এফবিআইপ্রধান ক্যাশ প্যাটেল কি পদত্যাগ করতে পারেন
Published: 12th, July 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) পরিচালক ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ক্যাশ প্যাটেল পদত্যাগের কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে। সংস্থাটির উপপরিচালক ড্যান বংগিনোর প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বংগিনোর সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে।
যৌন অপরাধী হিসেবে অভিযোগ উঠা জেফরি এপস্টিনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের (ডিওজে) তদন্ত এবং তাঁর কথিত ‘মক্কেলদের তালিকা’ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক থেকে এই মতবিরোধ শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি বংগিনো ও বন্ডির মধ্যে এই ইস্যুতে তীব্র বাগ্বিতণ্ডা হয়। এপস্টিনের মামলা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা ও তাঁর ‘মক্কেলদের তালিকা’ আবার খতিয়ে দেখার বিষয়ে দুজনের বাগ্বিতণ্ডা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য বার বার বলছেন, তেমন কোনো তালিকা ছিলই না। ওই ঘটনার পর থেকে বংগিনো পদত্যাগের কথা ভাবছেন। মাত্র চার মাস আগে তাঁকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নিউইয়র্ক পোস্টকে একটি সূত্র জানায়, পাম বন্ডি থাকলে বংগিনো আর ফিরবেন না বলেই মনে হচ্ছে।
সূত্রটি আরও জানায়, দুই কর্মকর্তার মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। যদিও দুজনই প্রকাশ্যে বলেছেন, এপস্টিনের ফাইলে তাঁর মৃত্যু বা তাঁর চক্র নিয়ে কোনো বিস্ফোরক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ভেতরে ভেতরে দুজনের মতপার্থক্য এখনো রয়ে গেছে।
বিচার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বংগিনোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এফবিআইয়ের পরিচালক ক্যাশ প্যাটেলও পদত্যাগ করতে পারেন। ক্যাশ আর বংগিনো সবসময় একসঙ্গে থেকেছেন। তাঁরা স্বচ্ছতার পক্ষে লড়েছেন। এখন যেভাবে সব কিছু চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, এতে তাঁরা যদি প্রতিবাদ জানিয়ে সরে দাঁড়ান, তা অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ডিওজের সেই পর্যালোচনার পর ট্রাম্প প্রশাসনের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালে কারাগারে এপস্টিনের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে বলা হয়, ‘মক্কেলদের তালিকা’ পাওয়া যায়নি। বিখ্যাত ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করার মতো কোনো প্রমাণও নেই।
৮ জুলাই মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে পাম বন্ডি আগের বক্তব্য স্পষ্ট করে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে আমি ফক্স-এ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। সেখানে আমি বলেছিলাম, ‘মক্কেলদের তালিকা’ পর্যালোচনার জন্য আমার ডেস্কে আছে। আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম এপস্টিন, জেফএকে আর এমএলকের ফাইলের কথা।’
অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অ্যাটর্নি জেনারেল বন্ডিকে বরখাস্ত করতে ইতস্তত করছেন। তবে বিচার বিভাগের মধ্যে এই মতবিরোধ প্রশাসনের বিচার বিভাগ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
পাম বন্ডির বিভাগ থেকে সদ্য প্রকাশিত দুই পৃষ্ঠার একটি স্মারকে বলা হয়েছে, কোনো অভিযুক্ত তালিকা বা বিখ্যাত ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করার মতো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
একই বৈঠকে বির্তকিত এপস্টিনের সেলের সিসিটিভি ফুটেজ নিখোঁজ থাকার প্রশ্নের জবাবে বন্ডি বলেন, এটি পুরোনো রেকর্ডিং সিস্টেমের কারণে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভিডিও প্রকাশের চেষ্টা করছি যাতে দেখা যাবে, প্রতিরাতেই এক মিনিটের ফুটেজ নেই।’
এক সময় ফক্স নিউজের উপস্থাপক বংগিনো বিতর্কিত এপস্টিনের তদন্ত নিয়ে নানা রহস্যের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তাঁর (এপস্টিনের) ‘ব্ল্যাক বুক’ খুবই বিস্ফোরক হতে যাচ্ছে। আমি জানি, অনেকেই অনেক কিছু জানেন।’
কিন্তু গত জুন মাসে ফক্স নিউজে বংগিনো কিছুটা সুর নরম করেন। বলেন, মামলার কাগজপত্র আত্মহত্যার দিকেই ইঙ্গিত করছে, যদিও ভিডিওর মান খারাপ।
হোয়াইট হাউস অবশ্য বন্ডি ও বংগিনোর মধ্যে দ্বন্দ্বের গুজব উড়িয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হ্যারিসন ফিল্ডস নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনশৃঙ্খলা টিম গঠন করেছেন, যারা মার্কিনদের নিরাপত্তা দেওয়া, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। এই টিমের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা ভিত্তিহীন এবং প্রকৃত উন্নয়ন থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এপস ট ন র কর মকর ত প ম বন ড পদত য গ
এছাড়াও পড়ুন:
মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত খুলনা: ১৬ মাসে ট্রিপল-ডাবলসহ ৪৮ খুন
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গত ১৬ মাসে খুলনায় ট্রিপল ও ডাবলসহ ৪৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ, মাদক ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২০টি। চলতি নভেম্বর মাসেই সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার (৩০ নভেম্বর) খুলনার আদালত পাড়ায় প্রকাশ্যে দুইজনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একইদিন রাতে নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় আরো এক যুবককে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
একের পর এক হত্যাকাণ্ডে ভয় আর আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা। দিন-দুপুরে আদালত এলাকার মতো জনবহুল জায়গায় হত্যাকাণ্ড স্থানীয় বাসিন্দাদের আরো উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
আরো পড়ুন:
আলোচিত রায়হান হত্যার রায় ৭ জানুয়ারি
খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন
পুলিশের তথ্য বলছে, গত ১৬ নভেম্বর দুপুরে নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনারের কালভার্ট এলাকায় বাড়ির মধ্যে নানি মহিতুন্নেসা (৫৫), তার নাতি মুস্তাকিম (৮) এবং নাতনি ফাতিহাকে (৬) হত্যা করা হয়। ওই রাতেই করিমনগরে নিজ বাড়ির ভেতর আলাউদ্দিন মৃধা নামের এক যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ২৭ নভেম্বর রাতে খালিশপুর ফেয়ার ক্লিনিকের সামনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় যুবক ইমানকে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) কর্মচারী মো. মহসিন শেখ লিটুর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। ২৮ অক্টোবর ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে মহানগরীর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা খুঠিরঘাট এলাকার ওই বাড়িতে গুলিবর্ষণ হয়। তবে, কেউ আহত হননি।
গত ৯ অক্টোবর সকালে খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকায় সবুজ খান (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে খুলনার রূপসা উপজেলায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইমরান হোসেন মানিক (৩৪) নামে এক যুবক নিহত হন।
সে সময় রূপসা থানার ডিউটি অফিসার জনি আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “রাতে মানিক একটি ভ্যানযোগে ইলাপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় কয়েকজন সন্ত্রাসী তার গতিরোধ করেন। তারা মানিককে লক্ষ্য করে পরপর দুইটি গুলি ছোড়েন। একটি গুলি মানিকের মাথায় লাগে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।”
এর আগে, ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা মহানগরীর রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে প্রকাশ্যে এক যুবককে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ওই যুবকের নাম নিক। তিনি নগরীর কালীবাড়ী এলাকার মন্টু দাশের ছেলে।
একের পর হত্যাকাণ্ডে উদ্বিগ্ন নাগরিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ধারাবাহিক হত্যা ও সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে খুলনা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন হচ্ছে। এছাড়া, আইনশৃখলা পরিস্থিতি অবনতির প্রতিবাদে গত শনিবার নগরীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন আইন অধিকার বাস্তবায়ন ফোরাম। তার একদিন পরেই রবিবার দুটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটল। এর আগে, খুলনার আদালত চত্বর থেকে ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছিল পুলিশ। গত ২০ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে বস্তুটি পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে চরমপন্থিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল খুলনা। নতুন শতাব্দির শুরুতেও তা বহাল ছিল। বোমা মেরে অথবা গুলি করে মানুষ হত্যা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারান সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকার দক্ষিণাঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে র্যাব গঠন করে। যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে শুরু হয় অপারেশন ক্লিনহাট, অপারেশন স্পাইডার ওয়েব। এসব অপারেশন অধিকাংশ চরমপন্থি সন্ত্রাসী নিহত ও অনেকে গ্রেপ্তার হন। ধীরে ধীরে শান্তি ফিরে আসে খুলনায়। খুলনার আইনশৃখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আবারো বিশেষ অভিযান শুরুর দাবি জানিয়েছেন নাগরিক নেতারা।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “একের পর এক হত্যাকাণ্ড সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলছে। এ থেকে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের দমনে পুলিশ প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।”
খুলনায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি বিশেষ করে গতকাল রবিবার আদালত অঙ্গনে দিনে দুপুরে লোমহর্ষক জোড়া খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু এবং সদস্য সচিব শেখ নুরুল হাসান রুবা। আদালত অঙ্গনে নিরাপত্তা জোরদারসহ খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে পুলিশ প্রশাসন এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আরো কঠোর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, “বেশিরভাগ হত্যার কারণ উদ্ঘাটন করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। রবিবার দুপুরে দুই হত্যার সঙ্গে জড়িতরাও দ্রুত গ্রেপ্তার হবেন।”
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ