জুলাই অভ্যুত্থানে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা শহীদ হাফেজ মোহাম্মদ হাসানের জানাজা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে এনসিপি, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। শনিবার রাত সোয়া দশটার দিকে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজায় ইমামতি করেন ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। তিনি সংক্ষিপ্ত আকারে বক্তব্য রাখেন। জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম সদস্যসচিব রিফাত রশিদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাবি শাখার মুখ্য সংগঠক হাসিবুল ইসলাম এবং জুলাই ঐক্যের সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ।

গত বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকায় আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুরুতর আহত হন মোহাম্মদ হাসান। প্রথমে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন হাসান। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ২৫ বছর।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই অভ য ত থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ কোটি টাকা খরচের পর আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল আবার ‘ভাগাড়’

হাতিরঝিলের মতো আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ লক্ষ্যে চ্যানেল পুনরুদ্ধার ও খননে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে দেড় বছরের মধ্যে চ্যানেলটি ‘ভাগাড়ে’ পরিণত হয়েছে। নেই তেমন পানিপ্রবাহ। দুর্গন্ধ ছাড়াও কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভরাট হয়ে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে প্রাচীন এই জলপথ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশলীরা বলছেন, যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ করা না গেলে শতকোটি টাকা খরচ করেও এ ধরনের প্রকল্পের সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। আদি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঠামো দুর্বল হওয়ায় খননের সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলটির এক পাশে কামরাঙ্গীরচর। এই এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন মাটি তুলে কিছু কাজ করেছিল। আমরা ভেবেছিলাম এবার জায়গাটা বদলে যাবে; কিন্তু এখন আগের চেয়েও খারাপ অবস্থা। শুধু টাকা খরচ হয়েছে, সুফল কিছু নেই।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশলীরা বলছেন, যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ করা না গেলে শতকোটি টাকা খরচ করেও এ ধরনের প্রকল্পের সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। আদি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঠামো দুর্বল হওয়ায় খননের সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।নেই নতুন উদ্যোগ

একসময় বুড়িগঙ্গা নদীর শাখা এই আদি চ্যানেল ছিল ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। এটি দিয়েই পণ্য পরিবহন ও নৌযান চলাচল হতো। শহরের সম্প্রসারণ, দখল ও দূষণের কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে চ্যানেলটি উদ্ধার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রকৃত কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে।

সংস্থাটির তথ্য বলছে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে চ্যানেলটির প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খনন ও দখলমুক্ত করার কাজ চালানো হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ছিল বর্জ্য ও মাটি অপসারণ এবং সীমানাখুঁটি বসানো। সে সময় বলা হয়েছিল, এই চ্যানেলটিতে নান্দনিক বসার স্থান ও সবুজায়ন করা হবে। তবে সেই কাজ আর এগোয়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর পরিকল্পনা তিনি শোনেননি। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে এই চ্যানেল পর্যন্ত পানিপ্রবাহ যেন ঠিক থাকে, সেই কাজ তাঁরা অব্যাহত রেখেছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, চ্যানেলটির বেশির ভাগ অংশে কচুরিপানা জন্মেছে। পলি জমে অনেক জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। চ্যানেলের পাশে ময়লা–আবর্জনা ফেলা হয়েছে। অনেক জায়গায় পানি না থাকায় চ্যানেলটি সংকীর্ণ হয়ে গেছে। বর্তমানে চ্যানেলের অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই, এত টাকা খরচ করে মাটি অপসারণ করা হয়েছিল।

সিটি করপোরেশন মাটি তুলে কিছু কাজ করেছিল। আমরা ভেবেছিলাম এবার জায়গাটা বদলে যাবে; কিন্তু এখন আগের চেয়েও খারাপ অবস্থা। শুধু টাকা খরচ হয়েছে, সুফল কিছু নেই।কামরাঙ্গীরচর এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম

আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের অবস্থান লালবাগের ইসলামবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার মধ্যে। এর সীমানা কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে হাজারীবাগের রায়েরবাজার পর্যন্ত। প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলটি সচল থাকলে লালবাগ, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার জলাবদ্ধতা কমে যাবে। একসময় মৃতপ্রায় চ্যানেলটিকে হাতিরঝিলের আদলে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর কথা বলেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেছিলেন, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলকে হাতিরঝিলের চেয়েও বেশি নান্দনিক করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে তাঁদের।

তবে বর্তমানে এই চ্যানেল দৃষ্টিনন্দন করার নতুন কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানিয়েছেন সেই সময়ে আদি চ্যানেল খনন ও পুনরুদ্ধারের দায়িত্বে থাকা ডিএসসিসির পরিবেশ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের। আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল দৃষ্টিনন্দন করতে সে সময় উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

নগরবাসীর প্রশ্ন—যদি দেড় বছরের মধ্যে ৩০ কোটি টাকার খননকাজের সুফল হারিয়ে যায়, তাহলে কীভাবে টেকসই উন্নয়ন হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে তার রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারকারী নাগরিকদের আচরণ বদলানোর কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে উন্নয়ন শুধু খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।নজরদারির অভাব

ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সে সময় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, চ্যানেলের পাশে হাঁটার পথ তৈরির পরিকল্পনা থেকেই পাড়ে কিছু পলি ও বর্জ্য ফেলা হয়েছে। চ্যানেল পরিষ্কার করার কার্যক্রম শুরুর আগে এটি দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হয়েছিল। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে থাকা বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভেঙেও দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া কীভাবে এ চ্যানেলকে হাতিরঝিলের রূপ দেওয়া, বিনোদনের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করা ও অবসর সময় কাটানোর উপযুক্ত জায়গা হিসেবে গড়ে তোলা যায়, এ-সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা দিয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগও দেওয়া হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির দুজন কর্মকর্তা বলেন, কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকার কারণে যত দিন যাচ্ছে, চ্যানেলটি আবার মৃতপ্রায় হয়ে পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে দ্রুত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পানি অপসারণ করতে হলে এই চ্যানেলটি সচল রাখতে হবে।

নগরবাসীর প্রশ্ন—যদি দেড় বছরের মধ্যে ৩০ কোটি টাকার খননকাজের সুফল হারিয়ে যায়, তাহলে কীভাবে টেকসই উন্নয়ন হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে তার রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারকারী নাগরিকদের আচরণ বদলানোর কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে উন্নয়ন শুধু খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ