মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ এর দায়িত্ব নিয়েছে ডাক অধিদপ্তর। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক দলের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়ায় পর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাক অধিদপ্তর। এ জন্য ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক আবু তালেবকে প্রধান করে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বনানীর নগদ অফিসে গিয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন।
এর আগে গত সপ্তাহে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নগদ পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে প্রশাসক দল নগদে কাজ করছিল, তারা দায়িত্ব হারায়। এদিকে নগদের অর্থ তছরুপের জন্য যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, তাঁদের মধ্যে একজনকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি হলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক মো.
এদিকে আজ ডাক অধিদপ্তর এক অফিস আদেশ জারি করে। এতে বলা হয়, নগদ পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক নিযুক্তির আদেশের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক স্থগিতাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ডাক অধিদপ্তরকে নগদ পরিচালনায় সার্বিক দায়িত্বভার গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে ‘নগদ’ এর প্রধান কার্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট সব স্থানে সরেজমিন উপস্থিত হয়ে সময়ে সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হলো।
কমিটির সদস্যরা হলেন ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আবু তালেব ও মো. আমিনুর রহমান। অন্যরা হলেন পোস্টাল অ্যাটাচি এস এম ওয়াদুদুল ইসলাম, প্রোগ্রামার মো. মনিরুজ্জামান, ডিপিএমজি সঞ্জিত চন্দ্র পণ্ডিত, মো. সাহেদুজ্জামান সরকার, খন্দকার শাহনুর সাব্বির ও এ কে এম মনিরুজ্জামান। কমিটি পর্যবেক্ষণকাজের স্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।
এদিকে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে ১৯ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক বসানোর পর নিরীক্ষায় উঠে আসে, নগদ লিমিটেডে বড় ধরনের জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করা হয়েছে। এসব কারণে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। সাবেক সরকারের আমলে নিয়মের বাইরে গিয়ে গ্রাহক বানানো ও সরকারি ভাতা বিতরণসহ একচেটিয়া সুবিধা পায় নগদ। প্রতিষ্ঠানটিতে যখন এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়, তখন এর পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ ঘটনায় ২৪ জনকে আসামি করে মামলা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র পর চ পর প র সরক র নগদ প সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে সোমবার বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামীকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। এতে ইউরোপের কয়েকজন নেতাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের বরাত নিউইয়র্ক টাইমস এই খবর জানিয়েছে।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেন ট্রাম্প। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে এটাই প্রথম বৈঠক। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠককে ট্রাম্প “উষ্ণ” বলে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে পুতিনের মতো বৈঠকে “খোলামেলা” ও “গঠনমূলক” আলোচনা হয়েছে।
ট্রাম্প ও পুতিনের প্রত্যাশা, তাঁদের এই বৈঠক ইউক্রেন সংঘাত সমাধানে অগ্রগতি আনতে পারবে।
বৈঠকের পরের দিন গতকাল শনিবার সূত্রের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্প সোমবার জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বৈঠকে ‘ইউরোপীয় নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’ তবে ইউরোপের কোন কোন নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
শনিবার সকালে জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে এক পোস্টে জানানা, সোমবার তিনি ওয়াশিংটনে যাবেন। পরে ট্রাম্পও তা নিশ্চিত করেছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প সম্ভবত জেলেনস্কির কাছে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। প্রস্তাবে ইউক্রেনের পূর্ব দিকের দনবাস অঞ্চলের যেসব এলাকা রাশিয়া বিল পাস করে নিজেদের বলে ঘোষণা করেছেন, কিয়েভকে তা মেনে নিতে হবে। এমনকি দনবাসের যেসব এলাকা এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে, কিন্তু রাশিয়া নিজের বলে ঘোষণা করেছে, তা-ও মস্কোর বলে স্বীকার করে নিতে হবে।
প্রতিবেদনটি বলছে, ইউক্রেন এসব শর্ত মেনে নিলে অন্যান্য সীমান্তে চলমান সংঘাত বন্ধ করবে রাশিয়া।
কিন্তু এরই মধ্যে জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, রাশিয়ার কাছে কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া হবে না। হারানো সব ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করা হবে।
ট্রাম্প ও পুতিনের আলাস্কা বৈঠকের পর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। সেখানে তাঁরা ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সঙ্গে ইউরোপের সহযোগিতায় ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে বসার ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তুতির’ কথা জানান।
আলাস্কা বৈঠকের পর ক্রেমলিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানিয়েছিলেন, পুতিন, ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এখনো আলোচনা করেনি।
গত বৃহস্পতিবার ফক্স বিজনেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছিলেন, ইউক্রেনের ইউরোপীয় সমর্থকদের “কাজ দেখাতে” না পারলে “চুপ থাকা” উচিত। ইউক্রেন সংঘাত বন্ধের সমাধান খোঁজে বের করতে চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনের কাছে ইউরোপের দাবি-দাওয়া হাজির করা বন্ধ করতে হবে।