তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা লাগবে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার পরে
Published: 16th, May 2025 GMT
সমকাল: আপনি বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। ১৬ বছর পর বর্তমান বাজারে গুণগত কোনো পরিবর্তন কী দেখেন?
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: বলা উচিত হবে কিনা জানি না, আধুনিক সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও ২০০৯ পর্যন্ত বাজার আরও বেশি সুশৃঙ্খল ছিল। খারাপ কোম্পানিকে বা স্টক এক্সচেঞ্জের অমতে আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো– বিএসইসিকে তখন সবাই মান্য করত। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে বাজার পরিচালনা করা হতো। এখন যা দেখা যায় না। অংশীজনের সঙ্গে সম্পর্ক আন্তরিক নয়, পারস্পরিক সম্মানের জায়গা দেখি না।
সমকাল: এ দীর্ঘ সময়েও কি শেয়ারবাজারের উন্নয়ন হয়নি?
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: কয়েকটি ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে এলেও প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। এ বাজারের মূল সমস্যা ভালো শেয়ারের সরবরাহ নেই। তাহলে বিনিয়োগকারীরা কোথায় বিনিয়োগ করবেন। যদি আরও অন্তত ১৫-২০টি খুব ভালো কোম্পানি আসত, তাহলে বাজার চিত্রটি অন্যরকম হতে পারত। এটিই বোধ হয় বড় ব্যর্থতা।
সমকাল: এ ব্যর্থতা কার?
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: এককভাবে কারও না। বিএসইসির কাজ নয়, কোনো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনা। এ সংস্থার কাজ সুষ্ঠু বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করা, যাতে ভালো কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রয়োজনে বাজারটিকে ব্যবহার করেন। এ দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের। তাদের প্রচেষ্টা দৃশ্যমান নয়। তাছাড়া সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিও মানুষকে পুঁজিবাজারমুখী হওয়ার মতো নয়। কারণ নতুন কোম্পানি আইপিও অনুমোদন পায় না। পুরোনো কোম্পানি তার ব্যবসা বাড়াতে বা চলতি মূলধনের প্রয়োজনে আসতে পারে। এ প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংক বসে আছে। দ্রুত সময়ে ঋণ দিচ্ছে, যেখানে পুঁজিবাজারে অনেক সময় লাগে। এখন যদি শিল্পে বিনিয়োগ এত বেশি হতো যে ব্যাংক তার জন্য অর্থায়ন করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না, তখন হয়তো পুঁজিবাজারমুখী হতো। দেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ জিডিপির ২৩ শতাংশে আটকে আছে বহু বছর। যখন ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ চাহিদা বাড়বে এবং ব্যাংক তা দিতে পারবে না বা উদ্যোক্তার কাছে পুঁজিবাজার বেশি লাভজনক বলে মনে হবে, তখন তারা নিজে থেকেই আসবে।
সমকাল: দেশের শেয়ারবাজারে লাগাতার দর পতন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাচ্ছেন। আইপিও নেই। ফলে ব্যাপক সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে…
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: সংস্কার হতেই পারে। তবে আইনগত বড় সংস্কারের দরকার আছে বলে মনে করি না। কারণ ২০০৯-১০ সালেও এই আইন ছিল। তখনও ৩০-৩৫ লাখ বিনিয়োগকারী এ বাজারে ছিল। সমস্যাটি আইনে নয়, প্রয়োগে। লক্ষ্য করছি, সংস্কারের লক্ষ্যে ৭ মাস কেটে গেছে, এখনও সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। একটি টাস্কফোর্স হয়েছে, যার ১৭টি বিষয়ে সুপারিশ দেওয়ার কথা, দিয়েছে তিনটি। এভাবে সময় নষ্ট করার মানে হয় না। সেসব সংস্কার প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে এক-দেড় মাসেই বিএসইসি নিজেই করতে পারত।
সমকাল: চলতি দর পতনের কারণ কী বলে মনে করেন?
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: এখন দেশে মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক সুদের হার বেশি। এমন পরিস্থিতি শেয়ারবাজারের জন্য অনুকূল নয়। কারণ বড় বিনিয়োগকারীরা এ সময়ে নিরাপদ বিনিয়োগ (যেমন– এফডিআর, সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বন্ড) করেন, শেয়ারে নয়। তারপরও যেভাবে লাগাতার পতন হচ্ছে, তার যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাই না। গত তিন মাসে অর্থনীতির যতটুকু উন্নতি হয়েছে, তার প্রভাব থাকার কথা ছিল, তা হয়নি। এর কারণ অন্য কিছু।
সমকাল: অন্য কিছুটা কী?
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: সুশাসনের অভাব। বিশেষত বাজারের নিয়ন্ত্রণগত সমস্যা, কারসাজি বন্ধ না হওয়া। নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি সংশ্লিষ্টদের আস্থা না থাকা।
সমকাল: প্রধান উপদেষ্টা প্রয়োজনে বিদেশি পরামর্শক এনে শেয়ারবাজারের সংস্কার করা, ভালো শেয়ারের জোগান বাড়ানো, অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কী?
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: এ ক্ষেত্রে আমি কিছু দুর্বলতা দেখি। তিনি হয়তো শুধু সরকারি কর্মকর্তা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কথা শুনে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। ভালো হতো যদি বাজার অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে বা আগে তাদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি যে সমাধান দিয়েছেন, তার কোনোটাই নতুন না।
সমকাল: বিদেশি পরামর্শক দিয়ে সংস্কারের নির্দেশনাও কী ভালো নয়?
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: বিদেশিদের দিয়ে আমাদের সমস্যার সুরাহা করা দুরূহ। কারণ উন্নত বাজারে যে সমস্যা, আমাদের ছোট বাজারে তা নয়। যদি পরামর্শক আনতেই হয়, তাহলে ফ্রন্টিয়ার বাজারের সমস্যা কাটিয়ে যারা সম্প্রতি ইমার্জিং মার্কেট হয়েছে, তাদের অভিজ্ঞতা জানা ভালো।
সমকাল: সংস্কার কী ধরনের হওয়া উচিত?
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: আমাদের সমস্যা তাৎক্ষণিক। প্রতিদিনই বাজার পড়ছে। এ সমস্যার সমাধান মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দিয়ে হবে না। আজ বা আগামীকালের ব্যবস্থা লাগবে। তাছাড়া বিনিয়োগকারীদের না বাঁচিয়ে কোনো সংস্কার কাজে আসবে না। যত দ্রুত সম্ভব কিছু বহুজাতিক এবং সরকারি কোম্পানি বাজারে আনলে বাজারে পরিবর্তন আসবে। বাজারের সব অংশীজনের সঙ্গে বসে তাদের কথা শুনে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ তারাই ভালো জানে, এখন বাজারের কী প্রয়োজন। বিশ্বাসযোগ্যভাবে সবাইকে এ বার্তা দিতে হবে- সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারের উন্নতি চাচ্ছে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহীম
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ র ক আহম দ স দ দ ক শ য় রব জ র ব যবস থ ব এসইস অ শ জন সমস য সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
২৮ প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও লস প্রভিশনিংয়ের সময় বৃদ্ধি
পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত ২৮টি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানকে তাদের নেতিবাচক ইকুইটি ও অবাস্তব লোকসান সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত সময়সীমা শর্তসাপেক্ষে বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই তালিকায় রয়েছে স্টকব্রোকার, ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকসহ একাধিক বাজার মধ্যস্থতাকারী।
বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার গেজেট প্রকাশ
নর্ডিক বাজারে রেনাটার আমান্টাডিন ওষুধ উন্মোচন
এতে বলা হয়েছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯ নভেম্বর ৯৮২তম ও ১৩ নভেম্বর ৯৮৪তম কমিশন সভায় স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকার কর্তৃক কমিশনের কাছে দাখিল করা বোর্ড অনুমোদিত নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়সংক্রান্ত অ্যাকশন প্ল্যান বিবেচনা করে ২৮টি বাজার মধ্যস্থতাকারীর প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয় করার সময়সীমা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাজার মধ্যস্থতাকারীর প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ, ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ, শাহজালাজ ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ, উত্তরা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এনসিসিবি সিকিউরিটিজ, আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজ, সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস, ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্টস, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, জিএসপি ইনভেস্টমেন্ট, অগ্রণী ইক্যুইটি, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট, আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল, ইসি সিকিউরিটিজ, যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এমটিবি সিকিউরিটিজ, এবি সিকিউরিটিজ, ফিনিক্স সিকিউরিটিজ, প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজ, এসবিএল ক্যাপিটাল, ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট, ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট এবং এমটিবি ক্যাপিটাল।
স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকাদের নেগেটিভ ইকুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের প্রভিশন ও সমন্বয়ের সময়সীমা কিছু শর্তসাপেক্ষে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে বর্ধিত সময়ে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকারের নিট সম্পদের ঘাটতিসংক্রান্ত বিধান পরিপালনে সাময়িক শিথিলতা থাকবে। এ-সংক্রান্ত কমিশনের আদেশ কমিশনের ওয়েবসাইটের ‘সিকিউরিটিজ ল’ মেনুর ‘সিকিউরিটিজ ল, রুলস, রেগুলেশনসS’ সাব মেনুতে পাওয়া যাবে।
ঢাকা/এনটি/রাসেল