জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দাবিতে অসহযোগিতা করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। তবে কাস্টমস হাউস ও এলসি স্টেশন, রপ্তানি কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।  

বুধবার (২১ মে) দুপুরে আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংস্কার ঐক্য পরিষদের চার দাবি হলো—জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করতে হবে, অংশীজনের মতামত নিয়ে টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।

সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ থেকেই অসহযোগ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এছাড়া, যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, ২১ মে সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে;

২২ মে দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান; ২২ মে এনবিআর এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিজ নিজ দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন। তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত থাকবে;

 ২৪ ও ২৫ মে কাস্টম হাউস, এলসি স্টেশন ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি। এই দুই দিন কাস্টম হাউস, এলসি স্টেশনগুলোয় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে;

২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।

এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (ইআরডি)  কে সম্প্রতি এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। যার একটি রাজস্ব নীতি অপরটি রাজস্ব ব্যবস্থাপনা। এর প্রতিবাদে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কয়েকদিন ধরে নানা কর্মসূচি দিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার তাদের দাবীর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া না দেওয়ায় এবার অসহযোগ কর্মসূচির ঘোষনা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ ।

এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা করতে গত ১৭ এপ্রিল খসড়া অধ্যাদেশে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।

অধ্যাদেশের খসড়া অনলাইনে এলে তা দেখে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এই দুই ক্যাডারদের অ্যাসোসিয়েশন এটি বাতিলের দাবি তোলে। এর মধ্যে এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুই ভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার এটি কার্যকর করার তারিখ ঘোষণা করবে।

অধ্যাদেশের অনুচ্ছেদ ৪(৪) এ বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগের পদসমূহ আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা, পরিসংখ্যান, প্রশাসন, অডিট, আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে “কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি মূল্যায়ন” যুক্ত করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞ কোনো সরকারি কর্মকর্তা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদসমূহে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে।

বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন, যা তাদের নির্ধারিত পদ। অধ্যাদেশে নীতির সচিব হিসেবে 'উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে' নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।

এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে প্রথম দফায় বুধবার, বৃহস্পতি ও শনিবার কলম বিরতি পালন করেন তারা। একই কর্মসূচি ছিল পরের দিনও। তারপর তৃতীয় দফায় সোমবারের কর্মসূচি বাড়ানো হয়।

ঢাকা/এনএফ/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত ক স টমস অসহয গ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

তুলা আমদানিতে কর বসিয়ে প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ রক্ষা কি না, প্রশ্ন বস্ত্রকলমালিকদের

তুলা আমদানির ওপর সম্প্রতি ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই নিয়ম করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বস্ত্রকলমালিকেরা।

আজ শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ নেতারা এ প্রশ্ন তোলেন। একই সঙ্গে তাঁরা অনতিবিলম্বে আগামী সোমবারের মধ্যে এই অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার নিজের কারখানায় তুলা থেকে উৎপাদিত সুতার চেয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি করতে কম খরচ হবে। তাহলে আমরা নিয়মনীতি কি পার্শ্ববর্তী দেশকে সচ্ছল করার জন্য? তাদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য করছি? সরকার কি নিরলসভাবে কাজ করছে ওদের স্বার্থ রক্ষার্থে; এ বিষয়টি একটু ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ছাড়াও দেশি বস্ত্রকলে উৎপাদিত তুলার সুতা ও কৃত্রিম আঁশ এবং অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজিপ্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৫ টাকা অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করেছে বিটিএমএ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, অমল পোদ্দার, হোসেন মেহমুদ, মো. খোরশেদ আলম, রাজিব হায়দার, সালেহউজ্জামান খান প্রমুখ।

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘একদিকে ১৮ শতাংশ সুদহার, অন্যদিকে আমাদের পুঁজি থেকে ১-২ শতাংশ করে প্রায় ৫০ শতাংশ আয়কর কেটে নিলে আমাদের পক্ষে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।’

বিটিএমএ পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বস্ত্রকলমালিকেরা মরে যাচ্ছেন। এমনিতেই বিদ্যমান নানা চ্যালেঞ্জের কারণে অধিকাংশ কারখানামালিক তাঁদের কারখানা বিক্রি করে দিতে চান। তার সঙ্গে নতুন করে এআইটি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যোগ হয়েছে।

বিটিএমএর আরেক পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, দেশের বস্ত্রকল ধ্বংসের পরিকল্পনা নতুন নয়। এটি শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। এ ধরনের নানা ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানান তিনি।

বিটিএমএ পরিচালক হোসেন মেহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে ব্যবসায়ীরা দেশটি থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে দুই শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হলো। ফলে ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলে আমদানি বাড়ানোর পথে যেতে পারবে না।

বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির ১ হাজার ৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং বস্ত্রকল রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকশিল্পের সুতা ও কাপড়ের ৭০ শতাংশের জোগানদাতা হচ্ছে বস্ত্র খাত। ফলে বস্ত্রশিল্পের যেকোনো সমস্যা তৈরি হলে তা পোশাকশিল্পেও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের আশা বিটিএমএ সভাপতির
  • তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের আশা বিটিএমএ’র 
  • দুদক সংস্কার নিয়ে বিএনপির অবস্থান বিভ্রান্তিকর: সংস্কার কমিশন
  • তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার চান উদ্যোক্তারা
  • তুলা আমদানিতে কর বসিয়ে প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ রক্ষা কি না, প্রশ্ন বস্ত্রকলমালিকদের