ইয়েমেনের সানা অঞ্চলে এক ধনী লোক বসবাস করতেন। তিনি ছিলেন বেশ দানশীল ও আল্লাহওয়ালা। তাঁর বিশাল এক বাগান ছিল। বাগান থেকে যে ফলমূল ও শস্য উৎপন্ন হতো, তিনি তা থেকে গরিব-মিসকিনদের দান করতেন।
একদিন তিনি ইন্তেকাল করেন। এরপর বাগানের মালিকানা সন্তানদের হাতে চলে যায়।
কিন্তু তাঁরা মোটেও বাবার মতো উদার মনের ছিলেন না। তাঁরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলেন, ‘বাগান থেকে যে পরিমাণ ফলমূল আসে, এতে তো আমাদের সংসারই চলে না, গরিব-মিসকিনদের দান করব কোত্থেকে?’
সেদিন রাতে তাঁরা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তাঁদের বাগানের ওপর আল্লাহর আজাব নেমে আসে। মুহূর্তেই পুরো বাগান পুড়ে ছারখার হয়ে যায়।আরও পড়ুনকোরআনের সবচেয়ে চমৎকার কাহিনি১৭ মে ২০২৫তাঁরা নিয়ত করে একদম সকাল-সকাল বাগানে গিয়ে সব ফলমূল পেড়ে আনবেন, গরিব-মিসকিনরা যেন মোটেও টের না পান, তাহলে তাঁরা এসে ভিড় জমাবেন। কিন্তু তাঁরা যখন এই কথা বলেন, ‘একদম সকালেই বাগানে যাব’, তখন ‘ইনশাআল্লাহ’ বলেননি।
সম্পদের মোহে তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন সবকিছুর মালিক আল্লাহ তাআলা। ভাবখানা এমন ছিল, ‘আমাদের সম্পদ আমরাই আনতে যাব, এখানে আল্লাহর নাম নেওয়ার কী আছে।’ কিন্তু তাঁরা জানতেন না তাঁদের ভাগ্যে কী লেখা আছে।
সেদিন রাতে তাঁরা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তাঁদের বাগানের ওপর আল্লাহর আজাব নেমে আসে। মুহূর্তেই পুরো বাগান পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। বোঝারই উপায় নেই গতকাল এখানে এক সবুজ-শ্যামল মনোরম বাগান ছিল।
সকালবেলা তাঁরা একে অপরকে ডেকে বললেন, ‘বাগানে যেতে চাইলে এখনই চলো, আর আস্তে আস্তে কথা বলবে, গরিব-মিসকিনরা যেন (আমাদের কথা শুনে) বাগানে আসতে না পারে।’
তাঁরা বাগানে ঢুকে দেখলেন সেখানে কিছুই নেই। তাঁরা বললেন, ‘আমরা বোধ হয় ভুল পথে চলে এসেছি।’ কিন্তু আশপাশ দেখে যখন বুঝলেন তাঁরা ঠিক জায়গাতেই এসেছেন, তখন বললেন, ‘হায়, আমাদের তো সব শেষ!’
আরও পড়ুনকোরআনের প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি২৬ মে ২০২৫তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন অন্যদের চেয়ে ভালো। তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদের বলিনি, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছ না কেন?’
তাঁরা বললেন, ‘আমরা আমাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। নিশ্চয় আমরা জালেম ছিলাম।’ (সুরা কলম, আয়াত: ২৯)
তাঁরা যখন এই কথা বলেন, ‘একদম সকালেই বাগানে যাব’, তখন ‘ইনশাআল্লাহ’ বলেননি। সম্পদের মোহে তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন সবকিছুর মালিক আল্লাহ তাআলা।এভাবে তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেন এবং মন থেকে তওবা করে সৎপথে ফিরে এলেন। তাঁরা বললেন, ‘দুর্ভোগ আমাদের, নিশ্চয় আমরা সীমালঙ্ঘনকারী ছিলাম। আমরা আশা রাখি, আমাদের প্রতিপালক এর পরিবর্তে আমাদেরকে আরও উন্নত বাগান দান করবেন। (তাই) আমরা আমাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে যাচ্ছি।’ (সুরা কলম, আয়াত: ৩১-৩২)
আসলে এই দুনিয়ায় যা আছে সবই আল্লাহর, আমরা কোনো কিছুরই প্রকৃত মালিক নই। শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি (রহ.
তবে আল্লাহ মানবজাতিকে এই পৃথিবী থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আর মানুষে মানুষে সংঘাত শুরু হলে তিনি ‘উপকৃত হওয়ার’ মালিকানা দান করেন।’ (রহমাতুল্লাহিল ওয়াসিয়া শরহে হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, ৪/৫২২, প্রকাশনী: মাকতাবায়ে হেজায, দেওবন্দ)
আরও পড়ুনআদ জাতি ও ইরাম নগরী ধ্বংসের কাহিনি১৪ জুন ২০২৫এর মানে আল্লাহ তাআলা আমাদের জায়গাজমি ও সহায়-সম্পত্তি সাময়িক ভোগ করার সুযোগ দিয়েছেন। তিনি চাইলেই আবার তা ফিরিয়ে নিতে পারবেন। এই যে মানুষে মানুষে এত হানাহানি ও পুঁজির লড়াই, এর সবই কিন্তু দুনিয়া নিয়ে।
অথচ কী আশ্চর্য, আমরা এর কোনো কিছুরই মালিক নই। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত ভোগ করে আল্লাহর কথাই অমান্য করছি, তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন করছি না, উল্টো তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করছি।
আল্লাহ আমাদের ‘ইচ্ছাশক্তি’ দিয়েছেন। আমরা চাইলে যেমন সৎপথে চলতে পারি, আবার চাইলে সীমালঙ্ঘন করতে পারি। কিন্তু দ্বিতীয় পথ অবলম্বনের পরিণতি সুখকর নয়। এর ফলে আমরা যেমন দুনিয়া হারাব, আবার পরকালেও শাস্তি ভোগ করতে হবে।
তাই আমাদের উচিত আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার করা, আল্লাহর হক ও বান্দার হক—দুটিই আদায় করা। ধনী কিংবা গরিব যা-ই হই না কেন, মানুষের সহায়তায় এগিয়ে যাব, কেবল নিজের স্বার্থ দেখব না। প্রয়োজনে নিজের ভাগ থেকে ছেড়ে দেব, তবু অন্যের ভাগ কেড়ে নিয়ে জালেমের কাতারে নাম লেখাব না।
আরও পড়ুনসুরা সাবায় আছে সাবাবাসীর কাহিনি১৯ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ন কর আল ল হ আম দ র বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টা পরিষদের যে ফিটনেস, তা দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব নয়: নুরুল হক
বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের যে ‘ফিটনেস’, তা দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় নুরুল হক এ কথা বলেন। ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন (২০১৮-২০২৪)’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে গণ অধিকার পরিষদ।
জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ‘জুলাই বিভাজন নয়, ঐক্যের প্রতীক। আমরা শুরু থেকেই জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলে আসছি। জাতীয় সরকার না হওয়ায় আজকে দেশে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যে যেভাবে পারছে, সেভাবে কাজ করছে। কোনো কোনো দল ভাবছে, তারা ক্ষমতায় চলে এসেছে। কিছুই মানতে চায় না। বিভেদ তৈরি হয়, এমন বক্তব্য থেকে সবার দূরে থাকা উচিত।’
নুরুল হক নুর আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশনে বেশির ভাগ নেতাকর্মীর কণ্ঠেই অনৈক্যের সুর। প্রয়োজনে গণভোট আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে আপস না করার কথা জানিয়ে নুরুল হক বলেন, ‘লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে যা বলছেন তা দুঃখজনক। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আমরা হতাশ। সবাই আপস করলেও আওয়ামী লীগের প্রশ্নে গণ অধিকার পরিষদ আপস করবে না। অনেকেই আবার জাতীয় পার্টিকে ফেরানোর কথা বলছে। আমরা স্পষ্ট বলছি, জাতীয় পার্টি হলো আওয়ামী লীগের দোসর। ১৪ দলের প্রশ্নে আমরা কোনো আপস করব না। এই প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক দল বা উপদেষ্টা কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সবার কৃতিত্ব স্বীকার করতে হবে। সবার মধ্যে একতা ধরে রাখতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হলেই আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে। আর হাসিনা যদি ফিরে আসে, তবে সব বিপ্লবীকে ফাঁসিতে ঝোলাবে। তাই আসুন, সবার মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করি। নিজেদের মধ্যে সহনশীলতা ছাড়া সেই ঐক্য সম্ভব নয়। ঐক্য কেউ একলা চাইলে হবে না, সবার আন্তরিকতা থাকতে হবে। তাহলেই নতুন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে।’
গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য মাহফুজুর রহমান খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলটির মুখপাত্র ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান বক্তব্য দেন।