আমি যেটা ভাবি, সেটাই যে সব সময় ঠিক তা নয়। তরুণদের আমি কিছু শেখাতে চাই না। কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, আমি মনে করি এই পরামর্শ তাদের প্রয়োজন নেই। আমি বরং তোমাদের আমার কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলব, স্রেফ একজন বড় ভাইয়ের মতো।

১৫ বছর আগে আমি ব্যবসা শুরু করেছি। প্রথমত কখনোই ভাবিনি, এ রকম একটা মঞ্চে নিজের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলার সুযোগ হবে। যখন আমি ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার ২৪ জন বন্ধুকে বাসায় নিমন্ত্রণ করেছিলাম। পাক্কা দুই ঘণ্টা আমার ভাবনাটা ওদের বোঝানোর পর আমি বুঝতে পারলাম, ওরা কিছুই বোঝেনি! ২৪ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন আমার পাশে থাকতে রাজি হয়েছিল।

আজকালকার তরুণদের যেসব যোগ্যতা থাকে, আমার সেসবের কিছুই ছিল না। লোকে আমাকে বলত, ‘কী যোগ্যতা আছে তোমার? তুমি কখনো অ্যাকাউন্টিং শেখোনি, ম্যানেজমেন্ট শেখোনি। এমনকি কম্পিউটার সম্পর্কেও তেমন কিছু জানো না। তুমি কেন ব্যবসা করবে?’

সবাই জানে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবার গণিতে আমি ১ পেয়েছিলাম। তিনবার পরীক্ষা দিয়েও ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাইনি। শেষ পর্যন্ত যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, সেটার তেমন কোনো নাম ছিল না—হ্যাংঝোউ নরমাল ইউনিভার্সিটিকে তখন ‘চতুর্থ শ্রেণির’ বিশ্ববিদ্যালয় ধরা হতো। কিন্তু এখন অনুভব করি, হ্যাংঝোউ আমার কাছে হার্ভার্ডের চেয়েও বড়!

এসবই প্রমাণ করে, ব্যবসা করার তেমন কোনো যোগ্যতা আমার ছিল না। যারা শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে, অনেক সময় তাদের জন্যই উদ্যোক্তা হওয়া সহজ।

সে জন্যই আমাদের মতো কিছু মানুষ, যাদের অন্য অনেক কিছু করার যোগ্যতা নেই, তারা উদ্যোক্তা হয়। অনেকে ভেবেছিল আমরা ভাগ্যক্রমে সাফল্য পেয়ে গেছি। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। ১৫ বছর ধরে আমরা টিকে আছি। এটা ঠিক আলিবাবা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে চার বছর আমি চায়না ইয়েলো পেজেস-এ কাজ করেছি। বৈদেশিক বাণিজ্য ও অর্থনীতি মন্ত্রণালয়েও ছিলাম প্রায় ১৩ মাস। আমি যে পরিমাণ ভুল করেছি, তা তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না।

আরও পড়ুনমেডিটেশনের শক্তি জানুন০৫ এপ্রিল ২০২৫

১৮ জন সহপ্রতিষ্ঠাতাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাসায় আলিবাবার যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেদিন আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলেছিলাম, আমরা যদি সফল হই, এর অর্থ হলো চীনের শতকরা আশি ভাগ তরুণের পক্ষেই সফল হওয়া সম্ভব। কেউ আমাদের পেছনে বিনিয়োগ করেনি। না ছিল ক্ষমতা, না কোনো সামাজিক অবস্থান। সম্বল বলতে তেমন কিছুই ছিল না। আমরা ১৮ জন ৫ লাখ আরএমবি করে বিনিয়োগ করেছিলাম। ঠিক করেছিলাম, অন্তত ১২ মাস এই টাকায় ব্যবসাটা চালিয়ে নেব। এর মধ্যে যদি কিছু আয় হয়, তবে ব্যবসা চলবে। নতুবা অন্য কিছু ভাবতে হবে। কিন্তু অষ্টম মাসেই আমাদের হাত খালি হয়ে গেল। আমাদের নিয়ে কারও কোনো আশা ছিল না।

স্পষ্ট মনে আছে, বর্তমান নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জো সাইকে নিয়ে যখন সিলিকন ভ্যালিতে গেলাম, ৩০ জন বিনিয়োগকারী আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা ছাড়া আর কারও কাছেই পরিকল্পনাটা ভালো মনে হচ্ছিল না। একটা পরিকল্পনা করাই মুখ্য নয়। মুখ্য হলো, তুমি যা করছ সেটার ওপর তোমার বিশ্বাস আছে কি না। আলিবাবার সঙ্গে এই যাত্রায় অনেকেই জেনেছে স্বপ্ন, সত্য আর কল্পনার মধ্যে পার্থক্য কী।

তরুণ বয়সে সবার একটা স্বপ্ন থাকে। অনেক মা-বাবা আমাকে বলেন, ‘জ্যাক, আমার ছেলে বা মেয়েটার স্বপ্ন কদিন পরপরই বদলে যাচ্ছে। আজ সে হতে চায় এক, কাল আরেক।’ আমি বলি এটাই তো স্বাভাবিক। কোনো স্বপ্ন না থাকার চেয়ে অন্তত কদিন পর পর স্বপ্ন বদল হওয়া ভালো। আমার ইচ্ছে ছিল পুলিশ হব কিংবা আর্মিতে যোগ দেব। এমনকি কেএফসিতে কাজের জন্যও আবেদন করেছিলাম। ২৪ জন আবেদনকারীর মধ্যে ২৩ জনই নিয়োগ পেয়েছিল। ১ জন পায়নি—সেই মানুষটা আমি। যখন পুলিশের চাকরির জন্য আবেদন করলাম, প্রতি ৫ জনে ৪ জন চাকরি পেয়েছিল, আমি পাইনি।

আরও পড়ুনচাকরির ইন্টারভিউয়ে জেফ বেজোস একটা উদ্ভট কিন্তু দুর্দান্ত প্রশ্ন করতেন, কী সেটা০৭ জুলাই ২০২৫

স্বপ্ন থাকা ভালো। কিন্তু বাস্তবতা কী? বাস্তবতা হলো, একদল লোক ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা, অনুশীলন আর কার্যক্রম নিয়ে এগোতে এগোতে একসময় বুঝতে পারে, তারা সবাই আসলে একই লক্ষ্যের পেছনে ছুটছে। যখন আলিবাবার যাত্রা শুরু হয়, এটা স্বপ্ন বা কল্পনা কোনোটাই ছিল না। আমি এমন বহু মানুষ দেখেছি যারা কল্পনায় ডুবে থাকে। অবাস্তব, অসম্ভব সব কল্পনা। তবু তারা ভাবে যে অন্য সবাই ভুল, শুধু তারাই ঠিক। আলিবাবায় আমরা ১৮ জন মানুষ শুধু এটাই ঠিক করেছিলাম, আমরা আমাদের বিশ্বাসে অটল থাকব। চড়াই-উতরাইগুলো একসঙ্গে পাড়ি দেব। আমাদের স্বপ্ন বা কল্পনা ছিল না, ছিল আশা।

অতএব নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করো, তোমার যদি কোনো স্বপ্ন থাকে, তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণে অটল কি না। তোমার যদি কোনো লক্ষ্য থাকে, সেই লক্ষ্য পূরণের সাথি হতে তুমি আরও একদল মানুষকে আমন্ত্রণ জানাবে কি না। নিঃসঙ্গ যাত্রা খুবই ক্লান্তিকর। নিজের কাজটা ঠিকভাবে করলেই একটা ব্যবসা দাঁড়িয়ে যায় না। এর জন্য একদল মানুষের মধ্যে একটা ভালো বোঝাপড়ার দরকার হয়।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো.

সাইফুল্লাহ

সূত্র: অনুষ্ঠানের অফিশিয়াল ভিডিও

আরও পড়ুনফল যা-ই হোক সামনে তাকাও২২ জুলাই ২০১৭

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ল ম র জন য আল ব ব ত মন ক আম দ র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে সীতা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে বিগত এক মাস ধরে অবস্থান করছেন একদল বন্যহাতি। ১৭ (সতের) দলের এই বন্যহাতির তাণ্ডবে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান শ্রমিকদের ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত কাঁচা সড়ক। 

 এদের তাণ্ডবে বাগানের ২নং সেকশনে বসবাসকারী চা শ্রমিকরা এরইমধ্যে নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে কর্ণফুলি নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নিয়েছে। এই সেকশনে থাকা বহু ঘর হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওয়াগ্গা টি লিমিটেডের পরিচালক খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন, “হাতির তাণ্ডবে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানের নিজস্ব বোট চালক সানাউল্লাহর বসতবাড়ি। এসময় তিনিসহ তার স্ত্রী-সন্তানেরা ঘর হতে বের হয়ে কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।”

বোট চালক সানাউল্লাহ বলেন, “সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আমি হাতির গর্জন শুনতে পাই। এসময় একটি বড় হাতি আমার ঘর ভাঙার চেষ্টা চালায়। আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। সেসময় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ঘরের পেছন দিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বোটে করে এপারে চলে আসি।” 

চা বাগানের টিলা বাবু চাথোয়াই অং মারমা বলেন, “বিগত এক মাস ধরে ১৭টি হাতির একটি দল বাগানে অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে দলটি সীতা পাহাড়ে চলে গেলেও হঠাৎ বাগানে চলে এসে আসে এবং বাগানের গাছপালা, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের চা শ্রমিকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।”

ওয়াগ্গা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী বলেন, “বিগত এক মাস ধরে হাতির একটি দল ওয়াগ্গা চা বাগানে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা সতেরো ১৭টি। সম্প্রতি দুটি নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। শিশু হস্তী শাবককে আশীর্বাদ করার জন্য সীতা পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে আরো একদল হাতি যোগদান করেছে।” 

হাতি খুবই শান্তিপ্রিয় জীব। নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। অনেকে বলে থাকেন, মামারা বেরসিক বাদ্য বাজনা, বাঁশির সুর, গলাফাটা গান, গোলা বারুদ, ড্রামের শব্দ পছন্দ করে না। তারা কোলাহল এড়িয়ে চলে। 

গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্বচক্ষে দেখা হলো। আমাদের টিলা বাবু চাই থোয়াই অং মারমা শ্রমিকদের নিয়ে পাহাড়ের উপর বাঁশির সুর তুলেছে। সুর ও বাদ্য বাজনা এড়িয়ে মামারা (হাতি) চা বাগান পেরিয়ে সদলবলে বাঁশবনের গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে গেলো। হয়তো আবার ফিরে আসবে।

কাপ্তাই বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসার ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, “দিন দিন হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার ফলে হাতি খাবারের সন্ধানে প্রায়ই লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে। আমাদের উচিত হাতির আবাসস্থল ধ্বংস না করা।”

ঢাকা/রাঙামাটি/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে নোয়াখালীতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
  • ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব