কাহারও ভালো লাগিলেও গাই, ভালো না লাগিলেও গাহিয়া যাই
Published: 25th, May 2025 GMT
আমার প্রিয় তরুণ ভ্রাতৃগণ!
আপনারা কি ভাবিয়া আমার ন্যায় ক্ষুদ্র ব্যক্তিকে আপনাদের সভাপতি নির্বাচন করিয়াছেন, জানি না। দেশের জাতির ঘনঘোর-ঘেরা দুর্দিনে দেশের জাতির শক্তি-মজ্জা-প্রাণস্বরূপ তরুণদের যাত্রাপথের দিশারি হইবার স্পর্ধা বা যোগ্যতা আমার কোনো দিন ছিল না, আজও নাই। আমি দেশকর্মী-দেশনেতা নই, যদিও দেশের প্রতি আমার মমত্ববোধ কোনো স্বদেশপ্রেমিকের অপেক্ষা কম নয়। রাজ-লাঞ্ছনা ও ত্যাগ-স্বীকারের মাপকাঠি দিয়া মাপিলে হয়তো আমি তাঁহাদের কাছে খর্ব pigmy বলিয়া অনুমিত হইব। তবু দেশের জন্য অন্তত এইটুকু ত্যাগ স্বীকার করিয়াছি যে, দেশের মঙ্গল করিতে না পারিলেও অমঙ্গলচিন্তা কোনদিন করি নাই, যাঁহারা দেশের কাজ করেন তাঁহাদের পথে প্রতিবন্ধক হইয়া দাঁড়াই নাই। রাজ-লাঞ্ছনার চন্দন-তিলক কোনো দিন আমারও ললাটে ধারণ করিবার সৌভাগ্য হইয়াছিল, কিন্তু তাহা আজ মুছিয়া গিয়াছে। আজ তাহা লইয়া গৌরব করিবার অধিকার আমার নাই।
আমার বলিতে দ্বিধা নাই যে, আমি আজ তাহাদেরই দলে যাঁহারা কর্মী নন-ধ্যানী। যাঁহারা মানবজাতির কল্যাণ সাধন করেন সেবা দিয়া, কর্ম দিয়া, তাঁহারা মহৎ, কিন্তু সেই মহৎ হইবার প্রেরণা যাহারা জোগান, তাঁহারা মহৎ যদি না-ই হন অন্তত ক্ষুদ্র নন। ইহারা থাকেন শক্তির পেছনে রুধির-ধারার মতো গোপন, ফুলের মাঝে মাটির মমতা-রসের মতো অলক্ষ্যে। আমি কবি। বনের পাখির মতো স্বভাব আমার গান করায়। কাহারও ভালো লাগিলেও গাই, ভালো না লাগিলেও গাহিয়া যাই। বায়স-ফিঙে যখন বেচারা গানের পাখিকে তাড়া করে, তীক্ষ্ণ চঞ্চু দ্বারা আঘাত করে, তখনো সে এক গাছ হইতে উড়িয়া আর গাছে গিয়া গান ধরে। তাহার হাসিতে গান, তাহার কান্নায় গান। সে গান করে আপনার মনের আনন্দে, যদি তাহাতে কাহারও অলস-তন্দ্রা মোহ-নিদ্রা টুটিয়া যায়, তাহা একান্ত দৈব। যৌবনের সীমা পরিক্রমণ আজো আমার শেষ হয় নাই, কাজেই আমি যে গান গাই তাহা যৌবনের গান। তারুণ্যের ভরা-ভাদরে যদি আমার গান জোয়ার আনিয়া থাকে তাহা আমার অগোচরে। যে চাঁদ সাগরে জোয়ার জাগায় সে হয়তো তাহার শক্তির সম্বন্ধে আজো লা-ওয়াকিফ।-
আমার একমাত্র সম্বল, আপনাদের-তরুণদের প্রতি আমার অপরিসীম ভালোবাসা, প্রাণের টান। তারুণ্যকে-যৌবনকে-আমি যেদিন হইতে গান গাহিতে শিখিয়াছি সেই দিন হইতে বারে বারে সালাম করিয়াছি, তাজিম করিয়াছি, সশ্রদ্ধ নমস্কার নিবেদন করিয়াছি। গানে কবিতায় আমার সকল শক্তি দিয়া তাহারই জয় ঘোষণা করিয়াছি, স্তব রচনা করিয়াছি। জবাকুসুমসঙ্কাশ তরুণ অরুণকে দেখিয়া প্রথম মানব যেমন করিয়া সশ্রদ্ধ নমস্কার করিয়াছিলেন, আমার প্রথম জাগরণ-প্রভাতে তেমনি সশ্রদ্ধ বিস্ময় লইয়া যৌবনকে অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়াছি, তাহার স্তবগান গাহিয়াছি। তরুণ অরুণের মতোই যে তারুণ্য তিমিরবিদারী সে যে আলোর দেবতা। রঙের খেলা খেলিতে খেলিতে তাহার উদয়, রং ছড়াইতে ছড়াইতে তাহার অস্ত। যৌবনসূর্য যথায় অস্তমিত, দুঃখের তিমিরকুন্তলা নিশীথিনীর সেই তো লীলাভূমি।
আমি যৌবনের পূজারী কবি বলিয়াই যদি আমায় আপনারা আপনাদের মালার মধ্যমণি করিয়া থাকেন, তাহা হইলে আমার অভিযোগ করিবার কিছুই নাই। আপনাদের এই মহাদান আমি সানন্দে শির নত করিয়া গ্রহণ করিলাম। আপনাদের দলপতি হইয়া নয়-আপনাদের দলভুক্ত হইয়া, সহযাত্রী হইয়া। আমাদের দলে কেহ দলপতি নাই; আজ আমরা শত দিক হইতে শত শত তরুণ মিলিয়া তারুণ্যের শতদল ফুটাইয়া তুলিয়াছি। আমরা সকলে মিলিয়া এক সিদ্ধি এক ধ্যানের মৃণাল ধরিয়া বিকশিত হইতে চাই। (সংক্ষেপিত)
নজরুল-রচনাবলী থেকে সংগৃহীত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপন দ র ন কর য় কর য় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
‘বউ পেটানো’ অভিনেতার দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন
সৈয়দা আলিজা সুলতানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খান। তাদের এই সংসার ভেঙে গেছে। আলিজা অভিযোগ করেছিলেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন ফিরোজ। কেবল তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ছবিও প্রকাশ করেছিলেন। এরপর তোপের মুখে পড়েন ফিরোজ খান। নেটিজেনদের অনেকে তাকে ‘বউ পেটানো’ অভিনেতার তকমাও দেন।
প্রথম সংসার ভাঙার প্রায় দুই বছর পর ডা. জয়নবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজ খান। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। মূলত, বিনোদনভিত্তিক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ডা. জয়নবের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। তারপরই শুরু হয় ফিরোজ খানের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জয়নবের অভিযোগের স্ক্রিনশট।
ডা. জয়নব কথিত এই নোটে বলেন, “আমি আমার সহনসীমার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অবিরাম মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ক্লান্ত। এমন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আছি, যে আমাকে বিশ্বাস করে না। আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এখন ক্লান্ত। প্রতিটি কথোপকথন একটা লড়াইয়ের মতো লাগে, প্রতিটি মতবিরোধ যেন যুদ্ধ। এমন আচরণের শিকার হয়ে আমি ক্লান্ত। আমি যখন তাকে কিছু বলি, সে আমার উপর রাগ ঝাড়ে।”
স্ত্রী জয়নবের সঙ্গে ফিরোজ খান
সুখ স্মৃতিগুলো কষ্টে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এমন মন্তব্য করে জয়নব বলেন, “সত্যি বলতে, আমরা একসঙ্গে যে স্মৃতিগুলো তৈরি করেছিলাম, তা এখন কষ্ট ও আঘাতে ঢাকা পড়ে গেছে। আমি অসংখ্যবার তাকে ক্ষমা করেছি। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো কখনো পুরোপুরি সারেনি। বুঝতে পারছি, আমি এক ধরণের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে বাস করছি, একটা সম্পর্কে আটকে আছি, যা আমার জীবনের শক্তি শুষে নিচ্ছে। আমি জানি, আমি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কোমলতার যোগ্য। সবকিছু ঠিক আছে—আমি আর এই ভান করতে চাই না।”
ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জয়নব বলেন “এমন বিষাক্ত একটা সম্পর্কের জন্য আমি আমার সুখ ত্যাগ করেছি। আমি এখন নিজের জন্য, নিজের মানসিক সুস্থতার জন্য দাঁড়াচ্ছি। বেদনা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, আমি আমার জীবনের এই অধ্যায় (বিবাহিত জীবন) শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ডিভোর্স নিচ্ছি। কারণ আমি জানি, এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর জন্য আমি প্রস্তুত, যেখানে আমাকে মূল্য দেওয়া হবে, সম্মান করা হবে, ভালোবাসা হবে।”
জয়নবের এই ‘ডিভোর্স নোট’ নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন ফিরোজ খান। তবে এর আগে ফিরোজ খানের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে দেখা যায়। তাতে জয়নবের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল’ ও ‘মানসিক চাপের’ অভিযোগ তোলেন। যদিও পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। পাশাপাশি এই অভিনেতা জানান, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল।
ডা. জয়নব
তবে সংসার ভাঙার গুঞ্জনে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি ফিরোজ খান কিংবা তার স্ত্রী ডা. জয়নব। তবে বিনোদনভিত্তিক যে পেজ থেকে জয়নবের ‘ডিভোস নোট’ ছড়ানো হয়েছে, সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাতে জয়নব লেখেন, “এই ধরনের পেজগুলো আনফলো করুন অথবা রিপোর্ট করুন। এই ধরনের পেজ থেকে ভুয়া খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিরক্ত করা হচ্ছে। সত্যি বলছি, আমি জানি না কীভাবে তারা আমার স্টোরিতে পোস্টটি করার অ্যাকসেস পেয়েছে। এই পোস্ট আমি কখনো করিনি।”
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম স্ত্রী সৈয়দ আলিজা সুলতানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় ফিরোজ খানের। এ সংসারে সুলতান খান ও ফাতিমা খান নামে দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে দুই সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আদালতে মামলা লড়ছেন এই প্রাক্তন দম্পতি। ২০২৪ সালে ডা. জয়নবকে বিয়ে করেন ফিরোজ খান।
ঢাকা/শান্ত