ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধ্রুব
Published: 24th, May 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থী হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ওই শিক্ষার্থীর নাম এ আর ধ্রুব। তিনি রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর এখন তার নাম আব্দুর রহমান ধ্রুব।
শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মাধ্যমে তিনি তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার বিষয়টি জানান।
আব্দুর রহমান ধ্রুব জানায়, তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে। তিনি ঢাকা দায়রা জজ থেকে হলফনামার মাধ্যমে তার নাম পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক। আমি আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম ও ক্ষমতাবান। আমি জাতিতে হিন্দু ধর্মালম্বী ছিলাম। যদিও হিন্দু গোত্রে আমার জন্ম হয়েছে কিন্তু আমি স্কুলে অধ্যায়ণকাল থেকেই হিন্দু ধর্মের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয় এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাস সৃষ্টি হয়। আমি হিন্দু পরিবারের সন্তান হয়েও আমার অনেক মুসলমান বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে অধিক উঠা বসা এবং চলাফেরা করেছি। তারপর ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অব্যাহত যাতায়াত চলতে থাকে বিধায় হিন্দু ধর্মের সঙ্গে আমার দুরত্ব তৈরি হয়। হিন্দু ধর্মের নিয়মকানুন আমার কাছে ভাল লাগে না। আমি ইসলামী বই-পুস্তক ও হিন্দু ধর্মাবলীরবই পুস্তক পড়ে অনেক ভেবে চিন্তে দেখেছি যে, ইসলাম ধর্ম হল একটি পূর্ণাঙ্গ ইহকাল ও পরকালের ধর্ম ইসলাম ধর্মের মধ্যে পার্থিব শান্তি ও কল্যাণ রয়েছে।’
ধ্রুব নিজের দীর্ঘ আত্মঅনুসন্ধান ও মানসিক সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বলেন, তিনি ঢাকা দায়রা জজ আদালত থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। তার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সংবিধানসম্মত অধিকার বলেও তিনি জানিয়েছেন। সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা সত্য খুঁজছেন, আমি শুধু বলব—একবার কুরআন পড়ুন খোলা মন নিয়ে। সত্য চাইলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পথ দেখাবেন। আমি সেই পথেই শান্তি পেয়েছি।’
ধ্রুব জানান, বহুদিন ধরে তিনি মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন এবং জীবনের নানা সংকটে পড়েছিলেন। সেই সময়গুলোতে তিনি একাধিকবার জীবনের আশা হারিয়ে ফেললেও, প্রতিবারই এক অদৃশ্য শক্তি তাকে রক্ষা করেছে বলে জানান তিনি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করতে শুরু করেন, যার উত্তর তিনি খুঁজে পান ইসলাম ধর্মে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবারহীন ১২ বন্ধুর এসএসসি জয়
কেউ হারিয়ে যায় রেলস্টেশনের ভিড়ে, কেউ অবহেলায় ঘর ছেড়েছে শিশুকালে, কেউবা জানেই না তার শিকড় কোথায়। কখনো নিকটতম স্বজনের স্নেহের পরশ পাবার সৌভাগ্যও হয়নি তাদের। নেই প্রতিবেশি, নেই পরিচিত কেউ। পরিবারহীন এমন ১২ বন্ধু এবার এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সবার স্বপ্ন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।
অনিশ্চিত পথের জীবন থেকে উঠে আসা এই ১২ জন কিশোর হলেন- কবির হোসেন হৃদয়, সাব্বির হোসেন, সফিকুল ইসলাম, পারভেজ রানা, আব্দুল মজিদ, সুজন আলী, রাকিবুল হাসান, বরজুল রহমান বায়েজিদ, তাপস চন্দ্র রায়, জিহাদ মিয়া, আল আমিন ও হৃদয় কুমার।
ছোট থেকে তারা বেড়ে উঠেছেন পঞ্চগড়ের ‘আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে’। এ বছর পঞ্চগড় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তারা। এসএসসির সফলতায় তাদের যেন বাধভাঙা উচ্ছ্বাস, চোখে নতুন জীবন সাজানোর স্বপ্ন। তাদের এই অর্জন প্রমাণ করেছে- ভালোবাসা, যত্ন আর সুযোগ পেলে যেকোনো শিশুই ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এখন তাদের মতো স্বপ্ন বুনছেন নগরীতে থাকা আরো ১৬০ জন মা-বাবাহীন শিশু।
আরো পড়ুন:
পটুয়াখালীতে ৪ বিদ্যালয়ে পাস করেনি কেউ
কাদির মোল্লা স্কুলের ৩২০ শিক্ষার্থীর সবার জিপিএ-৫ অর্জন
আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীটি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জলাপাড়া গ্রামে অবস্থিত। অনাথ, ছিন্নমুল এবং বঞ্চিত ও হারিয়ে যাওয়া পথশিশুদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি।
জিপিএ- ৪ দশমিক ৯৬ অর্জন করেছেন কবির হোসেন হৃদয়। তার খুব ছোটবেলায় বাবা রিয়াজ ও মা রোকেয়ার বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে অবহেলার শিকার হয়ে পড়ে হৃদয়। এক পর্যায়ে মাত্র ৫ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে পালিয়ে এসে পথশিশুর পরিচয়ে জীবন শুরু করেন। ২০১৪ সালে কোনো এক রেলস্টেশন থেকে সমাজকর্মীর মাধ্যমে এই শিশু নগরীতে ঠাঁই হয় তার। বাড়ি ‘নারায়ণগঞ্জ’- এটুকুই মনে আছে হৃদয়ের। প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা-মায়ের কাছে ফেরার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তার।
জিপিএ-৪ দশমিক ৮২ পাওয়া আব্দুল মজিদ জানান, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের তুষভান্ডারে তার বাড়ি। বাবা-মা, পরিবার সবই আছে তার। খুব ছোটবেলায় পরিবার থেকে হারিয়ে গেলে ঠাঁই হয় এখানে। পরবর্তীতে পরিবারের সন্ধান মিললেও এখানেই থেকে যান। তিনি বলেন, ‘‘শুরুর দিকে খারাপ লাগলেও এখন ভালো আছি। এটাই আমার বড় ঠিকানা। এসএসসি পাস করবো- এটা ছিল স্বপ্নের মতো। পাস করেছি, এই অনুভুতি বুঝাতে পারব না। পড়ালেখা শেষ করে ভালো কিছু করতে চাই।’’
জিপিএ-৪ দশমিক ৫৪ পেয়েছেন আব্দুল মজিদও। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাড়ি দিনাজপুরে এতটুকুই জানি। ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি। এরপর ঠাঁই হয় এখানে। এখানে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে, ষষ্ঠ শ্রেণিত ভর্তি হই পাসের বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই এবং এ বছর এসএসসি পাস করি। ভালো রেজাল্ট করেছি, সামনে আরো ভালো করতে চাই।’’
সাব্বির হোসেনের রেজাল্ট জিপিএ-৪ দশমিক ৭৫। খুব ছোটবেলায় পরিবার থেকে নিখোঁজ হওয়া এই কিশোর জানে না তার বাড়ি কোথায়। তার শুধু মনে আছে- বাবার নাম মারুফ, মায়ের নাম ছবি আক্তার। তিনি বলেন, ‘‘কখনো কারো আদর স্নেহ পাইনি। আত্মীয় স্বজন কেউ আছেন কি-না তাও জানি না। এই শিশু নগরীই আমাদের ঠিকানা। এখানকার স্যারেরাই আমাদের অভিভাবক।’’
জিপিএ- ৪ দশমিক ৫০ পাওয়া সফিকুল ইসলামের মায়ের নাম সুখী আক্তার। কিন্তু মা-ছেলে দুজনই সুখহীন। সফিকুলও জানে না তার বাড়ির ঠিকানা। শুধু মনে আছে, বাবার নাম আব্দুস সালাম, মা সুখী আক্তার। মা-বাবাকে খুঁজে পাবার প্রবল আকাঙ্ক্ষা সফিকুলের। মা সুখী আক্তারকে দেখতে চান প্রকৃত সুখী হিসেবেই।
একই রকম গল্প জিপিএ- ৪ দশমিক ২১ পাওয়া পারভেজ রানারও। শুধু মনে আছে, তার বাবার নাম হারুন, মা পারুল। খুব ছোট বেলায় পরিবার থেকে নিখোঁজ হলে সমাজকর্মীর মাধ্যমে এখানে ঠাঁই হয় তার।
সুজন আলী পেয়েছে জিপিএ- ৪ দশমিক ১৪। তিনি জানান, বাবা আব্দুল হামিদ ও মা আম্বিয়া খাতুনের সঙ্গে কোনো এক রেলস্টেশনে গিয়েছিলেন। সেখানে ভিড়ের মধ্য থেকে হারিয়ে যান তিনি। শুধু মনে আছে ভৈরব কিশোরগঞ্জে তাদের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘‘বাবা-মার কথা খুব মনে পড়ে। জানি না কখনো তাদের কাছে ফিরে যেতে পারব কি-না!’’
জিপিএ-৩ দশমিক ৬৮ পাওয়া তাপস চন্দ্র রায় কখনো বাবাকে দেখেননি। তার জন্মের পরপরই নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন বাবা সুকুমার রায়। বেঁচে আছেন কি-না তাও জানেন না। তাদের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে, মায়ের নাম শিঞ্জিবালা। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে তার।
আহছানিয়া মিশন শিশু নগরী কর্তৃপক্ষ জানান, বিভিন্ন বয়সি ১৬০ জন শিশু রয়েছে এখানে। এই ১২ জনের মতো প্রত্যেকেরই গল্প হৃদয়বিদারক। অনেকে রয়েছে পরিবার থেকে হারিয়ে যাওয়া। জানে না নিজের পরিচয়। আবার কারো বাবা নেই, কারো মা নেই। এমনও আছে কারো বাবা-মা কেউ নেই। তবে এখানে স্বাচ্ছন্দ্যেই থাকছে তারা। সময়মত পড়ালেখা, বাকিসময় খেলাধুলা আর আনন্দ বিনোদনে পার করে তারা।
শিশু নগরীর শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম জানান, শিশুদের এখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। এরপর তারা মাধ্যমিকে স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হয়। সদ্য এসএসসি পাস করা ১২ জনও এখান থেকে প্রাথমিক শেষ করেছিল। শিশুদের যাবতীয় খরচবহনসহ মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে ঢাকা আহছানিয়া মিশন।
শিশু নগরীর কৃষি কর্মকর্তা সেলিম প্রধান জানান, বিভিন্নভাবে বঞ্চিত শিশুদের এখানে ঠাঁই হয়। শুরুর দিকে শিশুরা থাকতে না চাইলেও একটু বড় হওয়ার পর তারা অনেক কিছু বুঝতে পারে। তারা বুঝতে পারে এটাই তাদের মূল ঠিকানা। এখানে শিশুরা নিজের বাড়ির মতই থাকে, পড়ালেখা করে। এ পর্যন্ত এখানে থাকা ২৪ জন এসএসসি পাস করেছে।
তিনি আরো জানান, আহছানিয়া মিশনের উদ্দেশ্য হলো- এই শিশুদের ১৮ বছর পূর্ণ হলে কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সদ্য এসএসসি পাসদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে ঢাকা আহছানিয়া মিশন।
আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর সেন্টার ম্যানেজার দীপক কুমার রায় বলেন, ‘‘অন্ধকারে পা বাড়ানো শিশুদের আলোর পথে নিয়ে আসে আহছানিয়া মিশন। তাদের সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এই শিশু নগরী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর ১২ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সবার ভালো ফলাফল করেছে, এটা একটা বড় অর্জন বলে মনে করি। এখানে থাকা অন্য শিশুরাও ক্রমান্বয়ে সুফল বয়ে আনবে।’’
ঢাকা/বকুল