এলোমেলো ক্রিকেট, দুরবস্থা মানসিকতাতেও
Published: 22nd, May 2025 GMT
ডেভ হোয়াটমোর তখন বাংলাদেশ দলের কোচ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের করুণ পরাজয়। চট্টগ্রামের দর্শকরা তখন দলের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি ও দর্শকদের চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতেন ডেভ। শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জেতানো এই কোচ সেদিন বাংলাদেশ দলকে এক ভিন্নধর্মী ‘শাস্তি’ দিয়েছিলেন।
তিনি পুরো দলকে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের গ্যালারির সামনে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখেন। আর উপস্থিত দর্শকরাই তখন প্রকাশ করেন তাদের ক্ষোভ। সেই ঘটনাকেই পরবর্তীতে ‘শাস্তি’ হিসেবে অভিহিত করেন তৎকালীন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন।
গতকাল শারজাহ স্টেডিয়ামে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অসহায় পারফরম্যান্স দেখে গ্যালারির দর্শকরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দুয়োধ্বনি দেন, অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। খেলোয়াড়দের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অধিকাংশ ক্রিকেটার তা মেনে নিলেও, শামীম হোসেন পাটোয়ারী তা সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করেন।
আরো পড়ুন:
রিশাদকে উড়িয়ে নিলো লাহোর
নজিরবিহীন পরিণতির শিকার দিল্লি
কিন্তু শুধু প্রতিবাদ করলেই কি সমাধান হয়? মাঠের পারফরম্যান্সই কি আসল নয়? বাংলাদেশের এলোমেলো ক্রিকেট দীর্ঘদিন ধরেই সংকটের মধ্যে আছে। এই ফরম্যাটে একসময় যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার আরেক সহযোগী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২–১ ব্যবধানে সিরিজ হার— নিঃসন্দেহে বড় এক লজ্জা।
আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে আগেও হেরেছে বাংলাদেশ। তবে এবার সিরিজ হারের মাধ্যমে সেই লজ্জার তালিকায় যুক্ত হলো নতুন অধ্যায়। নির্দিষ্ট দিনে যেকোনো দল ভালো খেললে জয় পেতেই পারে, এটাই ক্রিকেট। কিন্তু হার কোন দলের বিপক্ষে, কীভাবে হারল, কেন হারল; এসবও বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে।
বাংলাদেশের অবস্থা এতটাই দুর্বল যে, আমিরাতের বিপক্ষে হারের কারণ হিসেবে অধিনায়ক লিটন দাস ম্যাচের সময়সূচি ও টসের অজুহাত দেন। তিন ম্যাচেই পরে বল করায় দল সুবিধা পায়নি বলে দাবি করেন তিনি। অথচ প্রতিপক্ষ দলে ছিল পাঁচজন নতুন ক্রিকেটার, যারা এই সিরিজেই অভিষেক করেন। অভিজ্ঞতা আর সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকা দলের কাছে আত্মসমর্পণ করে দিল বাংলাদেশের অভিজ্ঞ দল।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নির্দিষ্ট ছকে আধিপত্য বিস্তার করতে হয়। আধুনিক ক্রিকেটের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলতে হয়। কিন্তু এখনও বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে নিজের ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে পারেনি। পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতিতে রয়েছে বড় ঘাটতি। আধুনিক ক্রিকেট যেখানে পৌঁছেছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান যেন এখনও তলানিতে।
পরিসংখ্যানও বাংলাদেশের পক্ষে নয়। ১৮৫টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৭২টি, হেরেছে ১০৯টি ম্যাচে। এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সই বলে দেয়, ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখনও নিয়মিত নাকানিচুবানি খাচ্ছে। কখনো-সখনো যে ক’টি সাফল্য আসে, সেগুলোর ধারাবাহিকতা থাকে না।
চোটের কারণে এ সিরিজে ছিল না তাসকিন আহমেদ। মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম ম্যাচে খেললেও পরে দল ছেড়ে চলে যান আইপিএলে খেলতে। যখন দেশের পারফরম্যান্স হোঁচট খাচ্ছে, তখন আইপিএল খেলতে যাওয়া এবং বিসিবির অনুমতি দেওয়া—এটা বড় প্রশ্নের জন্ম দেয়। তবে এ ধরনের ঘটনা মোস্তাফিজ এর আগেও করেছেন।
সফরের শুরু থেকেই ছিল অস্থিরতা। দেশের একমাত্র টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা বিপিএলে দারুণ পারফর্ম করে টুর্নামেন্ট সেরা হন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু সেই মিরাজকে এই সিরিজে উপেক্ষা করেছেন নির্বাচকরা। বিষয়টি নিয়ে মিরাজও আফসোস প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি।
দল নির্বাচন, এলোমেলো পারফরম্যান্স, ঢিলেঢালা মানসিকতা—সব মিলিয়ে দেশের ক্রিকেটে চলছে চরম দুরবস্থা। ঘরোয়া ক্রিকেটেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, যার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে। প্রশ্ন উঠছে—এই বিপর্যয় কাটাতে কি কারো কাছে কোনো উপায় আছে?
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রফরম য ন স
এছাড়াও পড়ুন:
আমাদের আন্দোলন কিন্তু এখনও শেষ হয়ে যায় নাই : সজল
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেছেন, আমরা একটি ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই সংগ্রাম করেছি। ওয়ান ইলেভেনের ২ বছর ও ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছর। এই সাড়ে ১৫ বছরে কিন্তু আওয়ামী লীগ এই যুবদল ও বিএনপি পরিবারকে ধ্বংস করতে পারে নাই। আমি একটি কথা বলতে চাই আমি দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে এই রাজনীতির সাথে জড়িত।
আমি ওয়ার্ড ছাত্রদলের থেকে শুরু করে আজকে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক হয়েছি। আমার যেই রাজনৈতিক বয়স ৩২ বছর এখন অনেকেরেই দেখা যায় তাদের বয়সও ৩২ হয় নাই। কিন্তু তারা অনেক লম্বা লম্বা কথা বলে। আমি বলে দিতে চাই আমাদের ওয়ার্ড যুবদলের নেতা কর্মীরা তাদের এক একটি জেলার নেতৃত্বের সমান।
আর তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য জাতীয়তাবাদী যুবদলের একটি ওয়ার্ডই যথেষ্ট। আপনারা সাবধান হয়ে যান সাড়ে ১৭টি বছর আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে কিন্তু এই স্বাধীনতা। ১৭টি বছরে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী কিন্তু খুন, গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
৫ আগস্ট আমাদের যুবদল কর্মী সাজনের রক্তের বিনিময় কিন্তু এই স্বাধীনতা হয়েছে। এর আগে আমাদের যুবদল কর্মী শাওন প্রধান ও আড়াইহাজারের মাহবুবের রক্তের বিনিময়ে কিন্তু আজকের আমাদের এই স্বাধীনতা। আমাদের কিন্তু এই ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা ধ্বংস করতে পারে নাই। ইনশাল্লাহ আপনাদেরও ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের মাটিতে কোনদিন সফল হবে না।
আগামী ২৭ মে তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি শীর্ষক সেমিনার ও ২৮ মে ঢাকা বিভাগীয় তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের প্রস্তুতিমূলক সভা সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেন।
বুধবার ( ২১ মে) বিকেল তিনটায় শহরের মিশন পাড়া হোসিয়ারি সমিতি কমিউনিটি সেন্টারে এই প্রস্তুতিমূলক সভার আয়োজন করা হয় ।
তিনি বলেন, আগামী ২৮ মে ঢাকা বিভাগীয় তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সহযোদ্ধা ভাইদেরকে বলতে চাই আপনারা দীর্ঘদিন আমাদের সাথে রাজপথে গণতন্ত্রপূর্ণ উদ্ধারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। আমরা কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারি নাই। আমাদের আন্দোলন কিন্তু এখনও শেষ হয়ে যায় নাই।
কারণ ৫ আগস্টের পরে আমরা যাদেরকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে বসেছি এবং সরকার পরিচালনার দায়ভার দিয়েছি তাদের ভিতর কেউ কেউ এখনো ষড়যন্ত্র করছে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী থাকার জন্য। তারা চাচ্ছে বিএনপিকে ক্ষতি করার জন্য কিন্তু বিএনপি ও যুবদলকে ক্ষতি করতে পারবেন না।
তাই আমরা একটি কথা বললে দিতে চাই আমরা রাজপথে ছিলাম আর রাজপথেই আছি। কারণ আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়ে যায় নাই। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনতে হবে এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। মানুষদের অধিকার যতদিন না বাস্তবায়ন হবে ততদিনে আমরা রাজপথে থাকবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা কারো রক্ত চক্ষুকে ভয় পাই না। কারন আমরা শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে রাজপথে নারায়ণগঞ্জ এটিকে ছিলাম আমরা কিন্তু পালিয়ে যাই নাই। ওসমান কিন্তু বলেছিলেন নারায়ণগঞ্জে খেলা হবে তিনি কিন্তু খেলতেও পারেননি তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
সুতরাং ফ্যাসিবাদের দোসরা যারাই থাকুক যারাই বিএনপিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে এবং আন্দোলনকে যারা ধুলিস্যাৎ করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াবো ইনশাল্লাহ। আগামী ২৮শে মে তারুণ্যের সমাবেশকে সফল করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে সফল করবো ইনশাল্লাহ।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজলের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদের সঞ্চালনায় প্রস্তুতি সভায় মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজলের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম পল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য সাইদুর রহমান সোহেল। এতে মহানগর যুবদলের আওতাধীন বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন যুবদলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।