দেশের একমাত্র সরকারি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। এই পরিশোধনাগারে জ্বালানি তেল শোধনের সক্ষমতা বছরে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টন। তবে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সক্ষমতার চেয়ে ৩৫ হাজার টন বেশি তেল শোধন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগের ১০ বছরে কোম্পানিটি মাত্র একবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছিল।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরের পতেঙ্গায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইআরএলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান, ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.

শরীফ হাসনাত প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টন তেল শোধন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে এত বেশি তেল পরিশোধন করা সম্ভব হলো।

কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ লাখ ৭৯ হাজার টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭৭ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫ লাখ ১৩ হাজার টন ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ লাখ ৭৯ হাজার টন তেল পরিশোধন করা হয়েছে।

ইআরএলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নাসিমুল গনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সব পক্ষের প্রচেষ্টায় ও তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে তেল সরবরাহ করা গেছে। ৫৭ বছরের পুরোনো এ পরিশোধনাগারে সফলতার সঙ্গে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলো।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। গতকাল প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। ফলে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে খুব দ্রুত ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে।

মহেশখালীতে পরিশোধনাগার নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বিপিসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মহেশখালীতে ১০ লাখ টন পরিশোধন ক্ষমতার একটা শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করছে। এ জন্য সেখানে জায়গা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পায়রা বন্দরেও একটি শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

সরকারি তেল পরিশোধনাগার ইআরএল তৈরি করা হয় ১৯৬৮ সালে। বিপিসির মাধ্যমে আনা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল তারা শোধন করে। এলপিজি, পেট্রল, অকটেন, কেরোসিন, ডিজেল, ফার্নেসসহ ১৪ রকমের তেল উৎপাদন করে ইআরএল। ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা গেলে পরিশোধনের ক্ষমতা আরও ৩০ লাখ টন বাড়বে।

তবে জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা না বাড়ায় বেশি পরিমাণে ডিজেল আমদানি করতে হয়। এতে প্রতিবছর বাড়তি ডলার খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৪ বছরেও তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়েনি। এর মধ্যে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নেওয়া প্রকল্পটি ১৩ বছরেও অনুমোদিত হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ২৪ কোটি ডলার সাশ্রয় হতো। এখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেই দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত বলেন, অনেক ধাপ পেরিয়ে তেল পরিশোধন করতে হয়। গত অর্থবছরে সব কটি ধাপ ঠিকভাবে পার করে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা গেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ জ র টন প রকল প ক ষমত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দায়বদ্ধ সিটি ব্যাংক

আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা শুধু আর্থিক প্রবৃদ্ধির অংশীদার নই, বরং একটি সবুজ, নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্যও দায়বদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান সিটি ব্যাংক। এই দায়িত্ববোধ থেকেই সিটি ব্যাংক কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সামাজিক উন্নয়নের পথে একের পর এক সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। 

সিটি ব্যাংক নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি স্বল্প কার্বন নির্গমনকারী, পরিবেশগত ও সামাজিকভাবে টেকসই অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য সিটি ব্যাংক পুঁজি সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত
অবক্ষয়ের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায়ও সহায়তা করবে।

আমরা গর্বের সঙ্গে জানাতে চাই, সিটি ব্যাংক দেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। পাশাপাশি ২০২৪ সালে আমরা ১৩০ মেগাওয়াটের বেশি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছি। পরিবেশবান্ধব প্রকল্প অর্থায়নে আমাদের কার্যক্রমের আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো যশোর পৌরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে অর্থায়ন, যেখানে বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদিত হচ্ছে। 

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২৪ সালে আমরা ১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকার বেশি অর্থায়ন করেছি, যার মাধ্যমে সরাসরি ১ লাখ ৮ হাজার ৮৮ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। কারখানার বর্জ্য থেকে পরিবেশদূষণ রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় আমরা কম খরচে গ্রিন ঋণ প্রদান করছি। এই অর্থায়ন দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় আধুনিক বায়ু পরিশোধনব্যবস্থা এবং বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপনের জন্য। 

আমরা ২০২৪ সালে নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১ হাজার ৯১২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছি, যা নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া সিটি ব্যাংকে নারীদের জন্য নিবেদিত একটি বিশেষ ব্যাংকিং বিভাগ রয়েছে, যার নাম সিটি আলো। এই বিভাগ নারীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং সেবা প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন অ-আর্থিক সুবিধাও দিয়ে থাকে। যেমন বিশেষ দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং পেশাগত ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ। 

সিটি ব্যাংকের ন্যানো-লোন (সম্পূর্ণ কাগজবিহীন, পরিবেশবান্ধব ডিজিটাল ঋণ) আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে এগিয়ে নিচ্ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধার আওতায় মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার ১৬৭ জন গ্রাহকের মধ্যে ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

আমাদের সব গ্রাহককে বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিমালা (ইসিআর-২০২৩), বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবেশগত ও সামাজিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নির্দেশনা (ইএসআরএম) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) পরিবেশ ও সামাজিক নীতিমালা মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করি, ব্যাংকের অর্থায়ন করা প্রতিটি প্রকল্প পরিবেশবান্ধব ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল।

করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের মাধ্যমে গত বছর আমরা ৭৯ হাজার ৪৯ জন উপকারভোগীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। আমাদের উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন উদ্যোগ এবং সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা। টেকসই বিদ্যুৎ শক্তির প্রসারে আমরা সম্প্রতি আয়োজন করেছি দেশের প্রথম নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রদর্শনী। সিটি ব্যাংক তার জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশবিষয়ক অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে প্রথম দেশি ব্যাংক হিসেবে জাতিসংঘের নেতৃত্বে গঠিত বৈশ্বিক উদ্যোগ-নেট-জিরো ব্যাংকিং অ্যালায়েন্স এ যুক্ত হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রতি অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে সিটি ব্যাংক ২০২২ সাল থেকে নিয়মিত সাসটেইনেবিলিটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।

মোহাম্মদ ফিরোজ আলম
চীফ রিস্ক অফিসার (সিআরও), সিটি ব্যাংক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দায়বদ্ধ সিটি ব্যাংক
  • গত অর্থবছরে আরও সাত দেশে ওয়ালটনের ব্যবসা সম্প্রসারণ
  • ১২ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি
  • ১৬০ কোটি টাকার গৃহকর নিয়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে যৌথ কমিটি
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি ক্রয়াদেশ অনেক পোশাক কারখানায়
  • অর্ধবার্ষিকে মুনাফা থেকে লোকসানে এসকে ট্রিমস
  • ১২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এল ১০৫ কোটি ডলার
  • উড়োজাহাজে ব‍্যবহৃত তেলের দাম আবার বাড়ল
  • আয় বেশি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ট্রেনে, কক্সবাজার রুটে কত
  • রপ্তানি-প্রবাসী আয় ও রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বস্তি এসেছে