আগামী সপ্তাহের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপান নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে না পৌঁছালে, দেশটির ওপর ‘৩০ বা ৩৫ শতাংশ’ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বুধবার (২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প তার তথাকথিত ‘লিবারেশন ডে’-এর অংশ হিসেবে জাপানের ওপর যে ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, এবার তার চেয়ে আরো অনেক বেশি শুল্প আরোপের হুমকি দিয়েছেন। গত ২ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের কাছে ৫১০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র

ইউনূস-রুবিও ফোনালাপে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করায় জোর

তবে কিছুদিন পরেই বেশিরভাগ বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ঘোষিত ওই উচ্চ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন ট্রাম্প, যাতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তারা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য সময় পায়।

সেই বিরতি ৯ জুলাই শেষ হওয়ার কথা এবং ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সময়সীমা বাড়ানোর কথা ভাবছেন না।

টোকিওর সঙ্গে কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব কিনা সে বিষয়েও ট্রাম্প সন্দেহ প্রকাশ করে চলেছেন।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) এয়ার ফোর্স ওয়ানে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জাপানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমি নিশ্চিত নই যে, আমরা কোনো চুক্তি করতে যাচ্ছি। আমার সন্দেহ আছে।” 

ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির হুমকির বিষয়ে জাপান কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) জাপানের ডেপুটি চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি কাজুহিকো আওকি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী বলেছেন তা আমরা জানি, কিন্তু মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিটি মন্তব্যের ওপর আমরা মন্তব্য করি না।”

অন্যান্য অনেক দেশের মতো, জাপানের বেশিরভাগ রপ্তানি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ শতাংশ শুল্কের সম্মুখীন। জাপানি যানবাহন এবং যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ কর রয়েছে। অন্যদিকে ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার জাপানের প্রধান ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেছিলেন যে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য তিনি এমন কোনো ছাড় দেবেন না যা তার দেশের কৃষকদের ক্ষতি করতে পারে।

ট্রাম্পের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল কিনছে না জাপান। গত সোমবার ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে বলেছিলেন, “জাপানের প্রতি আমার প্রচুর শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু তারা আমাদের চাল নেয় না, যদিও তাদের ব্যাপক চালের ঘাটতি রয়েছে।” 

তারই ধারাবাহিকতায় এবার আগামী সপ্তাহের নির্ধারিত সময়সীমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে না পৌঁছালে জাপানের ওপর ‘৩০ বা ৩৫ শতাংশ’ শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেন ট্রাম্প।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প আর প র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়া খুব বড় শক্তি, যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের চুক্তি করা উচিত: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করা। কারণ, রাশিয়া খুব বড় একটি শক্তি। তারা (ইউক্রেন) তা নয়।’

আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন। শোনা যাচ্ছে, যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে বৈঠকে পুতিন ইউক্রেনের আরও ভূমি দাবি করেছেন।

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্প আর পুতিনের বৈঠকটি হয়। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেন। ট্রাম্প জেলেনস্কিকে জানান, যদি কিয়েভের পক্ষ থেকে দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরোটা ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে রাশিয়া বেশির ভাগ জায়গায় যুদ্ধ থামাবে—এমন শর্ত দিয়েছেন পুতিন।

আরও পড়ুনট্রাম্প–পুতিন বৈঠক নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউক্রেনীয়রা, কিন্তু কেন১১ ঘণ্টা আগে

এ বিষয়ে জানাশোনা আছে—এমন একটি সূত্র এ কথা নিশ্চিত করেছে। ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত দোনেৎস্ক অনেক আগে থেকে পুতিনের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু।

জেলেনস্কি এমন চাওয়া প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানায় ওই সূত্র। এরই মধ্যে ইউক্রেনের এক–পঞ্চমাংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দোনেৎস্কের তিন ভাগ এলাকাও তার নিয়ন্ত্রণে। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে রুশ বাহিনী।

ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা এর আগে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চেয়েছিল, সেটা ছাড়াই একটি শান্তিচুক্তি সইয়ের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুনট্রাম্প–পুতিন বৈঠক কি যুদ্ধ থামাতে পারবে, ইতিহাস কী বলছে১৭ ঘণ্টা আগে

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, সবার পক্ষ থেকে এটা নির্ধারণ করা হয়েছে যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটানোর সর্বোত্তম উপায় সরাসরি শান্তিচুক্তিতে যাওয়া। এটা যুদ্ধ বন্ধ করবে। তবে এ চুক্তি নিছকই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নয়, যা প্রায়ই টেকে না।

এদিকে জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সদিচ্ছা না থাকাটা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করার একটি মূল উপাদান হত্যা বন্ধ করা।’ জেলেনস্কি জানান, আগামীকাল সোমবার তিনি ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্প–জেলেনস্কির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে দুই নেতার তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। সেদিন জেলেনস্কির সঙ্গে তর্কে জড়ান যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও।

এবার ট্রাম্প অবশ্য আশা প্রকাশ করেছেন, পুতিন আর জেলেনস্কিকে নিয়ে একসঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন তিনি।

আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিনের সংবাদ সম্মেলনে ‘সংবাদ সামান্যই’১৬ আগস্ট ২০২৫

যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা। তারা ইউক্রেনের পাশে থাকার ও রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, আগামীকাল হোয়াইট হাউসের বৈঠকে জেলেনস্কির পাশাপাশি ইউরোপীয় নেতারাও থাকবেন।

তবে ইউরোপের কোন কোন নেতা হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ পেয়েছেন, সে বিষয়ে কারও পক্ষ থেকে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপে গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ এটা। উভয় পক্ষে ১০ লাখের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইউক্রেনের হাজারো বেসামরিক মানুষ রয়েছেন।

আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ভূখণ্ড হারানোর ভয়—ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক নিয়ে হতাশ ইউক্রেনীয়রা১৫ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ