বিশ্বজিৎ ও ফাহাদের হত্যার সঙ্গে সোহাগ হত্যার পার্থক্য কোথায়
Published: 13th, July 2025 GMT
পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, বিশ্বজিৎ ও আবরার ফাহাদের হত্যার সঙ্গে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী সোহাগের হত্যার পার্থক্য কোথায়? বিগত ১৫ বছরের আওয়ামী জাহেলিয়াতের সঙ্গে মানুষ কেন অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাসের শাসনকে মেলানোর চেষ্টা করবে? এটা আমাদের রাজনৈতিক পরাজয়।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি- বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।
সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড.
আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক উত্তরণে জুলাই সনদ প্রণয়নে কাজ করছে। আশা করি, সবাই মিলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করা যাবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশকে অনেকেই ‘গণিমতের মাল’ বিবেচনা করে যা খুশি তাই করছেন। ১৫ বছরের আওয়ামী জাহেলিয়াতের সঙ্গে মানুষ কেন এই সরকারের ১১ মাসের শাসনকে মেলানোর চেষ্টা করবে। এটা আমাদের রাজনৈতিক পরাজয়। এত জনসমর্থনের পরও কেন সরকার তা ধরে রাখতে পারল না, তার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার করছেন ভালো কথা। প্রয়োজনে এসবে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিজেরাই মামলা করুন। কঠোর আইনানুগ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিন।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আর যাই করেন, আমাদের কর্মকাণ্ড যেন আওয়ামী জাহেলিয়াতকে অতিক্রম করে না যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষপাতমূলক ভূমিকার সমালোচনা করে বিএনপির সহআন্তর্জাতিক সম্পাদক বারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল– গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার দ্বিধা-বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু সরকার একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে ও তাদের পাশে থেকে জাতিকে আরও দ্বিধা-বিভক্তির পথে ঠেলে দিচ্ছে। চেয়ারের মজা নিতে গেলে দায়িত্বশীল আচরণও করতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের কথা বললেই সংস্কারের ধুয়া তোলা হচ্ছে। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে, সেসব বিষয়েই সংস্কার করুন। বাকিটুকু দেশের ১৮ কোটি মানুষের হাতে ছেড়ে দিন।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আবদুন নূরের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব বাবর চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাসদের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুল মজিদ আতাহারী, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, আহত জুলাইযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফায়েজুর রহমান মনির প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় গণঅভ য ত থ ন গণত ন ত র ক র জন ত ক হত য র আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হাদিকে হত্যার চেষ্টায় নিন্দা ও উদ্বেগ এনসিপির
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর রাজধানীর বিজয়নগরে প্রকাশ্য দিবালোকে চালানো ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ওসমান হাদিকে গুলির বিষয়ে তদন্ত করবে ইসি
কুমিল্লায় নিজের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণ করলেন জামায়াতের প্রার্থী
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ হামলা শুধু একজন প্রার্থীর ওপর নয়, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ওপরও সরাসরি আঘাত। এনসিপি গুরুতর আহত শরিফ ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনা করছে এবং দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করছে।
এই হামলা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নির্বাচনি পরিবেশের ভঙ্গুরতা সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দেয়। বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, শরিফ ওসমান হাদি হামলার আগে হুমকির কথা প্রকাশ্যে জানানোর পরও তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির কার্যালয়ের সামনে বারংবার ককটেল হামলা এবং একজন প্রার্থী হুমকি পাওয়ার পরেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের চরম ব্যর্থতা দায়িত্বহীনতা, অদক্ষতা ও উদাসীনতার নগ্ন উদাহরণ, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
একই সঙ্গে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগ জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলেছে, এবং তাদের অবশিষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী এখনো সক্রিয়ভাবে দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সরকার যদি অবিলম্বে আওয়ামী লীগের এই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা না করে, তবে তারা আবারও গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং দেশকে সহিংস অরাজকতার দিকে ঠেলে দেবে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এখন গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর একে অপরকে দোষারোপ করে রাজনৈতিক লাভ তোলার সময় নয়; এখন সময় প্রকৃত অপরাধী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি আনার। গণঅভ্যুত্থানের শক্তি যদি বিভক্ত হয়, তাহলে সুযোগ নেবে পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও দেশবিরোধী চক্র, যারা অতীতেও হত্যা ও সহিংসতার মাধ্যমে রাজনীতিকে কলুষিত করেছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি দেশের নাগরিক সমাজ, তরুণ প্রজন্ম, পরিবর্তনের পথযাত্রায় থাকা সকল গণতান্ত্রিক শক্তি এবং সর্বোপরি দেশের আপামর জনগণকে সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই, যেকোনো হুমকি, ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উপেক্ষা করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে এনসিপি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
অবিলম্বে এই হামলার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, হুমকির উৎস শনাক্ত করাসহ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা এবং সকল প্রার্থী ও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। শান্তি, নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষায় আমরা দৃঢ়ভাবে দেশবাসীর সাথে আছি এবং থাকব।
ঢাকা/রায়হান/রফিক