ডেভ হোয়াটমোর তখন বাংলাদেশ দলের কোচ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের করুণ পরাজয়। চট্টগ্রামের দর্শকরা তখন দলের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি ও দর্শকদের চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতেন ডেভ। শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জেতানো এই কোচ সেদিন বাংলাদেশ দলকে এক ভিন্নধর্মী ‘শাস্তি’ দিয়েছিলেন।

তিনি পুরো দলকে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের গ্যালারির সামনে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখেন। আর উপস্থিত দর্শকরাই তখন প্রকাশ করেন তাদের ক্ষোভ। সেই ঘটনাকেই পরবর্তীতে ‘শাস্তি’ হিসেবে অভিহিত করেন তৎকালীন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন।

গতকাল শারজাহ স্টেডিয়ামে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অসহায় পারফরম্যান্স দেখে গ্যালারির দর্শকরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দুয়োধ্বনি দেন, অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। খেলোয়াড়দের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অধিকাংশ ক্রিকেটার তা মেনে নিলেও, শামীম হোসেন পাটোয়ারী তা সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করেন।

আরো পড়ুন:

রিশাদকে উড়িয়ে নিলো লাহোর

নজিরবিহীন পরিণতির শিকার দিল্লি

কিন্তু শুধু প্রতিবাদ করলেই কি সমাধান হয়? মাঠের পারফরম্যান্সই কি আসল নয়? বাংলাদেশের এলোমেলো ক্রিকেট দীর্ঘদিন ধরেই সংকটের মধ্যে আছে। এই ফরম্যাটে একসময় যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার আরেক সহযোগী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২–১ ব্যবধানে সিরিজ হার— নিঃসন্দেহে বড় এক লজ্জা।

আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে আগেও হেরেছে বাংলাদেশ। তবে এবার সিরিজ হারের মাধ্যমে সেই লজ্জার তালিকায় যুক্ত হলো নতুন অধ্যায়। নির্দিষ্ট দিনে যেকোনো দল ভালো খেললে জয় পেতেই পারে, এটাই ক্রিকেট। কিন্তু হার কোন দলের বিপক্ষে, কীভাবে হারল, কেন হারল; এসবও বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে।

বাংলাদেশের অবস্থা এতটাই দুর্বল যে, আমিরাতের বিপক্ষে হারের কারণ হিসেবে অধিনায়ক লিটন দাস ম্যাচের সময়সূচি ও টসের অজুহাত দেন। তিন ম্যাচেই পরে বল করায় দল সুবিধা পায়নি বলে দাবি করেন তিনি। অথচ প্রতিপক্ষ দলে ছিল পাঁচজন নতুন ক্রিকেটার, যারা এই সিরিজেই অভিষেক করেন। অভিজ্ঞতা আর সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকা দলের কাছে আত্মসমর্পণ করে দিল বাংলাদেশের অভিজ্ঞ দল।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নির্দিষ্ট ছকে আধিপত্য বিস্তার করতে হয়। আধুনিক ক্রিকেটের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলতে হয়। কিন্তু এখনও বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে নিজের ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে পারেনি। পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতিতে রয়েছে বড় ঘাটতি। আধুনিক ক্রিকেট যেখানে পৌঁছেছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান যেন এখনও তলানিতে।

পরিসংখ্যানও বাংলাদেশের পক্ষে নয়। ১৮৫টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৭২টি, হেরেছে ১০৯টি ম্যাচে। এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সই বলে দেয়, ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখনও নিয়মিত নাকানিচুবানি খাচ্ছে। কখনো-সখনো যে ক’টি সাফল্য আসে, সেগুলোর ধারাবাহিকতা থাকে না।

চোটের কারণে এ সিরিজে ছিল না তাসকিন আহমেদ। মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম ম্যাচে খেললেও পরে দল ছেড়ে চলে যান আইপিএলে খেলতে। যখন দেশের পারফরম্যান্স হোঁচট খাচ্ছে, তখন আইপিএল খেলতে যাওয়া এবং বিসিবির অনুমতি দেওয়া—এটা বড় প্রশ্নের জন্ম দেয়। তবে এ ধরনের ঘটনা মোস্তাফিজ এর আগেও করেছেন।

সফরের শুরু থেকেই ছিল অস্থিরতা। দেশের একমাত্র টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা বিপিএলে দারুণ পারফর্ম করে টুর্নামেন্ট সেরা হন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু সেই মিরাজকে এই সিরিজে উপেক্ষা করেছেন নির্বাচকরা। বিষয়টি নিয়ে মিরাজও আফসোস প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি।

দল নির্বাচন, এলোমেলো পারফরম্যান্স, ঢিলেঢালা মানসিকতা—সব মিলিয়ে দেশের ক্রিকেটে চলছে চরম দুরবস্থা। ঘরোয়া ক্রিকেটেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, যার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে। প্রশ্ন উঠছে—এই বিপর্যয় কাটাতে কি কারো কাছে কোনো উপায় আছে?

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রফরম য ন স

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, লিটন-তাসকিন নেই 

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং করবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় কলম্বোতে ম্যাচটি শুরু হবে।

টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের একাদশে দুটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাসকিন আহমেদ ও লিটন দাস নেই। দলে ফিরেছেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী এবং হাসান মাহমুদ। 

বাংলাদেশ একাদশ 
তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলী, তানজিম হাসান সাকিব, তানভির ইসলাম, হাসান মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমান।

দুটি পরিবর্তন শ্রীলঙ্কা একাদশে। দুনিথ ওয়েলাগে ও দুশমন্থ চামিরা ফিরেছেন।

শ্রীলঙ্কা একাদশ
নিশান মাদুস্কা, পাথুম নিশাঙ্কা, কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, চারিত আসালঙ্কা (অধিনায়ক), জানিথ লিয়ানাগে, দুনিথ ওয়েলাগে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মহীশ তিকশানা, দুশমন্ত চামিরা ও আসিতা ফার্নান্ডো।

সিরিজ বাঁচাতে পারবে বাংলাদেশ?
নাটকীয় ব্যাটিং ধসে প্রথম ওয়ানডেতে বিব্রতকর পরাজয় মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। বোলারদের নৈপূণ্যে বাংলাদেশ লক্ষ্য নাগালে রেখেছিল। এরপর লক্ষ্য তাড়ায় ভালো জবাবও দিয়েছিল। কিন্তু, মাত্র ৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তালগোল পাকানো পারফরম্যান্সে ম্যাচটি স্রেফ শ্রীলঙ্কাকে উপহার দিয়ে আসে বাংলাদেশ। আজ সিরিজ বাঁচানোর লড়াই। হারলেই সিরিজ খোয়া যাবে। জিতলে টিকে থাকবে। মিরাজ অ্যান্ড কোং ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। 

দশ বছরে সবচেয়ে বাজে অবস্থা বাংলাদেশের
ফল হওয়া শেষ সাত ওয়ানডেতে কোনো জয় নেই বাংলাদেশের। শেষ দশ বছরেও ওয়ানডেতে এমন অবস্থা কাটেনি বাংলাদেশের। ফল হওয়া ম্যাচগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে একই বছরের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১২ ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। যার নয়টিই ঘরের মাঠে। তিনটি দেশের বাইরে। এরপর ওয়ানডে ক্রিকেটে এমন পরাজয়ের মিছিল আর ছিল না বাংলাদেশের। এতটা খারাপ অবস্থাও কখনো আসেনি।

গত বছর আফগানিস্তানের বিপক্ষে শারজাহতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পায়। তৃতীয় ওয়ানডেতে আবার হার। এরপর পরাজয়ের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ। ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত ও নিউ জিল্যান্ডের কাছে হার। শেষ ম্যাচ ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। দলের যেই পারফরম্যান্স ছিল তাতে বাজি ধরার লোক থাকার কথা না। বৃষ্টি ‘বাঁচিয়ে’ দেয় বাংলাদেশকে। এরপর গতকাল কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চরম নাটকীয় পরাজয়। ৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিব্রতকর হারকে সঙ্গী করে বাংলাদেশ।

ঢাকা/ইয়াসিন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আবেদনময়ী সাবরিনা এবার পরিবারবান্ধব
  • আতশবাজি নিয়ে কটাক্ষের শিকার প্রিয়াঙ্কা
  • মেসি ম্যাজিকে জয়ে ফিরল ইন্টার মায়ামি
  • সীমান্ত বাণিজ্যে নতুন আশা ‘প্রশস্ত’ বিলোনিয়া সড়ক
  • মৌলিক সংস্কার না হলে স্বৈরাচারী কাঠামো বিরাজমান থাকবে
  • ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, লিটন-তাসকিন নেই 
  • কলম্বোয় আজ সিরিজে ফেরার লড়াই
  • ‘দ্য কেইজ’ জয় করে উঠে এলো 'রকসল্ট'
  • ‘মামলা হলো; কিন্তু বিচার হবে কবে?’
  • কে হবে চ্যাম্পিয়ন? চলছে ‘দ্য কেইজ’-এর ফাইনাল