সাবেক এমপি স্বপনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
Published: 25th, May 2025 GMT
জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের নামে ২৮টি ব্যাংক হিসাবে ৬৫৩ কোটি ১৬ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাবেক এই এমপির নামে রয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার সম্পদ। আর তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ টাকার সম্পদ।
ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক এমপি আবু সাঈদ ও তার স্ত্রী মেহবুবা আলমের বিরুদ্ধে দু'টি মামলা করেছে দুদক। রোববার কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে মামলা দু'টি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সাবেক এই এমপির নিজের ও যৌথ প্রতিষ্ঠানের নামে ২৮টি ব্যাংক হিসাবে ৩২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা জমা ও ৩২৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা উত্তোলনসহ মোট ৬৫৩ কোটি ১৬ লাখ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করা হয়েছে। তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। অপরাধলব্ধ ওই অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে দুদক আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদক জানায়, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের স্ত্রী মেহবুবা আলমের নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২ কোটি ২২ লাখ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। এই সম্পদ তিনি ভোগ-দখলে রেখেছেন। তিনি একজন গৃহিনী। ওই টাকার সম্পদ অর্জনে তার কোনো ব্যবসা বা আয় সৃস্টিমূলক খাত পাওয়া যায়নি অনুসন্ধানে। তার স্বামী অপরাধলব্ধ অর্থ স্ত্রীর নামে রেখেছেন। এই কারণে স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা মামলায় সাবেক এমপি আবু সাঈদকেও আসামি করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব ক এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
সমাধান কতদূর?
ডিএসসিসি-ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথের বিষয় আদালতের রায়ের দুই মাস অতিক্রান্তের পরও ঝুলিয়া থাকা রহস্যজনক। কারণ, এহেন পরিস্থিতিতে একদিকে আদালতের রায় উপেক্ষা করিবার নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হইতেছে, অন্যদিকে ইশরাক সমর্থকগণের কর্মসূচিতে নগরবাসী সেবাবঞ্চিত থাকিতেছেন। এমনকি চলাচলের সমস্যাসহ বিবিধ দুর্ভোগ পোহাইতে হইতেছে ডিএসসিসির আওতাবহির্ভূত যাত্রীদেরও।
আমরা জানি, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইশরাকের আবেদনের ভিত্তিতে গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল নির্বাচনটির ফল বাতিল, তৎসহিত ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করিয়া রায় প্রদান করেন। উহার এক মাস পর তাঁহাকে মেয়র ঘোষণা করিয়া গেজেটও প্রকাশিত হয়। কিন্তু অদ্যাবধি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তদনুযায়ী ইশরাককে শপথ পাঠের পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। এমনকি ইশরাক ও তাঁহার সমর্থকগণ গত ১৪ মে হইতে নগর ভবন অবরোধ এবং প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সম্মুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করিবার পরও মন্ত্রণালয়ের চৈতন্যোদয় হয় নাই। ইশরাকের শপথ প্রতিরোধে হাইকোর্টে দাখিলকৃত রিট আবেদন খারিজ হইবার পরও মন্ত্রণালয়ের অনড় অবস্থানের হেতু কী?
ইশরাক হোসেন ও তাঁহার সমর্থকরা শনিবার হইতে পুনরায় নগর ভবনে অবস্থান গ্রহণ করিয়াছেন। যথারীতি ফটকগুলি তালাবদ্ধ করিয়া তাহারা সকল সেবা কার্যক্রম বন্ধ করিয়া দিয়াছেন। শুধু উহাই নহে; রবিবারের মধ্যে শপথের বন্দোবস্ত না হইলে কঠোরতর আন্দোলনের হুমকি দিয়াছেন তাহারা। এই আশঙ্কা অমূলক নহে, ডিএসসিসির মেয়র হিসাবে ইশরাকের শপথ গ্রহণ কিংবা আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টির সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাধান না হইলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিবে, যাহা কোনো পক্ষের জন্যই সুখকর হইবে না। সর্বোপরি নগরবাসীকে ইহার চূড়ান্ত ভুক্তভোগী হইতে হইবে।
ইশরাক হোসেনের শপথ ঘিরিয়া অদ্যাবধি সংঘটিত ঘটনাবলি হইতে প্রতীয়মান, বিএনপি কিংবা ইশরাক সম্ভবত বিষয়টির চূড়ান্ত দেখিয়া ছাড়িবেন। বস্তুত ইতোপূর্বে তিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রদত্ত একাধিক পোস্টে বিষয়টি স্পষ্টও করিয়াছেন। বিষয়টি আরও কিছুদিন অনিষ্পন্ন থাকিলে উহা যে নূতন কোনো রাজনৈতিক সমস্যার জন্ম দিবে না– তাহাও নিশ্চিত করিয়া বলা যায় না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ কেবল নগরবাসীকে নহে, সমগ্র দেশবাসীকেই পোহাইতে হইতে পারে। এহেন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব এমন এক সময়ে হইয়াছে, যখন যানজটে নগরজীবন ইতোমধ্যে নাকাল হইয়া চলিয়াছে।
জুলাই আন্দোলনের ধাক্কায় বিগত সরকারের সহিত অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিদের ন্যায় ঢাকার দুই সিটি মেয়রও বিদায় লইবার কারণে নগরবাসী কীরূপ বঞ্চনা ও দুর্ভোগের শিকার হইতেছেন, তাহা অজানা নহে। সরকার এই সকল প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ করিলেও নগরবাসীর দুর্ভোগ দূর হয় নাই। তাই আদালতের আদেশের বদৌলতে হইলেও অন্তত ডিএসসিসিতে একজন জনপ্রতিনিধি আসীন হইবার যেই সুযোগ আসিয়াছে, সরকারের তাহা গ্রহণ করা উচিত বলিয়া আমরা মনে করি। উপরন্তু অনুরূপ প্রক্রিয়ায় ঘোষিত বিএনপিদলীয় নেতাকেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে মান্য করিবার পর ইশরাকের বিষয়টি ঝুলাইয়া রাখিবার যুক্তি কী? সরকারের নীতিনির্ধারকগণ দ্রুত বিষয়টি অনুধাবন করিবেন– এই প্রত্যাশা আমাদের।