কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি।  এ কারণে নদীগুলোতে ফেরি পারাপারে দেখা দিয়েছে জটিলতা। বিশেষ করে ঘাটের রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় রবিবার (২৫ মে) সকাল থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। ফলে সড়কপথে জেলা শহরের সঙ্গে হাওর এলাকায় যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল ফেরি চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, “পানি বৃদ্ধির কারণে ফেরিঘাটের রাস্তা তলিয়ে গেছে। তাই হাওরে নদীতে ব্যবহৃত ছয়টি ফেরিই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের সব দপ্তরে খবর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে ফেরির পন্টুন খুলে নিয়ে আসা হবে।”

আরো পড়ুন:

ধানের বাম্পার ফলনে ঈদ আনন্দ হাওর পাড়ের কৃষকের ঘরে

হাওরে ধানের বাম্পার ফলন, দাম কমে যাওয়ায় চিন্তায় কৃষক

সওজ সূত্রে জানা গেছে, পানি বৃদ্ধির কারণে হাওরের সঙ্গে জেলার করিমগঞ্জের বালিখোলা ও চামড়াঘাট, মিঠামইনের শান্তিপুর ফেরিঘাট, ইটনার বড়িবাড়ি ও বলদা ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফেরি চলাচল। ফেরি বন্ধ থাকায় এখন অনেকেই ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ঘোরাউত্রা ও ধনু নদী পার হয়ে জেলা শহরে আসছেন। 

নদীতে পানি বাড়লে ফেরি চলাচলে সুবিধা থাকলেও হাওরের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। কারণ হাওরের নদীগুলোতে পলি জমে ও নদী খনন না হাওয়ায় পাড়ে ফেরি রাখা সম্ভব হয় না। তাই যোগাযোগের রাস্তাটিও ডুবে যায়।

কৃষক মো.

মোফাজ্জল মিয়া বলেন, “গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আমরা অনেক বিপদে পড়ছি। হঠাৎ নদীতে পানি বাড়তে শুরু করছে। আমার বাড়ি নদীর ওই পাড়ে। বিভিন্ন কাজে বালিখলা ঘাটে আইতে অয়। আগে তো ফেরিতে সহজেই যাইতে পারতাম। কিন্তু, অহন ফেরির রাস্তাতেই পানি উঠছে, তাই সকাল থেইক্কা সব ফেরি বন্ধ। অহন বাধ্য হইয়া নৌকায় যাইতাছি, কিন্তু ভয়ও আছে। নদীতে স্রোতও অনেক বেশি।”

কথা হয় ধান ব্যবসায়ী শামছুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি হাওর থেকে ধান কিনে পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে সড়ক পথে ঘাটে এসে ফেরি দিয়ে বালিখলাঘাট পার হয়ে সহজেই শহর মুখী হতে পারতেন। তিনি বলেন, “নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাব-মার্জিবল রাস্তাতেও পানি উঠতে শুরু করছে। এখন ফেরিও বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। যতটুকু ধান কিনে রাখছি, সেটা এখন নৌকাযোগেই আনতে হবে।”

২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার সঙ্গে শুকনো মৌসুমে সড়কপথে জেলা শহরের যাতায়াতের জন্য মিঠামইন-করিমগঞ্জ ও ইটনা-করিমগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন নদীতে ৬টি ফেরি চালু করে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর।

এর মধ্যে মিঠামইন-করিমগঞ্জ সড়কের ঘোড়াউত্রা নদীর মিঠামইন সদরে শান্তিপুর ঘাট ও বাউলাই নদীর করিমগঞ্জ সুতারপাড়া ইউনিয়নের বালিখলা ঘাটে দুইটি ফেরি রয়েছে। ইটনা-করিমগঞ্জ সড়কের ধনু নদীর ইটনা সদর ইউনিয়নের বলদা ঘাট, ধনু নদীর শাখা নদী বড়িবাড়ি ইউনিয়নে বড়িবাড়ি ঘাট ও বাউলাই নদীর করিমগঞ্জের চামড়া বন্দরে তিনটি ফেরি চলাচল করে। আরেকটি ফেরি অষ্টগ্রাম থেকে বাজিতপুরে চলাচল করে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “প্রতিদিনই একটু একটু করে হাওরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। গত কয়েকদিনে টানা বৃষ্টির কারণেই মূলত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর জুনের মাঝামাঝি হাওর জুড়ে পানি বাড়তে দেখা যায়।

ঢাকা/রুমন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ওর নদ ক শ রগঞ জ ম ঠ মইন হ ওর র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের অনুমতি না পাওয়ায় ভুটানের ট্রানশিপমেন্ট পণ্য বুড়িমারীতে আটকে

বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতের ভেতর দিয়ে ভুটানকে ট্রানশিপমেন্টের পণ্য নেওয়ার অনুমোদন দেয়নি প্রতিবেশী ভারত। ফলে থাইল্যান্ড থেকে জাহাজে করে ভুটানের আনা পরীক্ষামূলক ট্রানশিপমেন্টের পণ্যের চালান এখন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে আটকে আছে।

জানা গেছে, থাইল্যান্ডের ব্যাংককের আবিত ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড ৮ সেপ্টেম্বর ভুটানের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আবিত ট্রেডিংয়ের জন্য ছয় ধরনের পণ্য ফলের জুস, জেলি, শুকনা ফল, লিচু ফ্লেভারের ক্যান্ডি ও শ্যাম্পু কনটেইনারে করে পাঠায়। থাইল্যান্ডের ল্যাম চ্যাবাং বন্দর থেকে পাঠানো ওই চালান ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছায়। এরপর বুড়িমারীর স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনারটি আনা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে ভারত হয়ে ভুটানে এসব ট্রানশিপমেন্টের পণ্য যেতে প্রয়োজনীয় অনুমোদন চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পায়নি। ফলে সেখানেই পড়ে আছে ভুটানের ট্রানশিপমেন্টের পণ্য।

বুড়িমারী স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও বেনকো লিমিটেডের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম থেকে আসা ভুটানের পরীক্ষামূলক ট্রানশিপমেন্ট চালান বুড়িমারীতে রয়েছে। ভারত এখনো অনুমতি দেয়নি, তাই চালানটি পাঠানো যাচ্ছে না। অনুমতি মিললেই পাঠানো হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গতকাল থেকে ট্রানশিপমেন্ট কনটেইনারটি বন্দরের মাঠে অবস্থান করছে।’ বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার (এসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভুটানের পণ্যের চালানের সব কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ভারতীয় কাস্টমস থেকে অনুমতি পাওয়ামাত্রই আমরা চালানটি ভুটানের পথে পাঠাতে পারব।’

উল্লেখ্য, ২২ মার্চ ২০২৩ বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে একটি প্রটোকল চুক্তি সই হয়। এর এক বছর পর, ২০২৪ সালের এপ্রিলে ভুটানে আয়োজিত দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়—বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ও সড়কপথ এবং ভারতের সড়কপথ ব্যবহার করে ভুটানে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি ট্রানশিপমেন্ট চালান পাঠানো হবে।

এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রামে আসা পণ্যের প্রথম কনটেইনারটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান এনএম ট্রেডিং করপোরেশন গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটায় বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাঠায়। এরপর বুড়িমারীর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বেনকো লিমিটেড কয়েক দফা চেষ্টা করেও চালানটি ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের অনুমতি না পাওয়ায় ভুটানের ট্রানশিপমেন্ট পণ্য বুড়িমারীতে আটকে