দল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারের যাতে দূরত্ব না হয়
Published: 26th, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে সবাই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁরা এ–ও বলেছেন, রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারের যাতে দূরত্ব তৈরি না হয়, সে জন্য সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
রোববার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় দুই দফায় বিভিন্ন দল ও সংগঠনের ১৯ নেতা বৈঠক করেন। পরে রাজনৈতিক নেতারা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দেশের ভেতরে ও বাইরে।
বিকেলে প্রথম দফায় বৈঠকে অংশ নেন ১০ জন রাজনৈতিক নেতা। তাঁরা হলেন এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান (মঞ্জু), ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মুক্তিযুদ্ধ ও দুর্যোগবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ও ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
এর আগে শনিবার রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে তিন দলই নিজেদের আগের অবস্থান তুলে ধরেছে।
প্রথম দফায় বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য দূরত্বের বিষয়টি তুলেছেন কেউ কেউ। কেন এমন দূরত্ব তৈরি হবে, সেই প্রশ্ন তোলেন একজন নেতা। দূরত্ব কমাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের নিয়মিত আলাপ-আলোচনার ওপর গুরুত্ব দেন নেতাদের অনেকে। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, সরকারের কোনো কোনো মহল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে চায়। সংবেদনশীল বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন অনেকে। দুই ছাত্র উপদেষ্টার সরকারে থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিভিন্ন দলের নেতারা। প্রধান উপদেষ্টার ডাকে এ বৈঠকে এসেছেন বলে জানান তাঁরা। সবাই অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি সমর্থনের কথাও জানান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন ধর্মভিত্তিক দলসহ বিভিন্ন দলের নেতারা। রোববার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীতে আরও গ্রাম প্লাবিত, দুর্ভোগ
ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২২টি ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে নতুন করে আরও ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এসব গ্রাম প্লাবিত হয়। এ নিয়ে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার মোট ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। এদিকে নোয়াখালীতে টানা পাঁচ দিন বৃষ্টি ঝরে গতকাল থেমেছে। ধীরে নামছে পানি। তবে জনদুর্ভোগ কাটেনি। জেলা শহর মাইজদীসহ সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
ফেনীতে নতুন করে প্লাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে চারটি ফেনী সদর উপজেলা, পাঁচটি ছাগলনাইয়া উপজেলা ও একটি দাগনভূঞা উপজেলার। তবে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মুত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি দৌলতপুর বন্দুয়ার বাসিন্দা।
কিছু এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনও পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার কারণে পাঁচ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি কমে যাওয়ায় কিছু কিছু যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল শুরু করেছে।
জেলার ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৯ হাজার ২০০ বাসিন্দা অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকা থেকে অন্তঃসত্ত্বা, অসুস্থসহ ১৮ জনকে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার করেছেন। ফুলগাজী ও পরশুরামের পানি নামতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলো। পানিতে তলিয়ে আছে মানুষের ঘরবাড়ি, আসবাব, ফসলি জমি। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। চরম ভোগান্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে ফেনীর ফাজিলপুর ইউনিয়নের দুটি ও মোটবি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম, ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম এবং দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশেও বন্যার পানি বেড়ে গিয়ে একটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়।
বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ভাঙা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হলে দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১১২ গ্রামের মানুষের জন্য সব অংশীজনের সহযোগিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ঘোষিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার ২০০ মানুষ অবস্থান করছেন। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নোয়াখালীতে ধীরে নামছে পানি
শুক্রবার বিকেলে নোয়াখালী জেলা শহরের সেন্ট্রাল রোড, আল ফারুক একাডেমি, হাউজিং এস্ট্রেট, হাউজিং বালুর মাঠ আবাসিক এলাকা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালত সড়ক, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয় ও নতুন বাসস্ট্যান্ডের জেলখানা সড়কে দেখা যায়, জলাবদ্ধতা কমতে শুরু করেছে। তবে সড়কগুলোতে এখনও পানি আছে। ড্রেনের ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে লোকজন। বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে পিচ উঠে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কের আশপাশের অনেক বাড়িঘরে এখনও পানি।
পৌরসভার টাউন হল মোড় এলাকার ব্যবসায়ী জেহাদ হোসেন বলেন, ‘টাউন হল-সরকারি আবাসিক এলাকা সড়কটি অবহেলিত। ড্রেনগুলো বহু বছর পরিষ্কার না করায় কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে।’ লক্ষ্মীনারায়ণপুর মহল্লার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘বসতঘরে পানি ঢুকেছে। পাঁচ দিন ধরে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। পানির মধ্যেই রান্না ও খাওয়ার কাজ চলছে।’
টানা বৃষ্টিতে জেলায় ৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর ফসলি জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নোয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, বৃষ্টির পানিতে ৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও শাকসবজির মাঠ নিমজ্জিত হয়েছে।
সদর উপজেলার মুকিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমার দেড় একর জমির আউশ ধান, বস্তায় চাষ করা ১০০ বস্তা আদা, পেঁপে বাগান, ৩০ শতক জমির আমন বীজতলা ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি কমে যাওয়ায় লোকজন বাড়ি ফিরছেন। গাবুয়া খাল ও নোয়াখালী খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পাস ও বরাদ্দ পেলেই খনন কাজ শুরু হবে।
এদিকে সারাদেশে আরও ১০ দিন বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া অথবা বজ্রসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো তথ্য)