বাংলাদেশে এত দিন সস্তা গমের বড় উৎস ছিল কৃষ্ণসাগর অঞ্চলের দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন। তিন বছর আগে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের সময় এই দুটি দেশ থেকে গম আমদানি ব্যাহত হয়। যুদ্ধের কারণে সে সময় বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশে গম আমদানির বড় উৎস হয়ে উঠেছিল ভারত ও কানাডা। এখন আবার সস্তা গম আমদানির জন্য রাশিয়ার কাছে ফিরছেন আমদানিকারকেরা। তবে সস্তা গম আমদানির আরেক উৎস ইউক্রেন থেকে আমদানি কমছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের হিসাবে, চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই–এপ্রিল) প্রায় ৪৯ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এ সময় আমদানি হওয়া মোট গমের ৫৪ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে, যাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি মার্কিন ডলার। রাশিয়া থেকে এর চেয়ে বেশি গম আমদানির রেকর্ড ছিল ২০০৬–০৭ অর্থবছরে। সে সময় মোট আমদানির ৫৭ শতাংশ আমদানি হয়েছিল রাশিয়া থেকে।

সস্তা গম আমদানির আরেক উৎস ইউক্রেন থেকে ২০২২ সালে যুদ্ধের আগে প্রতিবছর গড়ে মোট আমদানির ২৩–৩০ শতাংশ আমদানি করা হতো। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে আমদানি ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে সস্তা গমের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা আরও বেড়েছে।

আমদানিকারকেরা জানান, দাম কম ও সরবরাহ বেশি থাকায় রাশিয়া থেকে গম আমদানি হচ্ছে বেশি। যদিও একক দেশের ওপর বেশি নির্ভরতা নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থার জন্য ভালো নয়। কারণ, কোনো কারণে রাশিয়া থেকে গম আমদানি ব্যাহত হলে বা দাম বাড়লে এ দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়বে। যদিও ব্যবসায়ীরা এখন ব্রাজিল থেকেও সস্তায় গম আমদানি শুরু করেছেন। তবে পরিমাণে তা কম। যেমন চলতি অর্থবছরে দেশটি থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার টন গম আমদানি হয়, যা মোট আমদানির ২ শতাংশ।

বাংলাদেশে দুই ধরনের গম আমদানি হয়। প্রথমত কম আমিষযুক্ত গম, যা কেক, বিস্কুটসহ বেকারিশিল্পের পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই গম আমদানি হয় কৃষ্ণসাগর অঞ্চল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে। দ্বিতীয়ত, উচ্চ আমিষযুক্ত গম, যা পরোটা, পাস্তা, নুডলস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই গম আমদানি হয় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আবার দুই ধরনের গম মিশিয়ে আটা–ময়দা তৈরি হয়। এর বাইরে প্রাণিখাদ্য হিসেবেও গমের ব্যবহার রয়েছে।

বাংলাদেশে ২০০৮–০৯ থেকে একটানা ৮ বছর গমের শীর্ষ উৎস ছিল কানাডা। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরের বছরও দেশটি শীর্ষ সরবরাহকারী ছিল। দেশটি থেকে উচ্চ আমিষমুক্ত গম আমদানি করা হয়। কানাডার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও উচ্চ আমিষযুক্ত গম আমদানি হয়, তবে পরিমাণে কম। সস্তা গমের আমদানি বাড়ায় উচ্চ আমিষযুক্ত গমের আমদানি কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আমদানি হওয়া গমের মধ্যে উচ্চ আমিষযুক্ত গম ১৮ শতাংশ, বাকি ৮২ শতাংশই সাধারণ আমিষযুক্ত গম। কয়েক বছর আগেও উচ্চ আমিষযুক্ত গম আমদানির হার ছিল ৩০ শতাংশ।

আমদানির তথ্যে দেখা যায়, গত এপ্রিলে রাশিয়া থেকে টনপ্রতি ২৫১ থেকে ২৬১ ডলারে গম আমদানি হয়েছে। কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ৩১–৩২ টাকা, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। আবার কানাডা থেকে আমদানি হওয়া উচ্চ আমিষযুক্ত গমের দাম পড়ছে টনপ্রতি ২৯৮ থেকে ৩৩০ ডলার। কেজিপ্রতি দাম ৩৬ থেকে ৪০ টাকা। কয়েক মাস ধরে এই দামে গম আমদানি করা হচ্ছে।

দেশে গমের চাহিদার ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। চাহিদার বাকি ৮৫ শতাংশই আমদানি করতে হয়। এক দশক আগে গম আমদানিতে ১০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গম আমদানিতে ব্যয় ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ২০৫ কোটি ডলারের গম আমদানি হয়। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে আমদানি হয়েছে ১৩৪ কোটি ডলারের গম।

জানতে চাইলে খাদ্যশস্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রাশিয়া থেকে আমদানিতে অনেক সময় ব্যাংকিং সমস্যায় পড়তে হয়, যদিও খাদ্যশস্য আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে নিত্যপণ্য আমদানিতে কোনো দেশের ওপর একক নির্ভরতা বাড়ানো উচিত নয়। বহুমুখী উৎস থেকে আমদানি করা দরকার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গম আমদ ন র আমদ ন ত ইউক র ন ১০ ম স প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকে বাদ যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদ

সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদ, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বেশ কিছু কর্মসূচি বাদ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তাসহ নতুন কিছু প্রকল্প অন্তর্ভুক্তও হবে। সার্বিকভাবে এ খাত নিয়ে নতুন বাজেটে বেশ সংস্কারের ঘোষণা থাকছে। তাই সামাজিক নিরাপত্তা খাতের চলমান আটটি কর্মসূচিতে ভাতা ও কিছু ক্ষেত্রে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়লেও আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সার্বিকভাবে এ খাতে বরাদ্দ কমছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় থাকা ২১টি কর্মসূচিকে দরিদ্র মানুষের সুরক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মত দেওয়া হয়েছে। সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অবসরভোগী সরকারি কর্মচারীর পেনশন, কৃষি খাতে ভর্তুকি ও সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ। এ ধরনের কর্মসূচিতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা, যা এ খাতে মোট বরাদ্দের ৫৩ শতাংশ। 

সরকারের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের (এনএসএসএস) সঙ্গে এই কর্মসূচিগুলোর মিলও নেই। তাই সামঞ্জস্যহীন কর্মসূচি বাদ দিয়ে প্রকৃত অর্থে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণবিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়। শুধু টাস্কফোর্সই নয়, বিভিন্ন দাতা সংস্থা, দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনীতিবিদরা বহুদিন থেকেই সামাজিক সুরক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন। 
জানতে চাইলে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সম্প্রতি সচিবালয়ে উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে সাজানো হচ্ছে। এ খাতের পরিচালন বাজেটের অংশে সঞ্চয়পত্রে সুদ বাবদ যে বরাদ্দ রাখা হতো, তা অন্য খাতে দেখানো হবে– এমনটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সরকারি কর্মচারীর পেনশন, কৃষি খাতে ভর্তুকিসহ অন্যান্য কর্মসূচি এ খাতেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। 
তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তাসহ এ খাতে অন্তর্ভুক্ত হবে। এ খাত থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বেশ কিছু প্রকল্প বাদ যাবে। তবে এখন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত হয়নি। তাই কতগুলো প্রকল্প বাদ যাবে আর কতগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। নতুন করে অন্তর্ভুক্ত আর বাদ দেওয়ার পর সার্বিকভাবে এ খাতে মোট বরাদ্দ কিছুটা কমবে। 

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের চলমান আটটি কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মা ও শিশু, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, বেদে এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতার পরিমাণ ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। 
সংশ্লিষ্টরা বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি অর্থবছরেই এ খাতের বরাদ্দ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়ে আসছিল। বর্তমানে ২৬টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৪০টি কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ জন্য চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্রে সুদ বাবদ ব্যয় খাতে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এটিসহ আরও কিছু কর্মসূচি বাদ যাওয়ায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: আন্দোলনের মুখে সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিল
  • ৫০ ঘণ্টা ধরে অবস্থানের পর গণ-অনশনে জগন্নাথের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা
  • সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকে বাদ যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদ
  • ঢাবির মুরুব্বিয়ানা বন্ধ করতে হবে: শরিফ ওসমান
  • লংমার্চে লাঠিপেটার পর বিক্ষোভ, রাতেও অবস্থানের ঘোষণা
  • ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৬ জন, ভর্তি ২
  • জবি শিক্ষার্থীদের ‘লং মার্চে’ পুলিশের লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড 
  • যমুনার উদ্দেশে লংমার্চ শুরু জবি শিক্ষার্থীদের
  • মূল্যস্ফীতিতে খাদ্যবহির্ভূত সেবা ও আমদানি পণ্যের প্রভাব বেড়েছে