ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনে আজ রোববারও চলছে অবস্থান কর্মসূচি। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে বেলা ১১টা থেকে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন তাঁর সমর্থক ও করপোরেশনের বড় একটি অংশের কর্মচারীরা।

১৪ মে থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন মাঝে ৪৮ ঘণ্টার বিরতি দিয়ে এখনো চলছে। এতে নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নগর ভবনের ফটকগুলোতে এখনো তালা ঝুলছে। ‘ঢাকাবাসীর ব্যানারে’ ইশরাকের সমর্থকেরা কিছুক্ষণ পর পর নগর ভবন প্রাঙ্গণে মিছিল করছেন। মিছিল শেষ হলে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছেন।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন বলছেন, জনতার মেয়র ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবেই। তা না হলে তারা ঘরে ফিরবেন না।

নাগরিক সেবা বন্ধ, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

গত ১৫ মে থেকে নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলছে। ফটকে তালা থাকায় নগর ভবনের ভেতরে ঢুকতে পারছেন না সেবাপ্রত্যাশীরা। বন্ধ রয়েছে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধসহ সব নাগরিক সেবা।

ধানমন্ডি থেকে আসা গৃহিণী নাসরিন জাহান বলেন, 'তিন দিন ঘুরছি একটা নাম সংশোধনের জন্য। কিন্তু কেউ ভেতরে ঢুকতেই দিচ্ছে না। এটা কেমন অবস্থা?'

এমন পরিস্থিতিতে করপোরেশনের কর্মকর্তারাও অঘোষিত ছুটিতে আছেন। ফটকগুলো তালাবদ্ধ থাকার কারণে কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন না। দাপ্তরিক কাজ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

এ ভবনেই স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয় অবস্থিত। সেটিও ১৫ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ওই দিন থেকে নগর ভবনে এসে আর অফিস করতে পারছেন না।

ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চলমান আন্দোলন পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। সে সময় পার না হলেও দক্ষিণ সিটির কর্মচারীরা গতকাল বেলা ১১টায় আবার অবস্থান নিয়ে নগর ভবনের নিচতলায় বিক্ষোভ শুরু করেন।

কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। যত দিন তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া না হচ্ছে, তত দিন এ কর্মসূচি চলবে।

গত ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো.

নুরুল ইসলাম ২০২০ সালের ডিএসসিসি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা করেন এবং ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগর ভবন র অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত

দৃশ্যত এটি ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং দেশের তিন বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে একটি রুদ্ধদ্বার নিয়মিত বৈঠক।

তবে ২০ মের এ বৈঠক এমন সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন সরকারের ভেতরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত এমন একাধিক কর্মকর্তা আল–জাজিরাকে জানান, ঢাকায় ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার এক দ্বন্দ্ব চলছে। এ উত্তেজনাকে দেশের সামাজিক ও মূলধারার গণমাধ্যমে অন্তর্বর্তী প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে একধরনের ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই টানাপোড়েন এখন ইউনূসের নেতৃত্বের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ৯ মাস আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে অপসারণের পর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তিনি।

শেখ হাসিনা তাঁর ১৫ বছরের শাসনামলের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা সংঘটনের অভিযোগ উঠেছে।

ইউনূস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন—এমন গুজব ছড়ানোর মধ্যে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে গতকাল শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের আরেক বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি পদত্যাগের কথা বলেননি, অন্য উপদেষ্টারাও আছেন, আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি।’

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের রুদ্ধদ্বার একটি বৈঠকের পর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ বক্তব্য দেন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ অচলাবস্থা এখনো কাটেনি।

দেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচনী গণতন্ত্রে ফেরার ক্ষেত্রে দেশের অপরিপক্ব প্রচেষ্টার ওপর এর কী প্রভাব, তা খতিয়ে দেখা যাক:

সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে কেন

২০২৪ সালের জুলাই থেকে দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। গণবিক্ষোভের জের ধরে পরের মাসে শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন। সেই সময় বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকে, বহু থানায় পুলিশ সদস্যরা অনুপস্থিত থাকেন ও জনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী মোতায়েন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

যদিও গত আগস্টের মাঝামাঝি পুলিশ আবার কার্যক্রম শুরু করেছে, তারপরও দেশে চলমান অস্থিরতার কারণে বেসামরিক-সামরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বজায় রাখা হয়েছে।

গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান খোলাখুলি আহ্বান জানিয়ে বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেন, সেনাবাহিনীকে দীর্ঘ সময় ধরে বেসামরিক কাজে নিয়োজিত রাখলে তা দেশের প্রতিরক্ষা দুর্বল করতে পারে।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনারেল ওয়াকার ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে উচ্চপর্যায়ের এক সভায় বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটি শুধু একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সম্ভব, অনির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সম্ভব নয়।’ সেনাপ্রধান এই বক্তব্য এমন এক ভাষণে দেন, যেখানে ৩০ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি। পরে এক ঘণ্টার বেশি সময় প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশি মিশন থেকেও কর্মকর্তারা এতে ভার্চ্যুয়ালি ও সরাসরি অংশ নেন। সবাই পূর্ণাঙ্গ সামরিক পোশাকে ছিলেন, যা ঐক্য ও সংকল্পের বার্তা দেয়।

শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। এরপরই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের অনির্ধারিত বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে থাকছেন। উনি বলেননি যে উনি পদত্যাগ করবেন। অন্য উপদেষ্টারাও থাকছেন। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা সে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ