ভারতের নতুন টেস্ট অধিনায়ক শুবমান গিল, কারা আছেন, কারা নেই
Published: 24th, May 2025 GMT
রোহিত শর্মা টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর এই সংস্করণে ভারতের নতুন অধিনায়ক হলেন শুবমান গিল। ২০ জুন থেকে ইংল্যান্ডে শুরু হতে যাওয়া পাঁচ টেস্টের সিরিজে ভারতের অধিনায়কত্ব করবেন ২৫ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান। আজ নতুন টেস্ট অধিনায়ক গিল ও সহ–অধিনায়ক হিসেবে ঋষভ পন্তের নাম ঘোষণা করে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।
৭ মে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন রোহিত। এ সংস্করণে তাঁর রানখরা নিয়ে সমালোচনা আগেই ছিল। তবে গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় বোর্ডার–গাভাস্কার সিরিজে প্রকট রানখরায় ভোগায় প্রচুর সমালোচনা হয়েছে তাঁর। সেই সিরিজে ভারতের সহ–অধিনায়ক ছিলেন পেসার যশপ্রীত বুমরা। রোহিত টেস্ট ছাড়ার পর বুমরার অধিনায়ক হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন অনেকেই। তবে রোহিতের অবসর নেওয়ার পরের দিন ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছিল, বুমরা নন গিলের নতুন টেস্ট অধিনায়ক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্যি হলো।
বোর্ডার–গাভাস্কার সিরিজে রোহিতের অনুপস্থিতিতে দুটি টেস্টে ভারতের অধিনায়কত্ব করেছিলেন বুমরা। দীর্ঘদিন ধরেই এই পেসার চোটের সমস্যার কারণে সব ম্যাচ খেলতে পারেন না। বেছে বেছে ম্যাচ খেলেন। ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের কারণে আগামী বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে বুমরা কিছু ম্যাচ খেলতে পারবেন না, বিসিসিআই এটা বোঝার পর গিলের অধিনায়ক হওয়া অবশ্য সম্ভাব্য ছিল।
ভারতকে তিন টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলিও আলোচনায় ছিলেন। রোহিত টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব নেওয়ার আগে এই সংস্করণে অধিনায়ক ছিলেন কোহলি। কিন্তু রোহিতের মতো কোহলিও গত ১২ মে টেস্ট ছাড়ার ঘোষণা দেন।
ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় দৈর্ঘ্যের দুটি সংস্করণে ভারতের অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা নেই গিলের। এ পর্যন্ত পাঁচ টি–টোয়েন্টি ম্যাচে ভারতের অধিনায়কত্ব করেছেন গিল। ভারত ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ের পর সে বছরের মাঝামাঝি সময়ে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েছিল তারা। সেখানেই পাঁচ ম্যাচে ভারতের অধিনায়কত্ব করেন গিল, যে সিরিজটি একাদশে বেশির ভাগ অনিয়মিত খেলোয়াড় নিয়ে খেলে ৪–১–এ জিতেছিল ভারত। টেস্ট ও ওয়ানডেতে গিল কখনো ভারতের অধিনায়কত্ব করেননি। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাঁচ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন এবং এবার আইপিএলে গুজরাট টাইটানসের অধিনায়কত্ব করে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটিকে প্লে–অফেও তুলেছেন।
২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক গিলের। এ পর্যন্ত ৩২ টেস্টে ৩৫.
পাঁচ টেস্টের ইংল্যান্ড সফর হবে ২০২৫–২৭ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে ভারতের প্রথম অভিযান। ২০ জুন হেডিংলিতে প্রথম টেস্ট শুরু হবে। এজবাস্টনে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ২ জুলাই থেকে। ১০ জুলাই থেকে তৃতীয় টেস্ট শুরু হবে লর্ডসে। ২৩ জুলাই চতুর্থ টেস্ট ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে এবং ওভালে পঞ্চম ও শেষ টেস্ট শুরু হবে ৩১ জুলাই থেকে। এর আগে চার দিনের একটি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলবে ভারত।
২৫ বছর ২৫৯ দিন বয়সে টেস্ট অধিনায়ক হলেন গিল। বয়সের দিক থেকে তিনি ভারতের পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক। মনসুর আলী খান পতৌদি (২১ বছর ৭৭ দিন), শচীন টেন্ডুলকার (২৩ বছর ১৬৯ দিন), কপিল দেব (২৪ বছর ৪৮ দিন) ও রবি শাস্ত্রীর (২৫ বছর ২২৯ দিন) পর পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক গিল।
ইংল্যান্ড সফরের জন্য ১৮ জনের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে ভারত। করুন নায়ার, শার্দুল ঠাকুর, সাই সুদর্শনের স্কোয়াডে ঠাঁই হলে জায়গা পাননি তারকা পেসার মোহাম্মদ শামি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অভিযুক্তরা এর আগে শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী হিসেবে শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ছিলেন এবং তাদেরকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শেয়ার কারসাজির কোম্পানিগুলো হলো- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স পিএলসি, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তথ্য মতে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই সময়ে অর্থাৎ ১০ দিনে কোম্পানির শেয়ারের দাম বহুগুণ বেড়ে যায়। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে দীর্ঘদিন পর কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে ওই সময়কালে গুঞ্জন ছিল- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে ৩ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, মো. এ.জি. মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহকে যৌথভাবে ৪২ লাখ টাকা ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে অভিযুক্তদের মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি
স্বল্প সময়ের মধ্যে ৫টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে মো. সাইফ উল্লাহ, মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ শেয়ার কারসাজিতে নেতৃত্ব দেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. সাইফ উল্লাহ। আর তাকে সহযোগিতা করেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহর শ্যালক মো. এ.জি. মাহমুদ। আর এস. এম. মোতাহারুল জানান তাদের সহযোগী। সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেডে অভিযুক্ত ৩ ব্যক্তির বিও হিসাব রয়েছে। তারা সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ায়। তারা সবাই সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও বিশিষ্ট শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী।
এর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্ব থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ১৫ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতেও জড়িত থাকার অভিযোগে হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, মো. সাইফ উল্লাহকে ৫০ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।
ওই বছরের মে মাসে ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ৩০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
একই বছরের আগস্টে জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে মো. সাইফ উল্লাহকে ৪০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম
২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৩.৯২ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৫.২৮ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৪.৬৫ শতাংশ, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৭.৩৫ শতাংশ ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ১৪.৭৪ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করতে স্বল্প সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ায় কারসাজি চক্র। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির তদন্তে দীর্ঘদিন পর অবশেষে তা প্রমাণিত হয়েছে।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত
কমিশন জানায়, অভিযুক্তরা ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে কারসাজি করে অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং এ কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থি। তাই অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জরিমানা ধার্য করা হয়।
ঢাকা/এনটি/ইভা