পরীক্ষায় গণিতে ১ পেয়েছিলাম : জ্যাক মা
Published: 10th, July 2025 GMT
আমি যেটা ভাবি, সেটাই যে সব সময় ঠিক তা নয়। তরুণদের আমি কিছু শেখাতে চাই না। কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, আমি মনে করি এই পরামর্শ তাদের প্রয়োজন নেই। আমি বরং তোমাদের আমার কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলব, স্রেফ একজন বড় ভাইয়ের মতো।
১৫ বছর আগে আমি ব্যবসা শুরু করেছি। প্রথমত কখনোই ভাবিনি, এ রকম একটা মঞ্চে নিজের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলার সুযোগ হবে। যখন আমি ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার ২৪ জন বন্ধুকে বাসায় নিমন্ত্রণ করেছিলাম। পাক্কা দুই ঘণ্টা আমার ভাবনাটা ওদের বোঝানোর পর আমি বুঝতে পারলাম, ওরা কিছুই বোঝেনি! ২৪ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন আমার পাশে থাকতে রাজি হয়েছিল।
আজকালকার তরুণদের যেসব যোগ্যতা থাকে, আমার সেসবের কিছুই ছিল না। লোকে আমাকে বলত, ‘কী যোগ্যতা আছে তোমার? তুমি কখনো অ্যাকাউন্টিং শেখোনি, ম্যানেজমেন্ট শেখোনি। এমনকি কম্পিউটার সম্পর্কেও তেমন কিছু জানো না। তুমি কেন ব্যবসা করবে?’
সবাই জানে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবার গণিতে আমি ১ পেয়েছিলাম। তিনবার পরীক্ষা দিয়েও ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাইনি। শেষ পর্যন্ত যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, সেটার তেমন কোনো নাম ছিল না—হ্যাংঝোউ নরমাল ইউনিভার্সিটিকে তখন ‘চতুর্থ শ্রেণির’ বিশ্ববিদ্যালয় ধরা হতো। কিন্তু এখন অনুভব করি, হ্যাংঝোউ আমার কাছে হার্ভার্ডের চেয়েও বড়!
এসবই প্রমাণ করে, ব্যবসা করার তেমন কোনো যোগ্যতা আমার ছিল না। যারা শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে, অনেক সময় তাদের জন্যই উদ্যোক্তা হওয়া সহজ।
সে জন্যই আমাদের মতো কিছু মানুষ, যাদের অন্য অনেক কিছু করার যোগ্যতা নেই, তারা উদ্যোক্তা হয়। অনেকে ভেবেছিল আমরা ভাগ্যক্রমে সাফল্য পেয়ে গেছি। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। ১৫ বছর ধরে আমরা টিকে আছি। এটা ঠিক আলিবাবা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে চার বছর আমি চায়না ইয়েলো পেজেস-এ কাজ করেছি। বৈদেশিক বাণিজ্য ও অর্থনীতি মন্ত্রণালয়েও ছিলাম প্রায় ১৩ মাস। আমি যে পরিমাণ ভুল করেছি, তা তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না।
আরও পড়ুনমেডিটেশনের শক্তি জানুন০৫ এপ্রিল ২০২৫১৮ জন সহপ্রতিষ্ঠাতাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাসায় আলিবাবার যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেদিন আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলেছিলাম, আমরা যদি সফল হই, এর অর্থ হলো চীনের শতকরা আশি ভাগ তরুণের পক্ষেই সফল হওয়া সম্ভব। কেউ আমাদের পেছনে বিনিয়োগ করেনি। না ছিল ক্ষমতা, না কোনো সামাজিক অবস্থান। সম্বল বলতে তেমন কিছুই ছিল না। আমরা ১৮ জন ৫ লাখ আরএমবি করে বিনিয়োগ করেছিলাম। ঠিক করেছিলাম, অন্তত ১২ মাস এই টাকায় ব্যবসাটা চালিয়ে নেব। এর মধ্যে যদি কিছু আয় হয়, তবে ব্যবসা চলবে। নতুবা অন্য কিছু ভাবতে হবে। কিন্তু অষ্টম মাসেই আমাদের হাত খালি হয়ে গেল। আমাদের নিয়ে কারও কোনো আশা ছিল না।
স্পষ্ট মনে আছে, বর্তমান নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জো সাইকে নিয়ে যখন সিলিকন ভ্যালিতে গেলাম, ৩০ জন বিনিয়োগকারী আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা ছাড়া আর কারও কাছেই পরিকল্পনাটা ভালো মনে হচ্ছিল না। একটা পরিকল্পনা করাই মুখ্য নয়। মুখ্য হলো, তুমি যা করছ সেটার ওপর তোমার বিশ্বাস আছে কি না। আলিবাবার সঙ্গে এই যাত্রায় অনেকেই জেনেছে স্বপ্ন, সত্য আর কল্পনার মধ্যে পার্থক্য কী।
তরুণ বয়সে সবার একটা স্বপ্ন থাকে। অনেক মা-বাবা আমাকে বলেন, ‘জ্যাক, আমার ছেলে বা মেয়েটার স্বপ্ন কদিন পরপরই বদলে যাচ্ছে। আজ সে হতে চায় এক, কাল আরেক।’ আমি বলি এটাই তো স্বাভাবিক। কোনো স্বপ্ন না থাকার চেয়ে অন্তত কদিন পর পর স্বপ্ন বদল হওয়া ভালো। আমার ইচ্ছে ছিল পুলিশ হব কিংবা আর্মিতে যোগ দেব। এমনকি কেএফসিতে কাজের জন্যও আবেদন করেছিলাম। ২৪ জন আবেদনকারীর মধ্যে ২৩ জনই নিয়োগ পেয়েছিল। ১ জন পায়নি—সেই মানুষটা আমি। যখন পুলিশের চাকরির জন্য আবেদন করলাম, প্রতি ৫ জনে ৪ জন চাকরি পেয়েছিল, আমি পাইনি।
আরও পড়ুনচাকরির ইন্টারভিউয়ে জেফ বেজোস একটা উদ্ভট কিন্তু দুর্দান্ত প্রশ্ন করতেন, কী সেটা০৭ জুলাই ২০২৫স্বপ্ন থাকা ভালো। কিন্তু বাস্তবতা কী? বাস্তবতা হলো, একদল লোক ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা, অনুশীলন আর কার্যক্রম নিয়ে এগোতে এগোতে একসময় বুঝতে পারে, তারা সবাই আসলে একই লক্ষ্যের পেছনে ছুটছে। যখন আলিবাবার যাত্রা শুরু হয়, এটা স্বপ্ন বা কল্পনা কোনোটাই ছিল না। আমি এমন বহু মানুষ দেখেছি যারা কল্পনায় ডুবে থাকে। অবাস্তব, অসম্ভব সব কল্পনা। তবু তারা ভাবে যে অন্য সবাই ভুল, শুধু তারাই ঠিক। আলিবাবায় আমরা ১৮ জন মানুষ শুধু এটাই ঠিক করেছিলাম, আমরা আমাদের বিশ্বাসে অটল থাকব। চড়াই-উতরাইগুলো একসঙ্গে পাড়ি দেব। আমাদের স্বপ্ন বা কল্পনা ছিল না, ছিল আশা।
অতএব নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করো, তোমার যদি কোনো স্বপ্ন থাকে, তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণে অটল কি না। তোমার যদি কোনো লক্ষ্য থাকে, সেই লক্ষ্য পূরণের সাথি হতে তুমি আরও একদল মানুষকে আমন্ত্রণ জানাবে কি না। নিঃসঙ্গ যাত্রা খুবই ক্লান্তিকর। নিজের কাজটা ঠিকভাবে করলেই একটা ব্যবসা দাঁড়িয়ে যায় না। এর জন্য একদল মানুষের মধ্যে একটা ভালো বোঝাপড়ার দরকার হয়।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো.
সাইফুল্লাহ
সূত্র: অনুষ্ঠানের অফিশিয়াল ভিডিও
আরও পড়ুনফল যা-ই হোক সামনে তাকাও২২ জুলাই ২০১৭উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ল ম র জন য আল ব ব ত মন ক আম দ র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
আলোচিত স্কুলছাত্র জনি হত্যায় সাজু ৩ দিনের রিমান্ডে
হবিগঞ্জে আলোচিত স্কুলছাত্র জনি দাস হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাজু মিয়ার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অসীম কুমার দে কাকনের আদালত তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সাজুকে আদালতে নেয়া হলে একদল যুবক তার ওপর হামলা চালায়। তাৎক্ষণিক আইনজীবী ও আদালতে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে।
রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী কুতুব উদ্দিন জুয়েল জানান, গ্রেপ্তার সাজু মিয়ার আট দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আরো পড়ুন:
শ্রীপুরে স্কুলছাত্রকে অপহরণের অভিযোগে আটক ১
চট্টগ্রামে নালায় পড়া নিখোঁজ শিশু উদ্ধার, অবস্থা আশঙ্কাজনক
তিনি বলেন, ‘‘একদল যুবক আদালতে সাজু মিয়ার ওপর হামলা চালায়। তারা একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। আমি মনে করি, এটি বিচার কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র। এটি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। যদি একটি দুর্ঘটনা ঘটত, তবে একটি কলঙ্কের জন্ম দিত। এছাড়া পরিবেশও বিনষ্ট হতে পারত।’’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৩ জুলাই ভোররাতে হবিগঞ্জ শহরের দেয়ানতরাম সাহার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা নরধন দাসের বাড়িতে চুরি করতে যায়। এ সময় তার ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র জনি দাস ঘুম থেকে জেগে চোর দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করলে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে চোর পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় জনি দাসকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাজু মিয়াকে গ্রেপ্তার করলে নিহতের স্বজনরা হত্যাকারী হিসেবে তাকে শনাক্ত করেন। পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করে ৮ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শুনানি শেষে তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঢাকা/মামুন/বকুল