ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সক্ষমতার চেয়ে ৩৫ হাজার টন বেশি তেল পরিশোধন
Published: 1st, July 2025 GMT
দেশের একমাত্র সরকারি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। এই পরিশোধনাগারে জ্বালানি তেল শোধনের সক্ষমতা বছরে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টন। তবে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সক্ষমতার চেয়ে ৩৫ হাজার টন বেশি তেল শোধন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগের ১০ বছরে কোম্পানিটি মাত্র একবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছিল।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরের পতেঙ্গায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইআরএলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান, ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টন তেল শোধন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে এত বেশি তেল পরিশোধন করা সম্ভব হলো।
কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ লাখ ৭৯ হাজার টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭৭ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫ লাখ ১৩ হাজার টন ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ লাখ ৭৯ হাজার টন তেল পরিশোধন করা হয়েছে।
ইআরএলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নাসিমুল গনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সব পক্ষের প্রচেষ্টায় ও তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে তেল সরবরাহ করা গেছে। ৫৭ বছরের পুরোনো এ পরিশোধনাগারে সফলতার সঙ্গে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলো।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। গতকাল প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। ফলে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে খুব দ্রুত ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে।
মহেশখালীতে পরিশোধনাগার নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বিপিসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মহেশখালীতে ১০ লাখ টন পরিশোধন ক্ষমতার একটা শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করছে। এ জন্য সেখানে জায়গা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পায়রা বন্দরেও একটি শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকারি তেল পরিশোধনাগার ইআরএল তৈরি করা হয় ১৯৬৮ সালে। বিপিসির মাধ্যমে আনা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল তারা শোধন করে। এলপিজি, পেট্রল, অকটেন, কেরোসিন, ডিজেল, ফার্নেসসহ ১৪ রকমের তেল উৎপাদন করে ইআরএল। ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা গেলে পরিশোধনের ক্ষমতা আরও ৩০ লাখ টন বাড়বে।
তবে জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা না বাড়ায় বেশি পরিমাণে ডিজেল আমদানি করতে হয়। এতে প্রতিবছর বাড়তি ডলার খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৪ বছরেও তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়েনি। এর মধ্যে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নেওয়া প্রকল্পটি ১৩ বছরেও অনুমোদিত হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ২৪ কোটি ডলার সাশ্রয় হতো। এখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেই দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত বলেন, অনেক ধাপ পেরিয়ে তেল পরিশোধন করতে হয়। গত অর্থবছরে সব কটি ধাপ ঠিকভাবে পার করে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা গেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ জ র টন প রকল প ক ষমত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
শীতের আগাম সবজি হিসেবে বাজারে এসেছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। মৌসুমের শুরুতে দাম স্বাভাবিকভাবে কিছুটা বেশি থাকলেও সরবরাহ বাড়ছে। ফলে দাম ইতিমধ্যে কিছুটা কমেছে। খুচরা পর্যায়ে দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি পিছ ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৪০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
সরবরাহ বাড়তে থাকায় বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এসব সবজির দাম আরও কমবে। ভরা মৌসুমে খুচরা পর্যায়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম কমে ১০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে নেমে আসে।
সরকারি তথ্য বলছে, দেশে গত তিন বছরে ফুলকপির উৎপাদন বেড়েছে ১৪ শতাংশ এবং বাঁধাকপির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। উৎপাদন বাড়লেও মৌসুমের শুরুতে সবজির দাম কিছুটা বেশি থাকে। প্রথম দিকে যেসব ফসল আসে, সেগুলো সাধারণত আকারে ছোট হয়। তবে বাজারে সরবরাহও তুলনামূলকভাবে কম থাকা এবং আগাম সবজির বিষয়ে মানুষের আগ্রহ থাকায় দাম বাড়তি থাকে।
ফুলকপি শীতের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। রান্না তরকারি, ভাজি, স্যুপ, হালকা সেদ্ধ কিংবা সালাদ হিসেবে এটি খাওয়া যায়। বাঁধাকপিও ভাজি, স্যুপ ও সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। শীত মৌসুমে স্বাদের দিক থেকেও এ দুটি সবজি অনেকেরই পছন্দ।
উৎপাদন কেমনকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে দেশে ১৩ লাখ ১২ হাজার টন ফুলকপি উৎপাদন হয়েছিল। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টন হয়। সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ফুলকপি উৎপাদন আরও বেড়ে ১৫ লাখ টনে ওঠে।
অন্যদিকে ২০২২–২৩ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৮০ হাজার টন বাধাঁকপি উৎপাদন হয়। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে ১৪ লাখ ২৫ হাজার টন হয়। গত অর্থবছরে তা আরও বেড়ে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার টন হয়েছে। অর্থাৎ গত কয়েক বছর ধরে টানা ফুলকপি ও বাঁধাকপির উৎপাদন বাড়ছে।
বাঁধাকপির চেয়ে বেশি জমিতে ফুলকপি চাষ হয়। যেমন, গত অর্থবছরে ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছিল, যেখানে বাধাঁকপি চাষ হয়েছিল ৪৪ হাজার হেক্টরে। উৎপাদনের দিক থেকেও ফুলকপি এগিয়ে।
ফুলকপি-বাঁধাকপি চাষ ও ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে গত দুই বছরে ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর তাঁরা আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে এই সবজি দুটির চারা লাগিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যাশা, এ বছর শীত মৌসুমেও ভালো ফলন ও দাম পাওয়া যাবে।
এখন আসছে আগাম ফলনকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সম্প্রসারণ) এইচ এম মনিরুজ্জামান জানান, সাধারণত আগস্টের শেষ কিংবা সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে বারি (শীতকালীন) ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ শুরু হয়। প্রথমে বীজ বপন করে চারা গাছ তৈরি করা হয়। ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর সেই চারা রোপণ করা হয়। সাধারণত চারা লাগানোর পরে তা বিক্রির উপযোগী হতে ৮০ থেকে ৯০ দিন সময় লাগে। অনেক সময় বাজারে দাম বাড়তি থাকলে ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও (ছোট অবস্থায়) ফসল তুলে বিক্রি করেন কৃষকেরা।
আগস্টের শেষ কিংবা সেপ্টেম্বরে যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হয়, সেগুলো হচ্ছে আগাম ফসল। বর্তমানে এই আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে আসছে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এসব আগাম সবজি বাজারে আসবে। এরপর মৌসুমের মূল সবজি আসা শুরু করবে।
সাধারণত মৌসুমের শুরুতে কোনো সবজি এলে (আগাম) সেগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এতে কৃষক, আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ী—সবাই লাভবান হন। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবারও কৃষকেরা আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন।
আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারে কিছুটা ছোট হয়। বড় হওয়ার আগেই কৃষকেরা এগুলো তুলে বাজারে আনেন। যেমন, বর্তমানে যেসব ফুলকপি বাজারে আসছে, সেগুলোর ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মধ্যে। ভরা মৌসুমে এক থেকে দেড় কেজি কিংবা তারও বেশি ওজনের ফুলকপি বাজারে আসে। বর্তমানে যেসব বাঁধাকপি আসছে, সেগুলোর ওজন ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের মধ্যে। পরবর্তী সময়ে দেড়–দুই কেজি আকারের বাঁধাকপি বাজারে আসবে।
চাষ কোথায় বেশিকৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলা থেকে ফুলকপি ও বাঁধাকপির সরবরাহ বেশি আসছে। ভরা মৌসুমে এসব এলাকার পাশাপাশি মানিকগঞ্জ ও সাভারসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও সবজি দুটির সরবরাহ আসবে।
বিভিন্ন প্রজাতির ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে পাওয়া যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ফুলকপির ভালো জাতগুলোর মধ্যে বারি ফুলকপি-১ (রুপা), বারি ফুলকপি-২, ৩ ও স্নো হোয়াইট উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া হোয়াইট ফ্লাশ ২০২০ ও অটাম জায়ান্ট হাইব্রিড জাতও রয়েছে। বাঁধাকপির জাতের মধ্যে আছে বারি বাঁধাকপি-১ ও বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত)। আইপিএসএ বাঁধাকপি-১ গ্রীষ্মকালেও চাষ হয়।
ঢাকায় সরবরাহ ও পাইকারি দামগত শুক্র ও শনিবার রাতে কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে ফুলকপি ও বাঁধাকপি আসছে।
কারওয়ানবাজারের আড়তদার আবদুল কাদির ভূইয়া প্রতিবছর শীত মৌসুমে ফুলকপির ব্যবসা করেন। তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাপারীর কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে প্রতি পিছ ফুলকপি কিনছেন তাঁরা। এরপর সেগুলো ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। এই ফুলকপি আরও এক-দুই হাত ঘুরে খুচরায় ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপির দামও অনেকটা এমন।
অবশ্য অনেক কৃষক সরাসরি ঢাকায় ফুলকপি ও বাঁধাকপি নিয়ে আসছেন। যেমন, যশোর সদরের নোঙ্গরপুর গ্রামের কৃষক আবদুস সাত্তার এ বছর সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে দেড় বিঘা জমির আগাম বাঁধাকপি কেটে বিক্রি করেছেন। ব্যাপারীদের মাধ্যমে বিক্রি করলে দাম পাওয়া যায় কম। সে কারণে গত মঙ্গলবার নিজেই ট্রাক ভাড়া করে বাঁধাকপি কারওয়ান বাজারে নিয়ে আসেন।
আবদুস সাত্তার বলেন, কারওয়ান বাজারে প্রতি পিছ বাঁধাকপি ৩৩ টাকা করে বিক্রি করেছি। এর সঙ্গে ট্রাক ভাড়া, শ্রমিক মজুরি যোগ হবে। তবে ব্যাপারীদের মাধ্যমে বিক্রি করলে দাম পাওয়া যেত মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা। সব মিলিয়ে আগাম বাঁধাকপি বিক্রি করে এখন ভালো দাম পাচ্ছেন তিনি। তাঁর আশা, ভরা মৌসুমেও মোটামুটি ভালো দাম থাকলে এ বছর মুনাফা করতে পারবেন; না হয় চাষের খরচ উঠে আয়-ব্যয় সমান সমান থাকবে।