কক্সবাজার ও যশোরে ১০ তলা বিশিষ্ট ২টি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ ও কুমিল্লার পুলিশ লাইনের ভবণ নির্মাণে অতিরিক্ত ব্যয়ের ১টিসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মোট ৩ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৭৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৫ টাকা।

মঙ্গলবার (২০ মে) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় ১০তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড মেডিকেল কলেজ হসপিটাল অ্যান্ড এনসিলারী বিল্ডিং ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা অ্যান্ড নোয়াখালী (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলায় ১০তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি দরপত্র জমা পড়ে।তার মধ্যে ২টি দরপ্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান দি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্ট লি.ঢাকা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ ৮২ হাজার ১৮৩ টাকা।

সভায় যশোর জেলায় ১০তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড মেডিকেল কলেজ হসপিটাল অ্যান্ড এনসিলারী বিল্ডিং ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা অ্যান্ড নোয়াখালী (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় যশোর জেলায় ১০তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। দাখিলকৃত ৩টি দরপ্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এইচএসএল এবং আরসিসিএল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৩১ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ১২৮ টাকা।

সভায়,‘কুমিল্লাস্থ পুলিশ লাইন এলাকায় ১৫তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লাস্থ পুলিশ লাইন এলাকায় ১৫তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজ যৌথভাবে টিবিইএল, এসটিআই এবং টিইসি কাজ পায়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৫ কোটি ৯৮ লাখ ১ হাজার ৬১ টাকা। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় ফাউন্ডেশনের এর ড্রইং সংশোধন হওয়ায় টেন্ডারভুক্ত/টেন্ডার বহির্ভূত কিছু আইটেম হ্রাস/বৃদ্ধি হয়। ফলে ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৬ কোটি ৬৮ লাখ ৯ হাজার ৩৮৪ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সপনস ভ প রকল প দরপত র র জন য মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বেশি দরে টিকা কিনছে প্রাণিসম্পদ

গরু-মহিষ ও ভেড়া-ছাগলের খুরারোগের টিকা কম দরে সরবরাহ করতে চেয়ে প্রথমে কাজ পায়নি ওএমসি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দুই মাস পরে একই পরিমাণ টিকা সরবরাহে বেশি দর প্রস্তাব করার পর প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এতে সরকারের লোকসান হবে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। যদিও সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল জেনটেক; ওএমসি নয়।

বাড়তি দর দিয়ে ওএমসির কাজ পাওয়ার পেছনে প্রভাবশালী একজন ব্যক্তির চাপ আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে জানান, তাঁর দপ্তরে প্রভাবশালী ব্যক্তি এসেছিলেন। তবে খুরারোগের টিকার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। ডিপার্টমেন্টের কার্যক্রম কীভাবে চলছে, এমন নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

যে প্রক্রিয়ায় ওএমসিকে টিকা কেনার কাজ দেওয়া হয়েছে, তাতে যথেষ্ট সন্দেহের সুযোগ আছে। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি

খুরারোগের (এফএমডি) ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৪ ডোজ টিকা প্রথমে ৮২ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার ২৬৯ টাকায় সরবরাহ করতে চেয়ে দরপত্র দিয়েছিল ওএমসি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়নি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। পরের দরপত্রে একই পরিমাণ টিকা ৯৬ কোটি ৯৭ লাখ ২৮ হাজার ৫৫২ টাকায় সরবরাহ করতে চাইলে কাজ পায় ওএমসি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ‘পিপিআর রোগ নির্মূল এবং খুরারোগ নিয়ন্ত্রণ’ প্রকল্পের জিডি-৬ প্যাকেজের আওতায় এই টিকা কেনা হচ্ছে। ২০১৭ সালে সৌদি আরব আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছিল খুরারোগমুক্ত অঞ্চল গড়তে পারলে এখান থেকে মাংস নেবে তারা। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় এ প্রকল্প। এর আওতায় মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও ভোলা জেলাকে খুরারোগমুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রথম দফায় ১ কোটি ৩৭ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন দ্বিতীয় দফায় টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

খুরারোগের (এফএমডি) ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৪ ডোজ টিকা প্রথমে ৮২ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার ২৬৯ টাকায় সরবরাহ করতে চেয়ে দরপত্র দিয়েছিল ওএমসি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়নি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। পরের দরপত্রে একই পরিমাণ টিকা ৯৬ কোটি ৯৭ লাখ ২৮ হাজার ৫৫২ টাকায় সরবরাহ করতে চাইলে কাজ পায় ওএমসি।

নথিপত্রে দেখা যায়, খুরারোগের টিকা কেনার জন্য তিন দফা দরপত্র দিয়েছে অধিদপ্তর। প্রথম দরপত্রে অংশ নেয়নি ওএমসি। দ্বিতীয় দফায় ওএমসিসহ সাতটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এই দুই দফায় কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়নি।

গত বছরের ডিসেম্বরে তৃতীয় দফা দরপত্রে অংশ নেয় তিনটি প্রতিষ্ঠান, যারা দ্বিতীয় দরপত্রে অংশ নিয়েছিল। এই দফায় আগের চেয়ে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা কম প্রস্তাব করে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় জেনটেক। প্রতিষ্ঠানটি আগেও রাশিয়া থেকে এই টিকা এনে সরবরাহ করেছিল। আর আগের দরই বহাল রাখে রেনাটা। কিন্তু আগের চেয়ে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা দর বাড়িয়ে দরপত্র জমা দেয় ওএমসি। এরপরও ওএমসিকেই টিকা সরবরাহের কাজ দেয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

পিপিআর রোগ নির্মূল এবং খুরারোগ নিয়ন্ত্রণের প্রকল্প পরিচালক অমর জ্যোতি চাকমার সময়েই তিনটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগে কে কী দর করেছে, এটা তাঁদের জানার বিষয় নয়।

সর্বনিম্ন দরদাতার টিকা নিরাপদ নয়। ওই টিকা দিলে গর্ভপাতের ঝুঁকি আছে, পশু মৃত্যুর ঝুঁকিও আছে। তবে যাদের কাজ দেওয়া হয়েছে, তাদের টিকা নিরাপদ।প্রকল্প পরিচালক অমর জ্যোতি চাকমা

দাম কমানোর চেষ্টা করেনি অধিদপ্তর

দ্বিতীয় দফা দরপত্রের সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ রেয়াজুল হক। এই দরপত্র কেন বাতিল করা হয়েছিল, জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্রে অংশ নেওয়া কেউই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। সে কারণে দ্বিতীয় দফা দরপত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়নি।

প্রকল্প পরিচালক অমর জ্যোতি চাকমা বলেন, তৃতীয় দফা দরপত্রে কিছু শর্ত শিথিল করা হয়েছে। কী শর্ত শিথিল করা হয়েছে, জানতে চাইলে বলেন, তিনি ‘মুখস্থ করে’ রাখেননি। আর শর্ত পূরণ করায় ওএমসি কাজ পেয়েছে।

সর্বনিম্ন দরদাতা জেনটেকের চেয়ে ২০ কোটি টাকা বেশি দরে ওএমসির কাছ থেকে টিকা কেনা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সর্বনিম্ন দরদাতার টিকা নিরাপদ নয়। ওই টিকা দিলে গর্ভপাতের ঝুঁকি আছে, পশু মৃত্যুর ঝুঁকিও আছে। তবে যাদের কাজ দেওয়া হয়েছে, তাদের টিকা নিরাপদ।

আড়াই মাসের ব্যবধানে ওএমসি ১৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার বেশি বাড়তি দর দিলেও তা কমানোর জন্য কোনো ধরনের উদ্যোগ ছিল না প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, টিকা কেনার ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয়ের পাশাপাশি কারিগরি বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরামর্শ এসেছে ওএমসির টিকা ভালো। তাই তাদের টিকা নেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীর পান্থপথে ওএমসি লিমিটেডের কার্যালয়। ৪ মে তাদের কার্যালয়ে গিয়ে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বাড়তি দর দেওয়ার কারণসহ একাধিক বিষয়ে জানতে চেয়ে ই-মেইল করেও ওএমসির কাছ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

প্রকল্প দপ্তরে দুদকের অভিযান

টিকা কেনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল গত ২৪ মার্চ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে অভিযান চালায়। পরে দুদকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বলা হয়, তাদের দলটি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় পরিদর্শন করেছে। প্রকল্প পরিচালক অনুপস্থিত থাকায় পরিচালকের (প্রশাসন) সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে কথা হয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রও সংগ্রহ করে। এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

যে প্রক্রিয়ায় ওএমসিকে টিকা কেনার কাজ দেওয়া হয়েছে, তাতে যথেষ্ট সন্দেহের সুযোগ আছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের অর্থের যথাযথ ব্যবহার হয়েছে, এটি নিশ্চিত হওয়া যায় না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রপ্রক্রিয়া আহ্বান চেয়ে করা রিটের শুনানি রোববার  
  • ২৫টি নতুন জিপ কেনার প্রস্তাব ফেরত, ১টিতে নীতিগত অনুমোদন
  • ঠিকাদারি নিয়ে রাজশাহী ও নওগাঁর দুই বিএনপি নেতার ‘খাই খাই’ ফোনালাপ
  • সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৪ প্রস্তাব অনুমোদন
  • বেশি দরে টিকা কিনছে প্রাণিসম্পদ
  • মেট্রোরেলে কমলাপুর যেতে আরও অপেক্ষা