ট্রাম্প কি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘গোল্ডেন ডোম’ তৈরি করতে পারবেন
Published: 24th, May 2025 GMT
আকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ঝরে পড়ছে। শব্দের চেয়েও দ্রুতগতির ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামোতে আঘাত হানছে। আকাশে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, ভবিষ্যতে উচ্চ প্রযুক্তির হামলায় যদি যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো ও সীমিত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যর্থ হয়, তাহলে এমনই ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের দৃশ্য দেখা যেতে পারে।
এমনকি মার্কিন নাগরিকদের মাথার অনেক ওপরে যদি একটি ছোট পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটে, সেটাও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এ ধরনের বিস্ফোরণে তৈরি হবে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস (ইএমএপি), যার কারণে আকাশে উড়তে থাকা উড়োজাহাজ মাটিতে পড়ে যাবে। মোবাইল, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি এমনকি পানি সরবরাহ ব্যবস্থা—সবই অকেজো হয়ে পড়বে।
নর্থ ক্যারোলাইনার মন্ট্রিট কলেজের লেখক ও অস্ত্র গবেষক উইলিয়াম ফোর্টসচেন বলেন, ‘আমরা ১০০ বছর পেছনে ফিরে যাব না, বরং সবকিছু হারাব। আমরা জানি না, সেখান থেকে কীভাবে আবার শুরু করব। এটা এমন হবে, যেন আমরা এক হাজার বছর পেছনে চলে গেছি এবং নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হবে।’
এই সম্ভাব্য বিপদের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘পরবর্তী প্রজন্মের’ একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরির কথা ভাবছেন, যার নাম দিয়েছেন ‘গোল্ডেন ডোম’।
অনেক বিশেষজ্ঞ একমত, এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরি করা দরকার। তবে এর উচ্চব্যয় ও জটিলতা ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে কঠিন করে তুলতে পারে।
নির্বাহী এক আদেশে বলা হয়েছে, শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘আয়রন ডোম’ নামে যে ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা এখন ‘গোল্ডেন ডোম’-এ রূপ নিচ্ছে। আদেশে বলা হয়েছে, পরবর্তী প্রজন্মের অস্ত্রগুলোর হুমকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও তীব্র ও জটিল হয়ে উঠছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর বিপদের কারণ হতে পারে।
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিসিয়া বাজিলচিক বিবিসিকে বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মূলত উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) প্রতিহত করার জন্য তৈরি।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশের বড় আকারের আক্রমণ ঠেকাতে এই ব্যবস্থা একেবারেই অপর্যাপ্ত। এসব দেশের কাছে শত শত আইসিবিএম এবং হাজার হাজার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।কিন্তু রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিশালী দেশ এখন আরও উন্নত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে, যেগুলো শুধু প্রতিবেশী দেশ নয় বরং মহাসাগরের ওপারেও আঘাত হানতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা যেসব নতুন হুমকির কথা বলছেন, তার মধ্যে রয়েছে—শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির হাইপারসনিক অস্ত্র, ফ্র্যাকশনাল অরবিটাল বোম্বার্ডমেন্ট সিস্টেম (এফওবিএস)। এই প্রযুক্তি মহাকাশ থেকে নির্দিষ্ট লক্ষে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে।
এই অস্ত্রগুলো সংখ্যায় কম হলেও কিন্তু মারাত্মক।
বাজিলচিক বলেন, ‘গোল্ডেন ডোম আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা নীতিকে রাশিয়া ও চীনের মতো বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের দিকে সরিয়ে নিচ্ছে। কারণ, তারা এখন এমন সব অস্ত্রে বিনিয়োগ করছে, যা আমরা আগে মোকাবিলা করিনি।’
‘গোল্ডেন ডোম’ দেখতে কেমন হবে
এখন পর্যন্ত হোয়াইট হাউস বা প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্পের নির্দিষ্ট কোনো বিবরণ দেননি। কারণ, এটি এখনো পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে।
২০ মে ট্রাম্প ওভাল অফিসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই ব্যবস্থাটি ‘ভূমি, সমুদ্র এবং মহাকাশে একাধিক স্তরে কাজ করবে, যার মধ্যে থাকবে মহাকাশভিত্তিক সেন্সর ও প্রতিরোধব্যবস্থা।
ট্রাম্প বলেন, এই ব্যবস্থা এমনকি পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে বা মহাকাশ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে পারবে। এই কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য—যেমন ফ্লোরিডা, ইন্ডিয়ানা ও আলাস্কা থেকে পরিচালিত হবে।
স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গেটলাইন কংগ্রেসে জানান, ‘গোল্ডেন ডোম’ পূর্ববর্তী আইসিবিএম প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে। তবে এতে আরও স্তর যোগ হবে, যা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে পারবে। এমনকি শত্রুপক্ষ ওই ক্ষেপনাস্ত্র ছোড়ার আগেই বা যেকোনো পর্যায়ে সেটি অকার্যকর করে দিতে পারবে।
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিসিয়া বাজিলচিক বিবিসিকে বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মূলত উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) প্রতিহত করার জন্য তৈরি।বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংস্থা ৪৪টি ভূমিভিত্তিক প্রতিরোধব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে থাকে। সেগুলো আলাস্কা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। এগুলো শুধু সীমিত হামলা প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশের বড় আকারের আক্রমণ ঠেকাতে এই ব্যবস্থা একেবারেই অপর্যাপ্ত। এসব দেশের কাছে শত শত আইসিবিএম এবং হাজার হাজার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
সেন্টার ফর আ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ স্টেসি পেটিজন বলেন, বর্তমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেবল উত্তর কোরিয়ার জন্য তৈরি ছিল। এটা রাশিয়ার বিশাল অস্ত্রভান্ডার বা চীনের তুলনামূলক ছোট হলেও অনেক বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে পারবে না।
কংগ্রেসনাল রিসার্চ অফিস (সিবিও) বলেছে, এই ধরনের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে মহাকাশে ‘শত শত বা হাজার হাজার’ প্ল্যাটফর্ম বসাতে হবে, যা হবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’: একটি উদাহরণ
ট্রাম্প গত মার্চে কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে প্রথম ‘গোল্ডেন ডোম’–এর ধারণাটি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের এটি আছে, আরও কিছু দেশের আছে, যুক্তরাষ্ট্রেরও অবশ্যই থাকা উচিত।’
ইসরায়েলের আয়রন ডোম মূলত ছোট আকারের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়, যা গাজা বা লেবানন থেকে ছোড়া হয়। ২০১১ সাল থেকে তারা এগুলো ব্যবহার করছে। তবে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে তারা আরও দুটি সিস্টেম ব্যবহার করে: ডেভিড’স স্লিং ও অ্যারো। ইরান বা ইয়েমেনের হুতিদের হামলা প্রতিরোধে এগুলো ব্যবহার করা হয়।
গোল্ডেন ডোম এই সীমা ছাড়িয়ে আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাজিলচিক বলেন, এটি করতে হলে অনেক ধরনের প্রযুক্তি একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এবং এমন একটি কমান্ড ও কন্ট্রোল সিস্টেম দরকার হবে, যেটা এখনো তৈরি হয়নি।
এটা কি সম্ভব
এই ধরনের একটি জটিল ব্যবস্থা তৈরি করা খুবই কঠিন এবং একসঙ্গে ব্যয়বহুলও বটে।
ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, এই প্রকল্প তাঁর মেয়াদের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব। এর জন্য ধাপে ধাপে মোট ১৭ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হবে, যার মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ইতিমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সিবিও বলছে, শুধু মহাকাশভিত্তিক ব্যবস্থার জন্যই ২০ বছরে ৫ হাজার ৪০২ কোটি ডলার খরচ হতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, পুরো প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেটের বড় অংশ খেয়ে ফেলবে।
পেটিজন বলেন, এই সময়সীমা বাস্তবসম্মত নয়। এটি খুবই জটিল। প্রতিটি ধাপের আলাদা ঝুঁকি, খরচ ও সময়সীমা আছে। দ্রুত করতে গেলে ব্যয় ও ঝুঁকি আরও বাড়বে।
পেটিজন আরও বলেন, ‘আপনি সম্ভবত এমন কিছু তৈরি করবেন, যা পুরোপুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে না। এই প্রক্রিয়ায় ভুলত্রুটি হবেই এবং শেষ পর্যন্ত যা তৈরি হবে, তা হয়তো বড় ধরনের পরিবর্তন বা সংস্কারের প্রয়োজন পড়বে।’
‘গোল্ডেন ডোম’ তৈরির পরিকল্পনা একটি নতুন ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ শুরুর আশঙ্কাও সৃষ্টি করেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষরা এখন এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করা বা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে নিজেদের প্রস্তুতি জোরদার করবে।
এ ছাড়া এই প্রকল্পকে ঘিরে আন্তর্জাতিক উদ্বেগও তৈরি হয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এই পরিকল্পনা মহাকাশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
যাঁরা সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁরা এসব উদ্বেগে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁদের যুক্তি, সম্ভাব্য শত্রুরা এমনিতেই আক্রমণাত্মক অস্ত্রে অনেক বেশি বিনিয়োগ করছে।
বাজিলচিক বলেন, ‘গোল্ডেন ডোম আমাদের শত্রুদের কৌশলগত হিসাব পাল্টে দেবে। এটি তাদের আক্রমণ চালানোর সাহস কমাবে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।’
নর্থ ক্যারোলাইনার মন্ট্রিট কলেজের লেখক ও অস্ত্র গবেষক উইলিয়াম ফোর্টসচেন বলেন, গোল্ডেন ডোম আংশিকভাবেও তৈরি হলে, তা ভয়ংকর পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
ফোর্টসচেন আরও বলেন, ‘তাহলে আমি অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারব। আমাদের এই ধরনের একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থার খুবই দরকার। গোল্ডেন ডোমই এর সমাধান।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই ব যবস থ ও চ ন র মত ব যবস থ র র র জন য প রকল প ধরন র প অন ক ব ন বল ন বলছ ন ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীতে আরও গ্রাম প্লাবিত, দুর্ভোগ
ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২২টি ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে নতুন করে আরও ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এসব গ্রাম প্লাবিত হয়। এ নিয়ে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার মোট ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। এদিকে নোয়াখালীতে টানা পাঁচ দিন বৃষ্টি ঝরে গতকাল থেমেছে। ধীরে নামছে পানি। তবে জনদুর্ভোগ কাটেনি। জেলা শহর মাইজদীসহ সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
ফেনীতে নতুন করে প্লাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে চারটি ফেনী সদর উপজেলা, পাঁচটি ছাগলনাইয়া উপজেলা ও একটি দাগনভূঞা উপজেলার। তবে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মুত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি দৌলতপুর বন্দুয়ার বাসিন্দা।
কিছু এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনও পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার কারণে পাঁচ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি কমে যাওয়ায় কিছু কিছু যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল শুরু করেছে।
জেলার ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৯ হাজার ২০০ বাসিন্দা অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকা থেকে অন্তঃসত্ত্বা, অসুস্থসহ ১৮ জনকে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার করেছেন। ফুলগাজী ও পরশুরামের পানি নামতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলো। পানিতে তলিয়ে আছে মানুষের ঘরবাড়ি, আসবাব, ফসলি জমি। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। চরম ভোগান্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে ফেনীর ফাজিলপুর ইউনিয়নের দুটি ও মোটবি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম, ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম এবং দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশেও বন্যার পানি বেড়ে গিয়ে একটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়।
বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ভাঙা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হলে দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১১২ গ্রামের মানুষের জন্য সব অংশীজনের সহযোগিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ঘোষিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার ২০০ মানুষ অবস্থান করছেন। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নোয়াখালীতে ধীরে নামছে পানি
শুক্রবার বিকেলে নোয়াখালী জেলা শহরের সেন্ট্রাল রোড, আল ফারুক একাডেমি, হাউজিং এস্ট্রেট, হাউজিং বালুর মাঠ আবাসিক এলাকা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালত সড়ক, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয় ও নতুন বাসস্ট্যান্ডের জেলখানা সড়কে দেখা যায়, জলাবদ্ধতা কমতে শুরু করেছে। তবে সড়কগুলোতে এখনও পানি আছে। ড্রেনের ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে লোকজন। বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে পিচ উঠে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কের আশপাশের অনেক বাড়িঘরে এখনও পানি।
পৌরসভার টাউন হল মোড় এলাকার ব্যবসায়ী জেহাদ হোসেন বলেন, ‘টাউন হল-সরকারি আবাসিক এলাকা সড়কটি অবহেলিত। ড্রেনগুলো বহু বছর পরিষ্কার না করায় কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে।’ লক্ষ্মীনারায়ণপুর মহল্লার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘বসতঘরে পানি ঢুকেছে। পাঁচ দিন ধরে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। পানির মধ্যেই রান্না ও খাওয়ার কাজ চলছে।’
টানা বৃষ্টিতে জেলায় ৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর ফসলি জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নোয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, বৃষ্টির পানিতে ৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও শাকসবজির মাঠ নিমজ্জিত হয়েছে।
সদর উপজেলার মুকিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমার দেড় একর জমির আউশ ধান, বস্তায় চাষ করা ১০০ বস্তা আদা, পেঁপে বাগান, ৩০ শতক জমির আমন বীজতলা ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি কমে যাওয়ায় লোকজন বাড়ি ফিরছেন। গাবুয়া খাল ও নোয়াখালী খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পাস ও বরাদ্দ পেলেই খনন কাজ শুরু হবে।
এদিকে সারাদেশে আরও ১০ দিন বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া অথবা বজ্রসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো তথ্য)