ট্যাক্সিতে বসে চারদিক দেখতে দেখতে যাচ্ছি। চমৎকার রাস্তা! ডানে বাঁয়ে যেদিকে তাকাই দিগন্ত পর্যন্ত চোখ যায়। আমেরিকায় নেমে যে বিষয়টি আমার চোখে পড়েছে তা হলো এর দিগন্তজোড়া বিশালতা। চারদিকে তাকিয়েই বোঝা যায় কি বিশাল এই দেশ! গাদাগাদি বিল্ডিং নেই, বেশ ফাঁকা। বিশাল আয়তনের বিত্তবৈভব আর প্রাচুর্যের দেশ সেটা বোঝা যায়। রাস্তাায় ট্রাফিক জ্যাম নেই। আমরা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই লং আই ল্যান্ড সিটিতে পৌঁছলাম। এখানেই আমাদের হোটেল লা কুইন্টা।

ট্যাক্সি ছেড়ে ব্যাগেজপত্র নিয়ে হোটেলে ঢুকলাম। রিসেপশনে বসে আছে বিশালদেহী এক যুবতী। আমার রিজার্ভেশন ছিল। ফরমালিটিজ সেরে রুমে গেলাম। চমৎকার রুম পছন্দ হলো। কাপড় ছেড়ে লম্বা হট শাওয়ার নিলাম। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টার জার্নিতে শরীরের অবস্থা যাচ্ছেতাই। এর মধ্যে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎদা আমার খাবার নিয়ে হাজির। এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে না যাওয়ার অপরাধ ভোলাতে এবং খুশী করতে তার এই চেষ্টা। সোলার বক্সে রাস্তায় মোড়ানো খাবারের প্যাকেট খুলে মনটা আনন্দে লাফিয়ে উঠল। গরম ভাত, গরুর মাংস, ভেজিটেবল আর ডাল। সুদুর আমেরিকায় এসেই খাঁটি বাঙালি খাবার। পেট পুরে খেলাম এবং খেয়েই বিছানায় কম্বলের নিচে নিজেকে চালান করে দিলাম। প্লেনে জার্নির ঘোর কাটেনি কিন্তু  গোসল সেরে খেয়ে পরম তৃপ্তি নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই  ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যার আগে। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালাম। চমৎকার ঝকঝকে বিকেলের রোদ! বাথরুমে ঢুকে চোখে-মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হলাম। ফোন করলাম বিশ্বজিৎদাকে। জানতে পারলাম এই হোটেলেই আছেন ফেরদৌস ওয়াহিদ এবং তার ছেলে এ প্রজন্মের জনপ্রিয় গায়ক হাবিব ওয়াহিদ। ফেরদৌস ভাইকে ফোন করতেই চিৎকার করে উঠলেন ‘বস আপনি কখন আইলেন?’ বললাম ‘দুপুরে এসেছি।’ একটু পর তিনি রুমে এলেন। ফেরদৌস ভাইয়ের সাথে অনেক গল্প হলো, নিচে নেমে চা খেলাম। ভাগনে পাতাকে ফোন দিলাম। পাতা বলল, মামা আপনি হোটেলেই থাকেন আমি আসছি। পাতা এলো সন্ধ্যার আগে। ওর সাথে বের হলাম নিউ ইয়র্ক দেখবো বলে। হেঁটে হেঁটে এলাম কাছেই মেট্রো রেল স্টেশেনে। টিকেট কেটে ট্রেনে করে এসে নামলাম ম্যানহাটনে। এই সেই ম্যানহাটন, নিউ ইয়র্কের মূল সিটি। চার দিকে সমুদ্র, লম্বালম্বি সাজানো গোছানো চমৎকার এবং বিশাল শহর। মোট ১২টি বড় রাস্তা লম্বালম্বি এবং ১৩৫টি ছোট রাস্তা আড়াআড়ি। ম্যানহাটনেই বিশাল বিশাল বিল্ডিং এবং চমৎকার সব বিল্ডিং! ফুটপাতে হেঁটে চলছে অসংখ্য সব মানুষ, নানা জাতের নানা বর্নের। আমেরিকা আসলে বহু জাতির দেশ। এখানে রাস্তায় দেখা যায় সাদা কালো লম্বা খাটো নানান কিছিমের মানুষ। ম্যানহাটনের চারদিকেই সমুদ্র। এর পূর্ব দিকে কুইনস্, দক্ষিণে ব্রুকলেন। দক্ষিণে ব্যাটারী পার্ক সিটির সমুদ্রপাড়ে এসে দাঁড়ালে সমুদ্রের মধ্যে দেখা যায় লিবার্টী অব স্ট্যাচু মশাল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

ম্যানহাটন সিটিতে সেন্ট্রাল পার্ক, ওয়াশিংটন পার্ক, ব্যাটারী পার্ক, টমশন পার্ক, সিটি হল পার্ক, ইউনিয়ন পার্ক সহ মোট ১৭টি পার্ক রয়েছে। পার্কগুলো চমৎকার সাজানো সবুজ বৃক্ষে ভরা। ম্যানহাটনকে বলা হয় মিউজিয়ামের শহর। আমেরিকানরা মিউজিয়াম ভালোবাসে। শহরের মধ্যে আছে আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি, মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট, মিউজিয়াম অব সিটি নিউ ইয়র্ক, হুইটনি মিউজিয়াম, ইত্যাদি। মিউজিয়ামে দেশী-বিদেশী পর্যাটকদের প্রচণ্ড ভিড় দেখেছি। 

রাত হয়েছে। শহরে জ্বলে উঠেছে রঙিন বাতি। রাতের ম্যানহাটনের রূপ অন্যরকম। একবারেই স্বপ্নের মতো। টাইম স্কয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম চারদিকে।  এই হলো স্বপ্নরাজ্য, সারা পৃথিবীর স্বর্গের দুয়ার। সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ, ঠান্ডা বাতাসে শরীর জুড়িয়ে গেল। 

হারবারে ওপেন স্টেজে কনসার্ট হচ্ছে হাজার হাজার দর্শক গান উপভোগ করছেন। আমরা কিছুক্ষণ থেকে পাতাকে বললাম, চলো টুইন টাওয়ার দেখবো। পাতা বলল, টুইন টাওয়ার তো নেই, সেই জায়গাটি আছে। আমি বললাম, সেটাই তো দেখব। হেঁটে হেঁটে গেলাম সেই বিখ্যাত জায়গায়। দেখলাম জায়গাটি ঘিরে রেখেছে। ভেতরে দেখার জন্য একটি ফাঁকা জানালার মতো সেখান দিয়েই দেখলাম ভেতরে কনসট্রাকশন হচ্ছে। অনেক যন্ত্রপাতি বিশাল আকার ক্রেন ইত্যাদি। দ্রুত নির্মাণ হচ্ছে আর একটি বিশাল টাওয়ার। যার নাম দিয়েছে ‘ফ্রিডম টাওয়ার’। এরপর ফিরে এলাম হোটেলে। রুমে ফিরে ফোন করলাম ফেরদৌস ভাইকে। তিনি এলেন, গল্প চলল রাত ১২টা পর্যন্ত।  তারপর ঘুম। 

পরদিন পহেলা জুন। গোসল সেরে রেস্টুরেন্টে নামলাম। দেখা হলো কলকাতার বিখ্যাত লেখক শমরেশ মজুমদারের সাথে।  তিনিও ওপার বাংলা থেকে এসেছেন এই আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবে যোগ দিতে। তার সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের পরিচয় দিলাম। এরপর রেস্টুরেন্টে ঢুকলেন কলকাতার বর্তমান প্রজন্মের খুবই জনপ্রিয় গায়ক শ্রীকান্ত আচার্য। ওনারা এসেছেন গতকাল বিকেলে এ উৎসবে যোগ দিতে। বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ড.

আনিসুজ্জামান, রাবেয়া খাতুন, আনিসুল হক, হাবিব ওয়াহিদ, মাহমুদুজ্জামান বাবু, কুদ্দুছ বয়াতী। 

আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবের উদ্বোধন হবে আগামী কাল ২ জুন। কাজ নেই তাই ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ আজকেই। আমার বন্ধু আমান উদ দৌলাকে ফোন করলাম। এ সেই সাংবাদিক আমান যে ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক কলাম লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন। পরবর্তিতে দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে আমেরিকায় নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকতার উপর পড়াশোনা করছেন এবং ‘ওয়ার্ল্ড নিউজ ব্যাংক’ নামে একটি ওয়েব নিউজ এর সম্পাদনা করছেন।

আমান এলো। ওর সাথে বের হলাম। আমরা প্রথমেই গেলাম জাতিসংঘ সদর দপ্তরে। বিশাল ভবনের সামনে সারি সারি পতাকা উড়ানোর ফ্লাগ স্ট্যান্ড। অনেকগুলো যতগুলো দেশ জাতিসংঘের সদস্য। ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। ঢোকবার মুখেই গেটের বাম দিকে একটি চমৎকার ম্যুরাল! একটি মেটালিক গ্লোব। সোনালী রঙের। গ্লোবটির মধ্যে ফাটল, ভেতরে যন্ত্রপাতি ঠাসা। ডানে আর একটি স্ট্যাচু। বিশাল একটি পিস্তল এবং পিস্তলের ব্যারেলটি মোড়ানো। বোঝা যায় যুদ্ধ বন্ধের প্রতীকী ব্যঞ্জনা এটি। আমান বলল, সবাই এসে এই বিল্ডিংটাই দেখে যায় কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করে না। আসল দেখার বিষয় তো ভেতরে। আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম। ১৩ ডলার করে টিকেট কেটে বসে থাকলাম। লবির দেয়ালজুড়ে জাতিসংঘের এ যাবৎ যারা মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের ছবি। একটি সুন্দরী মেয়ে আমদের এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে প্রথমে তার পরিচয় দিল। আমাদের জাতিসংঘ ভবন দেখতে আসার জন্য ধন্যবাদ জানাল এবং নিয়ম কানুন বলে দিল। আমরা তাকে অনুসরণ করলাম। 

প্রথমেই আমাদের একটি চমৎকার হলরুমে নিয়ে এলেন। বেশ বড়, গ্যালারীতে সারি সারি চেয়ার। স্টেজের মাঝখানে মহাসচিবের চেয়ার। আর দুই দিকে ৯টি ৯টি ১৮টি চেয়ার কমিটির সদস্যদের বসবার জন্য। এখানে মিটিং হয়। এরপর এক এক করে আরো ছোট-বড় ৪টি হল রুম আমরা দেখলাম। কোন হলে কি ধরনের মিটিং হয় তার বর্ণনা দিলেন মেয়েটি। হলগুলোর প্রবেশ মুখে লবিতে দেয়ালজুড়ে বিশাল একটি তৈলচিত্র। আমাদের শিল্প ভবনের প্রবেশ মুখে এসএম সুলতানের ‘সবাক সচল ইতিহাস’ নামের চিত্র কর্মটির সাথে মিল আছে অনেকটা। ইউএন শান্তি মিশনে কর্মরত সৈনিকদের বেশ কিছু ছবি দেখলাম। হঠাৎ করেই চেখে পড়লো বাংলাদেশের পতাকার ছবি, খুশী হলাম। কাছে গিয়ে দেখলাম ইউ এন শান্তি মিশনে বাংলাদেশের কয়েকজন সৈন্য মারা গিয়েছিলেন তাদের লাশ কফিনে করে বাংলাদেশের পতাকায় ঢেকে দেশে পাঠিয়েছিল এ সেই ছবি। বাইরের বিশাল লবিতে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশ থেকে দেয়া চমৎকার সব উপঢৌকন সাজিয়ে রেখেছে। ভারতের তাজমহল, থাইল্যান্ডের নৌকা, নেপালের  মন্দির আরো কত কি। দুঃখজনক বাংলাদেশের কিছুই নেই সেখানে। তেমনি পরবর্তিতে গিয়েছিলাম ডালাস ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে। সেখানেও দেখেছিলাম সারি সারি ঝুলছে বিভিন্ন দেশের পতাকা। ১৬০টি পতাকার মধ্যে খুঁজে পাইনি বাংলাদেশের পতাকা। সেখানে কর্মরত অফিসারকে জিজ্ঞাসা করে জেনেছি যে সব দেশের শো রুম আছে সেই সব দেশের পতাকা ঝুলানো হয়। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বাংলাদেশের একটি শোরুমও নেই।

জাতিসংঘ ভবন থেকে বেড়িয়ে আমরা গেলাম মিউজিয়াম দেখতে। বিশাল মিউজিয়াম অসংখ্য মানুষ মিউজিয়ামে ঢুকছে বের হচ্ছে। ভেতরে ঢুকে আরো বিস্মিত হলাম। বিশাল হল রুমে বিস্ময়কর সব জিনিস সাজিয়ে রাখা হয়েছে প্রতিটির নীচে দার বর্ণনা। শুনশান নীরবতা, দর্শনার্থীরা চুপচাপ দেখছে। আমরা ঘণ্টাখানেক ছিলাম। সামান্য অংশই দেখেছি দেখার মতো করে দেখলে পুরো মাসই হয়তো লেগে যাবে।

২ জুন লং আইল্যান্ড সিটির লাগুটিয়া কলেজের হল রুমে এবং সুপরিসর চত্তরে শুরু হলো আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ২০০৭ । বিকেল ৫টায় ড. আনিসুজ্জামান স্যার উৎসবের উদ্বোধন করলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের এবং কলকাতার লেখক, গায়ক উপস্থিত ছিলেন। উত্তর আমেরিকার নিউ ইয়র্কে বসবাসরত বাঙালিরা এসেছেন উৎসবে যোগ দিতে। মেলা বেশ জমে উঠেছে। নিউ ইয়র্কে বাঙালিদের মিলনমেলা। সন্ধ্যার পর হল ভরে গেল কানায় কানায়, শুরু হলো গানের আসর। কলকাতার শ্রীকান্ত আচার্য তার চমৎকার ভরাট গলার গানে মুগ্ধ করলেন সবাইকে। এর আগে পালাগান গেয়েছেন বাংলাদেশের কদ্দুছ বয়াতী। গান চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এভাবেই কটলো বাংলা উৎসবের প্রথম দিন। 

দ্বিতীয় দিনেও বিকেল বেলা শুরু হলো উৎসবের অনুষ্ঠান মালা । রবীন্দ্র আলোচনা, নজরুল আলোচনা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লেখক কবি গুণীজনরা আলোচনা করলেন। এসব অনুষ্ঠানে দর্শকসংখ্যা খুবই কম ছিল। সন্ধ্যায় শুরু হলো গানের অনুষ্ঠান। প্রথমেই মঞ্চে উঠলেন বাংলাদেশে শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু।  সুদূর আমেরিকার মাটিতে তিনি যখন গেয়ে উঠলেন ‘আমি বাংলার গান গাই’ শ্রোতারা আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন। এক সাথে গেয়ে উঠলেন বাংলার গান। বাবু পরপর অনেকগুলো গান শোনালেন। এরপর এলো হাবিব। বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে হাবিব সত্যিই একজন ব্যতিক্রমী মিউজিক কম্পোজার। 

পরদিন গেলাম নিউ ইয়ার্কে বাঙালিদের এলাকা বলে খ্যাত জ্যাকসন হাইটসে। এখানেই মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ সাহার বইয়ের দোকান। বিশাল দোকান। নিউ ইয়র্কে বসবাসরত বাঙালিদের বইয়ের চাহিদা মেটাতে এখানে রয়েছে বিশাল বইয়ের সম্ভার। আমাদের সাথে সফরসঙ্গী হিসেবে আরো আছেন অনন্যা প্রকাশনীর মুনির আহমেদ, সময় প্রকাশনীর ফরিদ আহমেদ এবং মওলা ব্রাদার্স-এর মাহমুদুল হক। 

মুক্তধারার অফিসে দেখা হলো মুনির ভাইয়ের সাথে। আমরা বসে চা খেতে খেতে গল্প করছিলাম। এর মধ্যেই সেখানে হাজির হলেন আনিসুজ্জামান স্যার, আনিসুল হক, কদ্দুছ বয়াতী। জমে উঠল আড্ডা। সন্ধ্যার আগেই একে একে চলে গেলেন সবাই। আমি রইলাম বিশ্বজিৎ বাবুর কাছে। তিনি কাজে ব্যস্ত হতেই আমিও বেড়িয়ে পড়লাম জ্যাকসন হাইটস দেখতে। এখানকার বেশীর ভাগ মানুষ বাংলাদেশী। রাস্তায় লুংগি পড়া মাথায় গোল টুপির ট্রিপিক্যাল বাঙালিও চোখে পড়েছে। খাবার দোকানগুলোও দেখলাম বাঙালিদের। এক দোকানে ঢুকে পড়লাম। ভদ্রলোকের বাসা ঢাকার গ্রীন রোডে। কাপড়ের দোকান দিয়েছেন। মাল সংগ্রহ করেন ঢাকা এবং চায়না থেকে। বেশ ভালো ব্যবসা করছেন। নিউ ইয়ার্কে দোকানগুলোতে লক্ষ্য করেছি চায়নার প্রোডাক্ট ভরা। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে আমেরিকান সরকার ঠেকাতে পাড়ছে না চায়নাকে। 

ফিরে গেলাম বিশ্বজিৎ বাবুর মুক্তধারায়। রাতে তিনি নিয়ে গেলেন একটি বাঙালি রেস্টুরেন্টে। ভাত, পাবদা মাছ, গরুর মাংস, সবজী ডাল দিয়ে ডিনার সারলাম। লক্ষ করেছি এই রেস্টুরেন্টে কাজ করছে বাঙালি মেয়েরা। অনেক রাতে বিশ্বজিৎ বাবুর গাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেল হোটেলে। আগামী কাল ভোর পাঁচটায় রওনা হবো ডালাসের উদ্দ্যেশে। (শেষ) 

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন উ ইয়র ক অন ষ ঠ ন কলক ত র উৎসব র চমৎক র আম র ক এস ছ ন আম দ র প রব শ র একট প রথম করল ম করছ ন উঠল ন ন করল

এছাড়াও পড়ুন:

ভেতরে যদি আনন্দ না থাকে তাহলে বেঁচে থাকা অর্থহীন

নিজের সিনেমা ‘পরিক্রমা’ নিয়ে এবার ৭৮তম কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এসেছেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। উৎসবের মার্সে দ্য ফিল্ম বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে সিনেমাটি। পরিক্রমা দেখতে গিয়েই সাক্ষাৎ মেলে এ নির্মাতার সঙ্গে। কথা হয় তাঁর বারবার কানে আসার অভিজ্ঞতা, নতুন সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে।

প্রশ্ন: এবারের কান ফেস্টিভ্যালে এসে কেমন দেখছেন?
গৌতম ঘোষ: খুব ভালো লাগছে। কান আমার কাছে শুধু একটা উৎসব নয়; বরং আমার কাছে দ্বিতীয় ঘরের মতো। এতবার এসেছি এখানে, পুরোনো স্মৃতির মাঝে ঘুরে বেড়াই। পরিচিত অনেক মুখের সঙ্গে দেখা হয়, নতুন নতুন উদ্যোগ আর মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়– সব মিলিয়ে এ প্রাণবন্ত পরিবেশটা আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করে।

প্রশ্ন: কানের মার্সে দ্য ফিল্ম বিভাগে ‘পরিক্রমা’ নিয়ে এসেছেন। সিনেমাটি নিয়ে কানের অভিজ্ঞতা কেমন হচ্ছে?
গৌতম ঘোষ: এককথায় দারুণ! উৎসবের বাণিজ্যিক বিভাগে স্ক্রিনিং হয় সিনেমাটির। সিনেমাটি দেখতে হলভর্তি ছিল দর্শক। স্ক্রিনিং হয়েছে সকালে। এত সকালে এত মানুষ আসবে তা আমার ভাবনার বাইরে ছিল। আগত সবার এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে আমি অভিভূত! ইউরোপিয়ান ডিস্ট্রিবিউটররা এ স্ক্রিনিং আয়োজন করেছিল। ইতোমধ্যে অনেক জায়গা থেকে ছবিটি বিক্রির আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি।

প্রশ্ন: ‘পরিক্রমা’ তো প্রথম ইন্দো-ইতালিয়ান যৌথ প্রযোজনা এবং ভারতীয় সরকারের কো-প্রোডাকশন অনুদান পাওয়া ছবি?
গৌতম ঘোষ: হ্যাঁ, এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়ও। এই অনুদান পাওয়া সহজ নয়। অনেকেই জানতে চান কীভাবে অনুদান পাওয়া যায়, আর আমার সিনেমা সেই পথ দেখাচ্ছে। এ ছবির মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন দরজা খুলে দিয়েছি।

প্রশ্ন: ১৯৮২ সাল থেকে কানে আসছেন, তখন আর এখনকার কান উৎসবের মাঝে কোন বিষয়টি আলাদা মনে হচ্ছে?
গৌতম ঘোষ: ১৯৮২ সালে ‘দখল’ নিয়ে প্রথম এসেছিলাম, তখন সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, আদুর গোপালকৃষ্ণদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। তখন উৎসবটা ছিল শিল্পের আসর, এখন বাণিজ্যের দিকটা অনেক বড় হয়েছে। ডিজিটালের যুগে সিনেমার বাজারও অনেক বিস্তৃত হয়েছে। তবে সেই পুরোনো ব্লু বারে বসে আড্ডা দেওয়ার স্মৃতি আজও আমার হৃদয়ে অমলিন।

প্রশ্ন: নিজ দেশের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সঙ্গে আপনার দীর্ঘ সম্পর্ক। কানের অভিজ্ঞতা থেকে সেসব ফেস্টিভ্যালের জন্য কী শিক্ষা থাকতে পারে?
গৌতম ঘোষ: কানকে অনুকরণ করা সহজ নয়, কারণ এটা শতাব্দীর ঐতিহ্য আর পরিকল্পনার ফল। তবে আমরা শিখতে পারি কীভাবে শিল্প ও বাণিজ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা যায় এবং আন্তর্জাতিক মানের উৎসব তৈরি করা যায়। আমি সবসময় চাই আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠুক। সুযোগ পেলে আবার দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক।

প্রশ্ন: কানের আবহাওয়া কেমন লাগে?
গৌতম ঘোষ: (হেসে) এককথায় অসাধারণ। বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের শুরু, দিনভর সূর্য আর মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি। সন্ধ্যার পর মৃদু হাওয়া বইতে থাকে, সূর্য প্রায় রাত ৯টায় ডুবে যায়। রাতজুড়ে চলে আলোচনার আসর আর পার্টি। বিশ্বজুড়ে সেরা মানুষের সঙ্গে গল্প করতে পারা, সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা ভাগাভাগি– এই অভিজ্ঞতা শুধু কানেই পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য কিছু বলার আছে?
গৌতম ঘোষ: হ্যাঁ থাকবে না কেন। আমরা তো একই ভাষার। দেখো, নিজের দেশ ছেড়ে এত দূরে এসেও আমরা একই ভাষায় কথা বলছি। তার মানে আমরা একই। আমিও তো তোমাদের মতো বাংলাদেশেরই লোক। বাংলাদেশ নিয়ে আমার কত স্মৃতি, কত কত ভালোলাগা। এসব অল্প সময়ে বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশের সবার প্রতি রইল ভালোবাসা। তোমরা ভালো থেকো, কানে থেকো, সিনেমা উপভোগ করো।

প্রশ্ন: একটু অন্য বিষয়ে জানতে চাইব, মানুষ হিসেবে আপনার জীবন দর্শন কী?
গৌতম ঘোষ: এটা বলা কঠিন। কারণ মানুষের জীবনের দর্শন ব্যখ্যা ও বিশ্লেষণ করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। খুব গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা কঠিন। জীবনের দর্শনটা হচ্ছে মানব দর্শন। এই পৃথিবীতে আমরা যে বাস করি যে প্রকৃতি আমাদের আশ্রয় দেয় তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটা সুন্দর জীবনযাপন করাই জীবন দর্শন। মোট কথা, জীবকে অর্থবহ করে আনন্দে কাটিয়ে দেওয়া। বাঁচতে যেহেতু হবে আনন্দেই বাঁচি। সেই আনন্দের রঙ্গ নানারকম হতে পারে। কেউ বিরহে আনন্দ পান কেউ আবার হাসিতে আনন্দ পান।  নিজের ভেতরে যদি আনন্দ না থাকে তাহলে বেঁচে থাকা কষ্টকর ও অর্থহীন মনে হবে।

প্রশ্ন: আপনি স্বনামধন্য বাঙালি পরিচালক। বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে বিশ্বপ্রান্তরে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু সত্যজিত রায়, ঋত্বিক ঘটকরা বাংলা চলচ্চিত্রকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন সেই জায়গাটা কী ধরে রাখা যাচ্ছে আজকাল?
গৌতম ঘোষ: প্রশ্নটির উত্তর দীর্ঘ করে দিতে হবে। কিন্তু অতটা সময় এখন দেওয়া যাবে না। অন্য এক জায়গায় সময় দেওয়া আছে। তারপরও বলি, আমাদের জেনারেশন যে ছবিগুলো করেছে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে কিংবা প্রশংসিত হয়েছে।  সত্যজিৎ রায়, মৃনাল সেন অথবা ঋত্বিক ঘটকের বহু ছবি চলেছে, আবার বহু ছবি সেই অর্থে চলেনি। জনপ্রিয়তা ও ব্যবসার ওপর সব সময় চলচ্চিত্র নির্ভর করে না। একটি চলচ্চিত্র ব্যবসা দিতে পারে, আবার নাও দিতে পারে। কোনো দিনও আমাদের বাংলা ছবির বড় বাজার ছিল না। অন্য ইন্ডাস্ট্রির মানুষরা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে গোটা পৃথিবীতে। আমরা বাঙালিরা পারিনি। এটা কিন্তু ভাববার বিষয়। অসংখ্য ট্যালেন্টেড ছেলেমেয়ে আমাদের মধ্যে রয়েছে। অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক, কলাকুশলীর অভাব নাই। কিন্তু আমরা যদি ছবির বাজারটা না বাড়াই তাহলে সব ট্যালেন্ট অংকুরেই বিনষ্ট হবে। তাই এখন নিজেরাই মাঠে নেমেছি। বাজার বড় করার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস, এই প্রজন্মও এদিকে খেয়াল রাখবে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৫ মিনিটের অভাবনীয় করতালি, কান্না সামলাতে পারলেন না অভিনেত্রী
  • রেইনড্যান্সে মনোনয়ন পেল বাংলাদেশের দুই সিনেমা
  • লাল গালিচায় হাটলেন জাহ্নবী, সবাই দেখলেন শ্রীদেবীকে!
  • কানের লাল গালিচায় জাহ্নবীর সঙ্গেও ছিলেন শ্রীদেবী
  • এবার যুক্তরাজ্যের রেইনড্যান্স উৎসবে মেহজাবীনের ‘সাবা’
  • যুক্তরাজ্যের উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পেলেন মেহজাবীন
  • পাঁচ মিনিটের করতালিতে মুগ্ধ স্কারলেট
  • ৫৫ বছর পর কানে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’
  • ভেতরে যদি আনন্দ না থাকে তাহলে বেঁচে থাকা অর্থহীন