বাংলাদেশসহ ১৪ দেশে নতুন শুল্কের সময়সীমা ‘শতভাগ চূড়ান্ত নয়’, দর-কষাকষির সুযোগ রাখলেন ট্রাম্প
Published: 8th, July 2025 GMT
১৪ দেশের শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার আবার বাণিজ্যযুদ্ধ উসকে দিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, আগামী আগস্টের মধ্যে চুক্তিতে পৌঁছাতে যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি নমনীয় হতে পারে।
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কিছু বাণিজ্যিক অংশীদারকে চিঠি পাঠিয়ে ট্রাম্প জানিয়েছেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে স্থগিত করা পাল্টা শুল্ক তিন সপ্তাহের মধ্যে, এমনকি আগের চেয়েও বেশি হারে ফিরে আসবে।
চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, টোকিও ও সিউলের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মালয়েশিয়াসহ ১৪ দেশের ওপর ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক বসানোর কথা বলা হয়েছে।
আগস্টের সময়সীমা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নৈশভোজে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বলব, সময়সীমা ঠিকঠাক রয়েছে, তবে একেবারে শতভাগ নয়।’তবে আগের মতো এবারও শুল্ক আরোপ নিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে দর-কষাকষির সুযোগ রাখলেন ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প। তবে এরই মধ্যে তাঁর ঘোষণায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
১ আগস্টের সময়সীমা সম্পর্কে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নৈশভোজে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বলব, সময়সীমা ঠিকঠাক রয়েছে, তবে একেবারে শতভাগ নয়।’
চিঠিগুলোই কি তাঁর চূড়ান্ত প্রস্তাব—জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একে চূড়ান্ত বলব। কেউ যদি ভিন্ন প্রস্তাব দেয় এবং সেটা আমার ভালো লাগে, তবে আমরা সেটা করব।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ‘স্বাধীনতা দিবস’ ঘোষণা করে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। সে সময় ওই সব দেশের জন্য ১০ শতাংশ শুল্ককে ভিত্তি হিসেবে ধার্য করা হয়।
আমি একে (শুল্ক কার্যকরের নতুন সময়) চূড়ান্ত বলছি, তবে কেউ যদি ভিন্ন প্রস্তাব দেয় এবং সেটা আমার ভালো লাগে, তবে আমরা তা করব।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টতবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় ট্রাম্প দ্রুতই ১০ শতাংশের ওপরে যে শুল্ক ছিল, তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। এ অতিরিক্ত শুল্ক আগামীকাল বুধবার থেকে আবার কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের ওই চিঠি পাঠান।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানদের কাছে পাঠানো প্রায় হুবহু এক রকমের চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে পারস্পরিক (স্বার্থের অনুকূল) নয়’—এ কারণেই ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
যদি দেশগুলো পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তবে আরও কড়াকড়ি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
তবে গতকাল ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে আগামীকালের সময়সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছেন।
প্রেসিডেন্টের এখতিয়ারনতুন এ সময়সীমা কার্যত আরেক দফা বিলম্বই এনে দিল। এর ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে আবারও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আসলে চূড়ান্ত সময়সীমা কোনটি।
ট্রাম্পের নিজস্ব সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা চিঠি অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে।
চিঠি পাওয়া অধিকাংশ দেশের শুল্কহার পূর্বঘোষিত হারগুলোর মতোই ছিল; যদিও লাওস ও কম্বোডিয়ার মতো কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে কিছুটা কম দেখা গেছে।
‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধু যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে দুটি চূড়ান্ত চুক্তি হয়েছে। চীনের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি অস্বাভাবিক উচ্চ শুল্ক কিছুটা কমানোর ব্যাপারে একটি সমঝোতা হয়েছে।
গত রোববার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় তিনি ‘সহজে আপস করবেন না’।
ট্রাম্প কেন প্রথমেই জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে গেলেন—জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা লেভিট বলেন, ‘এটা প্রেসিডেন্টের এখতিয়ার। তিনিই দেশগুলো বেছে নিয়েছেন।’
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি কাটলার বলেন, টোকিও ও সিউলের কাছে পাঠানো চিঠি ‘অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা’ হিসেবে কাজ করবে।
ওয়েন্ডি আরও বলেন, দুই দেশই দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অংশীদার ছিল। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক প্রতিষ্ঠান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও কিছু চুক্তির ঘোষণা আসবে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প৬ ঘণ্টা আগেমার্কিন শেয়ারবাজারে ধসট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার প্রভাবে গতকালই যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ধস নামে। নাসডাক সূচক ০.
এ ছাড়া ব্রিকস জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ছে, এমন দেশগুলোর ওপর আরও ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, দেশগুলো তাঁর শুল্কনীতির সমালোচনা করে যুক্তিবহির্ভূতভাবে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি অনুসরণ করছে।
তবে অনেক দেশ এখনো শেষ মুহূর্তে ট্রাম্পের শুল্ক পুরোপুরি এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোববার ট্রাম্পের সঙ্গে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েনের বাণিজ্য নিয়ে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে।
আরও পড়ুন৩৫ শতাংশ শুল্কের কথা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে চিঠিতে যা লিখলেন ট্রাম্প৩ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ল ক আর প র সময়স ম র ওপর আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
কুকসুর গঠনতন্ত্র প্রণয়নে সময়সীমা বেড়েছে
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (কুকসু) গঠনতন্ত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় আরো ১০ কর্মদিবস বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আরো পড়ুন:
কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে কুবিতে কুরআন বিতরণ
কুবি শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত করায় ৫ যুবক আটক
এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৬তম সিন্ডিকেট সভায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যদের এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
ওই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সময় পার হয়ে গেলেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি কমিটির সদস্যরা।
প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, “ছাত্র সংসদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করার জন্য সাত কর্মদিবস যথেষ্ট নয়। আমরা এরই মধ্যে চারদিন কর্মশালার মতো করে বৈঠকে বসেছি। আমরা যেহেতু এটা প্রথম করছি, অনেক বিষয় বিবেচনা করেই করতে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসার পর বুঝতে পারছি, একজন আইনজ্ঞ দরকার। এজন্যই আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে আমরা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন স্যারকেও আমাদের এখানে নিয়ে আসব, যাতে আমাদের গঠনতন্ত্রটা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় হয়। এজন্যই আমাদের আরও কিছুদিন সময় দরকার। আমরা উপাচার্য স্যারের কাছে ১০ কর্মদিবস সময় চেয়েছি এবং তিনি সম্মতি দিয়েছেন।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “কমিটিতে আরো দুইজন সদস্য বাড়ানো হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের। তিনি এসে কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে আরো ১০ কর্মদিবস সময় চেয়েছেন। আমরা তাদের সময় দিয়েছি।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী