স্মার্টফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানের ৫ পদ্ধতি
Published: 26th, May 2025 GMT
ঘরে বা দূরে কোথাও ভ্রমণের সময় স্মার্টফোনে নেটওয়ার্ক না থাকলে ভোগান্তির সীমা থাকে না। কল করা যায় না, ইন্টারনেট বন্ধ থাকে, জিপিএসও কাজ করে না। ফলে জরুরি প্রয়োজনে পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। তবে এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি ব্যবহার করে স্মার্টফোনের দুর্বল সিগন্যাল সমস্যার সমাধান করা যায়। স্মার্টফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যা দূর করার পদ্ধতিগুলো দেখে নেওয়া যাক।
১.
এয়ারপ্লেন মোড
মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হলে প্রথমেই ফোনের ‘এয়ারপ্লেন মোড’ চালু করে কয়েক সেকেন্ড পর তা বন্ধ করে দিতে হবে। এতে ফোনের নেটওয়ার্ক, ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথ সংযোগ নতুন করে চালু হয়, যা নিকটবর্তী মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। অনেক সময় এ পদ্ধতিতে নেটওয়ার্কের সিগন্যাল দ্রুত ফিরে পাওয়া যায়।
২. নেটওয়ার্ক সেটিংস রিসেট
যদি এয়ারপ্লেন মোড চালু বা বন্ধ করেও কাজ না হয়, তাহলে ফোনের নেটওয়ার্ক সেটিংস রিসেট করতে হবে। ফোনের নেটওয়ার্ক সেটিংস রিসেট করলে মোবাইল ডেটা, ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথ–সংক্রান্ত আগের সেটিংস মুছে গিয়ে ডিফল্ট কনফিগারেশন চালু হয়। তবে রিসেটের ফলে ফোনে সংরক্ষিত ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড, ভিপিএন প্রোফাইল ও মোবাইল অপারেটরের নির্দিষ্ট কিছু সেটিংস মুছে যেতে পারে। তাই সেটিংস রিসেট করার আগে প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
৩. ক্যারিয়ার সেটিংস হালনাগাদ
নেটওয়ার্কের সিগন্যাল দুর্বল হওয়ার একটি সাধারণ কারণ হতে পারে ক্যারিয়ার সেটিংস পুরোনো হয়ে যাওয়া। মোবাইল অপারেটররা নিয়মিত নতুন ক্যারিয়ার সেটিংসের আপডেট পাঠায়, যা কল, ডেটা ও বার্তার গুণগত মান উন্নত করে। আইফোনে এই আপডেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হলেও অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোনে তা ম্যানুয়ালভাবে ইনস্টল করতে হয়। তাই ফোনের সেটিংসে গিয়ে ক্যারিয়ার ও সিস্টেম আপডেট রয়েছে কি না, তা যাচাই করতে হবে।
৪. স্মার্টফোন রিস্টার্ট
অনেক সময় দীর্ঘদিন ব্যবহারে ফলে ফোনের সফটওয়্যারে সাময়িক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার প্রভাব পড়ে নেটওয়ার্কে। তাই ফোন রিস্টার্ট করলে এ ধরনের সমস্যার সমাধান হতে পারে। রিস্টার্টের ফলে অপারেটিং সিস্টেম নতুন করে চালু হয় এবং অনেক সময় সিগন্যাল–সংক্রান্ত ত্রুটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঠিক হয়ে যায়।
৫. সিম কার্ডের সংযোগ পরীক্ষা
সব পদ্ধতি প্রয়োগের পরও যদি স্মার্টফোনে সিগন্যাল না পাওয়া যায়, তাহলে সিম কার্ড খুলে তা আবার লাগিয়ে দেখা যেতে পারে। কার্ডে ধুলা বা ময়লা জমে থাকলে তা নেটওয়ার্ক সংযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। সিম কার্ডে যদি কোনো ধরনের ক্ষয়ের চিহ্ন থাকে কিংবা সেটি পুরোনো হয়, তাহলে মোবাইল অপারেটরের কাছ থেকে নতুন সিম কার্ড সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হবে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ন র ন টওয় র ক স সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।