প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, তাঁরা মনে করেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা প্রজাতন্ত্রের নিয়মকানুন মেনে চলবেন। ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রত্যাহারের দাবিতে সচিবালয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সচিবালয়ে কয়েক দিন ধরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ করছেন। সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য যে সংস্কারের পদক্ষেপ নিচ্ছে, এর বিরুদ্ধে তাঁরা অবস্থান নিয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী?

জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের (সরকার) অবস্থান স্পষ্ট। যদি আপনার গ্রিভেন্স (অসন্তোষ) থাকে, সেটার জন্য আমাদের সচিবেরা আছেন, সচিবদের একটা ছোট কমিটিও আছে, তাঁদের বলতে পারেন এটা। আমরা মনে করি, প্রজাতন্ত্রের যাঁরা কর্মচারী, তাঁরা প্রজাতন্ত্রের নিয়মকানুন মেনে চলবেন।’

আরেকজন সাংবাদিক বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে যে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতির বাসভবন এবং সচিবালয়ের সড়কগুলোয় সভা, বিক্ষোভ নিষিদ্ধ। কিন্তু মঙ্গলবারও সচিবালয়ের সামনে গিয়ে সচিবদের বা ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করেছে। সেখানেও পুলিশ কোনো ধরনের বাধা দেয়নি। কারও বিষয়ে সরকার এ রকম সহনশীলতা কেন দেখায় যে নিষিদ্ধ জায়গায় আইন ভঙ্গ করে বিক্ষোভ হলেও তা ঠেকানোর পদক্ষেপ দেখা যায় না?

জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা আশা করব, সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। আইনকে নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আমরা মনে করি, যেকোনো বিষয়েই আপনার যদি গ্রিভেন্স থাকে, সুনির্দিষ্ট (সরকারের) অফিশিয়াল বা এজেন্সির কাছে আপনারা জানাতে পারেন।’

জামায়াত নেতা আজহারুলে খালাস প্রসঙ্গ

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বলেন, আজকে একটি বড় রায় হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম খালাস পেয়েছেন। গণমাধ্যম মারফত জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান বিচারপতি দেখা করেছেন। অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন যে এখানেও সরকার একটি গোষ্ঠীর কাছে বা কারও কাছে নতি স্বীকার করেছে। এ ধরনের কোনো কিছু ঘটেছে কি না? সেই সাংবাদিক আরও বলেন, রাষ্ট্রপক্ষে যিনি ছিলেন, তাঁর বিষয়েও জানা গেছে তিনি জামায়াতের একজন নেতার সন্তান। এই বিষয়গুলো নিয়ে সরকার আসলে কী ভাবে?

জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আদালতের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। এটা আদালতের এখতিয়ার।

শফিকুল আলম আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি দু-তিন দিন আগে এসেছিলেন। কয়েক দিন আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন, ট্রানজিশনাল জাস্টিস—এসব বিষয় আছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের বিষয়ে কথা বলতে তিনি এসেছিলেন। এর বাইরে কিছু না।

বাংলাদেশ-চীন বিনিয়োগ সম্মেলন

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ উদ্যোগে আগামী ১ জুন দিনব্যাপী ‘চায়না-বাংলাদেশ কনফারেন্স অব ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড শো’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে চীনের প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান এবং ২৫০ জন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করবেন। চীনের চারটি চেম্বার অব কমার্সের শীর্ষ প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন। দেশে এই প্রথম এত বিপুলসংখ্যক চীনের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী আসছেন।

গত এপ্রিল মাসে দেশে যে বিনিয়োগ সম্মেলন হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতায় এটি হচ্ছে বলেও জানান আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় হামাসের প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার দাবি নেতানিয়াহুর

গাজা হামাসের প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বুধবার ইসরায়েলের পার্লামেন্টে (নেসেট) এ কথা বলেন তিনি। তবে সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে হামাস তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানায়নি।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলার পরিকল্পনাকারী ও হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার। ২০২৪ সালের অক্টোবরে গাজার রাফা এলাকায় ইয়াহিয়া সিনওয়ারও ইসরায়েলি সেনাদের হাতে প্রাণ হারান। তাঁর মৃত্যুর পর মোহাম্মদ সিনওয়ার গাজায় হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।

মোহাম্মদ সিনওয়ারের অবস্থান নিশানা করে চলতি মাসে দক্ষিণ গাজার একটি হাসপাতালে হামলা চালায় ইসরায়েল। গত ২১ মে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, খুব সম্ভবত মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। বুধবার নেসেটে নেতানিয়াহু বলেন, মোহাম্মদ সিনওয়ারকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় ২০ মাসে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হামাস নেতাদের নামও তুলে ধরেন তিনি।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা হামাসের পুরোপুরি পরাজয়ের দিকে একটি নাটকীয় মোড় দেখতে পেয়েছি।’ ইসরায়েল এখন গাজায় ‘খাদ্য বিতরণের নিয়ন্ত্রণও নিচ্ছে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। এখানে তিনি গাজায় নতুন ত্রাণ সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থার কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সংগঠন তা পরিচালনা করছে।

নেতানিয়াহুর এই ঘোষণা এমন এক সময় এসেছে যখন ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা তীব্রতর করেছে। চলতি বছরের শুরুতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ১৮ মার্চ থেকে উপত্যকাটিতে হামলা জোরদার করে ইসরায়েল। ইসরায়েল বলেছে, হামাসের শাসন ও সামরিক ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং গাজায় বন্দী থাকা আটকদের মুক্ত করাই তাদের লক্ষ্য।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্ব ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। সেদিন ২৫০ এরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।

হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজায় পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, উপত্যকাটিতে ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলে হামলার মুখে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি স্থানচ্যুত হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, নিহতদের অধিকাংশই নিরীহ নাগরিক। কতজন যোদ্ধা মারা গেছে, সে বিষয়ে তারা কোনো তথ্য দেননি। ইসরায়েলের দাবি, তারা লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। কিন্তু তারা এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ