দর পতনের পুরোনো বৃত্তে শেয়ারবাজার। টানা তৃতীয় দিন বাজারে দর পতন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তালিকাভুক্ত সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়েছে। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৭৮১ পয়েন্টে নেমেছে। সূচকের এ অবস্থান ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট বা প্রায় পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন। দর পতন ঘনীভূত হওয়ায় লেনদেনও ৩০০ কোটি টাকার নিচেই ছিল।
গতকাল দিনের শুরুতে বেশির ভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধি নিয়ে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের প্রথম আধা ঘণ্টায় দুই শতাধিক শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে ভর করে ডিএসইএক্স সূচক প্রায় ২১ পয়েন্ট বেড়ে ৪৮৫৬ পয়েন্টে ওঠে। তবে পরে ক্রমাগত দর পতনে লেনদেন শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে ৭৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৭৭৯ পয়েন্ট পর্যন্ত নামে।
গত আগস্টে সরকার বদলের পর প্রথম চার কর্মদিবসে বড় উত্থান হয় শেয়ারদর, সূচক ও লেনদেনে। তবে এর পর থেকে ক্রমাগত দর পতন হচ্ছে। তখন কারণ হিসেবে ডলার সংকট, ব্যাংক আমানত এবং সরকারি বন্ডে উচ্চ সুদহারের কথা বলতেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেকর্ড রেমিট্যান্স আয় এবং রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির কারণে ডলার সংকট অনেকটা কমেছে। তবে এর প্রতিফলন শেয়ারবাজারে নেই।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শেয়ারবাজারকেন্দ্রিক নানা সংস্কার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিষ্কার আভাস পাচ্ছেন না। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে শেয়ারবাজার উন্নয়নে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে। স্বল্পমেয়াদি কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরিতে সহায়ক হতো বলে তারা মনে করেন।
গতকাল ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৩৫৭টির কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৪০টির। বিপরীতে ২৮৫ কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়েছে। অপরিবর্তিত ছিল ৩২টির দর। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩১টিই দর হারিয়েছে। গতকাল সব খাতেরই সিংহভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে। এদিকে গতকালও ঢাকার শেয়ারবাজারের লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচেই ছিল। মোট লেনদেন হয়েছে প্রায় ২৯৭ কোটি টাকার শেয়ার, যা বুধবারের তুলনায় আড়াই কোটি টাকা বেশি।
খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, উৎপাদন ও সেবা খাতের গড় দর পতন গড়ে ১ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকলেও ব্যাংক, বীমা এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের পৌনে ২ শতাংশ পর্যন্ত পতন হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের সোয়া ১ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের পৌনে ২ শতাংশ এবং বীমা খাতের দেড় শতাংশের বেশি দর পতন হয়েছে।
পতনের মধ্যেও সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ৫ শতাংশের ওপর দর বৃদ্ধি পাওয়া অপর দুই কোম্পানি হলো– মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স এবং সি পার্ল হোটেল। বিপরীতে বোনাস সংক্রান্ত দর সংশোধন এবং সার্বিক নেতিবাচক প্রভাবে যমুনা ব্যাংকের শেয়ারদর ১৩ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া ৯ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে দর পতনের শীর্ষে ছিল বিচ হ্যাচারি ও সোনারগাঁও টেক্সটাইল।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র দর হ র য় ছ দর পতন ন হয় ছ ল নদ ন গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ডিএসইতে সূচকের উত্থান, সিএসইতে পতন
চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিক পতনের ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৭০০ পয়েন্টের ঘরে নেমেছে।
এ দিনে আগের কার্যদিবসের চেয়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে। সাড়ে চার মাস আগের অবস্থানে নেমে এসেছে লেনদেন ও সূচক। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম বাড়লেও সিএসইতে কমেছে।
আরো পড়ুন:
বেক্সিমকো সিকিউরিটিজের সনদ নবায়ন বাতিল
প্রথম প্রান্তিকে প্রাণের মুনাফা কমেছে ১.১৬ শতাংশ
বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অনেক দিন ধরে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতে সূচকের উত্থান দেখা গেলেও লেনদেন শেষে তা পতনে রূপ নেয়। রবিবার সকালে ডিএসইএক্স সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয়। তবে, লেনদেন শুরুর ১০ মিনিট পর থেকে সূচকের পতন দেখা যায়। এক পর্যায়ে সূচক ৮০ পয়েন্টের বেশি পতন ঘটে। তবে, লেনদেনের শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে সূচক আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফিরে আসে, যা লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কয়েক মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন অনেক কমেছে।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২৯.৪৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৭৩২ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮.১৬ পয়েন্ট কমে ৯৮৫ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৯.২৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৬০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে মোট ৩৮৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ২৩৬টি কোম্পানির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৫টির।
এদিন ডিএসইতে মোট ২৯৮ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৮৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৫০.৮৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ২৬৮ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৪.৩৭ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৩২৬ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ৩.৯৬ পয়েন্ট কমে ৮৪০ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৩৮.৯৮ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ১৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সিএসইতে মোট ১৪৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪৭টি কোম্পানির, কমেছে ৮২টির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৭টির।
সিএসইতে ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
ঢাকা/এনটি/রফিক