রাশিয়া আবার সস্তা গম আমদানির বড় উৎস
Published: 16th, May 2025 GMT
বাংলাদেশে এত দিন সস্তা গমের বড় উৎস ছিল কৃষ্ণসাগর অঞ্চলের দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন। তিন বছর আগে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের সময় এই দুটি দেশ থেকে গম আমদানি ব্যাহত হয়। যুদ্ধের কারণে সে সময় বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশে গম আমদানির বড় উৎস হয়ে উঠেছিল ভারত ও কানাডা। এখন আবার সস্তা গম আমদানির জন্য রাশিয়ার কাছে ফিরছেন আমদানিকারকেরা। তবে সস্তা গম আমদানির আরেক উৎস ইউক্রেন থেকে আমদানি কমছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের হিসাবে, চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই–এপ্রিল) প্রায় ৪৯ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এ সময় আমদানি হওয়া মোট গমের ৫৪ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে, যাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি মার্কিন ডলার। রাশিয়া থেকে এর চেয়ে বেশি গম আমদানির রেকর্ড ছিল ২০০৬–০৭ অর্থবছরে। সে সময় মোট আমদানির ৫৭ শতাংশ আমদানি হয়েছিল রাশিয়া থেকে।
সস্তা গম আমদানির আরেক উৎস ইউক্রেন থেকে ২০২২ সালে যুদ্ধের আগে প্রতিবছর গড়ে মোট আমদানির ২৩–৩০ শতাংশ আমদানি করা হতো। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে আমদানি ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে সস্তা গমের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা আরও বেড়েছে।
আমদানিকারকেরা জানান, দাম কম ও সরবরাহ বেশি থাকায় রাশিয়া থেকে গম আমদানি হচ্ছে বেশি। যদিও একক দেশের ওপর বেশি নির্ভরতা নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থার জন্য ভালো নয়। কারণ, কোনো কারণে রাশিয়া থেকে গম আমদানি ব্যাহত হলে বা দাম বাড়লে এ দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়বে। যদিও ব্যবসায়ীরা এখন ব্রাজিল থেকেও সস্তায় গম আমদানি শুরু করেছেন। তবে পরিমাণে তা কম। যেমন চলতি অর্থবছরে দেশটি থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার টন গম আমদানি হয়, যা মোট আমদানির ২ শতাংশ।
বাংলাদেশে দুই ধরনের গম আমদানি হয়। প্রথমত কম আমিষযুক্ত গম, যা কেক, বিস্কুটসহ বেকারিশিল্পের পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই গম আমদানি হয় কৃষ্ণসাগর অঞ্চল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে। দ্বিতীয়ত, উচ্চ আমিষযুক্ত গম, যা পরোটা, পাস্তা, নুডলস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই গম আমদানি হয় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আবার দুই ধরনের গম মিশিয়ে আটা–ময়দা তৈরি হয়। এর বাইরে প্রাণিখাদ্য হিসেবেও গমের ব্যবহার রয়েছে।
বাংলাদেশে ২০০৮–০৯ থেকে একটানা ৮ বছর গমের শীর্ষ উৎস ছিল কানাডা। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরের বছরও দেশটি শীর্ষ সরবরাহকারী ছিল। দেশটি থেকে উচ্চ আমিষমুক্ত গম আমদানি করা হয়। কানাডার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও উচ্চ আমিষযুক্ত গম আমদানি হয়, তবে পরিমাণে কম। সস্তা গমের আমদানি বাড়ায় উচ্চ আমিষযুক্ত গমের আমদানি কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আমদানি হওয়া গমের মধ্যে উচ্চ আমিষযুক্ত গম ১৮ শতাংশ, বাকি ৮২ শতাংশই সাধারণ আমিষযুক্ত গম। কয়েক বছর আগেও উচ্চ আমিষযুক্ত গম আমদানির হার ছিল ৩০ শতাংশ।
আমদানির তথ্যে দেখা যায়, গত এপ্রিলে রাশিয়া থেকে টনপ্রতি ২৫১ থেকে ২৬১ ডলারে গম আমদানি হয়েছে। কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ৩১–৩২ টাকা, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। আবার কানাডা থেকে আমদানি হওয়া উচ্চ আমিষযুক্ত গমের দাম পড়ছে টনপ্রতি ২৯৮ থেকে ৩৩০ ডলার। কেজিপ্রতি দাম ৩৬ থেকে ৪০ টাকা। কয়েক মাস ধরে এই দামে গম আমদানি করা হচ্ছে।
দেশে গমের চাহিদার ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। চাহিদার বাকি ৮৫ শতাংশই আমদানি করতে হয়। এক দশক আগে গম আমদানিতে ১০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গম আমদানিতে ব্যয় ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ২০৫ কোটি ডলারের গম আমদানি হয়। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে আমদানি হয়েছে ১৩৪ কোটি ডলারের গম।
জানতে চাইলে খাদ্যশস্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রাশিয়া থেকে আমদানিতে অনেক সময় ব্যাংকিং সমস্যায় পড়তে হয়, যদিও খাদ্যশস্য আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে নিত্যপণ্য আমদানিতে কোনো দেশের ওপর একক নির্ভরতা বাড়ানো উচিত নয়। বহুমুখী উৎস থেকে আমদানি করা দরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গম আমদ ন র আমদ ন ত ইউক র ন ১০ ম স প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে গৃহকর আদায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ, নাগরিক সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবার গৃহকর খাতে ২৯৮ কোটি টাকা আদায় করেছে, যা করপোরেশনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গত অর্থবছরের তুলনায় আদায় বেড়েছে ১০০ কোটি টাকা। গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ শতাংশ পূরণ হয়েছে এবার।
গৃহকর আদায় বেড়েছে মূলত সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়া কর আদায়ের ফলে। তবে কর আদায় বাড়লেও নাগরিক সেবা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে নগরবাসীর। ভাঙাচোরা রাস্তা, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিয়ন্ত্রণ—এই তিন খাতে চসিকের সেবার মান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।
বন্দর থেকে মিলেছে ১৪০ কোটি টাকাচসিকের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে গৃহকর খাতে ৩৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। আদায় হয়েছে ২৯৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে আদায় হয়েছিল ১৯৮ কোটি টাকা।
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট দাবি ছিল ২২৯ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দিয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। বেসরকারি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকা।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে চসিক বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য গৃহকর নির্ধারণ করেছিল ১৬০ কোটি টাকা। তবে আগের প্রশাসনের আমলে তা কমিয়ে ৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমান মেয়র শাহাদাত হোসেন আবারও উচ্চহারে গৃহকর নির্ধারণের উদ্যোগ নেন। আলোচনার মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৪০ কোটি টাকা পরিশোধে রাজি হয়।
রাজস্ব বেড়েছে, সেবা প্রশ্নবিদ্ধচসিকের মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে যা ছিল ৩৬১ কোটি টাকা। গৃহকর ছাড়াও ট্রেড লাইসেন্স, ভূমি হস্তান্তর কর, সাইনবোর্ড ফি, যানবাহন ফি, প্রমোদ কর, বিজ্ঞাপন করসহ ১০টি খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়।
তবে নাগরিকেরা বলছেন, কর দিলেও সেবা মিলছে না তেমনভাবে। নগরের বিভিন্ন সড়ক ভেঙে গেছে, যত্রতত্র ময়লা জমে থাকে, মশার ওষুধ ছিটানো হয় না নিয়মিত। নগরের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব কাঠগড় এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘নিয়মিত গৃহকর দিই, কিন্তু এলাকায় মশা মারার ওষুধ বা ময়লা নেওয়ার বিন দেখি না।’
১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী আরশাদ চৌধুরী বলেন, ‘সড়কবাতি লাগানো হয়েছে, রাস্তাঘাট কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে। নিয়মিত বর্জ্য সরানো হয় না।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের সেবামূলক কার্যক্রম এখনো গৎবাঁধা। রাস্তায় গর্ত, সড়কবাতির অভাব, মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’
চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নগরকে পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও স্বাস্থ্যকর করতে কর বৃদ্ধি নয়, বরং করদাতাদের কর প্রদানে উৎসাহিত করা হয়েছে। কর আদায়ের আওতা বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের অর্থ সেবার মান বাড়াতে ব্যবহার করা হবে। রাস্তাঘাট মেরামত, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধনে ইতিমধ্যে কার্যক্রম চলছে।’