সমকাল: আপনি বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। ১৬ বছর পর বর্তমান বাজারে গুণগত কোনো পরিবর্তন কী দেখেন?

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: বলা উচিত হবে কিনা জানি না, আধুনিক সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও ২০০৯ পর্যন্ত বাজার আরও বেশি সুশৃঙ্খল ছিল। খারাপ কোম্পানিকে বা স্টক এক্সচেঞ্জের অমতে আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো– বিএসইসিকে তখন সবাই মান্য করত। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে বাজার পরিচালনা করা হতো। এখন যা দেখা যায় না। অংশীজনের সঙ্গে সম্পর্ক আন্তরিক নয়, পারস্পরিক সম্মানের জায়গা দেখি না।

সমকাল: এ দীর্ঘ সময়েও কি শেয়ারবাজারের উন্নয়ন হয়নি?

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: কয়েকটি ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে এলেও প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। এ বাজারের মূল সমস্যা ভালো শেয়ারের সরবরাহ নেই। তাহলে বিনিয়োগকারীরা কোথায় বিনিয়োগ করবেন। যদি আরও অন্তত ১৫-২০টি খুব ভালো কোম্পানি আসত, তাহলে বাজার চিত্রটি অন্যরকম হতে পারত। এটিই বোধ হয় বড় ব্যর্থতা।

সমকাল: এ ব্যর্থতা কার?

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: এককভাবে কারও না। বিএসইসির কাজ নয়, কোনো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনা। এ সংস্থার কাজ সুষ্ঠু বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করা, যাতে ভালো কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রয়োজনে বাজারটিকে ব্যবহার করেন। এ দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের। তাদের প্রচেষ্টা দৃশ্যমান নয়। তাছাড়া সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিও মানুষকে পুঁজিবাজারমুখী হওয়ার মতো নয়। কারণ নতুন কোম্পানি আইপিও অনুমোদন পায় না। পুরোনো কোম্পানি তার ব্যবসা বাড়াতে বা চলতি মূলধনের প্রয়োজনে আসতে পারে। এ প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংক বসে আছে। দ্রুত সময়ে ঋণ দিচ্ছে, যেখানে পুঁজিবাজারে অনেক সময় লাগে। এখন যদি শিল্পে বিনিয়োগ এত বেশি হতো যে ব্যাংক তার জন্য অর্থায়ন করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না, তখন হয়তো পুঁজিবাজারমুখী হতো। দেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ জিডিপির ২৩ শতাংশে আটকে আছে বহু বছর। যখন ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ চাহিদা বাড়বে এবং ব্যাংক তা দিতে পারবে না বা উদ্যোক্তার কাছে পুঁজিবাজার বেশি লাভজনক বলে মনে হবে, তখন তারা নিজে থেকেই আসবে।

সমকাল: দেশের শেয়ারবাজারে লাগাতার দর পতন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাচ্ছেন। আইপিও নেই। ফলে ব্যাপক সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে…

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: সংস্কার হতেই পারে। তবে আইনগত বড় সংস্কারের দরকার আছে বলে মনে করি না। কারণ ২০০৯-১০ সালেও এই আইন ছিল। তখনও ৩০-৩৫ লাখ বিনিয়োগকারী এ বাজারে ছিল। সমস্যাটি আইনে নয়, প্রয়োগে। লক্ষ্য করছি, সংস্কারের লক্ষ্যে ৭ মাস কেটে গেছে, এখনও সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। একটি টাস্কফোর্স হয়েছে, যার ১৭টি বিষয়ে সুপারিশ দেওয়ার কথা, দিয়েছে তিনটি। এভাবে সময় নষ্ট করার মানে হয় না। সেসব সংস্কার প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে এক-দেড় মাসেই বিএসইসি নিজেই করতে পারত।

সমকাল: চলতি দর পতনের কারণ কী বলে মনে করেন?

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: এখন দেশে মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক সুদের হার বেশি। এমন পরিস্থিতি শেয়ারবাজারের জন্য অনুকূল নয়। কারণ বড় বিনিয়োগকারীরা এ সময়ে নিরাপদ বিনিয়োগ (যেমন– এফডিআর, সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বন্ড) করেন, শেয়ারে নয়। তারপরও যেভাবে লাগাতার পতন হচ্ছে, তার যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাই না। গত তিন মাসে অর্থনীতির যতটুকু উন্নতি হয়েছে, তার প্রভাব থাকার কথা ছিল, তা হয়নি। এর কারণ অন্য কিছু।

সমকাল: অন্য কিছুটা কী?

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: সুশাসনের অভাব। বিশেষত বাজারের নিয়ন্ত্রণগত সমস্যা, কারসাজি বন্ধ না হওয়া। নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি সংশ্লিষ্টদের আস্থা না থাকা।
সমকাল: প্রধান উপদেষ্টা প্রয়োজনে বিদেশি পরামর্শক এনে শেয়ারবাজারের সংস্কার করা, ভালো শেয়ারের জোগান বাড়ানো, অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কী? 

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: এ ক্ষেত্রে আমি কিছু দুর্বলতা দেখি। তিনি হয়তো শুধু সরকারি কর্মকর্তা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কথা শুনে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। ভালো হতো যদি বাজার অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে বা আগে তাদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি যে সমাধান দিয়েছেন, তার কোনোটাই নতুন না।

সমকাল: বিদেশি পরামর্শক দিয়ে সংস্কারের নির্দেশনাও কী ভালো নয়?

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: বিদেশিদের দিয়ে আমাদের সমস্যার সুরাহা করা দুরূহ। কারণ উন্নত বাজারে যে সমস্যা, আমাদের ছোট বাজারে তা নয়। যদি পরামর্শক আনতেই হয়, তাহলে ফ্রন্টিয়ার বাজারের সমস্যা কাটিয়ে যারা সম্প্রতি ইমার্জিং মার্কেট হয়েছে, তাদের অভিজ্ঞতা জানা ভালো।

সমকাল: সংস্কার কী ধরনের হওয়া উচিত?

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী: আমাদের সমস্যা তাৎক্ষণিক। প্রতিদিনই বাজার পড়ছে। এ সমস্যার সমাধান মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দিয়ে হবে না। আজ বা আগামীকালের ব্যবস্থা লাগবে। তাছাড়া বিনিয়োগকারীদের না বাঁচিয়ে কোনো সংস্কার কাজে আসবে না। যত দ্রুত সম্ভব কিছু বহুজাতিক এবং সরকারি কোম্পানি বাজারে আনলে বাজারে পরিবর্তন আসবে। বাজারের সব অংশীজনের সঙ্গে বসে তাদের কথা শুনে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ তারাই ভালো জানে, এখন বাজারের কী প্রয়োজন। বিশ্বাসযোগ্যভাবে সবাইকে এ বার্তা দিতে হবে- সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারের উন্নতি চাচ্ছে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহীম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ র ক আহম দ স দ দ ক শ য় রব জ র ব যবস থ ব এসইস অ শ জন সমস য সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যাক অফিস সফটওয়্যার বাস্তবায়নে আরো ২ মাস সময় চায় ডিবিএ

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করার সময়সীমা সোমবার (৩০ জুন) শেষ হচ্ছে। এ সফটওয়্যার চালু করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নিজ নিজ প্যানেলভুক্ত বিক্রেতাদের (ভেন্ডর) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ব্রোকারেজ হাউজগুলো। তবে সাম্প্রতি ঈদ ও অন্যান্য সরকারি ছুটির কারণে সফটওয়্যারটি চালু করার কার্যক্রম কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার চালু করার সময়সীমা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অর্থাৎ আরো দুই মাস সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।

রবিবার (২৯ জুন) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার (সিআরও) কাছে এ অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন ডিবিএ’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

জানা গেছে, পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ সম্প্রতি ডিবিএ’র কাছে অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার পরিপূর্ণভাবে চালু করার জন্য সময়সীমা বাড়ানো দাবি জানায়। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিবিএ দুই মাস সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে।

ডিবিএ’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত বর্তমান সময়সীমা ৩০ জুন। এই সময়সীমা শেষের পথে। তাই আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার বাস্তবায়নের সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্যানেলভুক্ত সফটওয়্যার বিক্রেতাদের (ভেন্ডর) সীমিত সম্পদের কারণে, তারা সকল ব্রোকারেজ হাউসকে একযোগে সফটওয়্যার বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদান করতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সেইসঙ্গে সাম্প্রতিক ঈদ ও অন্যান্য সরকারি ছুটির কারণে কার্যক্রমের অগ্রগতি বিলম্বিত হয়েছে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ব্রোকারেজ হাউস ইতিমধ্যে অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদের নিজ নিজ প্যানেলভুক্ত বিক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে, উপরে উল্লিখিত সীমাবদ্ধতার কারণে কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে, বিএসইসির নির্দেশ অনুসারে অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার সফল ও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন সহজতর করার লক্ষ্যে এ সময়সীমা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবিএ'র সচিব দিদারুল গনী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার বাস্তবায়নের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এরইমধ্যে ব্রোকারেজ হাউসগুলো সফটওয়্যার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদের নিজ নিজ প্যানেলভুক্ত বিক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ঈদ ও অন্যান্য সরকারি ছুটির কারণে এ কার্যক্রম কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। তাই ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আরো দুই মাস সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছে ডিবিএ।”  

এর আগে ৩০ এপ্রিল বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৫৪তম কমিশন সভায় ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের জন্য ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা বৃদ্ধির সঙ্গে সিডিবিএলে রক্ষিত শেয়ার বা সিকিউরিটিজের তথ্য ও স্টক ব্রোকারের কাছে রক্ষিত শেয়ার বা সিকিউরিটিজের তথ্যের মধ্যকার গরমিল হ্রাস পাবে বলে মনে করে বিএসইসি।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের অবৈধ শেয়ার ইস্যু, তদন্ত করবে বিএসইসি
  • রূপালী ব্যাংকে সরকারের মালিকানা বাড়ছে, কমছে সাধারণের অংশ
  • ব্যাক অফিস সফটওয়্যার বাস্তবায়নে আরো ২ মাস সময় চায় ডিবিএ
  • বিএসইসি-অংশীজনের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে ভূমিকা রাখবে সমন্বিত সভা
  • স্টার্লিংয়ের এফডিআরের টাকা দেয়নি ফারইস্ট ফাইন্যান্স, তদন্ত কমিটি
  • বিদেশি পরামর্শকের সঙ্গে দেশি বিশেষজ্ঞ থাকবেন