পার্বত্য চট্টগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও উন্নয়নবৈষম্যের শিকার। পাশাপাশি পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্কও দিন দিন জটিল হয়ে উঠেছে। এই সংকট কাটিয়ে কীভাবে সম্প্রীতির ভিত্তিতে ঐক্য গড়ে তোলা যায়, তা নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কাজ করতে চায়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙামাটিতে আয়োজিত স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন এনসিপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের (পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার) তত্ত্বাবধায়ক মো.

ইমন সৈয়দ।

মতমিনিময় সভায় এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাঙামাটি ও আশপাশের এলাকায় একশ্রেণির রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে ‘দখলদারি’ চালিয়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের অধিকারের বিষয়টি চাপা পড়ে গেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে। দলটির লক্ষ্য পাহাড়ি-বাঙালিনির্বিশেষে সব মানুষের সম্মান, অধিকার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

আজ দুপুর ১২টার দিকে শহরে বনরূপা এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপি নেতা মো. ইমন সৈয়দ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপি নেতা মো. সরওয়ার আলম ও কলিন চাকমা। এ ছাড়া নবগঠিত সার্চ কমিটির সদস্য মো. ইমাম হোছাইন, বিপিন চাকমা, মো. জাকির হোসেন চৌধুরী, উজ্জ্বল চাকমা, মো. শহীদুল ইসলাম, প্রিয় চাকমা, মো. শাকিল ও সায়েদা ইসলাম প্রমুখ।

সভায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা হয়। এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, পার্বত্য চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় বারবার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষ কোনো সুফল পায়নি। জাতীয় নাগরিক পার্টি এই চুক্তির পূর্ণ পর্যালোচনা ও বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে চায়।

সভায় ইমন সৈয়দ বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের একনায়কতন্ত্র, দমননীতি এবং স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্তির জন্য এক বিকল্প রাজনীতি গড়ে তুলছি। কিন্তু আমাদের দলে আওয়ামী লীগ ছাড়া সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য দরজা খোলা। আমরা আহ্বান জানাই আপনারা আসুন, যুক্ত হোন, এক নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে অংশ নিন। আমাদের ভুল হলে তা তুলে ধরুন। কিন্তু সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের বাইরে গিয়ে যেন কোনো বিভ্রান্তি না ছড়ানো হয়।’

এর আগে গতকাল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এনসিপি নেতারা রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলার বাঙালি ও পাহাড়ি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিকেলে দলের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে ৩১ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তীকালীন ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করা হয়। এই কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে একটি জেলা সমাবেশের আয়োজন করবে এবং আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

মহিউদ্দিন রনিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগে স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার দাবির আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দির রনিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জুয়েল চন্দ্র শীল বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় এ অভিযোগ করেন। 

শুক্রবার বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগের যাচাই চলছে। এরপর আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগে ১২ জনের নাম উল্লেখ আছে এবং অজ্ঞাত ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’’

অভিযুক্তরা হলেন- আন্দোলনের প্রধান নেতা মহিউদ্দিন রনি (৩০), রাকিন (২৫), সুনান (২৪), সিফাত (২৩), শামিম (২৫), আল মুসা (২৬), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেত্রী সিফা (২২), হাসপাতালে অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থী দাইয়ান (২১), কনটেন ক্রিয়েটর কাফি (৩০), এইচ এম আবুল খায়ের (৫০), হাসপাতালের দালাল নুরুন নাহার (৪০) ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর মো. সিয়াম (৩৮)।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশের দাবিতে হাসপাতালের গেটের সামনে চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় অভিযুক্তরা চাপাতি, লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা করে। এ সময় মহিউদ্দিন রনি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মী রফিকুল পাটোয়ারীর মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে।

এ ছাড়াও ২-১১ নম্বরসহ অজ্ঞাত অভিযুক্তরা হত্যার উদ্দেশ্য হাতে থাকা চাপাতি, লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক, লাঠি দিয়ে ২-১১ নম্বর সাক্ষীদের এলোপাথারী আঘাত করে। এতে অফিস সহায়ক পারভেজ, আয়া সেলিনা, অফিস সহায়ক রাব্বি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী শামীস আহত হন। 

এ ছাড়াও তাদের হামলায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হাসান, সাকিব, জাকারিয়া রুবেল, অফিস সহায়ক ফয়সাল রাব্বি, আয়া সুমরত মন্ডল, লিফট অপারেটর শাকিলসহ মানবন্ধনে অংশ নেওয়া আরো অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আহত হন। এমনকি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নারী নার্স এবং আয়াদের শ্লিলতাহানী করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, হাসপাতালের কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপ-পরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান শাহীনকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর।

অপরদিকে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে হামলার ঘটনা নিয়ে সদর রোড অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মহিউদ্দির রনি। তিনি অভিযোগ করেন হাসপাতালের কর্মচারী নামধারীরা তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচিতে হামলা করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উস্কানিতে এ হামলার ঘটনায় তাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। 

পলাশ//

সম্পর্কিত নিবন্ধ