পুতিন-জেলেনস্কি নন, বৈঠক দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে
Published: 16th, May 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শান্তি আলোচনা পুতিন-জেলেনস্কি নন, বৈঠক চলছে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল তুরস্কের ইস্তাম্বুল গিয়ে পৌঁছায়। তিন বছরের মধ্যে এটি দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি শান্তি আলোচনা। এর আগে যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে তুরস্কে পৌঁছান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে পুতিন না এসে প্রতিনিধি পাঠানোয় রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি।
গতকাল আঙ্কারায় পৌঁছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলেনস্কি। বৈঠকের আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া ‘লোক দেখানো’ প্রতিনিধি পাঠিয়েছে।
জেলেনস্কির এমন মন্তব্যের জবাবে রুশ কর্মকর্তারা তাঁকে ‘করুণ’ ও ‘জোকার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ ও কটাক্ষ শান্তি আলোচনায় অগ্রগতির সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলের চাপ সত্ত্বেও পুতিন এই বৈঠকে যোগ দিতে ইস্তাম্বুল যাননি। তাঁর বদলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সহকারী ইউরি উশাকভ বৃহস্পতিবার সকালে ইস্তাম্বুল এসেছেন।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বলেছেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে বৈঠক না করা পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কোনো অগ্রগতি আশা করা যায় না। কাতার থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি পছন্দ করুন বা না করুন, আমি বিশ্বাস করি, কোনো কিছুই ঘটবে না যতক্ষণ না তিনি এবং আমি একসঙ্গে বসি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন
এছাড়াও পড়ুন:
সমস্যা সমাধানের সেরা পথ আলোচনা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন, তা যৌক্তিক বলেই আমরা মনে করি। তবে এর অর্থ এই নয় যে তাঁদের সব দাবি রাতারাতি বাস্তবায়ন করা যাবে। কিন্তু যেসব দাবি আগেই বাস্তবায়ন করা যেত, সেগুলোও ফেলে রাখার কারণেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়েছেন, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বুধবারের কর্মসূচিতে।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে শিক্ষার্থীদের লংমার্চ কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন।
সংবাদমাধ্যমে যেসব ছবি ও খবর এসেছে, তাতে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আচরণ ছিল বেপরোয়া। তাঁদের আঘাতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও আহত হয়েছেন। বাধার মুখেও শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি থেকে সরে আসেননি এবং বৃহস্পতিবারও তঁারা রাজপথে ছিলেন। এটা আন্দোলনের প্রতি তাঁদের দৃঢ়তার প্রতিফলন বলা যায়।
কিন্তু তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম যখন সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে আসেন, তখন তাঁর প্রতি পানির বোতল ছুড়ে মারার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। একজন উপদেষ্টা যখন তাঁদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করতে আসেন, তাঁর প্রতি ন্যূনতম সৌজন্যবোধ প্রকাশ করা উচিত। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে চেষ্টার ঘাটতি আছে। দাবিদাওয়া কতটা পূরণ করা যাবে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা। এনসিপির একজন নেতা খেদের সঙ্গে বলেছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, তাঁরা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চান না বলে ছাত্র উপদেষ্টাদের সেখানে যেতে হয়।
আগে থেকেই যমুনার সামনে সভা–সমাবেশের ওপর ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু দিন কয়েক আগে সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একাধিক সংগঠন যমুনার সামনে সমাবেশ করলেও সরকার বাধা দেয়নি। দুই সংগঠনের সরকারের দ্বিমুখী নীতি শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে নিঃসন্দেহে। আইন সবার প্রতি সমান হতে হবে।
এর চেয়েও উদ্বেগজনক হলো, রাজপথের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত সরকারের নীতিনির্ধারকদের হুঁশ না হওয়া। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমান সরকারের আমলে গত নভেম্বরে তাঁরা সচিবালয় ঘেরাও করেছিলেন। সে সময়ও সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ছয় মাসেও সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।
শিক্ষার্থী বা অন্য কোনো পেশার মানুষ হোন, তাঁদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে সরকারকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে। কেবল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নয়, কুয়েটসহ আরও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা চলছে।
আমরা আশা করব, সরকার অবিলম্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করবে। সব সমস্যা একসঙ্গে সমাধান করতে না পারলেও দ্বিতীয় ক্যাম্পাস অনুমোদন কিংবা ছাত্রাবাসগুলো দখলমুক্ত করার কাজটি কঠিন হওয়ার কথা নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। সেই সরকারের অনেক ক্ষমতাবান ব্যক্তি হল দখল করেছিলেন বলে আন্দোলন সফল হয়নি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর বলপ্রয়োগ করে আন্দোলন দমন করা হয়েছিল। এখন তো তারা ক্ষমতায় নেই। তাহলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল হওয়া হলগুলো উদ্ধার হবে না কেন?
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। বলপ্রয়োগ সমস্যাকে আরও জটিল করতে বাধ্য।