বহুদূর পথ উড়ে এসে ছোট্ট আমগাছের ডালে এসে বসল টুনটুনি পাখিটি। এদিকটায় আজই সে প্রথম। সবেমাত্র সে ওড়া শিখেছে। মা বলেছে বেশিদূর না যেতে। মায়ের কথামতো সেও বাড়ির আশপাশেই উড়ে বেড়ায়। আজ তার খুব ইচ্ছে করছিল একটু দূরে যেতে। ছোটো বলে তার পাখায় ততটা শক্তি এখনও আসেনি। তাইতো বেশ হাঁপিয়ে গেছে। আমগাছটায় একটু বিশ্রাম নিতে বসেছে। আমগাছটার গা ঘেঁষে ফসলের মাঠ। ঝিরিঝিরি বাতাস এসে লাগে টুনটুনির গায়ে।
আহ কী আরাম! টুনটুনির দারুণ ভালোলাগে।
কে গো তুমি? এখানে আগে তো তোমাকে দেখিনি! হঠাৎ একটি অচেনা কণ্ঠ শুনে টুনটুনি এপাশ ওপাশ তাকায়। কাউকে দেখতে পায় না। আমি টুনটুনি। তা
কে তুমি কোথায় থেকে কথা বলছ? টুনটুনি আবারও চারপাশে তাকায়। কাউকেই দেখতে পায় না।
এই যে আমি তোমার পায়ের কাছে। পাতার ফাঁকে।
ওহ এখানে! এতক্ষণে টুনটুনি তার পায়ের কাছে পাতার ওপর বসে থাকা শুঁয়োপোকাকে দেখতে পায়।
তুমি কে গো? টুনটুনি জিজ্ঞেস করে। ওমা আমাকে চিনতে পারছ না? আমি শুঁয়োপোকা।
কী করে চিনব? আমাদের তো আগে দেখা হয়নি। তাছাড়া আমি এখানে থাকিও না।
তুমি কোথায় থাকো, টুনটুনি?
এখান থেকে একটু উত্তরে।
ওহ তাই বলো। আমার উত্তরে যাওয়া হয়নি কখনও। তাই বোধ হয় আমাদের দেখা হয়নি।
হুম, তাই হবে। টুনটুনি ভালো করে শুঁয়োপোকার দিকে তাকায়। টুনটুনি তার ছোট্ট জীবনে এই প্রথম শুঁয়োপোকা দেখছে। পাতার আড়ালে সবুজ রঙের কিছুটা লম্বা আকৃতির শুঁয়োপোকাটাকে দেখতে টুনটুনির বেশ লাগে।
আচ্ছা শুঁয়োপোকা তোমার বাড়ি বুঝি এটা?
হ্যাঁ, আমি এখানেই থাকি। এই সবুজ পাতাই আমার ঘর।
বাহ্ খুব সুন্দর!
বন্ধু টুনটুনি তোমার ঘর বুঝি সুন্দর নয়?
শুঁয়োপোকার মুখে বন্ধু ডাক শুনে টুনটুনির বেশ ভালোলাগে। সে আনন্দিত গলায় বলে, অবশ্যই সুন্দর। মা খড়কুটো দিয়ে অনেক সুন্দর করে আমার জন্য ঘর বানিয়ে দিয়েছে। একদিন উত্তর দিকটায় বেড়াতে এসো, আমার ঘর দেখতে পাবে। একথা বলেই টুনটুনি থেমে যায়। দুঃখ ভরা চোখে তাকায় শুঁয়োপোকার দিকে আর ভাবে, ওর তো পাখা নেই। উড়বে কীভাবে।
টুনটুনির ভাবনাটা বুঝতে পারে শুঁয়োপোকা। সে মৃদু হেসে বলে, বন্ধু তুমি ভাবছ আমি তোমার বাসায় কীভাবে যাব? আমার তো পাখা নেই। তাই না?
শুঁয়োপোকার কথা শুনে একটু লজ্জা পায় টুনটুনি। লাজুক কণ্ঠে বলে ওঠে, হ্যাঁ আমি তাই ভাবছিলাম, বন্ধু।
বন্ধু টুনটুনি তুমি দেখে নিও একদিন আমারও পাখা হবে, আমিও উড়তে পারব। সেদিন আমি উড়ে উড়ে তোমার বাসা দেখতে যাব।
টুনটুনি অবাক চোখে শুঁয়োপোকার দিকে তাকায়। কিন্তু খুব একটা বিশ্বাস করতে চায় না।
সেদিনের অপেক্ষায় থাকলাম বন্ধু। বলেই শুঁয়োপোকার কাছ থেকে বিদায় নেয় টুনটুনি।
কিছুদিন পর। টুনটুনি পাখিটা এখন বেশ ভালো উড়তে শিখেছে। যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারে। একদিন উড়তে উড়তে সে একটা ফুলের বাগানে এসে পড়ে। বাগানে লাল, নীল, হলুদ, সাদা নানা রঙের ফুল দেখে টুনটুনির মন আনন্দে নেচে ওঠে। সে টুপ করে একটা গোলাপ গাছের ডালে বসে পড়ে।
কেমন আছ বন্ধু টুনটুনি?
পরিচিত আওয়াজ পেয়ে ডানপাশে ফিরে তাকায় সে। দেখে, সাতরঙে আঁকা একটা মিষ্টি প্রজাপতি তাকে ডাকছে।
কে তুমি ভাই এত মিষ্টি দেখতে?
আমাকে চিনতে পারছ না? আমি তোমার বন্ধু শুঁয়োপোকা। কিছুদিন আগে আমাদের দেখা হয়েছিল। আমার সবুজ পাতার বাসায়।
হ্যাঁ তাইতো। কণ্ঠ শুনে তো তাই মনে হচ্ছে। তুমি এত সুন্দর প্রজাপতি হলে কী করে? টুনটুনি অবাক হয়ে জানতে চায়।
তোমাকে বলেছিলাম না একদিন আমারও পাখা হবে, আমিও উড়তে পারব। তুমি জানো না বুঝি শুঁয়োপোকারা বড়ো হলে প্রজাপতি হয়?
নাহ, জানি না তো। ব্যাপারটা দারুণ মজার। তোমাকে উড়তে দেখে আমার বেশ আনন্দ হচ্ছে। টুনটুনির চোখে আনন্দ ঝলমল করে ওঠে।
চলো বন্ধু টুনটুনি আমরা দু’জন মিলে আজ শুধু উড়ব, ঘুরব অনেক দূর।
বেশ চলো বন্ধু প্রজাপতি। আজ আমাদের দু’জনেরই পাখা আছে। n
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গল প ট নট ন র স ন দর আম দ র আনন দ একদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আইফোন থেকে স্যাটেলাইটে জরুরি বিপদবার্তা পাঠিয়ে জীবন বাঁচালেন এক পর্বতারোহী
বিপদে পড়লে প্রযুক্তি যে জীবন রক্ষা করতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তার উদাহরণ। সম্প্রতি দুর্গম এক পর্বত থেকে নামার সময় ১০ হাজার ফুট উঁচুতে আহত হন এক পর্বতারোহী। সে সময় ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এরপর আইফোনের স্যাটেলাইট এসওএস সুবিধা কাজে লাগিয়ে জরুরি বিপদবার্তা পাঠান তিনি। আইফোন থেকে পাঠানো জরুরি বিপদবার্তায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর অবস্থানের তথ্য যুক্ত থাকায় উদ্ধারকারীরা সহজে তাঁকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ফলে প্রাণে বেঁচে যান সেই পর্বতারোহী।
৫৩ বছর বয়সী ওই পর্বতারোহী স্নোমাস পর্বতশৃঙ্গে অভিযান চালাচ্ছিলেন। সফলভাবে শৃঙ্গে পৌঁছানোর পর তিনি নিচে নামার জন্য ‘গ্লাইডিং’ নামের একধরনের কৌশল অবলম্বন করেন। এ পদ্ধতিতে সাধারণত পর্বতারোহীরা নিয়ন্ত্রিতভাবে ও দ্রুত নিচে নামেন। কিন্তু নামার সময় একটি দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। গুরুতর আঘাতের কারণে তিনি আর চলাফেরা করতে পারছিলেন না। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। এমন এক পরিস্থিতিতে আইফোনের স্যাটেলাইট এসওএস সুবিধার মাধ্যমে তিনি স্যাটেলাইট সংযোগ ব্যবহার করে পরিবারের একজন সদস্যকে বার্তা পাঠান। বার্তা পাওয়ার পরপরই দ্রুত উদ্ধারকারী দল সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী শহরে নিয়ে আসে।
অ্যাপল ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন ১৪ সিরিজের মাধ্যমে স্যাটেলাইট এসওএস সুবিধা চালু করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চল বা নেটওয়ার্কবিহীন স্থান থেকেও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জরুরি বার্তা পাঠানো সম্ভব। গ্লোবাল স্টার নামের একটি স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান এই সেবা পরিচালনা করে থাকে।
সূত্র: নিউজ১৮