টাঙ্গুয়ার হাওরে নবনির্মিত একটি হাউসবোট ‘মুন অব টাঙ্গুয়া’। রুপসী বাংলা ট্যুরিজমের অনেকগুলো বোটের মধ্যে এটি অন্যতম। এটিকে বোট না বলে ভাসমান বাড়ি বলা যায়। কারণ এটি তৈরিতে এমন কিছু প্লান ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে এই বোটকে ভাসমান বাড়ি বললে কোনো ভুল হবে না।

পুরো বোটটিতে আধুনিকতার সাথে ইকো ফ্লেভার রাখা হয়েছে। অতিথিদের অতিরিক্ত গরমের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পুরো বোটটি কাঠের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

রুপসী বাংলা ট্যুরিজম ও মুন অব টাঙ্গুয়ার অন্যতম পরিচালক মো.

 মাঈন উদ্দিন ফারুক বলেন, বোটটিকে ভাসমান বাড়ি বলার কারণ হচ্ছে, এতে আমরা ৭টা রুম করেছি। রুমগুলোর প্রতিটিতে রয়েছে বাসার রুমের মতো আসবাবপত্র। সবগুলো রুমের সঙ্গে আধুনিক অ্যাটাচড ওয়াশরুম রয়েছে। সবগুলো হাই কমোড। রয়েছে সুবিশাল একটি রান্না ঘর। গ্রুপভিত্তিক আড্ডা অথবা গল্প করার জন্য রয়েছে একটি বিশাল লবি। বোটের সামনে সুন্দর সাজানো দোলনা এবং ফটোগ্রাফি করার জন্য যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রয়েছে। একটি বাড়িতে যেমন একটি সুন্দর ছাদ থাকে ঠিক তেমনি এই বোটটিতেও একটি বিশাল ছাদ রয়েছে। ছাদ থাকলে বাগান করা সবারই শখ, আর এই শখটাও আমরা আমাদের বোটের ছাদে পূরণ করেছি। সুন্দর করে গুছানো একটি রুফ টপ রেস্টুরেন্টও রয়েছে।

তিনি আরো জানান, মুন অব টাঙ্গুয়া হাউসবোটে অবসর সময় কাটানোর জন্য রয়েছে বিভিন্ন স্পোর্টস এর ব্যবস্থা, যেমন: কেরাম , লুডু, ফুটবল, দাবা ও কার্ড খেলার সুবিধা। বিনোদনের জন্য রয়েছে সাউন্ড সিস্টেম। বোটের পর্যটকদের সেফটির জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও বয়া। সঙ্গে ফার্স্ট এইড বক্স এবং অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। পুরো বোটে অতিথিদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য ৮ জন স্টাফ সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে।

ফারুক বলেন, এবার আমাদের সার্ভিস সম্পর্কে বলি। আমরা সুনামগঞ্জ টু সুনামগঞ্জ সার্ভিস দিয়ে থাকি। সকালে বাস থেকে নেমেই আপনারা আমাদের ভাসমান বাড়ি মুন অব টাঙ্গুয়াতে চেক ইন করবেন। হালকা ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা হবে আমাদের সাথে। পুরো রিলাক্সে ২ দিন এবং ১ রাত আমরা আপনাদেরকে নিয়ে পুরো সুনামগঞ্জ ঘুরে বেড়াবো। সুনামগঞ্জের সব সুন্দর সুন্দর স্পট যত্ন সহকারে আপনাদেরকে ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য আপনাদের সাথে আমাদের তরফ থেকে দক্ষ গাইড থাকবে। সাথে মজাদার সব খাবার পরিবেশনের জন্য থাকবে দক্ষ বাবুর্চি। এছাড়া রুম সার্ভিস এবং নিরাপত্তার জন্য বোটে পর্যাপ্ত স্টাফ থাকবে। নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে আমরা আনোয়ারপুর অথবা তাহেরপুর থেকে জার্নি শুরু এবং শেষ করব। কারণ পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে লোকাল ব্রিজ পার হওয়া যায় না। আর এমনটা হলে শহর থেকে আনোয়ারপুর অথবা তাহিরপুর যাওয়ার আসার সম্পূর্ণ খরচ আমরা বহন করব। চেক ইন টাইম: সকাল ৭ টা (প্রথম দিন), চেক আউট টাইম: রাত ৯টা (দ্বিতীয় দিন)।

পানি স্বল্পতা কিংবা প্রশাসনিক কারণবশত বোট দিয়ে দ্বিতীয় দিন টুরিস্ট স্পটে যেতে না পারলে স্পটগুলো বাইক/অটো দিয়ে অতিথিদের ঘুরানো হবে। যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান এবং বারেক টিলা বাইক/অটো দিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো হবে। বাইক/অটো ভাড়া বোট কর্তপক্ষ বহন করবে।

প্যাকেজ মূল্য (২দিন ও ১ রাত) (ফুল বোট রিজার্ভ)

রিজার্ভ ১৪-১৮ জন হলে জনপ্রতি ১০,০০০ টাকা।

রিজার্ভ ১৯-২৪ জন হলে জনপ্রতি ৯,০০০ টাকা।

রিজার্ভ ২৫ + হলে জনপ্রতি ৭,৫০০ টাকা।

এছাড়া দুজন থেকেও বুকিং দেওয়া যায়- জনপ্রতি ১০,০০০ টাকায়। বুকিং নিশ্চিত করতে দিতে হবে ৫০% অগ্রিম, যা ব্যাংক, বিকাশ বা সরাসরি অফিসে গিয়ে পরিশোধ করা যাবে। 

শিশুদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড়। জিরো থেকে ৩ বছর বাচ্চার জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি। ৩ থেকে ৭ বছর প্রতি বাচ্চা ৪৫০০ টাকা (বাবা-মার সঙ্গে রুম শেয়ার করবে)। ৭+ বছর বয়স থেকে অ্যাডাল্ট হিসেবে গণ্য হবে এবং এর জন্য পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

প্যাকেজের মধ্যে যা রয়েছে

সম্পূ্র্ণ কাঠের তৈরি বিশাল আকৃতির প্রিমিয়াম হাউজবোট।

বোটের ভিতর সোজা হয়ে হেঁটে বেড়ানো মতো  প্রশস্ত জায়গা।

প্রিমিয়াম ওপেন লাউঞ্জ।

রুফটপ প্রিমিয়াম ডাইনিং।

ছাদ বাগান।

জুস বার।

বার্বিকিউ জোন।

জেনারেটর আইপিএস দিয়ে দিনে ১৮ ঘণ্টা+ বিদ্যুৎ সরবরাহ।

৭টি প্রশস্ত রুম (প্রতিটি রুমের সাথে অ্যাটাচড বাথ, ডোর-লক সুবিধা, প্রতি কেবিনে রয়েছে প্রশস্ত বেড, লাইট, ফ্যান, ড্রেসিং টেবিল, লকার এবং চার্জিং পয়েন্ট।

১টি কমন ওয়াশরুম।

সুপ্রশস্ত গ্লাস উইন্ডো।

পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও বয়া।

দক্ষ বাবুর্চির সহায়তায় ট্রেডিশনাল ফ্রেশ খাবার।

অভিজ্ঞ লোকাল ট্যুর গাইড।

সার্বক্ষণিক চা/কফি/স্ন্যাক্স/পানি/কোল্ড ড্রিংকস/জুস।

সার্বক্ষণিক রুম সার্ভিস।

লাকমা ছড়া, শিমুল বাগান, বারেক টিলা ঘুরার অটো/বাইক ভাড়া।

প্রতিটা রুমে থাকছে- টিস্যু বক্স, জায়নামাজ, সাবান, শ্যাম্পু, বড় আয়না, ব্রাশ ও পেস্ট।

প্যাকেজে খাবারসহ সবধরনের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকছে (ব্যক্তিগত খরচ ব্যতীত)।

২ দিন ও ১ রাতের প্যাকেজে যেসব স্পট ঘোরানো হবে

টাঙ্গুয়ার হাওর।

ওয়াচ টাওয়ার।

নীলাদ্রি লেক।

লাকমা ছড়া।

বারেক টিলা।

শিমুল বাগান।

যাদুকাটা নদী।

খাবার মেনু

সর্বমোট ৬টা মূল খাবারের সঙ্গে ৪টা নাস্তা মিলিয়ে মোট ২ দিনে ১০+ বার খাবার পরিবেশন করা হবে। এর সঙ্গে সব সময় চা/কফি, কলা ও পানি তো থাকছেই।

প্রথম দিন

সকাল: হালকা নাস্তা: ফ্রুটস জুস + ঠান্ডা পানি + চা + বিস্কিট/কেক + কলা।

মূল নাস্তা: চিকেন ভুনা খিচুড়ি + আচার + কোল্ড ড্রিংকস + বেগুন ভাজি + সালাদ+ পানি।

স্ন্যাকস: ফ্রুটস + চা/কফি।

দুপুর: ভাত + শুটকি ভর্তা + হাওরের মাছ ক্যারি অথবা ফ্রাই + মুরগি ভুনা + মিক্সড ভেজিটেবল + ডাল + সালাদ + চা/কফি।

সন্ধ্যার স্ন্যাকস:  ফ্রুটস + ভাজা পোড়া/মুড়ি মাখানো + চা/কফি।

রাত: সাদা ভাত + হাসের মাংস ভুনা + ভেজিটেবল + ডাল + সালাদ + কোল্ড ড্রিংক্স + চা/কফি।

দ্বিতীয় দিন 

সকাল: হাঁস ভুনা +  ভুনা খিচুড়ি + আচার + সালাদ + ড্রিংকস l

স্ন্যাকস: দেশি ফ্রুটস + চা/কফি।

দুপুর: ভাত + ভর্তা + হাওরের মাছ + মুরগি ভুনা + মিক্সড ভেজিটেবল + ডাল + সালাদ + চা/কফি।

সন্ধ্যার স্ন্যাকস: কেক + কলা + চা/কফি।

রাতের খাবার: চিকেন গ্রিল।

পর্যটকদের জন্য সতর্কতা ও দায়বদ্ধতা

বোটে চেক ইন করার সময় এনআইডি বা যেকোনো বৈধ আইডি কার্ডের (স্টুডেন্ট আইডি, জন্মনিবন্ধন কার্ড, অফিস আইডি, পাসপোর্ট ইত্যাদি)) ফটোকপি জমা দিতে হবে।  

মুন অব টাঙ্গুয়ার অন্যতম পরিচালক মো. মাঈন উদ্দিন ফারুক বলেন, এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি। প্রথমেই একটি ভ্রমণ পিপাসু মন নিয়ে এই অঞ্চলে বেড়াতে আসতে হবে। ভ্রমণকালীন যেকোনো সমস্যা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। কোনোভাবেই একা একা কিছু করতে যাবেন না।

শালীনতার মধ্যে থেকে হাওর তথা এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে হবে। স্থানীয়দের সাথে কোনো রকম বিরূপ আচরণ করা যাবে না। কোনোভাবেই কোনো প্রকার মাদক সেবন কিংবা বহন করা যাবে না। কারো সাথে পাওয়া গেলে তাকে বা তাদেরকে তৎক্ষণাৎ ট্রিপ থেকে বহিষ্কার করা হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতায় আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, পরিবেশ রক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব। এরজন্য অবশ্যই যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না।আমাদের বোটে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন, এই বোটটি সম্পূর্ণ ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বানানো হয়েছে। সেফটি আর সুযোগ সুবিধের অভাবে এতদিন মানুষ হাওরে ঘুরতে আসতে পারতো না, মূলত তাদের জন্য এই বোট বানানো। এখানে কোনো প্রকার অশ্লীলতার কোনোরকম সুযোগ নেই। কোনো রকম অসৎ উদ্দেশ্যে যদি কেও আমাদের  সাথে ভ্রমণে আসেন, সেটি বুঝে যেতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগে না। এমনটা হলে সেই মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নিবো। এইসব বিষয়ে আমরা কারো সাথে কোনো রকম কম্প্রোমাইজ করবো না। এছাড়া প্রশাসনিক জটিলতা বা আবহাওয়া খারাপ থাকলে বোট কর্তৃপক্ষ ট্রিপ বাতিলের অধিকার রাখে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউজেবোট বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ: ০১৯৭৫ ০৮৬২৯৫ (ফারুক)।

ঢাকা/চিশতী/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ন অব ট ঙ গ য় স ন মগঞ জ দ র জন য আম দ র স পর য প ত ন র জন য প রশস ত ফ র টস র হ ওর এই ব ট স ন দর

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভয়াবহ’ সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সৌদি আরব

গত দশকে সৌদি আরব মাদক সংক্রান্ত অপরাধের জন্য ‘ভয়াবহ’ সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, যার বেশিরভাগই বিদেশী নাগরিক। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, গত দশকে মাদক সংক্রান্ত অপরাধের জন্য প্রায় ৬০০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যার তিন-চতুর্থাংশই পাকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া এবং মিশরসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক।

২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মাদক সংক্রান্ত মৃত্যুদণ্ডের উপর সাময়িক স্থগিতাদেশের পর, মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা চিল ১২২টি এবং গত মাসের শেষ পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ১১৮টি।

অ্যামনেস্টি এই মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাগুলোকে ‘চরম অন্যায্য বিচার’ এবং ‘মানব জীবনের প্রতি ভয়ঙ্কর অবজ্ঞা’ বলে বর্ণনা করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য গবেষক ডানা আহমেদ বলেন, “আমরা সত্যিই এক ভয়াবহ প্রবণতা প্রত্যক্ষ করছি, যেখানে বিদেশী নাগরিকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, এমন অপরাধের জন্য যার মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকা উচিত নয়। সৌদি অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রগুলোকে প্রতিবাদ জানাতে এবং নিন্দা জানাতে রাজি করানো কখনই সহজ ছিল না। কারণ এর গভীর আর্থিক এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের সাথে সাথে ... তদন্ত আরো কমে গেছে।”

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, তারা এমন বিদেশী নাগরিকদের খুঁজে পেয়েছে যারা কাজের জন্য অভিবাসনের সময় মাদক পাচারে প্রলুব্ধ হয়ে ‘প্রতারিত ও শোষিত’ হয়েছিল। 

অ্যামনেস্টির মতে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কিছু বিদেশী নাগরিকের স্বল্প শিক্ষা ও সুবিধাবঞ্চিত আর্থ-সামাজিক পটভূমি তাদের শোষণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে এবং সৌদি আরবে আইনি প্রতিনিধিত্বের সুযোগ তাদের জন্য আরো কঠিন করে তোলে। তাদের প্রতিবেদনে আইনি প্রতিনিধিদ না পাওয়া, অপর্যাপ্ত কনস্যুলার সহায়তা এবং কার্যকর ব্যাখ্যার অভাব পাওয়া গেছে।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ