ইশরাককে মেয়র করার দাবিতে আজও অবস্থান, নগর ভবন অচল
Published: 25th, May 2025 GMT
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনে আজ রোববারও চলছে অবস্থান কর্মসূচি। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে বেলা ১১টা থেকে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন তাঁর সমর্থক ও করপোরেশনের বড় একটি অংশের কর্মচারীরা।
১৪ মে থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন মাঝে ৪৮ ঘণ্টার বিরতি দিয়ে এখনো চলছে। এতে নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নগর ভবনের ফটকগুলোতে এখনো তালা ঝুলছে। ‘ঢাকাবাসীর ব্যানারে’ ইশরাকের সমর্থকেরা কিছুক্ষণ পর পর নগর ভবন প্রাঙ্গণে মিছিল করছেন। মিছিল শেষ হলে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছেন।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন বলছেন, জনতার মেয়র ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবেই। তা না হলে তারা ঘরে ফিরবেন না।
নাগরিক সেবা বন্ধ, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষগত ১৫ মে থেকে নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলছে। ফটকে তালা থাকায় নগর ভবনের ভেতরে ঢুকতে পারছেন না সেবাপ্রত্যাশীরা। বন্ধ রয়েছে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধসহ সব নাগরিক সেবা।
ধানমন্ডি থেকে আসা গৃহিণী নাসরিন জাহান বলেন, 'তিন দিন ঘুরছি একটা নাম সংশোধনের জন্য। কিন্তু কেউ ভেতরে ঢুকতেই দিচ্ছে না। এটা কেমন অবস্থা?'
এমন পরিস্থিতিতে করপোরেশনের কর্মকর্তারাও অঘোষিত ছুটিতে আছেন। ফটকগুলো তালাবদ্ধ থাকার কারণে কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন না। দাপ্তরিক কাজ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
এ ভবনেই স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয় অবস্থিত। সেটিও ১৫ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ওই দিন থেকে নগর ভবনে এসে আর অফিস করতে পারছেন না।
ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চলমান আন্দোলন পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। সে সময় পার না হলেও দক্ষিণ সিটির কর্মচারীরা গতকাল বেলা ১১টায় আবার অবস্থান নিয়ে নগর ভবনের নিচতলায় বিক্ষোভ শুরু করেন।
কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। যত দিন তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া না হচ্ছে, তত দিন এ কর্মসূচি চলবে।
গত ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীতে আরও গ্রাম প্লাবিত, দুর্ভোগ
ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২২টি ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে নতুন করে আরও ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এসব গ্রাম প্লাবিত হয়। এ নিয়ে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার মোট ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। এদিকে নোয়াখালীতে টানা পাঁচ দিন বৃষ্টি ঝরে গতকাল থেমেছে। ধীরে নামছে পানি। তবে জনদুর্ভোগ কাটেনি। জেলা শহর মাইজদীসহ সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
ফেনীতে নতুন করে প্লাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে চারটি ফেনী সদর উপজেলা, পাঁচটি ছাগলনাইয়া উপজেলা ও একটি দাগনভূঞা উপজেলার। তবে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মুত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি দৌলতপুর বন্দুয়ার বাসিন্দা।
কিছু এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনও পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার কারণে পাঁচ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি কমে যাওয়ায় কিছু কিছু যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল শুরু করেছে।
জেলার ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৯ হাজার ২০০ বাসিন্দা অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকা থেকে অন্তঃসত্ত্বা, অসুস্থসহ ১৮ জনকে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার করেছেন। ফুলগাজী ও পরশুরামের পানি নামতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলো। পানিতে তলিয়ে আছে মানুষের ঘরবাড়ি, আসবাব, ফসলি জমি। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। চরম ভোগান্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে ফেনীর ফাজিলপুর ইউনিয়নের দুটি ও মোটবি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম, ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম এবং দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশেও বন্যার পানি বেড়ে গিয়ে একটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়।
বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ভাঙা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হলে দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১১২ গ্রামের মানুষের জন্য সব অংশীজনের সহযোগিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ঘোষিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার ২০০ মানুষ অবস্থান করছেন। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নোয়াখালীতে ধীরে নামছে পানি
শুক্রবার বিকেলে নোয়াখালী জেলা শহরের সেন্ট্রাল রোড, আল ফারুক একাডেমি, হাউজিং এস্ট্রেট, হাউজিং বালুর মাঠ আবাসিক এলাকা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালত সড়ক, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয় ও নতুন বাসস্ট্যান্ডের জেলখানা সড়কে দেখা যায়, জলাবদ্ধতা কমতে শুরু করেছে। তবে সড়কগুলোতে এখনও পানি আছে। ড্রেনের ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে লোকজন। বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে পিচ উঠে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কের আশপাশের অনেক বাড়িঘরে এখনও পানি।
পৌরসভার টাউন হল মোড় এলাকার ব্যবসায়ী জেহাদ হোসেন বলেন, ‘টাউন হল-সরকারি আবাসিক এলাকা সড়কটি অবহেলিত। ড্রেনগুলো বহু বছর পরিষ্কার না করায় কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে।’ লক্ষ্মীনারায়ণপুর মহল্লার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘বসতঘরে পানি ঢুকেছে। পাঁচ দিন ধরে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। পানির মধ্যেই রান্না ও খাওয়ার কাজ চলছে।’
টানা বৃষ্টিতে জেলায় ৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর ফসলি জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নোয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, বৃষ্টির পানিতে ৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও শাকসবজির মাঠ নিমজ্জিত হয়েছে।
সদর উপজেলার মুকিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমার দেড় একর জমির আউশ ধান, বস্তায় চাষ করা ১০০ বস্তা আদা, পেঁপে বাগান, ৩০ শতক জমির আমন বীজতলা ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি কমে যাওয়ায় লোকজন বাড়ি ফিরছেন। গাবুয়া খাল ও নোয়াখালী খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পাস ও বরাদ্দ পেলেই খনন কাজ শুরু হবে।
এদিকে সারাদেশে আরও ১০ দিন বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া অথবা বজ্রসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো তথ্য)