বিএনপির সংবাদ সম্মেলন: ‘রাষ্ট্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ নেই’
Published: 22nd, May 2025 GMT
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, রাষ্ট্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ নেই। ড. খলিলুর রহমানকে অবিলম্বে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দেশে-বিদেশে তার অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জনগণের সামনে হাজির করতে হবে। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।”
বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ইতোমধ্যেই কথিত মানবিক করিডোর ইস্যু নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ করে ড.
আরো পড়ুন:
৪৮ ঘণ্টার জন্য আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা ইশরাকের
বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে অনুরোধ ফখরুলের
তিনি বলেন, “আমাদের কথা পরিষ্কার, এসব করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। এসব বিষয় বিবেচনার দায়িত্ব জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নির্বাচিত সরকারের।এই সরকারের নিরপেক্ষতা এবং সরকার পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এই সরকারের যাদের সম্পর্কে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে, তাদের সম্পর্কে জনসম্মুখে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করুন। তারেক রহমানকে নিয়ে ড. খলিলের বক্তব্য গণতন্ত্রের স্থায়ী নিরাপত্তা ও ঐতিহাসিক স্বার্থকতার প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ।”
রিজভী বলেন, “রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান দেড় দশকের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে দেশের মানুষ বিস্মিত-হতবাক, উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদের প্রতিভূ হাসিনা যেভাবে গণতন্ত্রকে কফিন পরিয়ে তথাকথিত উন্নয়নের ইন্দ্রজাল সৃষ্টির জন্য জিয়া পরিবারকে নিয়ে কুৎসা রটাতেন, উপদেষ্টার এই মন্তব্য যেন তারই পুনরাবৃত্তি। এখনো যেন লোকমানসে উজ্জ্বলতর তারেক রহমানের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করার জন্য প্রতিশোধের চোরাবালিতে আঘাত হানার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ড. খলিলুর রহমান যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবন প্রসঙ্গটি যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক বলে দাবি করেন রিজভী। তিনি আরো বলেন, “ধান ভানতে শিবের গীত’ গাওয়ার মতো ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘কেবলমাত্র আমি আমেরিকায় থেকেছি বলে আমাকে যদি বলা হয় আপনি বিদেশি নাগরিক, তাহলে কালকে তারেক রহমানকে সে কথা বলতে হবে। আমাকে ঢিল নিক্ষেপ করলে সেই ঢিল কিন্তু অন্যের ওপর গিয়েও পড়তে পারে।”
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ড. খলিলুর রহমানের এমন বক্তব্য নিঃসন্দেহে আত্মগরিমার প্রদর্শন এবং দুরভিসন্ধিমূলক বলে উল্লেখ করেন রিজভী। তার দাবি, খলিলুর রহমান তারেক রহমানের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা বিনষ্ট, জনসাধারণকে বিভ্রান্ত এবং মানুষের মাঝে তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার হীন উদ্দেশ্য নিয়েই এই বক্তব্য রেখেছেন। যা দুর্ভাগ্যজনক বিভ্রান্তির কবলে পড়েছে। তাকে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ অনির্বাচিত কর্তৃত্ববাদের অনুকূল সমাজভূমি নয়। তিনি তার কথাবার্তায় এবং আচরণে বিগত কিছুদিনে ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করতে শুরু করেছেন। তিনি হয়তো দেশি-বিদেশি কারো স্বার্থ চরিতার্থ করার মিশনে যুক্ত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় ছিল ধ্বংসের শক্তি, জনগণ তা প্রতিহত করেছে। আমরা আর নতুন করে কোনো প্রভূত্ববাদের অধীনতার নাগপাশে বন্দি হতে চাই না।”
“খলিলুর রহমানের মতো একজন বিতর্কিত এবং করিডোর চ্যানেল-বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের কুশীলব বলে পরিচিত কিভাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবেও নিয়োগ পান,” তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন রিজভী।
বিএনপির এই মুখপাত্র আরো বলেন, “খলিলুর রহমানের অজানা থাকলেও দেশবাসীর অজানা নয় যে তারেক রহমানকে কী কারণে এবং কোন পরিস্থিতিতে লন্ডন যেতে হয়েছে। সেখানে থেকে তারেক রহমানকে বিশ্বের নিষ্ঠুরতম একটি জগদ্দল ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বার বার স্পষ্ট করে বলেছেন, জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। সমর্থন অব্যাহত রাখার পরও অন্তর্বর্তী সরকার মনে হচ্ছে, এই সমর্থনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ মনে হচ্ছে, বিএনপির সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাধাতে চায়। ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ দেড় দশকের আন্দোলন সংগ্রামের সময় ড. খলিলের নাম কেউ কখনো শুনেনি। সুসময়ে হঠাৎ করেই তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসে উপদেষ্টা হয়েছেন। দেড় দশকের শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে দেশে-বিদেশে কোথাও যার কোনো উপস্থিতি ছিল না, না ছিল কোনো জোরালো বক্তব্য। তার কাছে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত কি না এসব নিয়ে জনগণের জানার অধিকার রয়েছে।”
রিজভী বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে বলতে চাই, আপনি এমন একজন ব্যক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বানিয়েছেন, দেশের জন্য যার কোনো দৃশ্যমান অবদান নেই। তিনি তো বাংলাদেশের জন্য নন, বিদেশের জন্য কাজ করবেন। মানবিক করিডোর বা চ্যানেল নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশকে অস্থির করার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু আমরা তা হতে দেবো না। ড. খলিলের অহেতুক প্রলাপে প্রতীয়মান হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ সুকৌশলে বাংলাদেশের জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমানের দেশে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনকে অনিরাপদ করে তুলতে চায়।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “একজন রাজনীতিবিদকে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত জনগণের আদালতে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। জনগণের আদালতে একজন রাজনীতিবিদের জীবন এবং কর্ম খোলা বইয়ের মতো। শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেও তারেক রহমান বিদেশে বসে দেশের জনগণের সাথে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ রেখেছেন। কোন পরিস্থিতিতে তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে বিদেশে গিয়েছেন, বিদেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন- এ সম্পর্কে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসলরা কী নির্দয়-নিমর্মভাবে তারেক রহমানের ওপর অত্যাচার করেছিল, তা দেশবাসী ভুলে যায়নি। বিদেশে থাকা নিয়ে পতিত পলাতক স্বৈরাচারও প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে ছিল। ওই সময়ও বিএনপির পক্ষ থেকে বিদেশে তারেক রহমানের অবস্থান সম্পর্কে জনগণকে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছিল।”
রিজভী বলেন, “ড. খলিল তার নিজের পক্ষে ওঠা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পলাতক স্বৈরাচারের মতো তারেক রহমানের বিপক্ষে প্রোপাগান্ডার পথ বেছে নিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না। ফ্যাসিবাদের দেড় দশক ড. খলিল কোথায় ছিলেন? কিভাবে ছিলেন? কোন দেশে ছিলেন? বিদেশে তার স্ট্যাটাস কি ছিল? ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে তার ভূমিকা কি ছিল? অবশ্যই এসব প্রশ্নের জবাব জনগণকে জানাতে হবে।”
ঢাকা/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ত র ক রহম ন র ব এনপ র স গণতন ত র দ শ র জন দ ড় দশক উপদ ষ ট সরক র র জনগণ র কর ড র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে যাদের ভরাডুবি হবে, তারাই পিআর পদ্ধতিতে ভোট চায়: সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স
কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করে নিত্যনতুন ইস্যু নিয়ে এসে জটিলতা করে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়। ভোটের সংখ্যানুপাতে সংসদের আসন তথা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের ধুয়া তুলে বিতর্ক সৃষ্টি করে জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরানো হচ্ছে। পিআর পদ্ধতিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে যেমন জনগণের অধিকার হরণ হয়, তেমনি দেশে আবার দলীয় কর্তৃত্ববাদ, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ কায়েমের পথ প্রশস্ত হবে। নির্বাচনে যাদের ভরাডুবি হবে, তারাই পিআর পদ্ধতিতে ভোট চায়।
আজ রোববার সকালে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা, ইউনিয়ন ও বিভিন্ন কলেজ ছাত্রদলের মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ। এ ছাড়া এমরান সালেহ প্রিন্স দুপুরে উপজেলা ও ইউনিয়ন মহিলা দল এবং বিকেলে উপজেলা ও ইউনিয়ন ওলামা দলের নেতাদের সঙ্গে পৃথক পৃথক মতবিনিময় সভা করেন।
ছাত্রদলের মতবিনিময় সভায় এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, যারা বলে বিএনপি শুধু নির্বাচন নির্বাচন করছে, তারা জনগণ ও নির্বাচনকে ভয় পায়। সে জন্য তারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে কূটকৌশল করছে। বিএনপি নির্বাচন ও জনগণকে ভয় পায় না। বিএনপি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে, দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তি, নিরাপত্তা এবং জন–আকাঙ্ক্ষা ও গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের স্বার্থে দ্রুত নির্বাচন চায়।
বিএনপি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংস্কার ও ফ্যাসিস্টদের বিচার ত্বরান্বিত করতে চায়।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান রোধে বিএনপি প্রশ্নাতীতভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ দ্বারা দেশের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মোকাবিলা করে বিএনপি টিকে আছে। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের আর পুনরুত্থান যাতে না ঘটে, সে জন্য আন্তরিকভাবেই বিএনপি সংস্কার চায়। কিন্তু সংস্কারের নামে অযৌক্তিক ও জনসম্পৃক্ততাহীন নিত্যনতুন ইস্যু নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি নির্বাচন বিলম্বিত করার যড়যন্ত্র।
নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে প্রিন্স আরও বলেন, আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত থাকতে হবে। শত শহীদের রক্তে, গুম, খুনের শিকার সহকর্মীদের আত্মত্যাগে আর লাখো নেতা-কর্মীর অবর্ণনীয় দুঃখে ফ্যাসিবাদের অবসান হলেও পরিপূর্ণ বিজয় অর্জন হয়নি। দ্রুত নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তবেই পরিপূর্ণ বিজয় ও গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হবে।
ধোবাউড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ছাত্রদলের মতবিনিময় সভায় ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আযহারুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিসুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।