কিশোরঞ্জের হাওরের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, ৬ ফেরি বন্ধ
Published: 25th, May 2025 GMT
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এ কারণে নদীগুলোতে ফেরি পারাপারে দেখা দিয়েছে জটিলতা। বিশেষ করে ঘাটের রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় রবিবার (২৫ মে) সকাল থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। ফলে সড়কপথে জেলা শহরের সঙ্গে হাওর এলাকায় যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল ফেরি চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “পানি বৃদ্ধির কারণে ফেরিঘাটের রাস্তা তলিয়ে গেছে। তাই হাওরে নদীতে ব্যবহৃত ছয়টি ফেরিই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের সব দপ্তরে খবর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে ফেরির পন্টুন খুলে নিয়ে আসা হবে।”
আরো পড়ুন:
ধানের বাম্পার ফলনে ঈদ আনন্দ হাওর পাড়ের কৃষকের ঘরে
হাওরে ধানের বাম্পার ফলন, দাম কমে যাওয়ায় চিন্তায় কৃষক
সওজ সূত্রে জানা গেছে, পানি বৃদ্ধির কারণে হাওরের সঙ্গে জেলার করিমগঞ্জের বালিখোলা ও চামড়াঘাট, মিঠামইনের শান্তিপুর ফেরিঘাট, ইটনার বড়িবাড়ি ও বলদা ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফেরি চলাচল। ফেরি বন্ধ থাকায় এখন অনেকেই ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ঘোরাউত্রা ও ধনু নদী পার হয়ে জেলা শহরে আসছেন।
নদীতে পানি বাড়লে ফেরি চলাচলে সুবিধা থাকলেও হাওরের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। কারণ হাওরের নদীগুলোতে পলি জমে ও নদী খনন না হাওয়ায় পাড়ে ফেরি রাখা সম্ভব হয় না। তাই যোগাযোগের রাস্তাটিও ডুবে যায়।
কৃষক মো.
কথা হয় ধান ব্যবসায়ী শামছুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি হাওর থেকে ধান কিনে পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে সড়ক পথে ঘাটে এসে ফেরি দিয়ে বালিখলাঘাট পার হয়ে সহজেই শহর মুখী হতে পারতেন। তিনি বলেন, “নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাব-মার্জিবল রাস্তাতেও পানি উঠতে শুরু করছে। এখন ফেরিও বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। যতটুকু ধান কিনে রাখছি, সেটা এখন নৌকাযোগেই আনতে হবে।”
২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার সঙ্গে শুকনো মৌসুমে সড়কপথে জেলা শহরের যাতায়াতের জন্য মিঠামইন-করিমগঞ্জ ও ইটনা-করিমগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন নদীতে ৬টি ফেরি চালু করে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর।
এর মধ্যে মিঠামইন-করিমগঞ্জ সড়কের ঘোড়াউত্রা নদীর মিঠামইন সদরে শান্তিপুর ঘাট ও বাউলাই নদীর করিমগঞ্জ সুতারপাড়া ইউনিয়নের বালিখলা ঘাটে দুইটি ফেরি রয়েছে। ইটনা-করিমগঞ্জ সড়কের ধনু নদীর ইটনা সদর ইউনিয়নের বলদা ঘাট, ধনু নদীর শাখা নদী বড়িবাড়ি ইউনিয়নে বড়িবাড়ি ঘাট ও বাউলাই নদীর করিমগঞ্জের চামড়া বন্দরে তিনটি ফেরি চলাচল করে। আরেকটি ফেরি অষ্টগ্রাম থেকে বাজিতপুরে চলাচল করে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “প্রতিদিনই একটু একটু করে হাওরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। গত কয়েকদিনে টানা বৃষ্টির কারণেই মূলত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর জুনের মাঝামাঝি হাওর জুড়ে পানি বাড়তে দেখা যায়।
ঢাকা/রুমন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ওর নদ ক শ রগঞ জ ম ঠ মইন হ ওর র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহী বোর্ডে মানবিকে ছেলেদের ভরাডুবি, জিপিএ-৫ পাওয়ায় মেয়েরা এগিয়ে
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় গতবারের চেয়ে পাসের হার কমেছে ২১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সবচেয়ে ভরাডুবি হয়েছে মানবিক বিভাগের ছেলেদের। এবার বোর্ডে পাসের হার যেখানে ৫৯ দশমিক ৪০, সেখানে মানবিক বিভাগে ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ ছেলে পাস করেছেন।
পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুই ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছেন মেয়েরা। বোর্ডে এবার ৬৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ মেয়ে পাস করেছেন। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ১৩৭ জন শিক্ষার্থী, এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬৮২ জন।
শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলছেন, বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা গত বছর বেশি বইবিমুখ ছিল। যে কারণে শুধু রাজশাহীতে নয়, সারা দেশের ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার কমে গেছে।
২১ বছরে এইচএসসিতে সর্বনিম্ন পাস: শিক্ষায় ‘গলদ’ না অন্য কিছুরাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৩ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ৭৭ হাজার ৭৪২ জন। গতবার পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৯৩ জন। পাস করেছিলেন ১ লাখ ১১ হাজার ৪৪৮ জন শিক্ষার্থী। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ১৩৭ জন শিক্ষার্থী। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৯০২ জন। এক বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও এবার বেড়েছে। এবার এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন ৩২ হাজার ৬৩৮ জন, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৩০৭ জন বেশি। এবার ১৭টি কলেজ থেকে কেউ পাস করেনি। গত বছর এমন কলেজের সংখ্যা ছিল ১।
মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর হক বলেন, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের আইসিটি বিষয়টি বোঝা কঠিন। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে তত কঠিন নয়। সাধারণভাবে ইংরেজিতে দুর্বলতা তো আছেই। এই দুটি কারণেই মানবিক বিভাগের ফলাফল খারাপ হতে পারে। একই কারণে ব্যবসায় শাখার পাসের হারও কম।
এইচএসসিতে গত বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে ১৯ শতাংশছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেশি পাওয়ার কারণ হিসেবে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল মনে করেন, মেয়েরা ক্লাসে বেশি উপস্থিত থাকেন। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে পড়াশোনায় বেশি মনোযোগী। এ কারণে ছেলেরা পরীক্ষার ফলাফলে পিছিয়ে পড়ছেন।
রাজশাহী সরকারি মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার মাহমুদ জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তাঁর কলেজের ৯৩ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছেন। তাঁর ধারণা, গ্রামের কলেজের শিক্ষার্থীদের কম পাসের হার বোর্ডে ছেলেদের পাসের হারের ওপর প্রভাব ফেলেছে। তাই গড় পাসের হার কমে গেছে।
গ্রামের কলেজে খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। পুঠিয়া উপজেলার পঁচামাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের পাসের হার এবার ২৫ দশমিক ১৫। অধ্যক্ষ বিষ্ণুপদ সাহা বলেন, তাঁর জীবদ্দশায় এমন ফলাফল দেখেননি।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারে এগিয়ে ঢাকা, পিছিয়ে কুমিল্লাচারঘাটের ডাকরা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুর রউফ বলেন, গ্রামের শিক্ষার্থীরা যাঁরা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন, তাঁদের প্রায় সবাই শহরের কলেজে চলে যান। দরিদ্র ও জিপিএ-৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীরাই বেশি গ্রামের কলেজে ভর্তি থাকেন। এই শিক্ষার্থীদের নিয়ে এইচএসসিতে ভালো ফল করা চ্যালেঞ্জিং। তারপরও তাঁদের কলেজ থেকে ৫৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। তার মধ্যে বিজ্ঞান থেকে একজন ও মানবিক বিভাগ থেকে একজন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা বাইরে সময় কাটান বেশি। মেয়েরা তাঁদের চেয়ে বেশি সময় পড়ার টেবিলে থাকেন। যে কারণে মেয়েরা পরীক্ষায় ভালো করেছেন। আর ফলাফল বিপর্যয়ের যে ঘটনা, সেটা সারা দেশেই হয়েছে। বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা গত বছর বেশি বইবিমুখ ছিলেন। যে কারণে শুধু রাজশাহীতে নয়, সারা দেশের ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার কমে গেছে।
সর্বোচ্চ পাসের হার কোন বোর্ডে, দেখুন ফলাফল