পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে বড় ভূমিকা রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। যুদ্ধবিরতির পরও দুই দেশের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। আজ শনিবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি টেকসই করা এবং সংলাপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাজ্য।

ইসলামাবাদে দুই দিনের সফরের শেষ পর্যায়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ল্যামি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব, যেন একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা যায় এবং সংলাপ অব্যাহত থাকে। একই সঙ্গে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কীভাবে আস্থা সৃষ্টি করা যায়, সে পথ খুঁজে বের করতে একযোগে কাজ করে যাব।’

২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার জেরে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত ও পাকিস্তান। টানা চার দিন সংঘাতের পর ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই পক্ষ। তখন থেকে হামলা বন্ধ থাকলেও পাল্টাপাল্টা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। এমনকি সংঘাতের আগে দুই দেশ যে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেগুলোও এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি।

ডনের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার রাজধানী ইসলামাবাদে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘কাশ্মীর ও পানিবণ্টনের মতো সমস্যাগুলো সমাধানের পর আমরা বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে আলোচনা করতে পারি। কারণ, সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে ভুক্তভোগী দেশ পাকিস্তান। সন্ত্রাসবাদের কারণে দেশটিতে ৯০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।’

ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তান ‘জয়ী’ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। আমরা শত্রুদের শিক্ষা দিয়েছি। তবে আমরা আগ্রাসনের নিন্দা জানাই। আমরা চাই বিশ্বের এই অংশ কঠোর পরিশ্রম, অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ বসবাসের মাধ্যমে অন্য অংশগুলোর মতোই সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল হয়ে উঠুক।’

আরও পড়ুনপেহেলগাম হামলা: বিরোধীদের দাবি এড়াতেই কি বিদেশে দল পাঠাচ্ছে মোদি সরকার২ ঘণ্টা আগে

যুদ্ধবিরতির পর ভারত–পাকিস্তানের বেসামরিক নেতৃত্বের মধ্যে সরাসরি আলোচনা না হলেও সামরিক বাহিনীর মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে। শুক্রবারও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা নিয়মিত বৈঠক করছেন। সেখানেও উত্তেজনা কমানোর বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।

আরও পড়ুনআমরা যুদ্ধ জিতেছি, তবে শান্তি চাই: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দাবি৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী শহীদ মিনার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে মিছিল করছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আসলাম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা ‘দুর্দিনের আসলাম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ‘আসলাম ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, আসলাম চৌধুরী দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তিনি দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে কারাবন্দী হন। দীর্ঘ সময় তিনি জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। অথচ এখন সুসময়ে দল তাঁকে বঞ্চিত করছে। তাঁরা দলের এ সিদ্ধান্ত মানেন না। তাই প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. মোরসালীন প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা যে যাঁর জায়গা থেকে মহাসড়কে উঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁরা অন্তত সীতাকুণ্ডের ৩০টি স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

ঘোষিত প্রার্থী কাজী মুহাম্মদ সালাউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাঁকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।

ফৌজদারহাট পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের মাথা, ফৌজদারহাট, জলিল গেইট, ভাটিয়ারী, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ রয়েছে। ফলে উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ। পুলিশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ