২০০৪ সালের কথা। আকমাল মাহমুদ ভর্তি হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। উঠেছেন শের-ই-বাংলা হলে। এক বছর আগে তাঁর বাবা মারা গেছেন; বাড়ি থেকে তাই ‘মায়ের দোয়া’ ছাড়া কিছু পাওয়ার নেই; কিন্তু তিনি পড়াশোনা ছাড়তে চান না। অনেক ভেবে একদিন এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে বাকিতে চার কেজি মধু নিয়ে এলেন। হলের কক্ষের দরজায় লিখে দিলেন ‘এখানে মধু পাওয়া যায়’। বিক্রি করে লাভের অংশটা খরচ করে মূল টাকা দিয়ে আবার মধু নিয়ে আসতে শুরু করলেন।

এরপর অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন। তবু মধু ছাড়েননি তিনি। এখন প্রতিবছর ১০০ থেকে ১২০ টন মধু কেনাবেচা করছেন। মধু নিয়ে গবেষণাও করছেন। খুলেছেন ‘মৌমাছি ও মধু পাঠশালা’ নামের দাতব্য প্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৩০০ শিক্ষিত বেকার যুবক আত্মকর্মসংস্থান গড়েছেন।

আকমাল মাহমুদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মোহনগঞ্জে। বর্তমানে রাজশাহী নগরের মেহেরচণ্ডী বুধপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাঁর কারখানা ও পাঠশালা নগরের ছোট বনগ্রাম এলাকায়। ‘মৌমাছি ও মধু’ নামে ৩৩ হাজার মৌয়াল, চাষি, বণিক, গবেষক, উদ্যোক্তা ও ভোক্তার জাতীয় জোটের একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, তিনি তার অ্যাডমিন। সারা দেশে তাঁর ৪২ জন চুক্তিবদ্ধ খামারি ও সুন্দরবনের ১৮০ জন মৌয়াল রয়েছেন, যাঁরা তাঁকে মধু সরবরাহ করে থাকেন। তাঁর নিজের ২১৫টি মৌ বাক্স রয়েছে। বছরে তিনি নিজে ৭ থেকে ৮ টন মধু উৎপাদন করতে পারেন।

মাহমুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগ থেকে ২০০৮ সালে স্নাতক ও ২০০৯ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

খুচরা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী

হলের কক্ষ থেকে বের হয়ে ২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া নেন আকমাল। সেই দোকান থেকে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কেজি মধু বিক্রি করতেন। ৯ বছর সেখানে তিনি ওই ব্যবসা চালিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি খেয়াল করেন, প্রাণ কোম্পানির মধু বাজারে বিক্রি হয়। খোঁজ নিতে তিনি নাটোরে প্রাণ কোম্পানির কার্যালয়ে যান। নমুনা পরীক্ষার পর মাহমুদের মধু অনুমোদন পায়। এরপর ২০১৫ সালের দিকে প্রাণ কোম্পানির সঙ্গে পাইকারি মধু সরবরাহের চুক্তি হয়। তারা প্রথমেই পাঁচ টন মধুর ফরমাশ দেয়। এরপর থেকেই পাইকারি মধু ব্যবসার জগতে প্রবেশ করলেন আকমাল মাহমুদ। তাঁর মধুর সুনাম ছড়িয়ে পড়লে কিছুদিনের মধ্যে আরও পাঁচটি কোম্পানি মধু নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তার মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠিত ওষুধ কোম্পানিও ছিল।

প্রাণ কোম্পানির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন সরবরাহকারী আছেন। তাঁর মধ্যে আকমাল মাহমুদ একজন। তাঁর কাছ থেকে শর্ষে, কালিজিরা, লিচুসহ বিভিন্ন ফুলের মধু নিয়ে থাকেন। তাঁর মধু মানসম্মত। তাঁর কথা ও কাজে মিল আছে।

মাহমুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগ থেকে ২০০৮ সালে স্নাতক ও ২০০৯ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

খাঁটি মধুর স্বকীয়তা ধরে রাখার জন্য নতুন একটি উদ্যোগ নিলেন মাহমুদ। ২০১৮ সালের দিকে নিজেই একটি মধুর পরীক্ষাগার স্থাপন করলেন। পাশাপাশি ‘মৌমাছি ও মধু পাঠশালা’ নামের দাতব্য একটি প্রতিষ্ঠান চালু করলেন।

মহামারিতে ব্যবসার বিস্তার

২০২০ সাল পর্যন্ত পাইকারি মধু সরবরাহ করে আসছিলেন আকমাল মাহমুদ। এর পরেই শুরু হলো কোভিডকাল। তখন মধু বিক্রির পরিমাণও বাড়তে থাকে। এর মধ্যে করোনায় চাকরি হারানো পরিচিত অনেক যুবক মাহমুদের কাছে এলেন। তিনি তাঁদের মধুর ব্যবসা শুরুর পরামর্শ দেন। ওই যুবকেরা পরিচিতজনদের মধ্যে মধু বিক্রি শুরু করলেন। প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ যুবক তাঁর কাছ থেকে প্রতি মাসে কয়েক মণ মধু নেওয়া শুরু করলেন। ‘লকডাউন’ শুরু হলে মাহমুদ সবাইকে পরামর্শ দিলেন অনলাইনে ব্যবসা চালাতে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইন ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠল। ২০২১ সালের দিকে মাহমুদের প্রতিবছরের বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াল ১০০ থেকে ১২০ টন।

 

‘মৌমাছি ও মধু পাঠশালা’

খাঁটি মধুর স্বকীয়তা ধরে রাখার জন্য নতুন একটি উদ্যোগ নিলেন মাহমুদ। ২০১৮ সালের দিকে নিজেই একটি মধুর পরীক্ষাগার স্থাপন করলেন। পাশাপাশি ‘মৌমাছি ও মধু পাঠশালা’ নামের দাতব্য একটি প্রতিষ্ঠান চালু করলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে সব উদ্যোক্তাকে মধুর নমুনা তিনি বিনা পয়সায় পরীক্ষা করে দেবেন। তাঁদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের আয়ের একটি অংশ তিনি অনাথ হতদরিদ্র ও প্রতিবন্ধীদের মধ্যে দান করবেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান নগরের ছোট বনগ্রাম বারোরাস্তার মোড়ে সাড়ে আট হাজার বর্গফুটের একটি ভবনে পরিচালিত হচ্ছে।

গত ২৬ এপ্রিল পাঠশালায় গিয়ে দেখা যায়, ১০ উদ্যোক্তাকে মধুর আর্দ্রতা পরিমাপ শেখানো হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কারখানায় ঢুকে দেখা যায়, যে ঘরে মধু প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে, সেখানে উচ্চ তাপমাত্রা। পাশের গুদামে যেন মধুর তাপমাত্রা। মানে যে তাপমাত্রায় (সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি) মধু ভালো থাকে, সেই তাপমাত্রায় রাখা হয়েছে। এই গুদামের ধারণক্ষমতা প্রায় ২০০ টন।

আকমাল মাহমুদ জানান, তিনি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনেছেন। গবেষণাগারে বিশ্লেষণের মাধ্যমে মধুর এসিডিটি, পরাগরেণু বা পোলেনের উপস্থিতি, আদ্রতা, গ্লুকোজ ও সুক্রোজের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। প্রতিবছর তাঁর এই গবেষণাগারে নেদারল্যান্ডস থেকে একজন মধু–গবেষক আসেন। তাঁর কাছ থেকে মাহমুদ উন্নত গবেষণার বিষয়গুলো শিখে নেন। এই গবেষককে সঙ্গে করে মাঠেও নিয়ে যান। খামারিদেরও হাতে-কলমে শেখান।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি এসেছিলেন নেদারল্যান্ডসের গবেষক ইয়ান আরি ভান বেরকুম। তিনি গবেষণাগারে মাহমুদকে হাতে–কলমে শেখানোর পাশাপাশি নাটোর, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও দিনাজপুর গিয়ে দেশের উদীয়মান উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এনায়েত আলী প্রামাণিক নিয়মিত আকমাল মাহমুদের কাছ থেকে মধু নেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞানীরা যে বিষয় নিয়ে কাজ করি, আকমাল ওই বিষয়গুলো নিয়েই কাজ করেন। আমি এটা দেখে অবাক হয়েছি। সে একটা ডায়নামিক ছেলে।’

বিএসটিআই গেজেটে নাম

মধুর উৎস সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে আকমাল মাহমুদ দেখতে পান, দেড় শ বছরের বেশি সময় ধরে যে সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ করা হয়, সেই সুন্দরবনের নাম বিএসটিআই নির্ধারিত মধুর উৎসগুলোতে নেই। আবার যেসব ফুলকে মধুর উৎস হিসেবে ধরে মান নির্ধারণ করা হয়েছে, তার অনেকগুলো বিদেশি। আকমাল মাহমুদ এবং চট্টগ্রামের মধু–গবেষক সৈয়দ মঈনুল আনোয়ার বিএসটিআই বরাবর একটি আবেদন করেন। বিএসটিআই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর নতুন বিডিএস (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড) নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। সেখানে মধুর উৎস হিসেবে সুন্দরবন এবং বাদ পড়া ফুলের নামও যুক্ত করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি গেজেটে মধু–গবেষকদের তালিকায় আকমাল মাহমুদ ও সৈয়দ মঈনুল আনোয়ারের নাম রাখা হয়েছে।

বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক এনামুল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞানীরা স্ট্যান্ডার্ড ডেভেলপমেন্ট করি টেবিলে বসে আলোচনার মাধ্যমে; কিন্তু মাঠপর্যায়ে অবস্থাটা কী বা চ্যালেঞ্জগুলো কী, কাজের আওতা আরও কতটুকু বিস্তৃত করা প্রয়োজন, এ ব্যাপারে তাঁরা (আকমাল মাহমুদ ও সৈয়দ মঈনুল আনোয়ার) আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন সরবর হ র পর ম পর ক ষ ব যবস র একট করল ন

এছাড়াও পড়ুন:

রেকর্ড উৎপাদন, বেড়েছে মজুত, তবুও চালের বাজারে উত্তাপ

ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারি গুদামে উপচে পড়ছে চালের মজুত। বাজারে সরবরাহেও ঘাটতি নেই। তারপরও চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। প্রশ্ন উঠেছে  সরবরাহ ও মজুত থাকার পরও হঠাৎ চালের মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে কারা? 

চাষির ঘাম, সিন্ডিকেটের ফায়দা

সরকারি তথ্য বলছে, চলতি বোরো মৌসুমে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ টন। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আগের বছরের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে ১৫ লাখ টন। অথচ এই অর্জনের ফল ভোগ করছেন না প্রকৃত উৎপাদক।
নোয়াখালী জেলার কৃষক কালাম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ধান বিক্রি করছি মণপ্রতি ১১০০ টাকা। অথচ সেই ধানের চাল এখন কিনতে হচ্ছে ৮৫ টাকায়! আমরা দাম পাই না, আবার বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। লাভ করছে কারা?’’

আরো পড়ুন:

প্রশিক্ষণ শুধু পেশাগত জ্ঞান নয়, দায়িত্ববোধও বাড়ায়

খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি শুরু হলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে: আলী ইমাম

ঝালকাঠির কৃষক জহর আলীরও একই প্রশ্ন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘ফসল ফলাই আমরা, কিন্তু বাজার চালায় অন্যেরা। আমাদের কথা কেউ শোনে না, ভাবেও না।’’

কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সরবরাহে ঘাটতি নেই, বরং এবার সংগ্রহ অভিযানও নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হয়েছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এক ধরনের সিন্ডিকেট কাজ করছে। সরকারকে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

গুদামে রেকর্ড মজুত

খাদ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামে বর্তমানে ১৫ লাখ ৭২ হাজার টন চাল মজুত রয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩ লাখ টন বেশি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘মজুত পরিস্থিতি সন্তোষজনক। সরকার বাজারে নজরদারি বাড়িয়েছে। কেউ সিন্ডিকেট করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

দাম বৃদ্ধি  মিলগেটেই

অধিকাংশ জায়গায় চালের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে মিলগেট থেকেই। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘‘গুদামে চাল আছে, বাজারেও সরবরাহ আছে। কিন্তু মিল পর্যায় থেকেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। যেহেতু ৮৫ শতাংশ চালকলের দীর্ঘমেয়াদি মজুত ক্ষমতা নেই, তাই দায় বর্তায় করপোরেট চালকলগুলোর ওপর। এসব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে বিপুল ধান কিনে বাজারে প্রভাব ফেলে।’’

নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘‘প্যাকেটিং, পরিবহন, শ্রমিক মজুরিসহসব খাতে খরচ বেড়েছে। কম দামে চাল বিক্রি করা কঠিন।’’ তবে বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘‘বড় করপোরেট মিলগুলোই মাঠ পর্যায় থেকে আগাম টাকা দিয়ে ধান কিনে নেয়। এতে স্থানীয় ছোট মিলগুলো পিছিয়ে পড়ে।’’

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বলেন, ‘‘এক শ্রেণির কোম্পানি একসঙ্গে বিপুল ধান কিনে বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করছে।’’

অভিযান শুধুই খুচরা বাজারে

মূল নিয়ন্ত্রকরা যেখানে ধরাছোঁয়ার বাইরে, সেখানে অভিযান চলছে কেবল খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারে অভিযান চালানো হলেও মিল পর্যায়ে কোনো দৃশ্যমান তদারকি নেই।’’

কুষ্টিয়ায় চালের বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি

খাজানগর মোকামে সরু চালের ২৫ কেজির বস্তা ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ১৭২০ টাকায়, যা এখন ১৯২০ টাকা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বলে আখ্যা দিয়েছেন।

কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘‘এটা অস্বাভাবিক। দাম বৃদ্ধির পেছনে গভীর সিন্ডিকেট তৎপরতা থাকতে পারে। তদন্ত হওয়া দরকার।’’

ভোক্তার কষ্ট

রবিবার রাজধানীর কাপ্তান বাজারে মিনিকেট কিনতে আসা চাকরিজীবী মনির আহমেদ বলেন, ‘‘আগে মিনিকেট কিনতাম ৭৫-৭৮ টাকায়। এখন কিনছি ৮০-৮৩ টাকায়। প্রতিদিনের খরচের হিসাব কষেই বাজারে যেতে হয়।’’

সাম্প্রতিক চালের বাজার পরিস্থিতি বলছে, খাদ্য উৎপাদন নয় বাজার ব্যবস্থাপনাই এখন প্রধান সংকট। কৃষক ও ভোক্তা দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লাভবান গুটিকয়েক মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীর। এই ব্যবস্থার সংস্কার না হলে বাম্পার ফলনেও জনগণের কষ্ট কমবে না।

এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘‘যখন ফসল কৃষকের হাতে থাকে, তখন দাম পড়ে। আর ফসল যখন যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে, তখনই মূল্য বাড়ে। পুরো ব্যবস্থাই এক ধরনের জিম্মি দশায় আছে।’’

খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘‘দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে। খুব দ্রুতই চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে। চলতি মৌসুমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে।’’

তারপরও বাজারে চালের দাম কমছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘‘চালের দাম বাড়াতে বাজারে কোনো সিন্ডিকেট থাকলে তা ভেঙে দিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। দক্ষিণাঞ্চলে সরু জাতের ধান চাষের কারণে ধান সংগ্রহে কিছু সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে এবং সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’’
 

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এশিয়ার দেশগুলোয় ট্রাম্পের শুল্কনীতির কী প্রভাব পড়বে
  • ১৩ লাখ টন আমদানি, ফলন ভালো, তবু বাড়ছে চালের দাম
  • যেসব এলাকায় আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
  • বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে তেল উৎপাদন বাড়াবে ওপেক জোট
  • সোমবার ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
  • সাজা মাথায় নিয়ে ঘুরছিলেন ধামাকার চেয়ারম্যান মোজতবা আলী
  • ধামাকার চেয়ারম্যান কারাগারে, সাজা মাথায় নিয়ে ঘুরছিলেন
  • রেকর্ড উৎপাদন, বেড়েছে মজুত, তবুও চালের বাজারে উত্তাপ
  • আইনুন নিশাতের চোখে ৫ করণীয়
  • অদৃশ্য গল্পের পথ ধরে অভিযাত্রা