৫ আগস্ট। সকালে তেতে ওঠা সূর্যের মতোই উত্তাপ ছিল রাজশাহীর অলিগলি। রাস্তায় রাস্তায় মিছিল। কারও হাতে পোস্টার, কপালে পতাকা, কণ্ঠে দ্রোহের গান। হঠাৎ পুরো নগরী রূপ নেয় রক্তাক্ত রণক্ষেত্রে। ঘাতকের বুলেটে থেমে যায় রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থী আলী রায়হান ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুমের প্রাণ।
ঘটনার পর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও ছেলে হারানোর শোকে দুই পরিবারে এখনও কান্না থামছে না। ছেলেদের রেখে যাওয়া স্মৃতি মনে পড়লেই এখনও তাদের চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। স্বজন তাদের ভুলতে পারছেন না। কেউ মন খুলে হাসতে পারেন না। বুকভরা কষ্ট নিয়ে দিন কাটছে তাদের।
দুই পরিবারের স্বজনের ভাষ্য, হত্যা মামলা হলেও তদন্ত এগোচ্ছে না। পুলিশ বলছে, তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। এজাহারের বাইরেও যারা জড়িত, তাদের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি করা হচ্ছে। আসামির সংখ্যা দুটি মামলাতেই ১৫০ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু তদন্তে অগ্রগতি নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন সাকিব আনজুম। ৫ আগস্ট দুপুরে তাঁকে আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে। একই সময় আলী রায়হান মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। এর পর আইসিইউতে ছিলেন। ৮ আগস্ট মারা যান আলী রায়হান।
গত বুধবার সাকিব আনজুমের তালাইমারী এলাকার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা ভর করেছে। সাকিবের কথা তুলতেই বাবা মাইনুল হক ডুকরে কেঁদে ওঠেন। পাশের কক্ষ থেকে ভেসে আসে মা রোকেয়া খাতুনের আর্তনাদ।
নিজেকে সামলে মাইনুল হক বলেন, ছেলেটা খুব মেধাবী ছিল। ডাক্তার হতে চেয়েছিল। তার স্বপ্ন পূরণ হলো না। ও চলে যাওয়ার পর আমরা কেউ ভালো নেই। ছেলের কথা মনে হলেই বুক ফেটে কান্না আসে। বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মাইনুল হক।
আক্ষেপ করে মাইনুল হক বলেন, ‘আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলল। মামলাও হলো; কিন্তু বিচার হবে কবে? সবখানে মোনাফেক। সবাই নিজের স্বার্থে কাজ করছে। কোনো কিছুই ঠিকমতো হচ্ছে না। এর জন্য তো ছেলেটা জীবন দেয়নি।’
রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থী শহীদ আলী রায়হান ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি পুঠিয়ার মঙ্গলপাড়া গ্রামের কৃষক মোসলেম আলীর বড় ছেলে। আন্দোলনের শুরু থেকেই রায়হান সামনের সারিতে ছিলেন। ৫ আগস্ট দুপুরে শাহ মখদুম কলেজের সামনে ছিলেন তারা। আলুপট্টিতে ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। তারা দফায় দফায় হামলা করে। একসময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন রায়হান। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর ৮ আগস্ট মারা যান।
রায়হানের ছোট ভাই রানা ইসলাম বলেন, হত্যা মামলার তদন্ত এগোচ্ছে না। আসামিদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। কিন্তু তদন্ত না এগোলে কীভাবে শাস্তি হবে?
রানা ইসলাম বলেন, ‘রায়হান ভাই ছিলেন বাড়ির মাথা। প্রতিদিন কী লাগবে, না লাগবে– সবই তিনি দেখতেন। তাঁকে হারিয়ে আমরা কেউ আর মন খুলে হাসতে পারি না। আমাদের বুকে কষ্টের পাহাড়। কেবলই মনে হয়, ভাই যদি ফিরে আসতেন!’
রায়হানের বাবা মোসলেম আলী বলেন, রায়হান খুব স্বপ্ন দেখত। বলত, চাকরি পেলেই আমাদের শহরে নিয়ে যাবে। আমাকে হজে পাঠাবে। এখন আমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখার কেউ নেই। সব শেষ। খুনিদের বিচারও হচ্ছে। আমরা দ্রুত বিচার চাই।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, দুটি মামলার তদন্ত শেষের দিকে।  সাকিব আনজুম হত্যা মামলায় ৪২ জন এবং আলী রায়হান হত্যা মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। এ সংখ্যা বাড়বে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ক ব আনজ ম আগস ট তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুশফিকুর, তিন দিনেই জয় রাজশাহীর

জাতীয় ক্রিকেট লিগে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তিনদিনেই জয় পেয়েছে রাজশাহী বিভাগ। ৭ উইকেটে তারা হারিয়েছে খুলনা বিভাগকে। এদিকে সিলেটে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৯৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।

তার ব্যাটে ভর করে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে লড়ছে সিলেট। ঢাকার করা ৩১০ রানের জবাবে সিলেটের ৭ উইকেটে রান ২৬০। ৫০ রানে পিছিয়ে তারা। ১৭০ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৯৩ রান করে অপরাজিত আছেন মুশফিকুর। তার সঙ্গে ৫ রানে অপরাজিত আছেন ইবাদত হোসেন। এছাড়া শাহানুর ৩০ ও তোফায়েল ২৭ রান করেন।

আরো পড়ুন:

মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ

স্বীকৃতির ১০ বছর পর জাতীয় ক্রিকেট লিগে ময়মনসিংহ

মিরপুরে খুলনার দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংও যুৎসই হয়নি। এবার ২৫৫ রানে থেমে যায় তাদের ইনিংস। ১ উইকেটে ৬৮ রানে দিন শুরু করে তারা। এনামুলের ইনিংস থেমে যায় ৩৪ রানে। মোহাম্মদ মিথুন খুলতে পারেননি রানের খাতা। মিরাজ ৪৮ ও জিয়াউর এবং ইয়াসির মুনতাসির ৩২ রানের দুটি ইনিংস খেলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতেও তাদের স্কোর বড় হয়নি।

১৪৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ২৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি। তাতে ১০৯ রানের লক্ষ্য পায় রাজশাহী। ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

হাবিবুর রহমান সোহান ৬৮ বলে ৬২ রান করেন ৪ চার ও ৩ ছক্কায়। ২৫ রান আসে সাব্বির হোসেনের ব্যাট থেকে। সাব্বির রহমান ১২ ও মেহরব ৪ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে ফেরেন। প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ে ফিরল তারা।

কক্সবাজারে ময়মনসিংহ বিভাগ ও রংপুর বিভাগের ম্যাচ বাজে আউটফিল্ডের কারণে ভেস্তে যায়। একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। ২ উইকেট হারিয়ে রংপুরের রান ১৮। এখনও তারা ৫৩৭ রানে পিছিয়ে। ময়মনসিংহ প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৫৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে।

পাশের মাঠে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় খেলা হয়েছে। আগের দিনের ২ উইকেটে ১১৫ রানের সঙ্গে ৫১ রান যোগ করেন বরিশাল বিভাগ। খেলা হয়েছে কেবল ১৫ ওভার। জাহিদুজ্জামান খান ৩২ ও সালমান হোসেন ইমন ৭৫ রানে অপরাজিত আছেন। প্রথম ইনিংসে এখনও তারা ১৯২ রানে পিছিয়ে।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুশফিকুর, তিন দিনেই জয় রাজশাহীর