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে বিদ্যালয়টি জাগানোর চেষ্টা করা হবে।

সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানম বলেন, ‘স্কুলটির বেহাল দশার কথা আমি জানি। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে উঠান বৈঠক করেছি। কিন্তু একজন অভিভাবকও কোনো রেসপন্স করেননি। মাদ্রাসার একটি প্রভাব সেখানে আছে তা সবাই বলেছেন, শিক্ষকরাও বলেছেন। তাই স্কুলের বিকল্প সড়ক করার জন্য বরাদ্দের 
ব্যবস্থা করেছি।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র একট উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।

‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?

উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’

প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?

জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’

জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?

সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’

জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?

জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’

আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?

সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।

বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’

সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?

জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’

প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?

‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।

আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?

সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’

আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫

পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?

মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’

আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প
  • এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী কারা, কীসের ব্যবসা তাঁদের
  • করদাতা মারা গেলেও যে কারণে কর দিতে হয়, কীভাবে দেওয়া হয়
  • ৩ কোটি টাকা, ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ আরও যা যা পান একজন মিস ইউনিভার্স
  • গায়িকা থেকে বিধায়ক, মৈথিলীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী চমকে ওঠার মতো
  • সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলেন উপদেষ্টার এপিএস
  • বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’
  • সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে
  • সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র
  • সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ